বেলিজের সহ-ব্যবস্থাপনা কাঠামো সম্প্রদায়গত সংরক্ষণের একটি মডেল

বেলিজের মহা নীল গহ্বর; ক্যানভা প্রো এর মাধ্যমে পাওয়া ছবি।

একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে ক্যারি-বোয়স পরিবেশগত সংবাদ নেটওয়ার্কে প্রথমবার প্রকাশিত এই পোস্টটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ নীচে প্রদর্শিত হবে৷

ক্যারোলি চ্যানোনা

একটি দেশের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), সম্প্রদায়গত নেতৃবৃন্দ, ব্যবসা ও সরকার সুরক্ষিত এলাকাগুলি সংরক্ষণে একসাথে কাজ করলে কী হবে? বেলিজে এটি শুধু একটি আশাবাদী ইচ্ছার চেয়ে বেশি কিছু। বেলিজীয় অংশীজনেরা ১৯৮৪ সাল থেকে সহ-ব্যবস্থাপনা নামে পরিচিত একটি অ্যাডহক চুক্তির ভিত্তিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্যে একসাথে কাজ করেছে এবং সম্প্রতি বেলিজ সরকার একটি নতুন সুরক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা কাঠামোর আওতায় তাদের প্রচেষ্টাকে আরো আনুষ্ঠানিক করেছে।

এটা বেলিজের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আলিঙ্গনের আরেকটি সংকেত, যা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবেশগত অখণ্ডতা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে। এই বছরের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ৩৬টি সাইটের চুক্তির মধ্যে যে ১৬টি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা নতুন কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হবে।

আজ পর্যন্ত বেলিজের ভূমির প্রায় ৪০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে সুরক্ষিত এবং সহ-ব্যবস্থাপনা অংশীদাররা এই প্রচেষ্টার অগ্রভাগে রয়েছে।

বেলিজ আমেরিকার নিউ জার্সি ষ্টেট (বা বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের) চেয়ে সামান্য বড় হলেও এর বিশাল জাতীয় সুরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থার (এনপিএএস) আওতায় ১০৩টি সুরক্ষিত এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বন সংরক্ষণ, প্রকৃতি সংরক্ষণ, জাতীয় উদ্যান, সামুদ্রিক সংরক্ষণ, ব্যক্তিগত সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, প্রাকৃতিক স্মৃতিচিহ্ন, পাখির অভয়ারণ্য, মৎস্য পোনা সংরক্ষণ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ।

বেলিজের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী নিকোল সোলানো বলেছেন ভ্রমণকারীদের ৬০ শতাংশেরও বেশি বেলিজে থাকাকালীন কমপক্ষে একটি সুরক্ষিত এলাকায় যায়।

তহবিল উন্নয়নের জন্যে উন্মুক্ত প্রকৃতি-বান্ধব পর্যটন

প্রাকৃতিক সম্পদ বেলিজের গর্বের উৎস ছাড়াও দেশের অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ বটে।

ক্যারিবীয় গড় জিডিপির ১৫.২ শতাংশের তুলনায় পর্যটন এই দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আনুমানিক ৪৫ শতাংশে অবদান রাখে এবং প্রবেশ ও অন্যান্য ফি’কে এই উদ্যানগুলির প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্যে অর্থায়নের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বেলিজ ছেড়ে যাওয়ার সময় দেশের প্রস্থান করের অংশ হিসেবে প্রতিটি দর্শনার্থীকে ২০ ডলার সংরক্ষণ ফি দিতে হয়। এই কর থেকে পাওয়া রাজস্ব সরাসরি তাদের প্রাথমিক অর্থায়ন হিসেবে সুরক্ষিত এলাকা সংরক্ষণ ট্রাস্ট (পিএসিটি) তহবিলে অবদান রাখে। পিএসিটি‘র জন্যে পাওয়া সমস্ত রাজস্বের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ একটি অনুদান তহবিলে জমা করা হয়।

সময়ের সাথে সাথে পিএসিটি একটি অনুদান-অর্থায়ন প্রক্রিয়া থেকে বেলিজের স্বীকৃত অভিযোজন তহবিলের জাতীয় বাস্তবায়নকারী সত্তায় (এনআইই) বিকশিত হয়েছে। পিএসিটি হ'লো ক্যারিবীয় দ্বিতীয় – এবং বেলিজের প্রথম – সবুজ জলবায়ু তহবিলের জাতীয় সরাসরি প্রবেশাধিকার সত্তা৷

সক্ষমতা তৈরি, সম্প্রদায়গত ক্রয় ও সুরক্ষা সম্প্রসারণ

বেলিজ লাল ম্যাকাওয়ের বাসস্থান; ক্যানভা প্রো এর মাধ্যমে পাওয়া ছবি।

সংরক্ষণের সাথে সাথে সহ-ব্যবস্থাপক ও তাদের ভূমিকাও বিকশিত হচ্ছে। সংরক্ষিত এলাকার অখণ্ডতা বজায় রাখার প্রয়োজনে, সহ- ব্যবস্থাপকরা দৃশ্যকল্প পরিকল্পনা ও অভিযোজিত ব্যবস্থাপনার মতো নমনীয় ব্যবস্থাপনা চর্চার দিকে ঝুঁকছে।

প্রবিধান বাস্তবায়নের পাশাপাশি সহ-ব্যবস্থাপনা চর্চার মধ্যে সম্প্রদায় কল্যাণ, জীববৈচিত্র্য গবেষণা ও সম্পদের টেকসই ব্যবহার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বেলিজ অডুবোন (পাখি পর্বেক্ষণকারী) সমিতির (বিএএস) মতো সংরক্ষণকারীরা তাদের সহ-ব্যবস্থাপনা চুক্তির বাইরে চলে যায়। বেলিজের আঞ্চলিক সবচেয়ে জীববৈচিত্র্য এলাকার কয়েকটিতে বিএএস-এর একটি জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি রয়েছে।

সংরক্ষণ ও উন্নয়নের বন্ধুর মতো অন্যান্য দলগুলি সতর্কতার সাথে চিকিবুল জাতীয় উদ্যানের বনভূমিকে অবৈধ লাল ম্যাকাও শিকারীদের থেকে রক্ষা করে।

এফসিডি গবেষণা ইউনিটের কঠিন কাজ ও জৈব-নিরীক্ষণে সহায়তা করার জন্যে ১৩ জন স্বেচ্ছাসেবককে ধন্যবাদ যার ফলে মোট ২৪টি ম্যাকাও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে (লাল ম্যাকাওয়ের বাসা বাঁধার শেষ মরসুমে) বন্য অঞ্চলে পৌঁছাতে পেরেছে।

প্রয়োগ, বাসস্থান পর্যবেক্ষণ, শিক্ষা, সচেতনতা ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের মতো সরকার-ভিত্তিক পদক্ষেপগুলিতে স্থানীয় প্রভাব তৈরি করতে পারার জন্যে সহ-ব্যবস্থাপনার সাফল্যকে কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে।

তবে চুড়ান্ত প্রত্যাশিতকরণের জন্যে বেলিজে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষিত এলাকাগুলি আলাদাভাবে পরিচালিত হয়। সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকাগুলি (এমপিএ) সরকারের মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, আবার জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলি সহ-পরিচালিত হয়। তার ওপর প্রতিটি সুরক্ষিত এলাকার নিজস্ব প্রবিধান রয়েছে যা প্রয়োগ করেন সুরক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপক।

বেলিজের সংরক্ষণ দৈত্যে রূপান্তর

বেলিজ বিশ্বের প্রথম জাগুয়ার অভয়ারণ্যের গর্ব করে। ক্যানভা প্রো এর মাধ্যমে পাওয়া ছবি।

টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে  বিএএসের মতো সংরক্ষণ অংশীদারদের সাথে একটি আনুষ্ঠানিক সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে প্রবেশ করেছে। বেলিজের প্রাচীনতম সংরক্ষণের বেসরকারি সংস্থা এই সমিতিটিসুরক্ষায় বিশ্বের প্রথম জাগুয়ার অভয়ারণ্য ও বিখ্যাত মহা নীল গহ্বরসহ সাতটি সাইট রয়েছে।

এছাড়াও এফসিডি একটি আনুষ্ঠানিক অংশীদারিত্বে প্রবেশ করেছে। গোষ্ঠীটি চিকিবুল জাতীয় উদ্যানের ৪,২৩,০০০ একর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের সহ-ব্যবস্থাপক।

বার্বাডোসের আয়তনের আনুমানিক চারগুণ এই উদ্যানটি বেলিজের বৃহত্তম সংরক্ষিত এলাকা এবং মধ্য আমেরিকার বৃহত্তম গুহা ব্যবস্থার আবাসস্থল।

সম্প্রতি প্রাকৃতিক_সংরক্ষণ (টিএনসি) এবং এর অংশীদাররা বেলিজ মায়া বন নামে পরিচিত উত্তর বেলিজের ২,৩৬,০০০ একর ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল সুরক্ষার জন্যে ৭.৬৫ কোটি ডলারে (প্রায় ৮২৯ কোটি টাকা) চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

বনটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠায় টিএনসির সাহায্যপুষ্ট প্রতিবেশী রিও ব্রাভো সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা অঞ্চলের সাথে মিলে এক কোটি ১০ লক্ষ একর সংরক্ষিত জমির নেটওয়ার্কে পোঁছাবে। বিএএস ১৯৬৯ সাল থেকে মায়া বনে সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছে।

মায়া পর্বতের মৌ-গোষ্ঠী মৌমাছি পালন অথবা উচ্চ-গুরুত্বের বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ পাখি অঞ্চলের (আইবিএএস) মধ্যে পাখির নির্দেশনা, প্রচেষ্টাগুলির সবই স্থানীয় গোষ্ঠীগুলির সক্ষমতা তৈরিতে মনোযোগী৷ এটা করার মাধ্যমে তারা তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যেতে এবং বিকল্প জীবিকার মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক চাপ কমাতে পারে বলে আশা করা যায়।

বেলিজের অডুবোন সমিতির নির্বাহী পরিচালক আমান্ডা বার্গোস-অ্যাকোস্তার মতে, “আমরা সাইটের ভেতর ও আশেপাশে বসবাসকারী লোকদের সমর্থন করতে চাই এবং দায়িত্বশীল নিয়ামক হিসেবে তাদের ভূমিকা গ্রহণ করতে চাই। তাদের কেনা-কাটা সেই ভারসাম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।”

জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থা বিধানের আওতায় ১৯৮২ সালে প্রথম সুরক্ষিত এলাকা নির্ধারণের চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বেলিজ পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ নীতিমালার দিক থেকে যথেষ্ট অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।

শুধু মৌখিক চুক্তি আর নয়, সহ-ব্যবস্থাপনা কাঠামো হলো উদ্যানের সীমানার ভেতরে ও বাইরে অংশীজনদের কাজের একটি বৈধতা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .