- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

কেন রাজনীতি ও সমাজ গঠনে প্রযুক্তি সংস্থাগুলির ভূমিকা আর উপেক্ষা করা যায় না

বিষয়বস্তু: নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, দ্যা ব্রিজ (সেতুবন্ধন), জিভি এডভোকেসী

ছবির সৌজন্যে ওলগা সলোভিয়েভা

বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে, বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায়, প্রযুক্তি কর্পোরেশনগুলির রাজনৈতিক জবাবদিহিতা স্বীকার করার অপরিহার্যতা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নৈতিক চর্চা উপেক্ষা করার ফলাফল প্রযুক্তি সংস্থাগুলির দায়িত্বশীল আচরণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেয়। অনলাইনে তথ্য হেরফের [1], অন্যপথে ট্রাফিক চালনা [2], ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার সীমিত করা [3] এবং নজরদারি পরিচালনা হলো রাষ্ট্রগুলি প্রযুক্তির অপব্যবহারের কিছু উদাহরণ। প্রযুক্তি একসময় প্রতিরোধ ও মুক্তির প্রতীক হয়ে উঠবে বলে আশা করা হলেও অনুদারপন্থী শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পরাধীনতা তৈরি করতে ব্যবহার করায় এটি এখন বস্তুগত বাস্তবতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির রাজনৈতিক নিপীড়নের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক চর্চায় অবদান রাখা কীভাবে নিশ্চিত করবো?

কেন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর রাজনৈতিক দায়িত্ব রয়েছে?

প্রযুক্তির মতো উদ্ভাবন চালিত খাতে নতুন উন্নয়নের সাথে আইন তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। প্রায়শই অভিজ্ঞতা অর্জন, ফলস্বরূপ শিল্পটি ক্ষতির প্রভাব এবং এর নিজের সম্প্রসারিত দায়িত্বগুলির সাথে লড়াই না করা পর্যন্ত ব্যবহারকারী বা নির্মাতারা একটি নতুন প্রযুক্তির নেতিবাচক পরিণতিগুলি বিবেচনা করে না।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি শিল্পের তুলনায় রাজনৈতিক ঘটনাবলীর জন্যে প্রায়শই শিরোনাম তৈরি করেছে। প্রথমত, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ এবং পরবর্তীতে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ [4] উদ্ঘাটন অনিয়ন্ত্রিত ডেটা সংগ্রহের বিষয়গুলির প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সমস্যাগুলি চিহ্নিত হওয়ার পরেও সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির ভুল/ মিথ্যা তথ্য অপসারণে [5] অথবা সহিংস ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় [6]। জনসাধারণের আরো আলোচনা কিশোর ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের [7] উপর অ্যালগরিদমের ফিডের প্রভাবকে উপেক্ষা করে বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য মহামারীতে অবদান রাখার জন্যে সামাজিক গণমাধ্যম সরবরাহকারীদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। শেষ পর্যন্ত ঘৃণা ও গণহত্যা উস্কে দেওয়া [8]র একটি মূল মঞ্চ হয়ে ওঠা মিয়ানমারে ইন্টারনেটের প্রতিশব্দ ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি সরাসরি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জড়িত। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি [9]তে ব্যবহৃত ইসরায়েল-ভিত্তিক এনএসও গোষ্ঠীর তৈরি একটি বিস্তৃত নজরদারি সফ্টওয়্যার পেগাসাসের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

গ্লোবাল ভয়েসেস অ্যাডভক্সের ডিজিটাল কর্মীরা নজরদারি, ভুল/ মিথ্যা তথ্য ও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারের মতো বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি রেখে বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়া ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার সম্পর্কে প্রতিবেদন করছে। স্বৈরাচারীরা সহজলভ্য ডিজিটাল প্রযুক্তির পুরো মাত্রার ব্যবহার করছে। রাশিয়ায় বিরোধী মতামত থেকে তথ্য পরিবেশ মুক্ত রাখার স্বার্থে মিথ্যা তথ্য ও সেন্সরের উপর জোর দেওয়া হয়। ইন্টারনেট বন্ধের জন্যে তানজানিয়া ও সুদান সুপরিচিত হলেও তুরস্ক ও মরক্কোতে প্রকাশ্যে ডিজিটাল নজরদারির ঘটনাগুলি আরো সাধারণ হয়ে উঠেছে।

একই সময়ে প্রযুক্তি খাত অগত্যা শুধু অন্ধকার দিকেই খেলবে না। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স স্টারলিংককে সমর্থন অব্যহত রেখে [10] রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেনে ব্যাহত পরিষেবা ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার করেছে। তবুও তার সাম্প্রতিক টুইটার ক্রয় খণ্ডিতকরণ, মেরুকরণ ও প্রকাশ্য স্থানের সংকোচনের মাধ্যমে সামাজিক গণমাধ্যমের মনোযোগ অর্থনীতিকে আরো ক্ষমতায়িত [11] করে একাধিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা অসম্ভব এবং তাদের ভূমিকা বিতর্কিত।

ভালো আপেল, খারাপ আপেল

আপনি আপনার ম্যাকবুক অথবা আইফোন থেকে এই পাঠ্যটি পড়ে থাকলে আপনি সম্ভবত অনেক কম লক্ষ্যযুক্ত বিজ্ঞাপনের একটি নতুন তথ্য স্থানে বসবাসের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। অ্যাপল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যবহারকারীদের কোম্পানিটির যন্ত্রগুলিতে চালু করা অ্যাপগুলিতে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতিসহ একটি উদ্ভাবন ব্যক্তিগত ডেটা সনাক্ত চালু বা অবরোধ করার নতুন গোপনীয়তা বৈশিষ্ট্য [12] চালু করেছে।

ব্যক্তিগত ডেটা নৈতিকতা ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে চলমান বিতর্কের উপর ভিত্তি করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত বোঝাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাপল ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষার অর্থ হলো অনলাইন পরিষেবা প্রদানকারীদের নৈতিক দায়িত্বসমূহের মৌলিক দিক [13] এবং মূলত একটি মানবাধিকার — ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার অধিকার — বজায় রেখে তাদের ব্যক্তিগতভাবে তৈরি বিজ্ঞাপনের লক্ষ্যবস্তু এবং ডেটা ভোক্তাদের আচরণের পূর্বাভাস দিতে ব্যবহার করা হবে না। অধিকারের এই নিশ্চয়তা ভোক্তাদের অ্যাপল পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে।

একই সময়ে এই স্থাপত্য সিদ্ধান্তটি মেটা এবং অন্যান্য সামাজিক গণমাধ্যম কোম্পানিগুলির স্টক মূল্য সেদিন কমে গিয়ে বাজারে উল্লেখযোগ্য দুর্দশা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহের জন্যে একটি পছন্দ-অপছন্দ প্রবর্তন করার মানে হলো ব্যক্তিগতকৃত বিজ্ঞাপন বিকাশের জন্যে ডেটা কমে গিয়ে সম্ভাব্য বিজ্ঞাপনের রাজস্ব সংকুচিত করা৷

অ্যাপল গৃহীত এই নীতিগত সিদ্ধান্তটি ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ আলোচনায় একটি মাইলফলক। কার্যত এটি সার্বিকভাবে সরকারের তথ্য ও ব্যবসায়িক নৈতিকতা, আইন ও নীতি সংক্রান্ত একটি উদ্বেগের বিষয়। এই ঘটনাটি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের কথোপকথনে শুধু কোনো কোম্পানির ক্ষমতাকে চিত্রিত করা একটি খেলা বদ্ল ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসাকে তাদের ব্যবসায়িক আদর্শ পরিবর্তন ও বড় প্রযুক্তির গতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জের চাপ সৃষ্টি করে শিল্পটির জন্যে একটি ধাক্কা হতে পারে।

অ্যাপলের জন্যে এই সিদ্ধান্তের মানে কী? রাজনৈতিক দায়িত্বের সংকেতযুক্ত একটি নৈতিক অবস্থানের বাস্তবায়ন? তার গ্রাহকদের গোপনীয়তার অধিকারের পক্ষে চমৎকার কর্পোরেট নাগরিক উদ্ভাবনার একটি কাজ? নাকি এটি বাজারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মাধ্যমে অ্যাপল পণ্যের বিক্রয়কে বাড়ানোর একটি বিপণন পদক্ষেপ? বিশ্বব্যাপী অ্যাপল পণ্যের চাহিদা রয়েছে এবং বিক্রি হচ্ছে বলে৷ প্রেরণা নির্বিশেষে আমরা একটি প্রযুক্তি কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক স্তরে রাজনৈতিক পরিবর্তন করতে দেখেছি।

একইসাথে অন্যান্য কর্মকাণ্ডে কোম্পানিটির জড়িত থাকাকে বিতর্কিত হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রযুক্তি দৈত্যদের শক্তি কমানো অনাস্থা উদ্বেগ উত্থাপন [14]কারী আইন প্রণেতাদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ায় অ্যাপল ২০২২ সালে অন্যান্য বড় প্রযুক্তি সংস্থার সাথে তার দেন-দরবারের ব্যয় বাড়িয়েছে। এদিকে উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আবহাওয়ার বাইরে পা রেখে অ্যাপল তার রাজনৈতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করা বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়। সংস্থাটি ২০২১ সালে চীন ভিত্তিক ডেটা কেন্দ্রে চীনা ব্যবহারকারীদের সমস্ত ব্যক্তিগত ডেটা সংরক্ষণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে [15]। চীন রাজনৈতিক বিচারের হাতিয়ার হিসেবে নজরদারি ব্যবহার করার জন্যে পরিচিত হলেও অ্যাপল উচ্চমানের নিরাপত্তা বজায় রাখার দাবি করেছে। সংস্থাটি সরকারের কাছে চাবি হস্তান্তর করেছে বলে সাংবাদিক সূত্রে জানা গেছে [16]। একই বছর, অ্যাপল নির্বাচনী জালিয়াতি বন্ধ করার জন্যে রাশিয়ার বিরোধী দলের তৈরি করা অন্যতম সরঞ্জাম একটি স্মার্ট ভোটিং অ্যাপ সরিয়ে দেয় [17]। ঠিক তার যন্ত্রগুলিতে ব্যক্তিগত ডেটা সনাক্ত অবরোধের সিদ্ধান্তের মতো উভয় ক্ষেত্রেই কোম্পানিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুতর ও সরাসরি রাজনৈতিক পরিণতি ছিল। শুধু পার্থক্য ছিল একটি কোম্পানির উপর রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত চাপের ধরনের।

বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির রাজনৈতিক দায়িত্বের শেষ কোথায়?

২০২২ সালে বিশ্ব স্বৈরাচারী শাসনের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ দেখেছে যা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করছে। ২০২২ সালের স্বাধীনতা_সদনের প্রতিবেদন [18] অনুসারে পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ একটি মুক্ত দেশে বাস করে আর বাকি ৮০ শতাংশ একটি আংশিক মুক্ত ও বদ্ধ বিশ্বের মধ্যে সমানভাবে বিভক্ত। বিশ্ব আরো বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে। উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শাসন আজকে নিয়মের পরিবর্তে একটি ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে।

বিভিন্ন স্বৈরাচার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির জন্যে চ্যালেঞ্জযুক্ত বাধা তৈরি করে যা উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মূল চালিকা হিসেবে কাজ করছে। রাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যবসার সম্ভাব্য প্রত্যাশা ও তাদের সম্পর্কের ধরনগুলিকে সংজ্ঞায়িত করে। স্বৈরাচারে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও জনসাধারণের আলোচনা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দমন-পীড়নের শিকার হয় এবং ব্যবসা রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের উপাদানগুলির মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক অর্থনীতির রূপ নেয়। প্রয়োজনের সময় কোম্পানির উপর আরো বেশি সরাসরি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাষ্ট্র টিকে থাকে। অর্থনৈতিক জীবনে এই হস্তক্ষেপ সাধারণ হলেও অপ্রত্যাশিত। সেন্সর, উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের জন্যে বিখ্যাত স্বৈরশাসকরা এগুলির সবই ব্যবসা প্রদত্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে করে থাকে।

সবচেয়ে সাধারণ একটি উদাহরণ হলো রাজনৈতিক বৈধতা বজায় রাখার জন্যে কোন ব্যবসায়িক সংস্থাকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের কোম্পানির নৈতিক বৈধতাকে ক্ষুন্ন করার মতো আইন মেনে চলার মতো পরিস্থিতি। চীনের অ্যাপলের ঘটনা তার উদাহরণ হলেও অন্যান্য দেশের কোম্পানিগুলির জন্যে এটি ভিন্ন ফলাফল দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ চীনা সরকারের কাছে তথ্য হস্তান্তরের জন্যে ভেরিজনের (২০১৭ সালে ইয়াহু কেনা সহায়ক প্রতিষ্ঠান) বিরুদ্ধে করা মামলা [19] রাজনৈতিক বিচার ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতনের দিকে ধাবিত করেছিল। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় আইন প্রায়শই সরকারি সংস্থাগুলির নজরদারির উদ্দেশ্যসহ ব্যক্তিগত ডেটাতে অনুপ্রবেশের জন্যে নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা ও প্রক্রিয়া সেট করার জন্যে পরিকল্পিত [20] হয়। সাবপোনার মতো অনুরোধের ভিত্তিতে তথ্য হস্তান্তর গণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর জন্যে সাধারণ হলেও [21] পার্থক্যটি হলো কীভাবে এই ধরনের ডেটা আরো ব্যবহার করা যায় এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির সাথে এটিকে ভারসাম্যপূর্ণ করার কোন ভিত্তি আছে কিনা দেখা।

বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির রাজনৈতিক দায়িত্বের বিশদ বিবরণ

প্রযুক্তি ও রাজনীতির সংযোগস্থলের বিস্তৃতির সাথে সাথে নতুন সৃষ্টির রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে লড়াই করা প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের জন্যে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কর্তৃত্ববাদী ও অন্যান্য নৈতিকসমস্যাযুক্ত পরিবেশে বিচরণ করার সময় তাদের অবশ্যই শক্তিশালী রাজনৈতিক দায়িত্বের কৌশল বিকাশের জন্যে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণের এক উপায় হলো স্বচ্ছতা।

পরিবেশগত সামাজিক ও শাসন (ইএসজি) প্রতিবেদন ও ইএসজি সমস্যা উন্মোচনে [22]র চর্চা জবাবদিহিতার দিকে পরিচালিত করা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারা বাধ্যতামূলক স্বচ্ছতার একটি চমৎকার উদাহরণ। উদাহরণস্বরূপকে নির্দিষ্ট প্রযুক্তি কিনেছে তা প্রকাশ্যে উন্মোচন কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলির অপব্যবহার করার ক্ষমতাকে সীমিত করবে। উপরন্তু, দায়িত্বশীল বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দায়িত্বকে একীভূত করা প্রযুক্তি, রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে একটি উন্মুক্ত সংলাপ শুরুর একটি অর্থবহ পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। কোম্পানিগুলির সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা [23] প্রকাশ করার মাধ্যমে এবং ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্বচ্ছতা যোগ করে এটা করা যেতে পারে।

তবুও এই ধরনের উন্মুক্ততা কর্তৃত্ববাদী শাসনের এখতিয়ারের মধ্যে থাকা প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্যে আরো বেশি সমস্যাযুক্ত – এবং সম্ভাব্যভাবে অসম্ভব। সবচেয়ে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণের একটি হলো রাশিয়ায় সদর দপ্তর থাকা একটি বহুজাতিক কোম্পানি ইয়ানডেক্স [24]। একটি বড় প্রযুক্তি খেলোয়াড়ে পরিণত কোম্পানিটিকে প্রায়শই “রুশ গুগল” বলা হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে মাঝে মাঝে সমঝোতা করা সত্ত্বেও, কোম্পানিটি স্থির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে দেশটির সবচেয়ে উদার কোম্পানির খ্যাতি বজায় রেখেছে।

তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের সময় ইয়ানডেক্স যথেষ্ট আইনগত বিধিনিষেধ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও জনসাধারণের সমালোচনার চাপে [25] পড়ে। শুধু “বিশেষ অভিযান” এর আখ্যানকে বিস্তৃত করা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যমের গল্পগুলিকে সূচিত [26] করলেও যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ৪ কোটি লোক ইয়ানডেক্স সংবাদ পরিদর্শন করেছে। আইন মেনে চলা রুশ রাষ্ট্রের আধিপত্যে থাকা একই সুরে কথা বলা গণমাধ্যম কভারেজে অবদান রাখার সমতুল্য হয়ে উঠেছে।

এই বিশিষ্ট ব্যবসাটি তার শেয়ারের মূল্যের ৭৫ শতাংশেরও বেশি হারানোতে যুদ্ধটি কোম্পানিটিকে প্রভাবিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে। রুশ নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের প্রতিবাদে শীর্ষ ব্যবস্থাপনাসহ কোম্পানিটির অনেক কর্মচারী পদত্যাগ অথবা দেশ ত্যাগ [27] করে। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতার উপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়। চাপের মুখে কোম্পানিটি তাদের গণমাধ্যম সম্পদ রাষ্ট্রের অনুগত একটি হোল্ডিংয়ের কাছে বিক্রি করে [28]। ডিসেম্বরে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়ানডেক্স রাশিয়া ছেড়ে গেলেও মূল অংশীদার থেকে যান।

ব্যবসা চালানোর জন্যে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের নিয়ম মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একটি বিতর্কিত ভিত্তি তৈরি করে। অ্যালবার্ট হিরশম্যানের “প্রস্থান, কন্ঠ, আনুগত্য: প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলিতে হ্রাসের প্রতিক্রিয়া [29]” একটি সংস্থা বা রাষ্ট্রের অনুভূত কর্মক্ষমতা হ্রাসের প্রতিক্রিয়া জানাতে তিনটি কৌশলের একটি কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়। এটিকে একটি সাংগঠনিক কৌশলের নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদের মুখোমুখি একটি প্রযুক্তি সংস্থা ছেড়ে যেতে, প্রতিবাদ করতে অথবা সঙ্গতি বিধান করতে পারলেও জনমতের দমন সাধারণভাবে কর্তৃত্ববাদকে চিহ্নিত করে বলে বাস্তবে শুধু থাকা বা চলে যাওয়ার কৌশল দুটিই অবশিষ্ট থাকে।

তবুও উভয় কৌশলই আরো নৈতিক উদ্বেগ নিয়ে আসে। স্বৈরশাসকদের সাথে সহযোগিতা করার নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে অনেক কিছু বলার পাশাপাশি কর্মচারী ও গ্রাহকদের বিবেচনায় পতনশীল রাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়া একটি ব্যবসার জন্যে কতোটা নৈতিক? অধিকন্তু, ব্যবসাটি সর্বপ্রথম একটি মুনাফা-উৎপাদনকারী উদ্যোগ এবং বিশ্বের খুব কম দেশই কোন কোম্পানির নেতৃত্বের রাজনৈতিক দায়িত্বের মান বজায় রাখতে একটি পণ্যের জন্যে বাজার তৈরি করবে। আমরা সবাইমিলে তো আর নরওয়েতে বাস করতে পারি না।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির প্রভাব ক্রমেই বাড়তে থাকায় এদের দায়বদ্ধ রাখার দায়িত্ব সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলির উপর বর্তায়৷ স্বচ্ছতার দাবি করা এবং নতুন ন্যায্য নীতিমালা নিয়ে আসার জন্যে সহযোগিতা করা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে সহায়তা করার একটি উপায় হতে পারে। এদিকে জনসাধারণকে শিক্ষিত করা ও তাৎক্ষণিক তৃপ্তি ছাড়াই প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্দীপনা তৈরি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। একসাথে কাজ করার মাধ্যমে এই অংশীজনরা আরো নৈতিক প্রযুক্তির দৃশ্যপট তৈরি শুরু করতে পারে যেখানে কর্পোরেট স্বার্থের চেয়ে সাধারণ মঙ্গল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।