ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলার মাদুরো শাসন সমর্থনে ব্রাজিল ও ভেনিজুয়েলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া

ব্রাজিলে ২৯ মে ২০২৩ তারিখে বলিভারীয় প্রজাতন্ত্র ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোর আনুষ্ঠানিক সফর। বাম থেকে ডানে: নিকোলাস মাদুরো, লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ফ্লিকার/ পালাসিও দা প্লানালতো (সৃজনী সাধারণ অনুমতি ২.০)

ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো আট বছরে প্রথমবার এই ২৯ মে তারিখে ব্রাজিল সফর করেন। তার সফরের সময় ব্রাজিলের শ্রমিক দলের ব্রাজিলের নতুন রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা তাকে স্বাগত জানান। ব্রাসিলিয়াতে লাতিন আমেরিকার নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন উদযাপনের আগে এই বৈঠকটি হয়।

মাদুরোর শাসনব্যবস্থা নিয়ে ভেনিজুয়েলার স্বৈরশাসনের “আখ্যানটি বানোয়াট” এর মতো বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন লুলা। তিনি মাদুরোর সফরকে একটি “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে অভিহিত করে “ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে একটি সংস্কার রয়েছে” দাবি করেছেন। তিনি আরো বলেছেন:

Eu vou em lugares que as pessoas nem sabem onde fica a Venezuela, mas sabe que a Venezuela tem problema na democracia. É preciso que você construa a sua narrativa e eu acho que, por tudo que conversamos, a sua narrativa vai ser infinitamente melhor do que a que eles têm contado contra você.

আমি এমন জায়গায় যাই যেখানে লোকেরা ভেনিজুয়েলা কোথায় তা জানলেও এটা জানে যে ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। আপনারও (মাদুরো) একটি আখ্যান তৈরি করা দরকার এবং আমরা সব কথা বলার পরেও আমি মনে করি আপনার বর্ণনাটি আপনার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার থেকে অসীমভাবে ভাল হবে।

ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিবেদন সত্ত্বেও ভেনিজুয়েলার সরকারকে বৈধতা দেওয়ায় লুলা তার মন্তব্যের জন্যে কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছেন।

গণতন্ত্রের অগণিত পর্যবেক্ষক ভেনিজুয়েলাকে কর্তৃত্ববাদী বলে মনে করে। সাম্প্রতিক ইকোনমিস্টের গণতন্ত্র সূচক এটিকে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনের স্থান দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা_সদন ভেনিজুয়েলাকে “মুক্ত নয়” মান দিয়েছে।

স্বাধীনতা_সদনের প্রতিবেদন অনুসারে ‘কর্তৃপক্ষ কার্যত রাজনৈতিক ভিন্নমতের সকল চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে, নাগরিক স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করেই বিরোধীদের বিচার করছে৷’ ভেনিজুয়েলা রাষ্ট্রটিও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে তদন্তাধীন রয়েছে।

লুলার অবস্থান চিলির বামপন্থী গ্যাব্রিয়েল বোরিক ও ডানপন্থী উরুগুয়ের লুইস লাকাল পাউয়ের মতো এই অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রপতিদের সমালোচনা উস্কে দিয়েছে। বোরিক বলেছেন ভেনিজুয়েলার বর্তমান পরিস্থিতি “একটি নির্মিত আখ্যান নয়, বরং একটি গুরুতর বাস্তবতা” এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে এটি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাওয়ার কথা স্মরণ করেছেন। ল্যাকেলে পাউ বলেছেন ভেনিজুয়েলার সংকটকে “একটি আখ্যান” বলা শুনে তিনি “আশ্চর্য” হয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন অন্যান্য জাতি “আঙুল দিয়ে সূর্যকে ঢেকে রাখার চেষ্টা”র মতো নিকৃষ্ট কাজ করতেই পারে।

ব্রাজিলীয়রা লুলার ঘোষণাগুলিকে ভালভাবে না নিলেও পরের দিন তিনি তা দ্বিগুণ করেন। অলাভজনক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ব্রাজিলীয় নেতাকে সম্বোধন করে একটি বক্তব্য প্রকাশ করেছে।

এতে তারা লিখেছে:

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বিভিন্ন বিশ্ব নেতারা রাষ্ট্রপতি মাদুরোর সাথে দেখা করে নিজেরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যেকোনো আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালনের কথা বললেও মাদুরো সরকারের আলোচনার বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি লুলা নিজেকে মাদুরোর স্বৈরাচারী মিত্রদের সাথে একীভূত করে ভেনিজুয়েলাকে একটি বিশাল মানবিক ও মানবাধিকার সংকট থেকে উদ্ধারের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। (…) রাষ্ট্রপতি লুলার অসম্মানজনক মন্তব্যে অবমূল্যায়িত নেতৃত্বকে পুনরুদ্ধারের প্রতিটি সুযোগ অনুসরণ এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করা উচিত। দক্ষিণ আমেরিকার নেতাদের মিলনমেলায় ভেনিজুয়েলার জরুরী অবস্থা ও এর ফলে সৃষ্ট অভিবাসন সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গত কয়েক বছরে ব্রাজিল ভেনিজুয়েলার মানবিক সংকটের প্রভাব অনুভব করেছে। গত মার্চে পর্যন্ত ১০০,০০০ ভেনিজুয়েলা শরণার্থী ও অভিবাসী দেশে প্রবেশ করেছে – ব্রাজিলে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভেনিজুয়েলার।

লুলার পূর্বসূরি অতি-ডানপন্থী জাইর বলসোনারো রাষ্ট্রপতি হিসেবে হুয়ান গুয়াইদোকে স্বীকৃতি দিয়ে মাদুরোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ব্রাজিলে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন এবং তার প্রচারণার সময় প্রতিবেশী দেশে মানবিক সংকটের চিত্রকে কাজে লাগিয়ে ২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টি জয়ী হলে ব্রাজিলে কী হতে পারে সেই ভয় দেখান। তবে হুগো শ্যাভেজের রাষ্ট্রপতিত্বের সমসাময়িক মেয়াদকালে ১৯৯৯ সালে কংগ্রেসম্যান থাকাকালীন বলসোনারো তাকে “লাতিন আমেরিকার একটি আশা” হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন

ব্রাজিলীয় সাংবাদিক জোয়া পাওলো শার্লে লুলার “বিকল্প তথ্য-প্রমাণ” সম্পর্কে টুইট করেছেন: 

ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি যিনিই হোন না কেন তার ভেনিজুয়েলার সমস্যাটি কেবল “আখ্যানের বিষয়”, এটি “ভুয়া খবর”, এটি “বিকল্প ঘটনা” বলাটা খুবই বেদনাদায়ক। এতোদিন ডানপন্থীরা বাস্তবতাকে খণ্ডন করতে এই ব্যবস্থাটা ব্যবহার করতো।

লুলার মন্তব্যে ভেনিজুয়েলার টুইটারে ক্ষুদ্ধ অনেক প্রতিক্রিয়া্র মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাগাভাগি করা টুইটটিতে নির্মিত বর্ণনা সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্য প্রকাশ করা লুলার একটি ভিডিও দেখানো হয়েছে।

ভেনিজুয়েলার সাংবাদিক ভিক্টর আমায়া ভেনিজুয়েলার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে প্রতিবেদিত তথ্যসহ লুলার বর্ণনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন:

বর্ণনা: নির্যাতন, রাজনৈতিক বন্দি, সংবিধান লঙ্ঘন, সরকারি কর্তৃপক্ষের উপর হামলা, ক্ষমতা পৃথকীকরণ দমন, রাজনৈতিক অযোগ্যতা, নির্বাচনী জালিয়াতি, ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি, রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ, সেন্সর, অস্বচ্ছতা, মতামতের অপরাধীকরণ…

ভেনিজুয়েলার মানবাধিকার সংস্থা প্রোভিয়া যখন লুলাকে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় সহিংসতার শিকারদের সম্মান করতে বলে, তখন অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা ২০১৪ সালে মাদুরো ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য-প্রমাণ দেখানোর সুযোগ নেয়।

জনাব লুলা, শুধু এই ২০২৩ সালে প্রায় ৮,৯০০ ভুক্তভোগী ফৌজদারি আদালতে ভেনিজুয়েলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনঃতদন্তকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে।

এটি শুধু “নির্মিত বর্ণনা” নয়, এটি বেসামরিক ও ভিন্নমতাবলম্বী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনার অংশ, জাতিসংঘ যেমন সতর্ক করেছে।

আমরা ভেনিজুয়েলা রাষ্টের ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ না পাওয়া সকল ভুক্তভোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন চাই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .