- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন নাগরিক বিক্ষোভ রোধের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, শ্রীলন্কা, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, জাতি-বর্ণ, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাজনীতি, সরকার, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী
Protests against President Gotabaya Rajapaksa near the Presidential Secretariat (2022). Image via Wikimedia Commons by AntanO. CC BY-SA 4.0 [1]

রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ের (২০২২) কাছাকাছি রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাক্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। আন্তানো [1]র তোলা ছবি উইকিমিডিয়া সাধারণের মাধ্যমে। সৃজনী সাধারণ অনুমতি একইরকম ব্যবহার ৪.০ [2]

শ্রীলঙ্কা ২২ মার্চ, ২০২৩ তারিখে একটি নতুন সন্ত্রাসবিরোধী আইন (এটিএ) [3] প্রস্তাব করেছে যা ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ [4] সংসদে উপস্থাপিত [5] হবে। তবে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যমান সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ আইন (পিটিএ) এবং এর আনুষাঙ্গিক খসড়া আইন প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে করা প্রস্তাবিত সন্ত্রাস বিরোধী আইন (এটিএ) এর বিরোধিতা ক্রমেই বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা [6] বলছে নতুন আইনে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞাটি সুনির্দিষ্ট নয় এবং এতে ইতোমধ্যে বিদ্যমান ফৌজদারি আইনের আওতায় থাকা বিস্তৃত পরিমাণ অপরাধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তার উপর আইনটি পরোয়ানা ছাড়াই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে ব্যক্তিদের আটক করার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা এবং রাষ্ট্রপতি, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে যথেষ্ট বিচারিক তদারকি ছাড়াই একতরফা বিভিন্ন সমাবেশ ও সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার সুস্পষ্ট ক্ষমতা দেয়।

কিছু অধিকার গোষ্ঠী বলছে আইনটির উদ্দেশ্যে মতবিরোধ ও প্রতিবাদ রোধ করা:

বিদ্যমান সন্ত্রাসবিরোধী আইনে [8]র অপব্যবহারের মাধ্যমে #সরকার [7] বলপ্রয়োগ করে রাজনৈতিক বিরোধিতা এবং নাগরিকদের সমাবেশ ও #বিক্ষোভেরঅধিকার [10] দমন [9] করছে বলে এটিএ প্রবর্তনের সময়টি উদ্বেগজনক। এটি #মানবাধিকারে [11]র জন্যে একটি গুরুতর উদ্বেগ।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষকে [14]র মতে খসড়া আইনটি শান্তিপূর্ণ মতবিরোধ দমিয়ে রাখা ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তু করাসহ অধিকারের ধারাবাহিক লঙ্ঘনের সুযোগ দেয়।

আগের আইনগুলির তুলনায় বেশি নিবর্তনমূলক

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিশেষত তামিল ও মুসলমানদের আটক ও নির্যাতনের জন্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত [15] ১৯৭৮ সালে কার্যকর সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ আইন [16]কে প্রতিস্থাপনের জন্যে প্রস্তাবিত আইনটি তৈরি করা হয়েছে। বেশিরভাগ বৌদ্ধ সিংহলিরা [17] দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭৯ শতাংশ। তামিল (প্রায় ১৫ শতাংশ) এবং মুসলমানদের (প্রায় ১০%) মতে অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আইন [18] রয়েছে। ১৯৮৩-২০০৯ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে [19]র সময় তামিল বিদ্রোহকে দমন করতে পূর্ববর্তী আইনটিও একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

আইনজীবী গেহান গুনাতিলক প্রস্তাবিত আইনটি কীভাবে সম্ভাব্যভাবে কর্তৃত্ববাদকে সহজতর করতে পারে তা ব্যাখ্যা করে একটি সূত্র পোস্ট করেছেন।

#এলকে-তে নতুন সন্ত্রাসবিরোধী খসড়া আইন বিষয়ে একটি সূত্র।

কর্তৃত্ববাদের দুটি রূপ রয়েছে।

প্রথমটি হলো স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাস জুড়ে শ্রীলঙ্কা সুস্পষ্ট, আপত্তিজনক, আক্রমণাত্মক দিকটি দেখেছে। কর্তৃত্ববাদবাদের এই রূপটি ১৯৮০, ৯০ এবং ২০০০ এর দশকে রাজনীতিকে সংজ্ঞায়িত করেছিল।

নতুন আইনটি প্রথম বর্তমান রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমসিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে উপস্থাপন করা হলেও মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক আশঙ্কা [22]র কারণে এটিকে আইনে পরিণত করা হয়নি।

নাগরিক সাংবাদিকতা সাইটের গ্রাউন্ডভিউজে [23] শিক্ষক কালানা সেনারত্ন বলেছেন নতুন আইনের কিছু কিছু ধারা রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে।

মানবাধিকার কর্মী এরমিজা তেগাল গ্রাউন্ডভিউজে তার নিবন্ধে [24] বলেছেন এই নতুন আইনগুলি সরকারকে মতবিরোধ, নাগরিক বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন ও নাগরিক অবাধ্যতার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে।

দৈনিক এফটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি পৃথক উপ-সম্পাদকীয় [25]তে আমির আলি প্রস্তাবিত আইনটি সম্ভাব্যভাবে আরাগালয়া (সংগ্রাম) এর মতো শেষ পর্যন্ত রাজাপাক্সে সরকারে [26]র পতন ঘটানো ২০২২ সালের মার্চ-আগস্টে শ্রীলঙ্কার সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ [27] দমন করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। আলি আরো জোর দিয়ে বলেন পরিবর্তনের শান্তিপূর্ণ কোন উপায় না থাকলে অনিবার্যভাবে তা সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

পড়ুন আমাদের বিশেষ কভারেজ: সংকটে শ্রীলঙ্কা [28]

ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিচারপতি মন্ত্রী বিজয়দাস রাজাপক্সে প্রস্তাবিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন (এটিএ) সম্পর্কিত সর্বোচ্চ আদালতের গৃহীত পর্যবেক্ষণগুলি সরকার মেনে চলা [29]র কথা বলেছেন এবং এমনকি বিভিন্ন গোষ্ঠীও নতুন আইনটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।

বিরোধী দল শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) এর প্রতিবাদ তুলে ধরতে সক্রিয় কর্মী ত্যাগী রুয়ানপতিরানা টুইটারে গিয়েছিলেন:

আমরা দৃঢ়়ভাবে মনে করি এই খসড়া আইনে সন্ত্রাসবাদ সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। আইনটি যেকোনো পদক্ষেপকে সন্ত্রাসবাদী কর্ম হিসেবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিলে এটি একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্যে উপযুক্ত হবে না – এটিএ সম্পর্কে এসএলপিপি বলেছে

কলম্বোর কার্ডিনাল ম্যালকম রঞ্জিত উদ্বেগ প্রকাশ করে [32] উল্লেখ করেছেন সমালোচক ও জনগণের বিক্ষোভ দমন করা নতুন সন্ত্রাসবিরোধী আইনটির উদ্দেশ্যে।

মানবাধিকার আইনজীবী ভবানি ফনসেকা টুইট করেছেন:

অবিলম্বে ৪৫০ টিরও বেশি ব্যক্তি/ সংগঠনের এটিএ প্রত্যাহারের আহ্বানে #এটিএ [33]’র প্রতি বিরোধিতা বাড়ছে

পিটিএ প্রতিস্থাপনকারী সন্ত্রাসবিরোধী আইন গণতন্ত্রের জন্যে আরো মারাত্মক হুমকি

ফনসেকা আইনটি চিত্রিত করা কিছু কার্টুন ভাগাভাগি করেছেন:

কার্টুনগুলি খুব ভালোভাবে #শ্রীলঙ্কা [35]#এটিএ [33] #পিটিএবাতিলকর [38] #এটিএনয় [39] বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে