পরাধীনতা পর্যবেক্ষক প্রতিবেদন: কেনিয়া

ছবির সৌজন্যে আমেয়া নাগরাজন

গণমাধ্যম ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের একটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে। গ্লোবাল ভয়েসেসের অ্যাডভক্স গবেষণা উদ্যোগ পরাধীনতা পর্যবেক্ষক জালের মতো বিস্তৃত বা ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের ক্রমবর্ধমান ঘটনাকে পরীক্ষা করে। এই অংশটি পরাধীনতা পর্যবেক্ষকের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা কেনিয়া সম্পর্কিত ধারাবাহিক প্রতিবেদনের নির্বাহী সারাংশ। এখানে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন।

এই প্রতিবেদনটি কেনিয়াতে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের সবচেয়ে বড় উদাহরণগুলির একটি সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করে। প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কেনীয় সরকার গৃহীত নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারকারী সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক কর্মকাণ্ড ও নিয়ন্ত্রণকে বর্ণনা করবে। আলোকপাত করা প্রধান ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ ও অনলাইন নজরদারি, নির্বাচনের সময় ব্যক্তিগত ডেটার অপব্যবহার ও লঙ্ঘন এবং ভুল তথ্য ও মদদপুষ্ট বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা। সরকার কীভাবে এই কর্মকাণ্ডগুলি বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত করে এবং কেনীয় আইনে প্রায়শই অনুমোদিত হয় তা বিশ্লেষণ করা। উপরন্তু, এই প্রতিবেদনটি এই ধরনের ঘটনায় উদ্ভূত ক্ষতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে দৃষ্টি রেখে গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার উপর এই ধরনের কর্মের সাধারণ প্রভাব বিশ্লেষণ করে উপসংহারে আসে এবং পূর্বে উল্লিখিত বিশ্লেষণ থেকে উদ্ভূত সুপারিশগুলি তৈরি করে।

***

কেনিয়ার শাসন ও জনজীবনে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের গুরুতর প্রভাবে সৃষ্ট মানবাধিকার সমস্যার প্রতি জরুরি মনোযোগের প্রয়োজন। আজকের ডিজিটাল পটভূমিতে বিভ্রান্তি ও ভুল তথ্য দ্রুত গতিতে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারের কাছে আগের চেয়ে বেশি তথ্য ও তথ্যের প্রবেশাধিকার থাকায় এটি নাগরিকদের উপর নজরদারি করতে ও অনলাইনে সাংবাদিক বা সক্রিয় কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়। তার উপর ডিজিটাল যুগের আবির্ভাবের ভালো পরিপূরক হয়েছে সরকারের গোয়েন্দা সরঞ্জাম হিসেবে কাজ করতে পারার মতো বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার সমন্বয়। দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট অগ্রসর ও বিকশিত হলেও কেনিয়াতে এটি ক্রমেই স্বাধীনতা হারাচ্ছে। কেনীয় সরকার ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের আরো কাছাকাছি যাওয়ার ফলে এর প্রভাবে গণতন্ত্র ম্লান হয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে।

এই প্রতিবেদনটি এই দিকটিতে সাফল্যের গ্যারান্টি দেওয়ার জন্যে নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয়গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি চিহ্নিত করে। প্রথমত গণতন্ত্র বজায় রাখা নির্ভর করে নাগরিকদের রাজনৈতিক পছন্দে অংশগ্রহণের অধিকার সুরক্ষার ওপর। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও অনলাইন জগতের সাথে সম্পর্কিত আইন, প্রবিধান ও অন্যান্য ব্যবস্থা কার্যকরভাবে পরিকল্পনার জন্যে সুশীল সমাজকে সক্রিয়ভাবে জড়িত হতে হয়। অবশ্যই অনলাইন স্থানকে সীমাবদ্ধতা বা সেন্সর ছাড়াই সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যদের জন্যে প্রবেশাধিকারযোগ্য হতে হবে। উপরন্তু অনলাইন ও অফলাইন উভয়ই স্থানেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। একইভাবে নানজালা নিয়াবোলা তার “ডিজিটাল গণতন্ত্র, অ্যানালগ রাজনীতি: যেভাবে ইন্টারনেট যুগ কেনিয়াকে রূপান্তরিত করছে,” বইয়ে বলেছেন ” আমাদের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ডিজিটাল যেভাবে পরিবর্তন করছে তা বুঝতে ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্র বিশেষভাবে নাগরিকদের ডিজিটাল অধিকার বোঝার জন্যে একটি নতুন আবশ্যকতা দরকার।”

ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহার ও তথ্যপ্রযুক্তি গ্রহণের সাথে সাথে কেনিয়া তার অর্থনীতি ও শাসনের ডিজিটালকরণে দারুণ অগ্রগতির অভিজ্ঞতা অর্জন করা সত্ত্বেও ইন্টারনেট প্রযুক্তি এবং অন্যান্য নতুন ও বিকাশমান প্রযুক্তির দ্রুতগতির ফলে দমন ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের জন্যে সরকারের উল্লেখযোগ্য টুলকিট প্রাপ্তি  বৃদ্ধি মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জগুলিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। কেনিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের উত্থানের ফলে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্ভাবনা রোধ করা হচ্ছে। ডিজিটাল যোগাযোগের নজরদারি, পর্যবেক্ষণ ও বাধা, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণের অলস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দুর্বল ডিজিটাল অধিকার আইনী কাঠামোর সশস্ত্রীকরণের মতো সবকিছুকেই কেনীয় সরকার মৌলিকভাবে রাজনৈতিক পছন্দ, ভোট এবং স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, সমাবেশ, ও সমিতির মতো স্বাধীনতার অধিকারকে দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এই নতুন-আবিষ্কৃত নিয়ন্ত্রণ নাগরিকদের ডিজিটাল অধিকার ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে বলি দিয়ে কর্তৃত্ববাদের হাতকে শক্তিশালী করেছে।

উপসংহারে বলা যায় স্বাধীনতা দান ও রাজনৈতিক বিতর্ক পরিমাপের সেই একই ডিজিটাল প্রযুক্তিই বিশেষত ডেটা অপব্যবহার, ব্যাপক নজরদারি, মিথ্যা তথ্য ও ইন্টারনেট বন্ধ করে যা অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে নির্যাতনের সুযোগ দিতে পারে। অনলাইনে নাগরিকদের এই অংশগ্রহণ ও নাগরিক সম্পৃক্ততার অগ্রগতি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্যে কাজে লাগানো যেতে পারে। নাগরিকদের ভালভাবে অবহিত এবং একটি শক্তিশালী নাগরিক সমাজের মাধ্যমে তাদের ডিজিটাল অধিকারগুলিকে জোরদার করা গেলে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের চর্চাগুলি সফলভাবে মোকাবেলা, বা অন্তত ধীরগতির করা যেতে পারে।

প্রযুক্তিকে প্রায়শই ভুলভাবে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হিসেবে দেখা হলেও সত্য হলো এটি রাজনীতিতে উপকারী বা খারাপ প্রভাব ফেলছে কিনা তা নির্ভর করে কে এটির মালিক বা কার এটিতে যথেষ্ট প্রবেশাধিকার রয়েছে তার উপর। এতে কর্তৃত্ববাদী সরকারের যথেষ্ট প্রবেশাধিকার থাকলে এটি নিরপেক্ষ হতে পারে না। ডিজিটাল যুগে কেনিয়ার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত সম্পর্কে চিন্তা করার সময় শুধু গণতন্ত্রের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলিকে তীব্রতর করার আশা ছাড়া কেউ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উত্থানকে উপেক্ষা করতে পারে না। রাজনীতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা প্রত্যাশিতকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণ, সরকার ও সমাজের মধ্যে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান যুগ কেনিয়ার গণতন্ত্রের জন্যে হুমকির কারণ। প্রযুক্তির উন্নতি ও জটিলতর হয়ে উঠার সাথে সাথে পক্ষপাতদুষ্ট প্রমিত শাসন প্রযুক্তির বৈষম্যমূলক বিষয় থেকে শুরু করে, সত্য ও বাস্তবতার রেখাকে অস্পষ্টকারী প্রতারক-ভিডিওর গণতন্ত্রকে আরো ব্যাহত করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

এখানে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন।

পরাধীনতা পর্যবেক্ষক

গণমাধ্যম ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের একটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে। গ্লোবাল ভয়েসেসের অ্যাডভক্স গবেষণা উদ্যোগ পরাধীনতা পর্যবেক্ষক জালের মতো বিস্তৃত বা ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের ক্রমবর্ধমান ঘটনাকে পরীক্ষা করে।

কেনিয়ার প্রতিবেদনের একটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .