টেলিগ্রাম কি মিয়ানমারের দুঃস্বপ্ন থেকে লাভবান হচ্ছে?

Telegram

দিমিত্রি কারাস্তেলেভ/ আনস্প্ল্যাশ এর ছবিআনস্প্ল্যাশ অনুমতির অধীনে মুক্তভাবে ব্যবহারের জন্যে।

মিয়ানমারের সামরিক সমর্থকরা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে বেসামরিকদের আক্রমণের জন্যে টেলিগ্রাম বার্তা মঞ্চ ব্যবহার করছে। মেটা (আগে ফেসবুক নামে পরিচিত) তার মঞ্চ থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও এর অনলাইন সংস্থাগুলিকে নিষিদ্ধের পরে সামরিক-পন্থী প্রচারকারীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যে একটি বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছে। তারা টেলিগ্রামের বিষয়বস্তু সংযম নীতির দুর্বলতার সুবিধা নিয়ে নারীদের সম্মতিহীন যৌনতার ছবি ছড়নোসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের নথি প্রচার করে বিরোধীদের প্রতি সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে।

টেলিগ্রাম কয়েকটি সামরিকপন্থী চ্যানেল নিষিদ্ধ করলেও কোম্পানিটি বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত শত শত সমস্যাযুক্ত অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু সামরিকপন্থী অ্যাকাউন্ট এমনকি ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টেলিগ্রামের উন্নত পরিকল্পনায় গ্রাহক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

টেলিগ্রাম উন্নত পরিষেবার গ্রাহক হতে প্রতি মাসে প্রায় ৪ ডলার (৪৪০ টাকা) খরচ হলেও এই মূল্য নির্ভর করে ব্যবহারকারীর বর্তমানে বসবাসকারী অঞ্চলের উপর। টেলিগ্রাম একই যন্ত্রে বিনামূল্যের পরিকল্পনায় শুধু তিনটি অ্যাকাউন্টে প্রবেশের অনুমতি দিলেও উন্নত গ্রাহককে চারটি পর্যন্ত অ্যাকাউন্টে প্রবেশের অনুমতি দেয়। বিনামূল্যের পরিকল্পনা ব্যবহারকারীদের জন্যে ছবি এবং ভিডিও বিবরণে সর্বাধিক শব্দসংখ্যা ১,০২৪ হলেও উন্নত অ্যাকাউন্টে ২,০৪৮ পর্যন্ত। একটি নীল টিকচিহ্ন, তারকাচিহ্ন এবং ব্যবহারকারীর নামের পাশে অন্যান্য বিশেষ চিহ্নের মতো উন্নত প্রতীক ব্যবহারকারীদের টেলিগ্রামের উন্নত গ্রাহক হিসেবে চিহ্নিত করে। উন্নত পরিকল্পনায় কম বিষয়বস্তু সীমাবদ্ধতা, একটি বড় ভাণ্ডার, নামানোর দ্রুত গতি, অনন্য স্টিকার এবং জীবন্ত ইমোজির মতো নানান সুবিধা রয়েছে।

এই পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলি মিয়ানমারের সামরিকপন্থী টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টগুলিকে সাহায্য করতে পারে, যা মঞ্চটিকে ডিজিটাল নিপীড়নের হাতিয়ার দিয়ে সশস্ত্র করছে।

মিয়ানমারের সামরিকপন্থী পরিশোধিত অ্যাকাউন্টগুলি গণতন্ত্রপন্থী নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য আহ্বান ও সংগ্রহ, অবমাননাকর বিষয়বস্তু ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে নথি প্রচারণা শুরুর জন্যে ব্যাপকভাবে জড়িত। জান্তাপন্থী অ্যাকাউন্টগুলি টেলিগ্রামের বিষয়বস্তু সংযম ও পরিষেবার শর্তাবলীর শিথিলতার পদ্ধতির সুবিধা নিয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই-কমিশনার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

নীচের পর্দাছবি দুটি অ্যাপে থাকার অনুমতিপ্রাপ্ত টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট হলেও তারা ব্যাপকভাবে নথি প্রচারণায় জড়িত। মিয়ানমারে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ বৃদ্ধির বিষয়ে গ্লোবাল ভয়েসেসের পূর্ববর্তী প্রতিবেদনেও এই অ্যাকাউন্টগুলি উদ্ধৃত করা হয়েছে।

Telegram accounts by pro-junta supporters

২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নেওয়া নীচের পর্দাছবি (বামে) যেমন হিংসাত্মক উস্কানিপূর্ণ অ্যাকাউন্টটিকে একটি যোগাযোগের বিন্দু হিসেবে দেখাচ্ছে, আর ডানদিকের পর্দাছবিগুলি নীল তারকা বা নীল চেকচিহ্ন যুক্ত অ্যাকাউন্টগুলির একটি টেলিগ্রাম উন্নত পরিকল্পনা কেনা দেখাচ্ছে।

লেখাটি ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি পাঠিয়ে বিরোধী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছুকদের সংযুক্ত করে। এটি তথ্য ভাগাভাগি করে কীভাবে পুরষ্কার দাবি করতে হবে তার নির্দেশাবলীও দেয়৷

সংক্ষিপ্ত অনুবাদ: সন্ত্রাসবাদপন্থী গোষ্ঠী ও গণমাধ্যম ১ ফেব্রুয়ারি একটি নীরব অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছে। কেউ এই কর্মকাণ্ড ভাগাভাগি  করলে তাকে জেলে যেতে হবে। দয়া করে তাদের তথ্য গোপনে নিম্নলিখিত অ্যাকাউন্টগুলিতে পাঠান। (১৭ মার্চ, ২০২৩ তারিখে গৃহীত পর্দাছবি) উন্নত ব্যাজের অ্যাকাউন্টগুলি জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তাদের নথি প্রচার করে।

উদাহরণস্বরূপ সহিংসতাকে উস্কে দেওয়া বিষয়বস্তুর জন্যে কুখ্যাত ন্যায়বিচার প্রত্যাশী গোষ্ঠী – জেএসজি টেলিগ্রাম চ্যানেল ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে একটি গুপ্তহত্যার আহ্বান পোস্ট করে৷ অজানা কারণে এখন আসল পোস্ট ও @জেএসজি২০২২১ অ্যাকাউন্টটি প্রবেশাধিকারযোগ্য নয়৷ সীমাবদ্ধ হওয়া এড়াতে সামরিক-পন্থী চ্যানেল ও ব্যবহারকারীরা তাদের বার্তাগুলি নিজেরাই মুছে দিয়ে তাদের ইউআরএল পরিবর্তন করেছে। এমনকি একটি গণঅভিযোগ প্রচারণার পরেও টেলিগ্রাম সামান্য কয়েকটি সামরিকপন্থী টেলিগ্রাম চ্যানেল সরিয়েছে এবং মিয়ানমারে ক্ষতিকারক টেলিগ্রাম চ্যানেল নিষিদ্ধ করা নিয়ে তাদের নিষিদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার রূপরেখা স্পষ্ট করেনি। মিয়ানমার টেলিগ্রাম বাজারে সমস্যাযুক্ত চ্যানেলগুলি বাড়তে থাকলেও সংস্থাটি মূলত সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করেছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিনে সামরিকপন্থী চ্যানেলগুলি অভ্যুত্থান বিরোধী বেসামরিক নাগরিকদের হুমকি ও নীরব ধর্মঘট পোস্ট ভাগাভাগি করা সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে তথ্যের জন্যে একটি অনুরোধ ভাগাভাগি করেছে। প্রতিবাদী আন্দোলন নীরব ধর্মঘটের সময় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নাগরিকরা তাদের সামরিক অভ্যুত্থানকে মেনে না নেওয়া দেখানোর জন্যে বাড়িতে অবস্থান করে।

বার্তাটিতে তারা বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহকারী চারটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট উল্লেখ করেছে। এই চারটি অ্যাকাউন্ট হলো হান নায়েন ওও, কিঅ স্বার, বো কিঅ এবং ডিএস যাদের প্রত্যেকের নামের পাশে উন্নত ব্যাজ রয়েছে। ১৭ মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত  টেলিগ্রাম পরিষেবার শর্তাদি লঙ্ঘন করে সীমাবদ্ধ চ্যানেলের সাথে সংযুক্ত মিয়ানমারের সামরিকপন্থী টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের কেনা আটটি উন্নত অ্যাকাউন্টের মধ্যে পরিকল্পনায় এখনো ছয়টি সক্রিয়। টেলিগ্রাম বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নত গ্রাহক হিসেবে তাদের মঞ্চে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার টেলিগ্রাম চ্যানেলে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রচারণার মোকাবেলা এড়িয়ে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বন্দি সমর্থন সমিতির (বার্মা) এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ অনুসারে অভ্যুত্থানের পর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ২১,৬৩২ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৩,৪৪৭ জন নিহত হয়েছে। নির্বাসিত সরকার জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল আত্মপ্রকাশের পর থেকে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্যে সংগ্রাম করে আসছে। দেশজুড়ে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীর মধ্যে গেরিলা যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে। সাবেক বৃহত্তম ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল জাতীয় গণতন্ত্র লীগকে (এনএলডি) বিলুপ্ত করে জান্তা তার শাসনকে বৈধ করতে একটি নির্বাচন করার চেষ্টা করছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .