- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সংসদে ‘নিবর্তনমূলক’ গণমাধ্যম আইন বাতিল, ‘ফিজির সাংবাদিকদের জন্যে দারুণ একটি দিন’

বিষয়বস্তু: ওশেনিয়া, ফিজি, আইন, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, বাক স্বাধীনতা, ভাল খবর, রাজনীতি, সরকার, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী
Fiji media [1]

ফিজির সংসদে ঐতিহাসিক ভোটের সময় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপমালা সংবাদ সমিতির ফেসবুক পৃষ্ঠা থেকে নেওয়া ছবি [1]

ফিজির সংসদ ৬ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে ২০০৬ সালে একটি অভ্যুত্থানে [2]র মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা সরকারের ২০১০ সালে প্রণীত [3] গণমাধ্যম শিল্প উন্নয়ন বিধি (এমআইডিএ) বাতিল করার পক্ষে ভোট দিয়েছে [4]

২০২২ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরে গঠিত [5] নতুন জোট সরকার গণমাধ্যম আইন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি [6] দিয়েছে, যার মধ্যে এমআইডিএ‘র পর্যালোচনা বা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম গোষ্ঠীগুলি এমআইডিএ-কে বিগত সরকারের একটি দমনমূলক হাতিয়ার বলে সমালোচনা করেছে।

সংসদ অধিবেশন চলাকালে ফিজি গণমাধ্যম সমিতি (এফএমএ) [7] পঠিত বিবৃতি স্থানীয় গণমাধ্যম পরিবেশের উপর এমআইডিএ‘র ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে:

এর ফলে ফিজির কিছু সেরা সাংবাদিক শিল্প ছেড়ে চলে গেছে এবং গণমাধ্যম এখনো সেই দুঃসহ সময়ের মানসিক ক্ষত বহন করে।

পূর্ববর্তী সরকার বা জনসাধারণের কেউই গণমাধ্যম সম্পর্কে অভিযোগ করার জন্যে এমআইডিএ ট্রাইব্যুনাল ব্যবহার করেনি এবং এমআইডিএ’র অধীনে গণমাধ্যমের কোনো উন্নয়নও হয়নি। শিল্পের জন্যে এটি একটি অকেজো, কিন্তু বিপজ্জনক ও প্রতিশোধমূলক আইন ছিল।

এমআইডিএ আইন বাতিল করা দীর্ঘদিন ধরে ফিজির সকল গণমাধ্যম সংস্থার ঐক্যবদ্ধ দাবি ছিল। এই জনজোট সরকারসহ কোন সরকারকে কখনোই গণমাধ্যমের উপর এমন ক্ষমতা দেওয়া উচিত নয়।

অধিবেশন চলাকালে যোগাযোগমন্ত্রী মাননীয় ড. মানোয়া কামিকামিকা কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার বা এমআইডিএ লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের নাম পড়ে শোনান, একজন সাংবাদিকের এই টুইটটি যেমন দেখিয়েছে:

আজ সংসদে কোনো না কোনোভাবে পূর্ববর্তী সরকারের বিশেষ মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠাদের  নাম উল্লেখ করার জন্যে ফিজি গণমাধ্যম সমিতি এবং ডিপিএম মানোয়া কামিকামিকাকে ধন্যবাদ। সতীশ নারাইন, তানিয়া ওয়াকানিকা ও তেভিটা গোনেলেভুও পূর্ববর্তী #ফিজি সরকারের আমলে চরম মূল্য দিয়েছে।

এফএমএ আরো বলেছে “এমআইডিএ পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিন শেষ, নিবর্তনমূলক আইন এখন ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ে নিক্ষিপ্ত।”

কীভাবে এমআইডিএ’র দমনমূলক বিধান [11] গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করেছে তা আগের একটি বিবৃতিতে এফএমএ উল্লেখ করেছেঃ

গণমাধ্যম সংস্থা ও সম্পাদকদের মাথার উপর ঝুলন্ত অত্যধিক জরিমানা হুমকিস্বরূপ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্যে সহায়ক নয় এবং ভাল প্রতিবেদনের মানকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে প্রতিশোধমূলক, শাস্তি ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে পরিকল্পিত।

আরেকজন সাংবাদিক টুইটারে স্মরণ করেছেন সরকার ২০১০ সালে যেভাবে সংবাদকক্ষকে ভয় দেখানোর জন্যে দমনমূলক গণমাধ্যম আইন ব্যবহার করতো।

এই আইন প্রণয়নের পর থেকে নিষ্ঠুর দিনগুলোর কথা স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি। আমাদের কপিগুলো পরীক্ষা করার জন্যে কীভাবে তারা সংবাদকক্ষে সৈন্য পাঠাতো। কীভাবে আমাদের শুধু সরকার না লিখে সঙ্গে ‘অন্তবর্তীকালীন’ লেখার জন্যে শপথ নেওয়ানো হয়েছিল? সেলাম, থেকে যাওয়া সহকর্মীদের। সেলাম, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা👊

সংসদে ভোটের পর বিস্মিত [14] ফিজি টাইমসের প্রধান সম্পাদক ফ্রেড ওয়েসলি বলেছেন, ” আজ ফিজিতে সাংবাদিক হওয়ার একটি দুর্দান্ত দিন।”

পরে তিনি এমআইডিএ-কে ফিজির গণতন্ত্রের পতনের সাথে যুক্ত করে একটি সম্পাদকীয় [15] লেখেন।

আপনি কীভাবে প্রতিদিন আপনার মাথার উপর ঝুলন্ত বিশাল জরিমানা ও কারদণ্ড উপেক্ষা করতে পারেন? কেননা লঙ্ঘন সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা ছিল না, সম্পাদকরা তাদের বিরুদ্ধে আইনটি কাউকে কোথাও ব্যবহারের খুব বাস্তব সম্ভাবনার ঝুঁকিতে ছিল।

সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটা অবশ্যই তখন রীতি ছিল না, ক্ষোভের বিষয়ের উত্থাপন ক্ষমতাসীনদের খারাপভাবে উপস্থাপন করে। জনগণের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের সরকারের প্রয়োজন নেই। তাদের চাপা তথ্যেরও প্রয়োজন নেই।

দিন শেষ হওয়ার আগেই। এখানেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা! আজ গণমাধ্যম শিল্প উন্নয়ন বিধি (এমআইডিএ) ২০১০ বাতিল হওয়ার পর @ফিজিটাইমস সম্পাদকীয় দল উদযাপন করছে। এটা অবশ্যই একটি দীর্ঘ কঠিন যুদ্ধ. #১৮৬৯_থেকে

দ্বীপমালার ব্যবসায়িক ম্যাগাজিনের সম্পাদক সামান্থা ম্যাজিক ব্যাখ্যা করেছেন এমআইডিএ বাতিল যেভাবে ফিজিতে আরো সমালোচনামূলক গণমাধ্যম প্রতিবেদনকে অনুপ্রাণিত [20] করবে

ফিজির গণমাধ্যম আরো অনুসন্ধান, আরো গভীরতা, আরো কণ্ঠস্বর, ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাবে, [এবং] আশা করি তারা ভয় ছাড়াই আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে পারবে।

আপনি যেই হোন না কেন বিতর্ক, তদন্ত ও প্রশ্ন করার স্তর থাকাটা জনগণ ও গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের জন্যে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হবে।

“খুব আবেগময়,” ফিজি টাইমসের প্রধান সম্পাদক ফ্রেড ওয়েসলি আমাকে বলেছেন।

ফিজিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনকারী বর্ণিত “নিবর্তনমূলক আইন” বাতিল করার পরে সংবাদকক্ষগুলি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা উদযাপন করছে। @আরএনজেডপ্রশান্তমহাসাগরীয় @ফিজিটাইমস @এশীয়দ্বীপমালা @কেলভিনফিজি

তবে সাবেক ক্ষমতাসীন দল বলেছিল জনস্বার্থে এমআইডিএ পাস করা জরুরি। এছাড়াও প্রাক্তন মন্ত্রী প্রেমিলা কুমার প্রশ্ন তোলেন [26] এমআইডিএ বাতিলের খসড়া আইনটি নিয়ে কেন সাংসদরা গণমাধ্যমের সাথে পরামর্শ করেছে [27]

(এটি) কারাগারে গিয়ে বন্দীদের বেষ্টনী ও ফটক সরিয়ে ফেলতে হবে কিনা জিজ্ঞাসা করার মতো? অবশ্যই তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার যেকোনো কিছু অপসারণ করাটাই বেছে নেবে।

যেকোনো বিচারেই গণমাধ্যমের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা বিরল এবং এমনকি অসম্ভব।

উপ-প্রধানমন্ত্রী বিমান প্রসাদ এমআইডিএ বাতিলের গুরুত্বের কথা নতুন বিরোধীদের স্মরণ করিয়ে দেন [28]

মাঝে মাঝে মনে হয় বিরোধীরাও আজ নিজেদের স্বার্থ বুঝতে পারছে না। তারা সরকারে থাকা এবং গণমাধ্যমকে ধাক্কা দিতে এতটাই অভ্যস্ত যে আইনটি বাতিল করা কতোটা তাদের জন্যে উপকারী, গণতন্ত্রের জন্যে ভাল এবং এদেশে আমাদের জনগণের জন্যে মঙ্গলজনক সেটা দেখতে পাচ্ছে না।

অ্যাটর্নি-জেনারেল বিরোধী দল ও জনসাধারণকেও আশ্বস্ত করেছেন তারা এখনো মানহানি আইন ১৯৭১, অনলাইন নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং অপরাধ আইন ২০০৯ এর মতো বিদ্যমান আইন [29] অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইতে পারেন।

এফএমএ গণমাধ্যম সংস্থা ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ফিজি গণমাধ্যম পর্ষদের মাধ্যমে অভিযোগ প্রক্রিয়াকরণ ও গণমাধ্যমের মানোন্নয়নে গণমাধ্যমের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ সমর্থন করে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপমালা সংবাদ সমিতি গণমাধ্যম শিল্পের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অংশীজনদের আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে [30]

গণমাধ্যম শিল্প ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দায়িত্ব এখন গণমাধ্যমের আত্ম-নিয়ন্ত্রন এবং নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্যে যথাস্থানে যথাযথ স্বাধীন প্রক্রিয়া স্থাপন করা।

এছাড়াও এটি অন্যান্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় সরকারগুলিকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রনের আইনগুলি সরিয়ে ফেলতে ফিজির নেতৃত্ব অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছে।

সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক প্রকাশিত ২০২২ সালের বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ফিজির স্থান [31] ১০২তম। কোন প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতির জন্যে এটি সবচেয়ে খারাপ অবস্থান [32]