শ্রীলঙ্কায় কৌতুক অভিনেতা ও ইউটিউব বিষয়বস্তু স্রষ্টা বৌদ্ধ ধর্ম বিদ্রুপের অভিযোগে গ্রেপ্তার

Screenshot from the YouTube video "Am I really funny?" A standup comedy by Nathasha Edirisooriya at Colombo Comedy Central YouTube page. Fair use.

ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি “আমি কি সত্যিই মজার?” কলম্বো কমেডিসেন্ট্রাল ইউটিউব পৃষ্ঠায় নাতাশা এদিরিসুরিয়ার একটি মঞ্চ কৌতুক৷ ন্যায্য ব্যবহার।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা এখনো তীব্র অর্থনৈতিক সংকটরাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠছে। তবে স্বাধীন মতপ্রকাশের বিষয়, কৌতুকের সীমারেখা ও ধর্মীয় বক্তৃতা নিয়ন্ত্রণকারী আইনগুলি নিয়ে একটি নতুন জনবিতর্ক দেশকে জড়িয়ে ফেলেছে।

শ্রীলঙ্কার মঞ্চ কৌতুকাভিনেত্রী নাতাশা এদিরিসুরিয়াকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় আইসিসিপিআর আইনে ২৭ মে, ২০২৩ তারিখে বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়প্রতিবেদন অনুসারে এপ্রিল মাসে কলম্বোর একটি কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘মোদাভিমানায়া‘ নামে একটি কৌতুক প্রদর্শনীতে অভিনয়ের সময় ভগবান বুদ্ধ ও বৌদ্ধ বালিকা পাঠশালাগুলি সম্পর্কে তার কথিত অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠানটি সম্বলিত ইউটিউব ভিডিও চাউর হয়ে কিছু দর্শকের মধ্যে ক্ষোভের ঢেউ তোলে। ফলে ঘৃণামূলক বক্তব্য, অনলাইনে এদিরিসুরিয়ার কঠোর সমালোচনা এবং হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি চলতে থাকে। পরে এদিরিসুরিয়া তার আগের মন্তব্যের জন্যে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে একটি সর্বজনীন ভিডিও প্রকাশ করে।

তা সত্ত্বেও বৌদ্ধ বিষয়ক কমিশনার ও কিছু কিছু রক্ষণশীল বৌদ্ধ ভিক্ষু তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করায় ভিডিওটি সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চ থেকে মুছে ফেলা হয়। তাকে ২৮ মে, ২০২৩ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিত সাক্ষীদের চিহ্নিতের পর তাদের বক্তব্য রেকর্ড করার লক্ষ্যে সিআইডি একটি তদন্ত শুরু করে

পরবর্তীকালে ৩১ মে, ২০২৩, বুধবার, কলম্বো কৌতুক কেন্দ্রীয় ইউটিউব চ্যানেলের সাথে জড়িত সন্দেহে এদিরিসুরিয়ার ভিডিও সম্প্রচারে কথিত ভূমিকার কারণে ইউটিউব চ্যানেল ‘এসএল-ভ্লগ’-এর স্রষ্টা ব্রুনো দিবাকরকে কম্পিউটার অপরাধ তদন্ত বিভাগ গ্রেপ্তার করে। দিবাকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ সংগঠিত করার পাশাপাশি নাতাশা এদিরিসুরিয়ার পরিবেশনায় সহায়তা ও উৎসাহিত করার অভিযোগ আনা হয়। এদিরিসুরিয়ার মতোই তাকে ৭ জুন পর্যন্ত রিমান্ডে নেওয়া হয়

কলম্বো থেকে টুইটার ব্যবহারকারী চামিরা দেদ্দুওয়াগে টুইট করেছেন:

নাতাশা এদিরিসুরিয়ার মন্তব্য নিয়ে ৮ ঘণ্টার বেশি জিজ্ঞাসাবাদের পর সিআইডি #এসএলভ্লগসের মালিককে গ্রেপ্তার করেছে: পুলিশ গণমাধ্যমের মুখপাত্র ##এলকেএ। আমরা #ইরান হওয়ার সঠিক পথে আছি। @জাতিসংঘমানবাধিকার @মানবাধিকারকমিশনারশ্রীলঙ্কা আপনারা এটা দেখছেন কি?

বৌদ্ধ ভেন সাধারথানা থেরোকে নাতাশা এদিরিসুরিয়া ও ধর্ম অবমাননামূলক মন্তব্যের অভিযোগে সিআইডির তদন্তাধীন যাজক জেরোম ফার্নান্দোকে লক্ষ্য করে ঘৃণ্য মন্তব্যের জন্যে ২৯ মে, ২০২৩ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়। শ্রীলঙ্কার ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রী বিদুর বিক্রমনায়ক উল্লেখ করেছেন বিদ্যমান আইনগুলি ঘৃণাত্মক বক্তব্যের এই ধরনের উদাহরণগুলিকে মোকাবেলা করার জন্যে অপর্যাপ্ত বলে শ্রীলঙ্কা ধর্মদ্রোহ ও অনলাইন ঘৃণার ক্রমবর্ধমান ঘটনা বন্ধ করতে একটি নতুন আইনের পরিকল্পনা করছে৷

ব্যাপক নিন্দাবাদ

দেশে-বিদেশে শ্রীলঙ্কাবাসীরা বাকস্বাধীনতা রোধের প্রচেষ্টা হিসেবে গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে।

ঐতিহাসিক শামারা ওয়েটিমুনি মন্তব্য করেছেন:

লঙ্কা দ্বীপের সাথে যুক্ত ‘২৫০০ বছরের অবিচ্ছিন্ন ইতিহাস’ ও বহু শতাব্দী ধরে উপনিবেশবাদ সহ্য করা বৌদ্ধধর্মের একটি রসিকতায় এতো হুমকির সম্মুখীন হওয়া গভীরভাবে হতাশাজনক। #নাতাশা এদিরিসুরিয়া

মানবাধিকার কর্মী রুকি ফার্নান্দো টুইট করেছেন:

মঞ্চ কৌতুকাভিনেত্রী এবং মানবাধিকার রক্ষক #নাতাশাএদিরিসুরিয়ার শুদ্ধোধনের মন্তব্যে ধর্মীয় বিদ্বেষের (আইসিসিপিআর আইনের ৩.১ অনুচ্ছেদ) পক্ষে বা প্রচার করেনি এবং এতে বৈষম্য, শত্রুতা বা সহিংসতা উস্কে দেওয়ার (আইসিপিপিআর আইনের ৩.২ অনুচ্ছেদ) মতো উপাদান নেই।

অধিকার-ভিত্তিক সংস্থা বিকল্প নীতি কেন্দ্র (সিপিএ) এক বিবৃতিতে বলেছে:

#এলকেএ কৌতুকাভিনেত্রী নাতাশা এদিরিসুরিয়াকে দেশের বাক স্বাধীনতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে # আইসিসিপিআর আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারটিকে #হয়রানি ও ভিন্নমতের কণ্ঠকে #ভয় দেখানোর একটি বিস্তৃত নকশার অংশ যুক্তি দিয়ে #সিপিএ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কবি ইমাদ মজিদ টুইট করেছেন:

নাতাশা এদিরিসুরিয়া পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের অন্যদের সাথে অযৌক্তিক তুলনা সম্পর্কে সামাজিক মন্তব্য করেছেন। তিনি যা “উস্কানি” দিয়েছেন আমাদের মধ্যে অনেকে সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে হাসি। তার গ্রেপ্তার রাষ্ট্র যেভাবে নিজ জনগণের ক্ষতি করে তার দৃষ্টান্তস্বরূপ।

দিনুশিকা দিসানায়েকে টুইট করেছেন:

ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়ে মতামত ভাগাভাগি করার জন্যে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় একজন কৌতুকাভিনেত্রীর গ্রেপ্তার আমাকে মতাপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। শ্রীলঙ্কা পিচ্ছিল ঢালে (পিছিয়ে যাচ্ছে)।

আইনবিদ, লেখক ও সম্পাদক সঞ্জয় উইলসন জয়সেকেরা এই আবেদনটি করেছেন:

এখনই মঞ্চ কৌতুকাভিনেত্রী নাতাশা এদিরিসুরিয়ার মুক্তি দিন!
শিল্প ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করুন!
পশ্চাৎপদ ধর্মীয় উগ্রবাদকে পরাজিত করুন!
তার বিদ্রুপাত্মক ব্যঙ্গাত্মক পরিবেশনা কোনো আইনে দোষী নয়। #নাতাশাকেমুক্তকর #নাতাশাকেছাড়ো #এলকেএ

আইসিসিপিআর আইন ব্যবহার করে বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা

নাতাশা এদিরিসুরিয়া ও ব্রুনো দিবাকর উভয়কেই বিতর্কিত আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চুক্তি (আইসিসিপিআর) আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই আইনে তারাই প্রথম গ্রেপ্তার নয়

সুরকার রিহাব মাহামুর টুইট করেছেন:

আইসিসিপিআর এর ১৮ ধারা চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার সমর্থন করলেও নাতাশা এদিরিসুরিয়াকে গ্রেপ্তারসহ শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বিদ্বেষের উস্কানির বিরুদ্ধে সুরক্ষার অজুহাতে অপব্যবহৃত হয়েছে।

একটি বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আইসিসিপিআর আইনটি শ্রীলঙ্কায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার জন্যে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ১৯৬টি দেশে নাগরিক সমাজের অবস্থা ও নাগরিক স্বাধীনতা অনুসরণ করার একটি গবেষণা হাতিয়ার সিভিকাস মনিটর শ্রীলঙ্কায় আইসিসিপিআর আইনের বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করা অপব্যবহারের বেশ কয়েকটি উদাহরণ নথিভুক্ত করেছে

‘হাসার অধিকার নেই’ শিরোনামে দৈনিক এফটি’র একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে:

শ্রীলঙ্কায় ঘৃণাত্মক বক্তৃতা আইনের নির্বাচিত প্রয়োগে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহল বৌদ্ধ, তাদের ধর্মযাজক ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়মুক্তভাবে সহিংসতার উস্কানির সাথে সাথে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গিলিকে ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে আইনটির একটি স্পষ্ট ধরন দেখা যাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .