উরুগুয়ের নীরবতার মিছিলের প্রশ্ন: ‘স্বৈরাচারের হাতে নিখোঁজ আমাদের প্রিয়জনরা কোথায়?’

বার্ষিক ঐতিহ্যবাহী নীরবতার মিছিল “মার্চা দেল সিলেনসিও” এর সময় মন্টেভিডিওর ১৮ জুলাই অ্যাভিনিউতে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছে| ছবি: টিভি সিউদাদের পর্দাছবি

প্রতি বছর ২০ মে সন্ধ্যায় সারা উরুগুয়ের হাজার হাজার মানুষ মন্টেভিডিওর আইকনিক ১৮ জুলাই অ্যাভিনিউ জুড়ে নীরবে মিছিল করে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ছাড়া ১৯৯৬ সাল থেকে বিক্ষোভগুলি সংগঠিত হয়েছে। তাদের লক্ষ্য ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শাসনকারী উরুগুয়ের নাগরিক-সামরিক একনায়কত্বের অধীনে আটক ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্মরণ করা।

মার্চা দেল সিলেনসিও (নীরবতার মিছিল) এর নীরব জনতা এখনো নিখোঁজদের ছবিসহ পোস্টার নিয়ে তারা কোথায় আছে প্রশ্ন করে রাষ্ট্রের কাছে সত্য ও ন্যায়বিচার দাবি করে। তারা শিকারের পরিবার এবং উরুগুয়তে আটক ও নিখোঁজ মা ও পরিবারের সমিতির (ফামিদেসা) নেতৃত্বাধীন।

এই বছরের ২৮ তম সংস্করণটিকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হচ্ছে৷ ফামিদেসার মতে উরুগুয়ে ও বিদেশে ৭৭টি বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের সবার দাবি: “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর কখনো নয়।”

প্রতি বছরের মতো হাজার হাজার @ফামিদেসার সাথে মিছিল করেছে।
তারা কোথায়? #নীরবমিছিল২০২৩ #মেস্মরণেরমাস

ফামিদেসা অনুসারে মার্কিন-সমর্থিত অভিযান কন্ডোরকে সহযোগিতাকারী ১৯৭ জন উরুগুয়েবাসী ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার স্বৈরশাসকদের হাতে নিখোঁজ হয়।

রাফায়েল লেজামা গঞ্জালেজ ১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনায় ২৩ বছর বয়সে অপহৃত হয় যাকে অটোমোটরস অরলেত্তি নামে কুখ্যাত গোপন আস্তানায় অত্যাচার করা হয়। আজ পরিবার সমিতির সদস্য তার মা আলবা গঞ্জালেজ এখনো উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করছেন।

এই বছরের মিছিলের প্রাক্কালে একটি সংবাদ সম্মেলনে গঞ্জালেজ বলেছেন অনুষ্ঠানটি সত্য দাবি করার একটি সুযোগ যাকে এখনো “সশস্ত্র বাহিনী অপহরণ করে রেখেছে ” এবং নিহতদের পরিবারগুলির রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাছে অনেকবার প্রতিক্রিয়া দাবির কথা স্মরণ করেছেন, জানিয়েছে সংবাদপত্র লা দিয়ারিয়া

তিনি আরো বলেন পরিবারগুলি আর “অন্ধ অনুসন্ধান” চালিয়ে যেতে পারে না। “আমাদের যার তথ্য দেওয়ার আছে তাকে প্রয়োজন। নীরবতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভেঙে দেওয়া জরুরি,” তিনি বলেন

ন্যায়বিচারের জন্যে আইনি লড়াই

প্রতিবেশী আর্জেন্টিনায় পরিচালিত বিচারের বিপরীতে উরুগুয়ে ১৯৮৬ সালে লে দে ক্যাদুসিদাদ (রাষ্ট্রের শাস্তিমূলক দাবি মেয়াদোত্তীর্ণ আইন) নামে একটি আইন পাস করে। অনেকের সাধারণ ক্ষমা হিসেবে বিবেচনা করা এই আইনটি স্বৈরশাসনামলে সংঘটিত অপরাধে জড়িত বলে অভিযুক্ত সামরিক ও পুলিশ কর্তাদের বিচার করা কঠিন করে তুলেছে।

গত দশ বছরে ন্যায়বিচার পেতে ভুক্তভোগীদের আইনি লড়াই করতে হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত ২০১০ সালে লে দে ক্যাদুসিদাদকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে ২০১১ সালে “রাষ্ট্রের শাস্তিমূলক ক্ষমতার পরিপূর্ণ চর্চা পুনরুদ্ধার” এর একটি নতুন আইন (লে ১৮.৮৩১) পাশ করে। সর্বোচ্চ আদালত ২০১৩ সালে নতুন আইনের দুটি অনুচ্ছেদকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেও ২০২৩ সালের মে মাসে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে আইন ১৮.৮৩১ আবার কার্যকর হয়।

এই বছরের মার্চ মাসে এই মামলাগুলির জন্যে একটি বিশেষ অভিসংশন কার্যালয় উরুগুয়ের ক্যানেলোনেসের একটি গোপন কেন্দ্রে নির্যাতন চালানোর জন্যে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে। স্বৈরাচারী আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে এটাই হলো প্রথম সাজা

সাংবিধানিক আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পাবলো রদ্রিগেজ আলমাদা ১৯৮০ এর দশক থেকে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের প্রক্রিয়াগত পার্থক্য সম্পর্কে স্থানীয় গণমাধ্যমে লিখেছেন। তিনি উরুগুয়ের অবশিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলির উপর জোর দিয়েছেন:

Existe una luz de esperanza, porque la sentencia de la SCJ 286/2022, del 10 de mayo de 2022, declaró la constitucionalidad de la Ley 18.831. Esa posición jurisprudencial de la SCJ permitirá que se continúe con la investigación, y determinación y castigo de los responsables de los crímenes de lesa humanidad cometidos en la última dictadura cívico-militar.

Pero la impunidad que se estableció en Uruguay desde el año 1986, año en que se aprobó la ley de caducidad, impidió que se castigara a muchos militares y policías que cometieron los crímenes referidos, porque fallecieron antes de ser condenados, por tanto, para las víctimas de dichos crímenes no hubo ni habrá justicia.

উরুগুয়ের সর্বোচ্চ আদালত (এসসিজে) ১০ মে ২০২২ তারিখে  ২৮৬/২০২২ রায় দিয়ে আইন ১৮.৮৩১ এর সাংবিধানিকতা ঘোষণা করায় এখনো আশার আলো আছে। এসসিজের এই আইনশাস্ত্রীয় অবস্থান বিগত বেসামরিক-সামরিক স্বৈরশাসনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ীদের তদন্ত, অভিযুক্তি এবং শাস্তি অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেবে।

কিন্তু ১৯৮৬ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ আইন অনুমোদনের সময় থেকে উরুগুয়েতে যে দায়মুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তা এইসব অপরাধ করা অনেক সামরিক ও পুলিশ কর্তাদের শাস্তি রোধ করে। অনেকেই দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই মারা যাওয়ায় এই অপরাধের ভুক্তভোগীরা কোন বিচার পায়নি এবং পাবেও না।

স্মৃতি ও শ্রদ্ধার ফুল

এখন কয়েক বছর ধরে নিখোঁজদের আত্মীয়রা তাদের প্রতীক হিসেবে একটি পাপড়ি হারানো তারা ফুল ব্যবহার করে আসছে। নিখোঁজদের স্মরণে স্মৃতির জন্যে মে মাসে উৎসর্গীকৃত এই ফুলগুলি সারা উরুগুয়েতে এখনো দেখা যায়।

উরুগুয়ের রাষ্ট্রপতি ল্যাকেলে পাউ এই বছরের নীরবতার মিছিল সম্পর্কে মন্তব্য না করলেও সরকার স্বৈরশাসনের সংরক্ষণাগারগুলিকে প্রকাশ্য করার জন্যে একটি খসড়া আইন উপস্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।

ল্যাকেলে পাউ তার ২০১৯ সালের প্রচারাভিযানের সময় নিখোঁজদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার ২০১৪ সালের প্রচারাভিযানের সময় নিখোঁজদের অনুসন্ধান বন্ধ সমর্থনে দেওয়া একটি ঘোষণার জন্যে বারবার অনুশোচনা করেন:

Cuando me preguntan si seguiría buscando a los desaparecidos dije que no y yo no soy quién para ponerme en los zapatos de aquella persona que está buscando a su hijo, nieto o su sobrino y decirle que el presidente de la República y el Estado no lo va a buscar más, porque ese es un tema del corazón. Y ahí cometí un error humano que hasta el día de hoy me pesa.

আমি নিখোঁজদের অনুসন্ধান করবো কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে আমি বলেছিলাম আমি করবো না, আর এখনো ছেলে, নাতি বা ভাগ্নেকে অনুসন্ধানরত ব্যক্তিদের জুতোয় দাঁড়ানোর আমি কে এবং তাদের বলবো প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্র তাদের আর অনুসন্ধান করবে না কারণ এটি হৃদয়ের ব্যাপার। আর সেখানেই আমি একটি মানবিক ভুল করেছি যা এখনো আমার উপর চেপে বসে আছে।

বুয়েনস আইরেসে ১৯৭৬ সালে চারজন উরুগুয়েবাসীকে মৃত পাওয়ার পর থেকে ২০ মে তারিখটি সেই দিনটিকে স্মরণ করার জন্যে বাছাই করা হয়। চারজনের একজন ছিলেন রাজনীতিবিদ হেক্টর গুতেরেজ রুইজ। তার নাতি ২৮ বছর বয়সী সান্তিয়াগো গুতেরেজ এখন জাতীয় পার্টির সাথেই যুক্ত।

এল পাইসের সাথে কথা বলার সময় গুতেরেজ বলেন তিনি বিশ্বাস করেন নিখোঁজরা রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে এবং তিনি “রাষ্ট্রপিতিকে প্রকাশ্যে ও খোলাখুলিভাবে কারণটির প্রতি তার অবস্থান জানাতে পছন্দ করবেন এবং তার দল জাতীয় পার্টিকে এর গণতন্ত্রের জন্যে প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের ইতিহাসের কারণে আরো বেশি জোরালো হতে হবে।”

নিখোঁজদের স্মৃতির জন্যে উরুগুয়েতে এখনো বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি ও বিক্ষোভ হয়।

প্রকল্প “ইমাহেনেস দেল সিলেনসিও (নীরবতার ছবি)” উরুগুয়ের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির সদর দপ্তরের সামনে মূল দাবির ছবি তুলেছে:

স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখা সবার দায়িত্ব।

সত্য ও ন্যায় বিচার রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার দায়িত্ব।

📷 সদর দপ্তর
১- বিস্তৃত ফ্রন্ট
২- জাতীয় পার্টি
৩- কলোরাডো পার্টি
৪- পৌরসভা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .