- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সংখ্যালঘুদের প্রতি অনলাইন বৈষম্য ও কর্তৃত্ববাদের পরিণতি

বিষয়বস্তু: ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী, শরণার্থী, সমকামী অধিকার, সেন্সরশিপ, দ্যা ব্রিজ (সেতুবন্ধন), জিভি এডভোকেসী, Unfreedom Monitor

ছবির সৌজন্যে আমেয়া নাগরাজন

গবেষণা [1]য় দেখা গেছে বৈষম্য প্রায়ই কর্তৃত্ববাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিশেষ করে, গণতান্ত্রিক দেশগুলির তুলনায় কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় আরো গুরুতর। উদাহরণস্বরূপ মিয়ানমারে [2] দমনমূলক সামরিক শাসন, দুর্বল শাসন এবং জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সাথে গৃহযুদ্ধের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এছাড়াও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগণের উপর চলমান নিপীড়নের ফলে হাজার হাজার নারী ও মেয়ে ধর্ষণের শিকারসহ সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা [3] বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

দমন সবসময়ই দুর্বল সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগুলির মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির অন্যতম৷ কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর দমন বা নিষ্ক্রিয় করার প্রচেষ্টায় ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্বজুড়ে ঐতিহাসিকভাবে মুখের কলঙ্ক [4] জনিত বৈষম্যের শিকার গোষ্ঠীগুলিকে প্রকাশ্য অংশগ্রহণ, বাজার, পরিষেবা, স্থান ও ডেটা সংগ্রহ থেকে বর্জন করে। বর্জনের বিরুদ্ধে এই গোষ্ঠীগুলির মুখোমুখি লড়াইটি দুর্গম বা অসাধ্য সংযোগের মাধ্যমে তীব্রতর হয়। বিশ্বব্যাংকে [5]র হিসেবে বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটিরও বেশি প্রতিবন্ধী মানুষ যোগাযোগ, মিথস্ক্রিয়া, তথ্যে প্রবেশাধিকার ও নাগরিক সমাজের কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাধা পায়। ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলি এই বাধাগুলির কিছু কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করলেও তাদের নিছক অস্তিত্ব সুবিধাবঞ্চিত লোকদের আর্থ-সামাজিক প্রতিবেশের ফাঁক পূরণের জন্যে অপর্যাপ্ত।

অফলাইন লক্ষ্যবস্তুরাই সাধারণত অনলাইন অপব্যবহারের একই [6] শিকারে পরিণত হয় বলে প্রায়শই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলি বিশেষ করে, তরুণী, জাতিগত সংখ্যালঘু ও এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যরা বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হয়। ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার ও ডিজিটাল বক্তৃতার অধিকার প্রয়োগ করার সম্ভাবনা কম থাকায় প্রায়শই প্রযুক্তির অসম প্রভাব নারী ও প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলিকে আরো [7] বেশি প্রভাবিত করে। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির ডিজিটালকরণ প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে ভৌত জগতে লিঙ্গ বৈষম্য ডিজিটাল বিশ্বে প্রতিলিপি করা হয়েছে। ফলে নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে এবং কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণে অতিরিক্ত বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়াও ইন্টারনেট জুড়ে থাকা নিয়ন্ত্রণের প্রায় অযোগ্য গতি ও মাত্রায় ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু ছড়িয়ে পড়া এই লোকেদের ক্ষতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে। ইন্টারনেট এইভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলির ঐতিহাসিকভাবে লড়াই একই বৈষম্যকে শক্তিশালী করে,তাদের অনলাইনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করে তাদের সামাজিক সংহতিকে আগের চেয়ে আরো কঠিন করে তুলেছে।

অনলাইন হয়রানি লজ্জাজনকভাবে বৈশ্বিক অন্তর্জালের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। আজ এটি ছাড়া ইন্টারনেট কল্পনা করাই কঠিন। অনলাইন সহিংসতা থেকে শুরু করে স্বৈরাচারী সরকার ভিন্নমতকে নীরব করে। প্রায় সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে অনলাইন বিষাক্ততা সাধারণ। প্রমাণগুলি যেকোনো ব্যক্তিকে অনলাইন হয়রানির প্রতি সংবেদনশীল দেখালেও বিস্তৃত গবেষণা [8]য় দেখা যায় নারী, বর্ণিল মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ স্মার্টফোনের উত্থানের সাথে সাথে ইন্টারনেটের বৃদ্ধি ঐতিহাসিকভাবে বৈষম্যের শিকার মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করার ধরনসহ এই সমস্যাকে আরো বিস্তৃত করেছে; হয়রানি এখন সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা।

অনলাইন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রচেষ্টা অনেকাংশেই ব্যর্থ হচ্ছে। সংখ্যালঘু সমস্যা বিষয়ক বিশেষ দূত ফার্নান্ড ডি ভারেনেসের সর্বশেষ প্রতিবেদন [9] অনুসারে অনলাইন ঘৃণা কেবল দুর্বল গোষ্ঠীর জন্যেই খারাপ হচ্ছে। বেশিরভাগ দেশে তিন-চতুর্থাংশ বা তার বেশি অনলাইন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের লক্ষ্যবস্তু হলো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্য, বিশেষ করে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারীরা। একইভাবে এলজিবিটিকিউ+ ব্যক্তি, মুসলমান, স্পেনীয় বা লাতিন ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিরা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ হারের পরিচয়-ভিত্তিক বৈষম্যে [10]র মুখোমুখী হওয়ায় এই গোষ্ঠীগুলির যেকোনো সদস্যের অনলাইনে থাকা কঠিন ও কম নিরাপদ হয়ে উঠেছে।

একইসাথে সরকারগুলি এই গোষ্ঠীগুলির উপর নির্যাতন বাড়ানোর জন্যে অত্যাধুনিক কৌশল মোতায়েন করেছে। মিশরে [11]র পুলিশ এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যদের নির্বিচারে অনুসরণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করার জন্যে গ্রিন্ডারের মতো অ্যাপ ব্যবহার করছে। একইভাবে ইউক্রেন আক্রমণের সময় সংবেদনশীল অনলাইন তথ্যে [12]র উৎস হিসেবে টিন্ডার চালু করার সময় থেকে রাশিয়া [13]য় কর্তৃপক্ষ ও  গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে স্থানীয় সার্ভারগুলিতে ব্যবহারকারীদের ডেটা (বার্তা ও ছবিসহ) সংরক্ষণ করতে অ্যাপটির ব্যবহার আবশ্যক। এদিকে ২০২১ সালে তালেবানরা অঞ্চলটি দখল [14] করার পর থেকে আফগানিস্তানের লোকেরা নিপীড়ন এড়াতে তাদের সামাজিক গণমাধ্যমের প্রোফাইলগুলি থেকে তাদের অতীত ও রাজনৈতিক মতামত সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য মুছে ফেলার [15] চেষ্টা করছে। দুঃখজনকভাবে তালেবানরা এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের কিছু সদস্যকে হুমকি প্রদান ও অনুসরণ করার জন্যে এই মঞ্চগুলি ব্যবহার করেছে।

ইন্টারনেট অফলাইন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন [16] একটি ভার্চুয়াল স্থান না হলেও এটি বাস্তব জগতের নিছক প্রতিরূপও নয়। ডিজিটাল প্রযুক্তি অনলাইন জগতে নতুন গতিশীলতা চালু করেছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তাছাড়াও ডিজিটাল মঞ্চগুলি তাদের পরিকল্পনা ও অ্যালগরিদমগুলির মাধ্যমে জনগণের মিথষ্ক্রিয়া ও তাদের নিজস্ব পরিচয় তৈরি করার জন্যে নতুন উপায় তৈরি করেছে। তবে বড় বড় প্রযুক্তি সংস্থা প্রবর্তিত এই নতুন গতিশীলতাগুলি সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলিকেও প্রভাবিত করছে [17]। এই গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে এই প্রযুক্তিগুলির ভারসাম্যহীন প্রভাব হ্রাস করার কয়েকটি প্রচেষ্টা করা হলেও বাস্তবতা প্রমাণ করে [6] সবচেয়ে দুর্বল গোষ্ঠীগুলি বিচ্ছিন্ন ও অনলাইন অংশগ্রহণ থেকে বহিষ্কৃত।

কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী সমবেত ও সম্মিলিত পদক্ষেপে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকায় কেন্দ্রীভূত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলিকে হুমকি হিসেবে দেখে। এই ধরনের শাসনের প্রধান লক্ষ্য হলো প্রায়শই ভিন্নমত পোষণকারী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলিকে হয়রানিমূলক প্রচারণার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে ক্ষমতায় থাকা। এইভাবে বিরোধী মতামতকে নীরব করার জন্যে অনলাইন ও অফলাইন বৈষম্যমূলক প্রচারাভিযানগুলি করা হয় বলে মনে করা হয়। তবে ডিজিটাল ক্ষেত্র সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রবেশ করে কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর ইন্টারনেটের মাধ্যমে [1] সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলিকে সংগঠিত করার ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

সবশেষে সংখ্যালঘুরা অনলাইন ঘৃণাত্মক বক্তৃতার লক্ষ্যবস্তুর খুবই সংখ্যাগরিষ্ঠ ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রধান লক্ষ্যগুলির অন্যতম হওয়ায়  সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলিকে ঘৃণাত্মক বক্তব্যের মোকাবেলায় তাদের প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ কিছু মঞ্চ ইতোমধ্যে এদিকে অগ্রসর [18] হলেও এখনো অনেকটা পথ বাকি। এই সবই বৈষম্য বোঝা ও মোকাবেলা করা যে দেশ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া ও ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে সেটা স্পষ্ট করে। এইভাবে কর্তৃত্ববাদী চর্চার উপর কঠোর নজরদারি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রায়শই কেড়ে নেওয়া কণ্ঠস্বর পুনরুদ্ধারের একটি হাতিয়ার।

পরাধীনতা পর্যবেক্ষক [19] থেকে আরো কিছুর জন্যে অনুগ্রহ করে প্রকল্প পৃষ্ঠা দেখুন।