নতুন প্রতিবেদনে একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পেগাসাস গোয়েন্দা সরঞ্জামের প্রথম নথিভুক্ত ব্যবহার উন্মোচন

ছবি ওয়াল্ডেমারআনস্প্ল্যাশ অনুমতির আওতায় মুক্তভাবে ব্যবহারের জন্যে

একটি নতুন তদন্ত আন্তর্জাতিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পেগাসাস গোয়েন্দা সরঞ্জামের ব্যবহার উন্মোচন করেছে।

এখনি প্রবেশাধিকার, সাইবারহাব-এএম, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সম্পর্কিত মুঙ্ক স্কুলের নাগরিক গবেষণাগার (নাগরিক গবেষণাগার), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিরাপত্তা গবেষণাগার এবং একজন স্বাধীন মোবাইল নিরাপত্তা গবেষক রুবেন মুরাদিয়ানের যৌথ অনুসন্ধান ২৫ মে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এর ফলাফল অনুসারে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ১২ জন আর্মেনীয় নাগরিককে গোয়েন্দা সরঞ্জামের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। তালিকাটিতে আর্মেনিয়ার ন্যায়পাল, দুইজন রেডিও মুক্ত ইউরোপ/ স্বাধীনতা রেডিও (আরএফই/আরএল) আর্মেনীয় পরিষেবার সাংবাদিক, জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা, আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক মুখপাত্র এবং আর্মেনীয় নাগরিক সমাজের অন্য সাতজন প্রতিনিধি রয়েছে।

প্রতিবেদনে সংগৃহীত ও উপস্থাপিত প্রমাণগুলি দেখায় “লক্ষ্যবস্তুকরণটি  নাগর্নো-কারাবাখের সামরিক সংঘর্ষের সাথে সম্পর্কিত।”

🚨 সদ্যপ্রাপ্ত: আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধে কীভাবে এনএসও গোষ্ঠীর  পেগাসাস গোয়েন্দা সরঞ্জাম ব্যবহার (আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতে প্রথমবার নথিভূক্ত) করা হচ্ছে তা আমরা প্রকাশ করছি।

সাংবাদিক, মানবাধিকার রক্ষক + সক্রিয় কর্মীসহ সুশীল সমাজের অন্তত ১২টি লক্ষ্যবস্তু রয়েছে।

ফরেনসিক তদন্ত আর্মেনিয়ায় ব্যবহৃত যন্ত্রগুলির নিম্নলিখিত: তোমারবাড়িনিয়ন্ত্রিত, আমারনিয়ন্ত্রণখোঁজকর (এছাড়াও মেগালোডন নামে পরিচিত অ্যামনেস্টির নিরাপত্তা গবেষণাগার নির্দেশিত) জোরপূর্বকঅনুপ্রবেশ এবং কিসমেত প্রয়োগের নির্দেশ করে। ২০২০ সাল থেকে এইসব প্রয়োগ নাগরিক গবেষণাগারের প্রকাশিত ও তদন্তাধীন। তবে আর্মেনীয় এসব ঘটনাবলী নাগরিক গবেষণাগারকে প্রথম তোমারবাড়িনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার সনাক্ত করতে সাহায্য করে যা ২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত সাম্প্রতিক তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

২৫ মে প্রকাশিত যৌথ সাম্প্রতিক তদন্ত অনুসারে সংক্রমণের সময়টি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘর্ষের প্রাসঙ্গিকতার একটি ইঙ্গিত এবং সম্ভবত “লক্ষ্যবস্তু করার কারণ”:

আর্মেনিয়ায় প্রাপ্ত সুশীল সমাজে পেগাসাস সংক্রমণের প্রথম গুচ্ছের পটভূমি হলো আজারবাইজানের সাথে ২০২০ সালের রক্তাক্ত নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ, ২০২০ সালের অক্টোবরে সংশ্লিষ্ট শান্তি আলোচনা এবং ২০২০ সালের ৯ নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি। এদিকে আজারবাইজানের ২০২১ সালের ১২ মে’র আক্রমণ এবং জুলাই ও নভেম্বরে আরো সংঘর্ষের কারণে কারাবাখ সংঘাত নিজেই আবার তীব্র হতে শুরু করে। আর্মেনিয়ার গোয়েন্দা সরঞ্জামের শিকারদের বেশিরভাগই ২০২০-২০২১ সালে এই সময়ের মধ্যে সংক্রামিত হয় যাদের মধ্যে ৩০ টিরও বেশি সফল পেগাসাস সংক্রমণ ছিল।

ফরেনসিক তদন্ত মোট ৪০ টিরও বেশি সংক্রমণ ও একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা চিহ্নিত করেছে।

প্রতিবেদনটি তদন্তের ফলাফল উপস্থাপন করে চিহ্নিত মামলাগুলির ভেতরে ঢুকে। প্রতিবেদন প্রকাশের সময় চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তুগুলির পাঁচটিকে বেনামী রাখা হয়।

অপরাধীরা

প্রতিবেদনের লেখকরা উল্লেখ করেছে তারা “এই পেগাসাস অনুপ্রবেশটিকে একটি নির্দিষ্ট সরকারি অপারেটরের সাথে চূড়ান্তভাবে সংযুক্ত করতে পারেনি।” এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তদন্ত অনুসারে চিহ্নিত এনএসও’র গোয়েন্দা সরঞ্জাম ক্রেতাদের তালিকায় আর্মেনিয়া না থাকলেও আজারবাইজান রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আজারবাইজানের নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে পেগাসাস ও অন্যান্য গোয়েন্দা সরঞ্জামের প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে নথিভুক্ত হয়েছে

বৈশ্বিক পেগাসাস তদন্তে জড়িত ১৭টি গণমাধ্যম অংশীদারদের অন্যতম সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ ও দুর্নীতি প্রতিবেদন প্রকল্প (ওসিসিআরপি) অনুসারে আজারবাইজানের ১,০০০টি ফোন নম্বরের মধ্যে প্রকল্প গবেষকরা এখন পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু করা ২৪৫টি নম্বর সনাক্ত করতে পেরেছে যার এক-পঞ্চমাংশ সাংবাদিক, সম্পাদক বা গণমাধ্যম কোম্পানির মালিকদের। তালিকাটিতে সক্রিয় কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছে।

নতুন তদন্ত আরো উল্লেখ করেছে:

“নাগরিক গবেষণাগারের চলমান ইন্টারনেট স্ক্যান ও ডিএনএস স্মৃতি অনুসন্ধান আজারবাইজানে “বোজবাশ” এবং “ইয়ানার” নামের অন্তত দুটি সন্দেহভাজন পেগাসাস অপারেটরকে চিহ্নিত করেছে। নাগরিক গবেষণাগারের মতে ইয়ানার পেগাসাস অপারেটরের শুধু আজারবাইজানের মধ্যে ঘরোয়া-কেন্দ্রিক লক্ষ্যবস্তু রয়েছে বলে মনে হলেও বোজবাশ অপারেটরের লক্ষ্যবস্তু আর্মেনিয়ার মধ্যে ব্যাপক বিস্তৃত।”

এনএসও গোষ্ঠী

ইসরায়েলের নিভ কারমি, শালেভ হুলিও এবং ওমরি লাভি ২০১০ সালে এনএসও গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত করে। ওয়েবসাইটে সংস্থাটি “সন্ত্রাস ও অপরাধ প্রতিরোধ ও তদন্ত করতে” প্রযুক্তি বিকাশের দাবি করলেও এর নজরদারি প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক ও সক্রিয় কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

“এনএসও গোষ্ঠী শুধু সরকারের কাছে তার সফ্টওয়্যার বিক্রির কথা জোর দিয়ে বলে ক্রেতারা সেসব ক্রেতারা দেশগুলির গোয়েন্দা বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী বলে ইঙ্গিত দিয়েছে,” ওসিসিপিআর উল্লেখ করেছে৷ নাগরিক গবেষণাগারের তদন্তে দেখা গেছে অন্তত ২০১৬ সাল থেকে বহু দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে এনএসও’র পেগাসাস ব্যবহার করা হচ্ছে।

কোম্পানিটি ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে ম্যালওয়্যার দিয়ে ব্যবহারকারীদের যন্ত্রগুলিকে সংক্রামিত করার অভিযোগ উঠলে এই সংস্থাটি তোপের মুখে পড়ে। জবাবে হোয়াটসঅ্যাপ ও এর মূল সংস্থা ফেসবুক (এখন মেটা) এনএসও গোষ্ঠীর  বিরুদ্ধে মামলা করে। “বিদেশী সরকারের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন কোম্পানিটিকে বিদেশী সার্বভৌম দায়মুক্তি আইন (এফএসআইএ) এর আওতায় মার্কিন আদালতে দায়ের করা মামলা থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে” বলে সাফাই সত্ত্বেও ২০২০ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আদালতের বিচারক রায় দেন এনএসও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা চলতে পারে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মাইক্রোসফ্ট, গুগল, ইন্টারনেট সমিতি, গিটহাব এবং লিঙ্কডইন এনএসও’র বিরুদ্ধে ফেসবুকের [মেটার] চলমান আইনি লড়াইয়ে পক্ষ হিসেবে যোগ দেয়। ২০২১ সালের এপ্রিলে সবচেয়ে সাম্প্রতিক শুনানির পর সংবাদ সাইট পলিটিকো অনুসারে, এনএসও গোষ্ঠী “টিকে থাকার সম্ভাবনা কম” বলে মনে হয়েছিল।

পলিটিকোর জ্যেষ্ঠ্য আইন বিষয়ক প্রতিবেদক জোশ গার্স্টেইন উল্লেখ করেছেন:

এমনকি প্রতিষ্ঠানটির মামলা ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার ব্যর্থতার পর এটি বিচারিক আদালতে মামলাটি চালিয়ে গেলেও সম্ভবত পেগাসাসের বিকাশের বিষয়ে নথিগুলি ফিরিয়ে দিতে এবং জবানবন্দির জন্যে নির্বাহীদের উপস্থিত করতে বাধ্য হবে।

এই বছরের এপ্রিলে নয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংস্থা একটি চিঠিতে এনএসও গোষ্ঠীর কমপ্লায়েন্সের সহ-সভাপতি চেইম গেলফান্ডের কাছে কোম্পানিকে “তার উন্নত গোয়েন্দা সরঞ্জাম বিক্রির বিষয়ে স্বচ্ছতা উন্নত করার এবং মানবাধিকার রক্ষায় যথাযথ চেষ্টার প্রতিশ্রুতি পূরণের অনুরোধ করে।” এছাড়াও চিঠিটি এনএসও গোষ্ঠীর “মানবাধিকারের মানদণ্ডের প্রতি নিঃশর্ত সম্মতির” দাবিকেও প্রত্যাখ্যান করেছে

টরেন্টো ইউনিভার্সিটির নাগরিক গবেষণাগারের পরিচালক রন ডেইবার্ট, এনএসও’র মানবাধিকারের মানদণ্ড মেনে চলার দাবিগুলিকে “বিশুদ্ধ নাটক” বলে মনে করেন

বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ স্বৈরশাসকরা খুব বাস্তব ও ভয়ঙ্কর উপায়ে এই গোয়েন্দা সরঞ্জামটির অপব্যবহার না করার দৃশ্যটি একটি হালকা বিনোদনমূলক প্রহসন হতে পারে। এনএসও’র দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজগুলি প্রমাণ করেছে তাদের কথাগুলি অনিয়ন্ত্রিত বাজারের রূঢ় বাস্তবতা থেকে হাত নাড়ানোর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা এবং তাদের মালিকরা তো ব্যবসায় উন্নতি ও মুনাফা করেই যাচ্ছে।

দুই বছর আগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত তৎকালীন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেভিড কায়ে কার্যকর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত সরকারগুলির কাছে এনএসও’র মতোস্টাইলের গোয়েন্দা সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানান। কাইয়ের সতর্কতা সত্ত্বেও নজরদারি সফ্টওয়্যার বিক্রি কোনোরকম স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা ছাড়াই অব্যাহত রয়েছে।

একেবারে সাম্প্রতিক তদন্ত কোম্পানিটিকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা ছাড়াও গোয়েন্দা সরঞ্জাম কোম্পানিগুলির উপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে। নতুন তদন্তের লেখকরা আরো এগিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে কেলেঙ্কারি, মামলা ও নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, “এনএসও গোষ্ঠী কীভাবে সাংবাদিক ও মানবাধিকার রক্ষকসহ নাগরিক সমাজকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনে তার প্রযুক্তির ব্যবহারকে উপেক্ষা করে চলেছে।”

গ্লোবাল ভয়েসেসের কাছে করা একটি মন্তব্যে এখনি প্রবেশাধিকারের প্রযুক্তি-আইনি পরামর্শক নাতালিয়া ক্রাপিভা বলেছেন:

“বছরের পর বছর ধরে প্রায় কোনো তদারকি ছাড়াই সক্রিয় আক্রমনাত্মক পেগাসাস গোয়েন্দা সরঞ্জাম ও পুরো শিল্পতির ক্ষতির সম্পূর্ণ মাত্রা বোঝার জন্যে এই তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মুক্ত সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখাতে, নাগরিক স্থান ধ্বংস করতে, ভিন্নমতাবলম্বীদের নীরব, , গণতন্ত্রকে ক্ষুন্ন, স্বাধীনতা আন্দোলন দমন এবং আরো অনেক কিছু করতে পেগাসাসের ব্যবহার দেখেছি। এখন আমাদের কাছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে একটি বড় আন্তর্জাতিক সামরিক সংঘাতে নাগরিক সমাজ এবং মানবতাবাদী অভিনেতাদের বিরুদ্ধে পেগাসাস ব্যবহারের হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে আমাদের প্রতিবেদনটি এনএসও, গোয়েন্দা সরঞ্জাম শিল্প এবং মানবাধিকার ও মানবতাবাদী কর্মী, সাংবাদিক ও শাসকগোষ্ঠীর সমালোচকদের আক্রমণ করতে এই আগ্রাসী প্রযুক্তি ব্যবহারকারী রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা আনতে আইনি মামলার পাশপাশি আরো গবেষণা ও তদন্তের দিকে পরিচালিত করবে।”

লেখার সময় পর্যন্ত আজারবাইজানে তদন্তের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। ২৫ মে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের নেতারা চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে মস্কোতে বৈঠক করছিল

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .