- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

তালেবান-বিরোধী দলগুলো একসাথে যেকোনো উপায়ে প্রতিরোধের আহ্বান জানাচ্ছে

বিষয়বস্তু: মধ্য এশিয়া-ককেশাস, আফগানিস্তান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, লিঙ্গ ও নারী, শরণার্থী, সরকার

জাতীয় প্রতিরোধ ফ্রন্টের নেতা আহমদ মাসুদ আফগানিস্তান নিয়ে দ্বিতীয় ভিয়েনা সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। এস-এ-এম ভ্রাতৃবৃন্দ ইউটিউব চ্যানেল [1] থেকে নেওয়া পর্দাছবি

আফগানিস্তান নিয়ে দ্বিতীয় ভিয়েনা সম্মেলন [2] ২৪-২৬ এপ্রিল প্রায় ৩০ জন তালেবানবিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অধিকার কর্মী ও সামরিক অধিনায়কদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের শেষে অংশগ্রহণকারীরা তালেবানের বিরুদ্ধে সব ধরনের প্রতিরোধকে সমর্থন করতে একটি ঘোষণা [3] জারি করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সব ধরনের প্রতিরোধকে স্বীকৃতি ও সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো তালেবানদের বিরুদ্ধে একটি একক জাতীয় যৌথ সংগঠন তৈরির পরিকল্পনার ঘোষণা।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা লিঙ্গ বর্ণবাদ হিসেবে প্রকাশ্য পরিমণ্ডল থেকে পদ্ধতিগতভাবে নারীদের বর্জনে [4]র দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘের নীরবতার নিন্দা করে। মার্কিন সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি মিশেল ম্যাককল [5] “তালেবানের নিপীড়নের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আফগান নারী ও মেয়েদের নিপীড়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আফগান মিত্রদের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার জন্যে তালেবানবিরোধী শক্তির প্রচেষ্টা”র প্রশংসা করে সম্মেলনের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানান।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় [6] তালেবানের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করায় ভিয়েনা সম্মেলনের গুরুত্ব বাড়তে থাকবে। তালেবানবিরোধী প্রধান সামরিক প্রতিরোধ গোষ্ঠী আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতিরোধ ফ্রন্টের (এনআরএফ) বৈদেশিক সম্পর্কের প্রধান আলী মাইসাম নাজারির মতে, সম্মেলনের উদ্দেশ্য [7] হলো রাজনৈতিক, বেসামরিক এবং সামরিক অভিনেতাদের মধ্যে আস্থা ও ঐক্য গড়ে তোলা। এই সম্মেলনটি বিরোধীদের আফগানিস্তানের বর্তমান সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করার, এক কণ্ঠে কথা বলার এবং তালেবান শাসনের বিকল্প বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একমাত্র মঞ্চ।

তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ একতাবদ্ধ হচ্ছে

এই সম্মেলনটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রথম ভিয়েনা সম্মেলনে [8]র পরবর্তী পদক্ষেপ। এটি ২০২১ সালের ১৫ আগস্টে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আশরাফ গনি [9] আহমদজাই দেশ থেকে পালানোর ফলে আফগান সরকারের পতনের এক বছর পরে আয়োজিত।  প্রথম সম্মেলনটি আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নারী অধিকার কর্মী, সংসদের প্রাক্তন সদস্য, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদদের একত্রিত করে। এটি দেশে তালেবান শাসনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সমস্যাগুলিকে তুলে ধরে একটি ঘোষণা জারির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

তালেবান [10]রা মার্কিন সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে ২০ বছর লড়াইয়ের পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্টে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে। আফগান সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়াই ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে স্বাক্ষরিত দোহা চুক্তি [11]র পর আফগান সরকারের পতন ঘটে। এটি আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে তালেবান হামলার ঝুঁকিতে ফেলে দেশ থেকে ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের দিকে পরিচালিত করে।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর গত ২১ মাসে আফগানিস্তানে ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। নারী ও মানবাধিকারের পদ্ধতিগত লঙ্ঘন, প্রাক্তন সেনাদের লক্ষ্যবস্তু হত্যা ও নির্যাতন, জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা, এবং জাতিগত বৈষম্যসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে পিছিয়েছে [10]। সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা তালেবানদের অন্তর্ভুক্ত পশতুন উপজাতি [10]র হাতে কেন্দ্রীভূত। তালেবানদের নিপীড়নের [12] একটি মারাত্মক উদাহরণ হলো নারী ও মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ও কাজ নিষিদ্ধ করা।

এখানে তালেবান শাসনামলে নারী ও মেয়েদের অবস্থার উপর একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে।

তালেবানদের বিশ্বাস না করার জন্যে সতর্কতা

সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় ২৫ এপ্রিল কাবুল বিমানবন্দরে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী কথিত আইএসআইএস [13] গোষ্ঠীর একজন জ্যেষ্ঠ্য সদস্য তালেবানের হাতে নিহত হয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা ঘোষণা করে। আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খল উচ্ছেদ অভিযানের সময় ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট তারিখে বিমানবন্দরে হামলায় [14] এতে ১৭০ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক এবং ১৩ জন মার্কিন সৈন্য নিহত হয়।

সম্মেলনটির ঘোষণায় [15] এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ার হুমকি বাড়ছে এবং আফগানিস্তানে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার বিষয়ে তালেবানের বিবৃতিকে একটি বিভ্রম ছাড়া আর কিছু নয় বলে সতর্ক করা হয়েছে।

এখানে ফারসি ও ইংরেজিতে দ্বিতীয় ভিয়েনা সম্মেলনের ঘোষণাসহ এনআরএফের বৈদেশিক সম্পর্ক প্রধান আলী মাইসাম নাজারির একটি টুইট রয়েছে।

দ্বিতীয় ভিয়েনা সম্মেলনের ঘোষণা

সম্মেলনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণকারী হলেন এনআরএফ নেতা এবং আফগানিস্তানের জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিত উত্তর জোটে [18]র নেতা ও তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রয়াত আহমদ শাহ মাসুদে [19]র পুত্র আহমদ মাসুদ। আহমেদ মাসুদ আইএসআইএস গোষ্ঠীর একজন জ্যেষ্ঠ্য সদস্যের মৃত্যুর ঘোষণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তালেবানের প্রচারণা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন [20]:

এটি বিশ্ব মতামত পরিবর্তনের একটি কৌশল। আমি আশা করি মূলত দোহা বৈঠককে প্রভাবিত করার এই কৌশলটি কাজ করবে না কারণ দুর্ভাগ্যবশত আইএসআইএস ও তালেবানদের আচরণ, কৌশল ও মানসিকতা একইরকম। এই দুই দল একই মুদ্রার দুই পিঠ।

এক সপ্তাহেরও কম সময় পরে ১ ও ২ মে তারিখে জাতিসংঘ ২৫টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে কাতারের রাজধানী দোহায় একটি রুদ্ধদ্বার শীর্ষ সম্মেলন [21] করে। জাতিসংঘের বিবৃতি [22]তে “মানবাধিকার, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের অধিকার, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ”সহ “কীভাবে তালেবানদের সাথে জড়িত হতে হবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সাধারণ বোঝাপড়া অর্জন করা” শীর্ষ সম্মেলটির লক্ষ্য ছিল বলে প্রকাশ করা হয়েছে। “কোন ফলাফল প্রকাশ করা না হলেও ভবিষ্যতে দ্বিতীয় বৈঠক [21] হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফলের অনুপস্থিতি শীর্ষ সম্মেলনটি তালেবানদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির দিকে নিয়ে যাওয়ার আশংকা করা তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ গোষ্ঠীর জন্যে একটি বড় বিজয়। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব আমিনা মোহাম্মদের পরামর্শ দোহা শীর্ষ সম্মেলন [6] “এই শিশু পদক্ষেপগুলি আমাদের [তালেবানদের] স্বীকৃতির পথে ফিরিয়ে নিতে পারে” বলে এমন জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।

পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে আফগান নারী ও মানবাধিকার কর্মীরা জাতিসংঘের দোহা সম্মেলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। কাবুলে নারী বিক্ষোভকারীরা [14] স্লোগান দিয়েছে “আমরা লড়াই করবো, আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে (দরকার হলে) আমরা মরবো।” আফগানিস্তান ও এর সীমানার বাইরে কাজ কর্মরত এসব নারী ও তালেবান বিরোধী অন্যান্য দলগুলি তাদের অধিকার, জীবনযাত্রা ও দেশ পুনরুদ্ধার করার সংগ্রামে একটি উজান যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে।