পরাধীনতা পর্যবেক্ষক প্রতিবেদন: ইকুয়েডর

ছবির সৌজন্যে অমেয়া নাগরাজন

গণমাধ্যম ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের একটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে। গ্লোবাল ভয়েসেসের অ্যাডভক্স গবেষণা উদ্যোগ পরাধীনতা পর্যবেক্ষক জালের মতো বিস্তৃত বা ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের ক্রমবর্ধমান ঘটনাকে পরীক্ষা করে। পরাধীনতা পর্যবেক্ষকের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিবেদনের ধারাবাহিক থেকে ইকুয়েডর সম্পর্কে এই লেখাটি চয়িত। এখানে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন। এই প্রতিবেদনটি স্পেনীয় থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। আপনি এখানে মূলটি দেখতে পারেন।.

ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের চোখে দেখা প্রতিবেদনের গবেষণার বিষয় তিনটি ইকুয়েডরের গণতান্ত্রিক জীবনকে প্রভাবিত করার মতো চর্চাগুলি প্রকাশ করে। তবে কোরেয়ার দশকে (২০০৭-২০১৭) ডেটাকে কোরেয়ার নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে সংকুচিত করে হয়রানি ও নিপীড়নের ফলে ইকুয়েডরীয় প্রেক্ষাপটটি বোঝা ও বিশ্লেষণ করা কষ্টকর হতে পারে। অন্য কথায় ইকুয়েডরকে কর্তৃত্ববাদ ও গণতন্ত্রের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দ্বি-ভিত্তির প্রেক্ষিতে দেখলে তা আমাদেরকে কোরেয়া-পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে এখনো কার্যকর গণতন্ত্রবিরোধী ও পশ্চাদপদ চর্চাগুলি পর্যবেক্ষণ করা থেকে বিরত রাখবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এটাই ঘটছে।

রাফায়েল কোরেয়ার শাসনাধীন ব্যক্তিগত মালিকানার সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগতভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, পরবর্তীতে এমনকি প্রতীকী বিচারের মামলাগুলি এল ইউনিভার্সো মামলার মতো আন্তর্জাতিক আদালতে মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে এমনকি কোরেয়া ক্ষমতায় না থাকলেও ফুন্দামেদিওস (গণমাধ্যম ফাউন্ডেশন) এবং ফুন্দাসিওন পেরিওদিস্তাস সিন কাদেনাস (শৃঙ্খলমুক্ত সাংবাদিক ফাউন্ডেশন) ইকুয়েডর রাষ্ট্রটিকে সাংবাদিকদের প্রধান আক্রমণকারী হিসেবে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করে যাচ্ছে। যার ফলে কোরেয়ার ক্ষমতার বাইরে চলে গেলেও প্রশ্ন করা অব্যহত রেখে বিতর্ক বাঁচিয়ে রাখা অত্যাবশ্যক।

গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া কোরেয়ার যোগাযোগ আইন ইকুয়েডরের রাজনৈতিক সাদা-কালো চিন্তাভাবনাকে প্রদর্শন করলেও আইনটি আসলে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ভেঙে দেওয়ার পর এটি গণমাধ্যমকে আরো বেশি সমস্যাযুক্ত রাষ্ট্রীয় বা স্ব-নিয়ন্ত্রণযুক্ত দ্বিধাবিভক্তির দিকে পরিচালিত করে। শেষ পর্যন্ত শেষোক্তটি গুইলারমো ল্যাসোর সরকারের প্রথম বছরে স্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে যোগাযোগকে মোকাবেলা করার জন্যে প্রয়োজনীয় সম্প্রদায়-নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যমের জন্যে ইতিবাচক ব্যবস্থা, সরকারি গণমাধ্যমের ভূমিকা, রেডিওর বৈদ্যুতিক বর্ণালীর মাত্রা বিতরণ, আন্তঃসাংস্কৃতিক বিষয়বস্তুর সম্প্রচারের মতো অন্যান্য সব বিষয় ঢাকা পড়ে গেছে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সময়ে (কিছু রাজনীতিবিদদের মতে ইকুয়েডর এই মুহূর্তে যে অবস্থায় আছে) কোরেয়া সরকারের চর্চা ও আলোচ্য থেকে ভিন্ন পন্থা অবলম্বনের এই দিকগুলি জনসাধারণের চোখের সামনে আলোচনা করা দরকার।

উপরন্তু কোরেয়া প্রশাসন ও সমর্থকরা বিশেষ করে আমাদের অধ্যয়নের সময়কালের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গত ১৫ বছরে এই মঞ্চগুলি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সরকার-সমর্থক বিষয়বস্তু প্রদর্শনের জন্যে সামাজিক গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটগুলিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু এই কৌশলগুলি বিশেষ করে ২০১৭ এবং ২০২১ সালের প্রচারাভিযানের সময়কালে আরো সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পুরোপুরি পদ্ধতিগত অপ্রমাণিত প্রচারাভিযানে পরিণত হয়ে উঠেছে।

মোরেনো সরকারের সময় এই প্রচারণাগুলি বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য ছিল। কোরেয়া-পরবর্তী সরকার যে ট্রল অ্যাকাউন্ট, সন্দেহজনক সামাজিক গণমাধ্যম প্রচারাভিযান ও অন্যান্য কারচুপির কৌশল ব্যবহার করে সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই কৌশলগুলি প্রায়শই বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্ট জন-বিতর্ক তৈরি করে। ফলে ইকুয়েডরীয় গণমাধ্যম বাস্তবতা-যাচাইকৃত বিষয়বস্তু প্রচারের অংশীদারিত্ব এবং কিছু সাংবাদিক ইন্টারনেট প্রচারণার পদ্ধতি শনাক্ত করতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে।

তার ওপর মোরেনোর সরকার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে কপিস্বত্ত্বযুক্ত বিষয়বস্তু প্রচারের অভিযোগের পুরানো কোরিস্তা চর্চার আশ্রয় নিয়েছে। এক্ষেত্রে মোরেনোর সরকারের কোরেয়ার অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নামে প্রকৃতপক্ষে তার লোকদেরই পরিচালিত (যদিও তারা এটি অস্বীকার করে) আরেস রাইটসের মতো কোনো কোম্পানির প্রয়োজন ছিল না।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে বলে স্বাধীনতা_সদনের মতো সংস্থাগুলি এসব পদক্ষেপ সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্বাধীনতা_সদন নির্বিচারে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করা গণ-নজরদারি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কেও সতর্ক করেছে। ইকুয়েডরে এই জাতীয় যন্ত্রের ব্যবহার ও ক্রয় বিষয়ে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকায় এই উদ্বেগ আরো গুরুতর। মহামারী চলাকালে মোরেনো আক্রমণাত্মক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন এবং অ্যাক্সেস নাউ অনুসারে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিক্ষোভের সময় কমপক্ষে দুটি ইন্টারনেট বন্ধ সংঘটিত হয়। অ্যাক্সেস নাউ লিখেছে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট ব্যাহত করতে চাওয়ায় এই ইন্টারনেট বন্ধগুলি ঘটে এবং প্রথমবারের মতো ইকুয়েডর ইন্টারনেট বন্ধের বিশ্ব তালিকায় যুক্ত হয়।

সঙ্কটের সময় সরকারগুলি তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ না করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নীতিকথা কপচানোর প্রবণতাও দেখাতে পারে যা তাদের আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কোরেয়ার প্রশাসনের সময় তৎকালীন জাতীয় গোয়েন্দা বাহিনী সেনাইন সাংবাদিক, বিরোধী রাজনীতিবিদ ও সামাজিক সংস্থাগুলির উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে ভিডিও নজরদারি বা ম্যালওয়্যার ব্যবহার করতো। তবে এই আচরণ সরকারের জনপ্রিয়তাকে প্রভাবিত করেনি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এই সম্পর্কে কথা বললেও গুরুতর ও জরুরী কোনো তদন্ত শুরু করেনি।

এখন দেশব্যাপী চালু করা ইকু৯১১ ব্যবস্থা পরিচালিত ভিডিও নজরদারি ক্যামেরার মাধ্যমে রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি ঘটতে পারে। নিউ ইয়র্ক টাইমস ২০১৯ সালে প্রকাশ করেছে ক্যামেরার নজরদারির সীমানা কৌশলগত গোয়েন্দা কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত ছিল। কোরেয়ার সময়ে তৈরি ব্যবস্থাটি মোরেনোর প্রশাসনের সময়েও অব্যাহত ছিল। তবে তার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোরেয়ার সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতি মোরেনো বলেছেন নাগরিক বা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এই ধরনের গোয়েন্দা অভিযান তার সরকারের অধীনে আর পরিচালিত হয়নি।

এখনি_প্রবেশাধিকার ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে এই নজরদারি প্রযুক্তির ব্যবহার ও ক্রয় নিয়ে গবেষণা করেছে। গবেষকরা জানিয়েছে ইকুয়েডরের ক্ষেত্রে মুখ সনাক্তকরণসহ ভিডিও নজরদারি সম্পর্কিত আলোচনাটি অস্পষ্ট। ইকুয়েডরের জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার (ইকু৯১১) কর্মকর্তারা “মুখ সনাক্তকরণ ক্ষমতাসহ ক্যামেরা থাকার কথা অস্বীকার করলেও একাধিক সরকারি ঘোষণা অন্যরকম ইঙ্গিত দেয়,” এখনি_প্রবেশাধিকার গবেষকরা ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে লিখেছে। এছাড়াও এই সরঞ্জাম ক্রয় ও ব্যবহার সম্পর্কে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেই। ইকুয়েডর সাধারণত এটি এক্সিস (সুইডেন), হিকভিশন (চীন) এবং ভেরিন্ট (ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র) থেকে কিনে থাকে।

সংক্ষেপে ইকুয়েডরের বিশেষ চর্চাগুলি ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের আওতাধীন। এগুলি নির্দিষ্ট মতাদর্শিক বৈশিষ্ট্যের সরকারের জন্যে একচেটিয়া নয়।

বিগত ১৫ বছরে রাজনৈতিক আন্দোলন কোরেয়াবাদ মিশ্র মতামত তৈরি করে ইকুয়েডরের নজরদারি, নিপীড়ন ও কার্যসিদ্ধির সবচেয়ে প্রতীকী ঘটনার দিকে ধাবিত করেছে। তবে প্রকাশ্য বিতর্কের অভাব এবং স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্পর্কে প্রচলিত বর্ণনা ইকুয়েডরের সমস্যাগুলি সমাধান করা হয়েছে বলে বিভ্রম তৈরি করতে পারে।

এখানে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন।

পরাধীনতা পর্যবেক্ষক

গণমাধ্যম ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের একটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে। গ্লোবাল ভয়েসেসের অ্যাডভক্স গবেষণা উদ্যোগ পরাধীনতা পর্যবেক্ষক জালের মতো বিস্তৃত বা ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের ক্রমবর্ধমান ঘটনাকে পরীক্ষা করে।

ইংরেজিতে ইকুয়েডর প্রতিবেদনের একটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .