ক্যারিবীয় চোখে বিশ্ব সামুদ্রিক কচ্ছপ দিবস

ক্যানভা প্রো এর মাধ্যমে লেদারব্যাক কচ্ছপের ছবি।

প্রতি বছর ১৬ জুন পালিত বিশ্ব সামুদ্রিক কচ্ছপ দিবস সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের প্রতি তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করে প্রজাতির সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ায়

একটি কীস্টোন প্রজাতি হিসেবে কচ্ছপ সরাসরি তাদের পরিবেশকে বাস্তব উপায়ে প্রভাবিত করে যাতে তাদের শিকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সমুদ্রের ঘাসের বিছানা ও প্রবাল প্রাচীরের স্বাস্থ্য নিশ্চিত পর্যন্ত সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাদের সংরক্ষণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা আঞ্চলিক উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জীবিকা বাড়াতেও সাহায্য করেছে, যাদের কেউ কেউ নিজেদেরকে কচ্ছপ-পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষা গোষ্ঠীতে সংগঠিত করেছে। একটি কীস্টোন প্রজাতি মারা গেলে অথবা একটি বাসস্থান থেকে সরানো হলে সেই সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার  ফলে নির্ভরশীল সামুদ্রিক জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

কিছু প্রজাতিকে ক্যারিবীয় জলে সারা বছর পাওয়া গেলেও ক্যারিবীয়রা প্রতি বছর কচ্ছপের বাসা বাঁধার মরসুমে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক কচ্ছপকে স্বাগত জানায়। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর উপকূলে সবচেয়ে সাধারণ পাঁচটি — লেদারব্যাক, হকসবিল, লগারহেডস, অলিভ রিডলি এবং সবুজ কচ্ছপ — এর সবগুলিই গুরুতরভাবে বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সামুদ্রিক বাসস্থানের ক্রমবর্ধমান ভঙ্গুরতার মতো চোরাচালানও একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে

এটি ক্যারিবীয় পরিবেশবাদীদের জন্যে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়, যারা এই অঞ্চলে উচ্চ মাত্রার প্লাস্টিক দূষণের মহামারীর পাশাপাশি আসন্ন গভীর সমুদ্রে খনিজ আহরণের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে কথা বলছে

ফেসবুকে টোবাগোর আমাদের সামুদ্রিক কচ্ছপ রক্ষা করোর প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা এবং স্পেসিসের পরিচালক পরিবেশ জীববিজ্ঞানী মিশেল ক্যাজাবন-ম্যানেট উল্লেখ করেছেন:

খোলস দিয়ে গহনাদি তৈরির জন্যে [হকসবিল] প্রজাতিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। অতীতে এই বাণিজ্যের অংশ হিসেবে [ত্রিনিদাদ ও টোবগো থেকে] খোল জাপানে রপ্তানি করা হতো! এখন সিআইটিইএসের অধীনে এই ধরনের বাণিজ্য নিষিদ্ধ বলে আমরা সাধারণত স্থানীয়ভাবে এই পণ্যগুলি দেখতে পাই না।

বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত অঙ্গীকারের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো সিআইটিইএস। এই আন্তর্জাতিক চুক্তিটির লক্ষ্য হলো ব্যবসা যেন বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের নমুনা প্রজাতিগুলির বেঁচে থাকার জন্যে হুমকি সৃষ্টি না করে তানিশ্চিত করা।

স্পেসীস সংস্থা তার সামাজিক গণমাধ্যম পৃষ্ঠার মাধ্যমে সামুদ্রিক কচ্ছপের হুমকি সম্পর্কেও লিখেছে:

মাছ ধরার সরঞ্জামে [জ]ড়িয়ে যাওয়া সম্ভবত সামুদ্রিক কচ্ছপের জন্যে সবচেয়ে বড় হুমকি। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এটি এখানে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে তাদের বাসস্থলেও ঘটছে, টানা জালে বাড়তি হিসেবে লেদারব্যাক ধরা পড়া একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা।

ত্রিনিদাদের উত্তর উপকূলে ২০২৩ সালে বাসা বাঁধার মরসুমে একটি টানা জালে আটকে থাকা একটি মৃত লেদারব্যাকের ছবি পোস্ট করে এটি আরো লিখেছে:

এখানে এবং অঞ্চলটিতে এই প্রভাব থেকে মৃত্যুহার পরিমাপ করার জন্যে আরো কাজ করা দরকার। এটি কি আমাদের উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিকে জনসংখ্যার হ্রাসের একটি প্রধান নিয়ামক হতে পারে? এই প্রভাব প্রশমিত করার উপায় খুঁজে বের করার জন্যে আরো গবেষণা প্রয়োজন – প্রতিশ্রুতিশীল সরঞ্জাম অভিযোজনের মধ্যে নেটে আলোর ব্যবহার রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের জেলেদের সাথে কাজ করতে হবে।

কয়েক সপ্তাহ আগে ২৩ মে বিশ্ব কচ্ছপ দিবসের সময় ট্র্যাডিশন সেইলিং অ্যাঙ্গুইলা একটি সামুদ্রিক কচ্ছপ সাঁতারের একটি সুন্দর ছবি পোস্ট করেছে:

অ্যাঙ্গুইলায় আমাদের যেসব সামুদ্রিক কচ্ছপ রয়েছে তাদের বেশিরভাগই লেদারব্যাক (ঝুঁকিপূর্ণ), হকসবিল (মারাত্মকভাবে বিপন্ন) এবং সবুজ (বিপন্ন)।

সামুদ্রিক কচ্ছপগুলিকে রক্ষা ও সংরক্ষণে সহায়তা করার উপায় হলো সামুদ্রিক জঞ্জাল হ্রাস, যার অর্থ আবর্জনা না ফেলে সমুদ্র সৈকতগুলিকে পরিষ্কার রাখা যাতে সেগুলো সমুদ্রে ফুঁকে যেতে না পারে। প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস শুধু সামুদ্রিক কচ্ছপই নয় পরিবেশকেও সাহায্য করার একটি বিশাল উপায়। “সরাসরি গ্রহণ” করে বলে প্লাস্টিকের নল ও প্লাস্টিকের ব্যাগ সামুদ্রিক কচ্ছপ ও তাদের ডিম উভয়ের জন্যেই সরাসরি ক্ষতিকারক। বিশেষ করে সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী ব্যবসা ও বাড়িগুলিকে রাতে সমুদ্র সৈকতের বাতি নিভিয়ে দেয়া এবং সৈকতে প্লাস্টিকের নল/ কাপ ব্যবহার  ও সিগারেটের গোড়া না ফেলতে উৎসাহিত করতে হবে। সামুদ্রিক কচ্ছপ বাসা বাঁধার মরসুমে আপনি সমুদ্র সৈকতে যেকোনো গর্তও বন্ধ করে দিতে পারেন।

কৃত্রিম আলো কচ্ছপের অভ্যন্তরীণ বিচরণ ব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খল করে স্ত্রী কচ্ছপদের বাসা বাঁধতে নিরুৎসাহিত এবং সমুদ্রে দিকে যাওয়ার চেষ্টারত বাচ্চাদের বিভ্রান্ত করে। প্লাস্টিকের ছোট টুকরো থেকে তৈরি সিগারেটের গোড়া পেটে জমা হয়ে হজমে সমস্যা তৈরি করে না খেয়ে কচ্ছপের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সমুদ্র সৈকতে বালির দুর্গ নির্মাণ, ছাতা বসানো বা এই ধরনের কাজের জন্যে করা গর্ত ছেড়ে গেলে তা কচ্ছপ (বিশেষ করে তাদের বাচ্চা) এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী আটকে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

সম্প্রতি বার্বাডোসের সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রকল্প বাসা বাঁধার মরসুমে সৈকত টহল ও কচ্ছপ পর্যবেক্ষণে সাহায্য করতে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দলের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে:

আমাদের দলগুলি বার্বাডোসের সমুদ্র সৈকতে দিনরাত ডেটা সংগ্রহ এবং গুরুতরভাবে বিপন্ন (কচ্ছপের) মা ও বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

জোরেসোরে শুরু করে ঋতুটি প্রচুর কচ্ছপ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেষ হয়েছে – আর ইতোমধ্যে স্পেইটসটাউনের রাস্তায় একটি কচ্ছপ দেখা গেছে। এটাকে দেখে ফোন করার জন্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, খারাপ কিছু ঘটার আগেই তাকে সমুদ্র সৈকতে ফিরিয়ে দেওয়া গেছে। বাসা বাঁধার পর আলোতে বিভ্রান্ত একটি দিশেহারা বাসা বাঁধা নারী কচ্ছপও ছিল। ভাগ্যক্রমে তার নিরাপদে সমুদ্রে পৌঁছানো নিশ্চিত করার জন্যে আমাদের সেখানে ডাকা হয়।
আমাদের কচ্ছপগুলি প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এই মরসুমে সবার সাহায্য ও সমর্থন প্রয়োজন।

এই ধরনের গল্পগুলি উৎসাহজনক হলেও কচ্ছপগুলি সমুদ্রের উষ্ণ তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই প্রাচীন নাবিকরা দশ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে বিচরণ করলেও একজন ত্রিনিদাদীয় প্রকৃতিবিদ ইয়ান ল্যাম্বি এই প্রাণীগুলি কতটা আশ্চর্যজনক তা জনগণকে মনে করিয়ে দেওয়ার সুযোগ নিয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কানাডার নোভা স্কোশিয়াতে ট্রান্সমিটার লাগানো এবং ১০ মাস পরে ত্রিনিদাদের উত্তর উপকূলে চিহ্নিত দুটি লেদারব্যাক রুবি ও ইসাবেলের গল্প ভাগাভাগি করেছেন:

[রুবি]কে ১২,৮৯২ কিলোমিটার ভ্রমণ করার পর ২০২০ সালের মে মাসে লাস কুয়েভাস উপসাগরের সৈকতে পাওয়া যায় [এবং] জুলাই ২০১৯ সালে হ্যালিফ্যাক্সে ট্যাগ করা ইসাবেল[কে] ১২,২৫২ কিলোমিটার ভ্রমণের পর ২০২০ সালের মে মাসে গ্র্যান্ড রিভিয়ের উপসাগরের সৈকতে উদ্ধার করা হয়।

দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করে তীরে ভীড়ে ডিম পাড়ার জন্যে বাসা খনন করা অথবা আবার যাত্রা শুরু করার জন্যে সমুদ্রের দিকে ফিরে যাওয়া কচ্ছপগুলি আকর্ষণীয় প্রাণী — সুন্দর, সামুদ্রিক পরিবেশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিঃসন্দেহে সংরক্ষণের যোগ্য।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .