ভ্লাস্ট.কেজেড এর জন্যে ইরিনা গুমিরকিনার লেখা এই নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ গণমাধ্যম অংশীদারিত্ব চুক্তির অধীনে গ্লোবাল ভয়েসসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।
কাজাখস্তানের পূর্ব আবাই অঞ্চলে ৮ থেকে ১৪ জুনের মধ্যে সৃষ্ট দাবানল দেশের দীর্ঘস্থায়ী শাসনের সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে উন্মোচিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও অতীতের ট্র্যাজেডির পর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা।
রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ ১০ জুন জরুরী পরিস্থিতির জন্যে আপাতদৃষ্টিতে অস্পৃশ্য মন্ত্রী ইউরি ইলিনকে বরখাস্ত করেন। এটি ছিল দেশব্যাপী ট্র্যাজেডির দিকে পরিচালিত “অপরাধমূলক অবহেলার” জন্যে দায়ী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ধারাবাহিকের প্রথম। তোকায়েভ ১৬ জুন দানিয়াল আখমেতভকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবাই অঞ্চল যার অংশ ছিল সেই পূর্ব কাজাখস্তান অঞ্চলের গভর্নর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। দৃষ্টান্তমূলক বরখাস্ত ও তিরস্কার কোনো কিছুই পরিবর্তন করবে না: যেখানে বিশৃঙ্খলা বছরের পর বছর ধরে রাজত্ব করেছে সেখানে একটি ধাক্কায় শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব।
এখানে পূর্ব কাজাখস্তান অঞ্চলের গভর্নর হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী দানিয়াল আখমেতভের দুর্নীতি চর্চার একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে।
এই বছর আবাই অঞ্চলের সেমেই ওরমানি রিজার্ভে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ইতোমধ্যে ২২ মে ঘটে। আগুন দাবানল ছড়ানো রুশ অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েকদিন আগে জরুরী পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় একটি খারাপ পরিস্থিতির জন্যে প্রস্তুত বলে জনগণকে আশ্বস্ত করে। প্রায় ৩,০০০ হেক্টর এলাকায় আঘাত করা আগুন তিন দিনে নিভে যায়। ৮ জুন শুরু হওয়া নতুন অগ্নিকাণ্ডটি আঞ্চলিক কেন্দ্র সেমে শহরের আয়তনের প্রায় তিন গুণের সমান অনেক বড় এলাকায় আঘাত হানে। আগুন নেভাতে গিয়ে ১৪ জন বনরক্ষী ও একজন ট্রাক্টর চালকসহ ১৫ জন মারা যায়।
বিশেষ করে তহবিল যথাযথভাবে বরাদ্দ করা হলে এই ধরনের ট্র্যাজেডি এড়ানো যেতো। প্রাণ হারানো বনরক্ষীদের স্বজনরা বলেছে তাদের ওয়াকি-টকি দেওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে একজন তার নিজের ট্রাক্টর ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। শুধু ২০২২ সালে ২০ লক্ষেরও বেশি দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি থেকে কমপক্ষে ৬৯ কোটি তেঙ্গা (প্রায় ১৬.৭ কোটি টাকা) রাজস্ব আকর্ষণ নিয়ে গর্ব করা জাতীয় উদ্যানটিতে বনরক্ষীরা খুব কম সজ্জিত।
উপ-প্রধানমন্ত্রী রোমান স্ক্লায়ার দাবানলগুলিকে অবমূল্যায়ন করার কথা স্বীকার করেছেন। আর এটাও স্পষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী অবস্থাকে অবমূল্যায়ন করে চলেছে এবং পরে অনুতাপ করে কপালে ছাই মাখে।
ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ আস্তানায় বাড়িতে আগুন লেগে পাঁচটি শিশু মারা গেলে সরকার নাগরিকদের জন্যে সামাজিক সুরক্ষার কথা বলতে শুরু করে। গত শীতে একিবাস্তুজে জরুরী অবস্থার পর শহরের বাসিন্দাদের গরম না করে রেখে দেওয়া হলে সরকার সারা দেশের গরম ও বিদ্যুতের নেটওয়ার্কগুলি জরাজীর্ণ স্বীকৃতি দেওয়া অপরিহার্য বলে মনে করে।
সেমেই অরমানি অগ্নিকাণ্ডের পর বাস্তুবিদ্যা মন্ত্রণালয় বনায়ন খাতে তহবিল বাড়ানোর কথা বলা শুরু করে। কয়েক সপ্তাহ আগে উদ্যানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
প্রতি বছর জরুরী পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় বন্যা প্রস্তুতিতে তার অগ্রগতি প্রতিবেদন করলেও প্রতি বছর বন্যা হয়। একটি নতুন জল আইন কিছু সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারলেও ২০২১ সাল থেকে এটি ঝুলছে।
এদিকে আস্তানা, একিবাস্তুজ ও অন্যান্য জায়গার মতো আবাই অঞ্চলের সমস্যাগুলি অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
শুধু গত তিন বছরে কাজাখস্তানের উত্তর ও পূর্বে চারটি বড় বনে আগুন লেগে এক লক্ষ হেক্টরেরও বেশি বন ধ্বংস হয়েছে, যা পুনরুদ্ধার করতে এক দশকের বেশি সময় লাগবে।
কর্মকর্তারা বলছেন বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডই মানুষের সৃষ্ট। রাষ্ট্রপতি তাই আগুন লাগানোর শাস্তি কঠোর করার নির্দেশ দিয়েছেন। একদিকে, দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিকের অস্তিত্ব, আর অন্যদিকে মানবিক কারণ নির্মূল করলেই সমস্যাটি শেষ হবে না। মূল বিষয় হলো আমলাতান্ত্রিক উদাসীনতা ও সমাধানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। এবং দুর্নীতির ঝুঁকির সাথে মিলিত হয়ে এটি শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটায়।