গুয়াতেমালা কি তার অতীতের মুখোমুখি হতে ভবিষ্যতের জন্যে ভোট দেবে?

গ্লোবাল ভয়েসেসের অলঙ্করণ

নিঃসন্দেহে ২০২৩ সাল গুয়াতেমালার জন্যে নির্ধারক। এবং অনেকেই ভাবছে দেশের জন্যে সামনে কী রয়েছে, তাদের দেশের অতীতের দিকে তাকানোটাও অপরিহার্য।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, সঙ্কুচিত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি, সংগঠিত অপরাধে সহিংস মৃত্যু, সামরিক ও বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তিন প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার প্রেক্ষাপটে ২৫ জুন অনুষ্ঠেয় সাধারণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে জরিপে গুয়াতেমালাবাসীদের মধ্যে উচ্চ স্তরের হতাশা দেখা যাচ্ছে।

আরো মারাত্মক হলো রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের মধ্যে কেউই না ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ও গুয়াতেমালার জাতীয় বিপ্লবী ইউনিটের প্রতিনিধিত্বকারী গেরিলাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত দৃঢ় ও টেকসই শান্তির জন্যে চুক্তির বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত করেছে, না দেশটিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলমান অন্তর্বর্তীকালীন বিচার প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ভবিষ্যতের দিকে যেতে হলে দেশটিকে আগে তার অতীতের সমাধান করতে হবে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ এর মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতে গুয়াতেমালার হাজার হাজার, প্রাথমিকভাবে কৃষক, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য ও নারীদের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের বিরোধের প্রেক্ষাপটে মায়া জনগণ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শত্রুতে পরিণত হয়ে সহিংসতার কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় শক্তির অসম ব্যবহারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। এর ফলে নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ড, জোরপূর্বক গুম, ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অত্যধিক ব্যবহার ঘটে, যার বেশিরভাগই ঘটে জেনারেল রোমিও লুকাস গার্সিয়াএফ্রেন রিওস মন্টের স্বৈরশাসনের সময়। পরবর্তীকালে সেই সময়ের মধ্যে সংঘটিত অপব্যবহারের তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও এই ধরনের নৃশংসতার জন্যে দায়ীদের বিচারের জন্যে ১৯৯৬ সালে একটি জটিল অন্তর্বর্তীকালীন বিচার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।

তা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে তিনটি ভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলি সশস্ত্র সংঘাতের সময় যে কোনো কাজের জন্যে দোষী সাব্যস্ত বা ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি সেনাবাহিনী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যদের বিচার নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে। অনুমোদিত হলে এই আইনটি বেঁচে থাকা, ভুক্তভোগী এবং তাদের আত্মীয়দের জন্যে একটি কঠোর ধাক্কা তৈরি করবে। সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার প্রবক্তারা এটিকে “সাধারণ ক্ষমা আইন” বলে অভিহিত করেছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ক্রান্তিকালীন বিচার গুরুত্বপূর্ণ

গুয়াতেমালার ঘটনাটি সত্য কমিশন প্রতিষ্ঠা, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের উত্তরাধিকারের প্রতি সাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে এই ধরনের পদ্ধতির প্রয়োগে পথিকৃৎ মহাদেশ লাতিন আমেরিকার অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায়বিচারের জটিলতার চিত্রগুলির অন্যতম।

জাতিসংঘের মতে ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে, ন্যায়বিচার পরিবেশন এবং পুনর্মিলন অর্জনের জন্যে বৃহদাকারের অতীতের দ্বন্দ্ব, দমন, লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের উত্তরাধিকারের সাথে চুক্তিতে আসার জন্যে একটি সমাজের প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত প্রক্রিয়া ও কৌশলগুলির সম্পূর্ণ পরিসরকে অন্তর্ভূক্ত করে চারটি মৌলিক স্তম্ভ: সত্য, ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং মর্যাদাকে স্বীকৃতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার পূরণে প্রাথমিক মনোযোগসহ অ-পুনরাবৃত্তির ব্যবস্থার মাধ্যমে।

এই অঞ্চলে ক্রান্তিকালীন বিচারের মডেল বাস্তবায়নকারী প্রথম দেশগুলি হলো সামরিক স্বৈরশাসনের প্রভাবের শিকার দুটি দেশ ১৯৮৪ সালে আর্জেন্টিনা এবং ১৯৯০ সালে চিলি। পরবর্তীতে পেরু কয়েক বছর পরে প্রণীত জরুরি আইনের অধীনে অপব্যবহারের একটি পদ্ধতিগত প্রচারণা প্রশমিত করে একটি ক্রান্তিকাল শুরু করে। কলম্বিয়া হলো ২০১৬ সালে মহাদেশের প্রাচীনতম অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে সংঘাতের অবসান এবং একটি স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির নির্মাণের জন্যে একটি উচ্চাভিলাষী সাধারণ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সর্বশেষ দেশ। এভাবে ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার নাগরিকদের প্রতি মর্যাদার সাথে আচরণ করা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের দিকে নির্দেশ করে বলে শান্তি গঠনের অগ্রগতির জন্যে মৌলিক বিষয়।

সাধারণ ক্ষমা আইন গুয়াতেমালার ক্রান্তিকালীন বিচারের অগ্রগতিকে বিপন্ন করে

সাধারণ ক্ষমা আইন অনুমোদন করতে চাওয়া উদ্যোগগুলি দায়মুক্তি প্রচার করে, সংঘাতের পরিণতি ভোগকারীদের অধিকারকে অস্বীকার করে, শান্তি বিনির্মাণ ও সত্যের স্বীকৃতির অগ্রগতির প্রচেষ্টাকে গুরুতরভাবে দুর্বল করে, এবং সশস্ত্র সংঘাতের জটিলতা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপব্যবহারকে উপেক্ষা করে।

ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্যে ২০০৩ সালে তৈরি জাতীয় ক্ষতিপূরণ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করে গুয়াতেমালা যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। সত্য-সন্ধানী উদ্যোগের বিষয়ে, সশস্ত্র সংঘর্ষ সম্পর্কিত ঘটনাবলী ও পরিস্থিতি স্পষ্ট করার জন্যে গঠিত ঐতিহাসিক স্পষ্টীকরণ কমিশন (সিইএইচ) ১৯৯৯ সালের “গুয়াতেমালা: নীরবতার স্মৃতি” প্রতিবেদন দুই লক্ষেরও বেশি লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করা কয়েক দশকের যুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিবরণ দিয়েছে। প্রতিবেদনটি ক্রান্তিকালীন বিচারের চারটি স্তম্ভকে আরো সহজলভ্য করার জন্যে একাধিক (যার মধ্যে একটি সুনির্দিষ্টভাবে সত্যের প্রক্রিয়া এবং অপরাধ ও অন্যায়কারীদের সঠিক তদন্তের অভাবের বিষয়ে) যে সুপারিশ করেছে বর্তমানে তার মাত্র কয়েকটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে।

একইভাবে আন্তঃআমেরিকা মানবাধিকার আদালত বিভিন্ন রায়ে পুনর্ব্যক্ত করেছে যে স্থূল মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে দায়ীদের তদন্ত, বিচার ও শাস্তির অভাব দায়মুক্তিতে অবদান রাখে এবং কৃত ক্ষতির ক্ষতিপূরণ সীমিত করে। আজ অবধি আদালত গুয়াতেমালায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ২৯টি রায় জারি করেছে যার মধ্যে ১৫টি অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় সংঘটিত মামলাগুলির জন্যে। এছাড়াও আদালত এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও মঞ্জুর করে রাষ্ট্রকে এখনো কংগ্রেসে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রস্তাবিট জাতীয় পুনর্মিলন আইনের সংস্কার প্রক্রিয়া স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ সংস্থা, ক্ষতিগ্রস্তদের সংগঠন এবং যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা এই সাধারণ ক্ষমা আইনের সম্ভাব্য অনুমোদন থেকে উদ্ভূত ঝুঁকির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। একদিকে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে দায়মুক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্জিত অগ্রগতিতে এবং বিশেষ করে ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, ও ঐতিহাসিক স্মৃতির প্রয়োজনীয় নির্মাণে অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করে এই আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তিতে অবদান রাখবে এবং দেশে সহিংসতা ও স্বৈরতন্ত্রের একটি চক্র প্রচার করবে। এই নৃশংস কর্মকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের অভাব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নীতিও লঙ্ঘন করবে। শেষ পর্যন্ত এটি গুয়াতেমালার বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে

একটি চ্যালেঞ্জ এবং একটি সুযোগ

আসন্ন নির্বাচন গুয়াতেমালার ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচারের জন্যে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের প্রতিনিধিত্ব করলেও সহিংসতার মাত্রা ও গভীরতাকে দৃশ্যমান করার পাশাপাশি সশস্ত্র সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত ক্ষোভের পুনরাবৃত্তি না ঘটা নিশ্চিত করার র জন্যে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ।

অতএব ন্যায়বিচার পরিচালনার এবং প্রাথমিকভাবে যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের জন্যে সরকারি কর্মসূচি তৈরি করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বকে অনুমোদন করার লক্ষ্যে বোধগম্য জননীতির বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে নতুন রাষ্ট্রপতিকে আর বিলম্ব না করে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে সত্য কমিশনের কাজকে আরো জোরদার করতে, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে, যুদ্ধের নৃশংসতাকে উস্কে দেওয়া ঘটনাবলী যেন আর কখনো না ঘটে এবং বর্ণবাদ, বৈষম্য ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অভাবের মতো সংঘাতের জন্ম দেওয়া কাঠামোগত সমস্যাগুলি যেন আকাঙ্ক্ষিত শান্তিতে অবদান রেখে তা নিছক দূরের স্বপ্নে পরিণত না করে  নিশ্চিত করতে  হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .