- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

অধিকার গোষ্ঠীগুলি থাইল্যান্ডের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ মনে করছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, থাইল্যান্ড, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, প্রতিবাদ, রাজনীতি, সরকার, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী

সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর ২১ মার্চ সংসদের সামনে একটি সমাবেশেএকজন বিক্ষোভকারী ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রুত চান-ও-চা এর একটি ছবি ছিঁড়ে ফেলে। প্রাচাথাই [1] এর মাধ্যমে পাওয়া ছবি। অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

থাইল্যান্ডের একটি স্বাধীন সংবাদ সাইট প্রাচাতাই মূলত এই নিবন্ধ [1]টি প্রকাশ করে এবং গ্লোবাল ভয়েসেস একটি বিষয়বস্তু-ভাগাভাগি করার চুক্তির অধীনে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ পুনঃপ্রকাশ করেছে।

যে রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও আইনি কাঠামোর অধীনে ১৪ মে, ২০২৩ তারিখে থাইল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তাতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়াকে প্রায় অসম্ভব, ৬ এপ্রিল এক বিবৃতিতে বলেছে মানবাধিকার পর্যবেক্ষক [2]

মানবাধিকার পর্যবেক্ষকসহ ৫০টিরও বেশি থাই এবং আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ গোষ্ঠী থাইল্যান্ডের ২৫টি গণতান্ত্রিক মিত্র ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছে একটি যৌথ বিবৃতিতে এই সমস্যাগুলি তুলে ধরে সরকারকে থাই নেতাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের অনুরোধ করেছে। আসন্ন নির্বাচনে থাই বিরোধী দলগুলির অংশগ্রহণের অর্থ এই নয় যে তারা থাইল্যান্ডে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী, এইচআরডব্লিউ বলেছে।

এইচআরডব্লিউ-এর এশীয় প্রচারণা পরিচালক জন সিফটন [3] বলেছেন, “থাইল্যান্ডের নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সারাবিশ্বের গণতান্ত্রিক সরকারগুলিকে থাই নেতৃত্বকে স্পষ্ট করা উচিত থাই জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘন করলে কঠোর পরিণতি বরণ করতে হবে।” “একটি গভীর ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থায় এবং ভয়ের পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের কোন গণতান্ত্রিক বৈধতা থাকবে না।”

নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি ২০১৪ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে [4]র মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলকারী  জান্তা নিযুক্ত একটি কমিশন লিখিত ২০১৭ সালের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে ঘটছে। ২০১৭ সালের সংবিধানের বিধানগুলি [5] থাইল্যান্ডের সিনেট, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনিক আদালত, এবং সাংবিধানিক আদালতের সদস্য নিয়োগের অধিকার একচেটিয়াভাবে জান্তার কাছে অর্পণের মাধ্যমে বেসামরিক শাসনের পরিবর্তে সামরিক ক্ষমতাকে প্রবর্তন করেছে।

থাইল্যান্ডের সংসদের ৫০০-সিটের নিম্নকক্ষ নির্বাচিত হলেও ২৫০-সদস্যের সিনেট জান্তা কর্তৃক নিযুক্ত এবং মূলত ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের নেতা ও পরবর্তী মেয়াদের জন্যে নির্বাচনে দাঁড়ানো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রুয়ুত চান-ওচার প্রতি অনুগত।

২০১৭ সালের সাংবিধানিক ব্যবস্থার অধীনে নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্রধানমন্ত্রীর জন্যে একজন প্রার্থীকে মনোনীত করলেও সিনেটের ২৫০ জন অনির্বাচিত সদস্যসহ ৫০০-আসনের নিম্নকক্ষের ভোটে একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত হতে সমন্বিত ৭৫০টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৩৭৬ ভোট) অর্জন করতে হয়।

ফলে সামরিক-পন্থী দলগুলিকে প্রার্থী মনোনয়নের জন্যে জান্তা-নিযুক্ত সিনেটের আসনের সাথে সংসদের নিম্নকক্ষের ৫০০টি আসনের মধ্যে ১২৬টি পেলেই হয়। প্রয়ুতের মনোনয়নকারী সামরিক-পন্থী ফালাং প্রাচারাত পার্টি নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পেলেও ২০১৯ সালে প্রত্যেকটি থাই সিনেটর প্রয়ুতকে সমর্থন করে।

বিপরীতক্রমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করার সুযোগ পেতে ৫০০টি গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আসনের মধ্যে সামরিক-পন্থীদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ ৩৭৬টি আসন পেতে হবে। শীর্ষ সিনেটররা ইতোমধ্যে বারবার বলেছে [6] তারা নিম্নকক্ষের নির্বাচনের ফলাফল উপেক্ষা করে তারা তাদের নিয়োগদাতা প্রয়ুতকে ভোট দিতে পারে।

সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলির চিঠিটি জি৭ সদস্য, জি২০-এর গণতান্ত্রিক সরকারগুলি এবং বর্তমানে থাইল্যান্ডের সাথে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনারত [7] ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক সরকারগুলিতে পাঠানো হয়েছে৷

মানবাধিকার পর্যবেক্ষক বলেছে নির্বাচনের আগে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলির থাই কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত যে তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং এর ফলে নতুন সরকার গঠনের ওপর নজর রাখবে। লেখকরা আরো বলেছে যে তাদের প্রকাশ্যে বলা উচিত সিনেটরদের একটি নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোটদানের নির্দেশ দেওয়ার মতো নির্বাচনের ফলাফল দুর্বল করার চেষ্টা করা বা নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়া হলে তা বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সংসদের কাঠামোগত ত্রুটিগুলি ছাড়াও থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিবেশ মানবাধিকারকে মারাত্মকভাবে সীমাবদ্ধ করছে [8]। থাই কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ১,৮০০ জনেরও বেশি গণতন্ত্রপন্থী কর্মী [9], বিরোধী সমর্থক এবং সরকারের সমালোচকদের তাদের মতামত প্রকাশ বা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় অপরাধমূলকভাবে অভিযুক্ত করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী ৪১ জনসহ ২৮০ জনেরও বেশি শিশু রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ রাজতন্ত্র সংস্কারের আহ্বানকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে বিবেচনা করে এবং সংস্কারের আহ্বানকারী শিক্ষার্থী ও গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের বিচারে কঠোর শাস্তিসহ গুরুতর অপরাধমূলক বিধান ব্যবহার করে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রচারণায় রাজতন্ত্রের কোনো উল্লেখ নিষিদ্ধ করে এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্যে দলগুলি ভেঙে দেওয়ার ও দলের নির্বাহী ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে। সাংবিধানিক আদালত ২০২১ সালের নভেম্বরে রাজতন্ত্রের সমালোচনা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে রায় দিয়েছে [10]

সক্রিয় কর্মীরা জোর দিয়ে বলেছে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলির থাই কর্তৃপক্ষকে বন্দী ভিন্নমতাবলম্বীদের মুক্তি দিতে এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের শান্তিপূর্ণ অনুশীলনের জন্যে আটক রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থক, মানবাধিকার রক্ষক, সাংবাদিক ও গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলা উচিত। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের গণমাধ্যম সেন্সর বন্ধ করে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের অবসান [11] ঘটানোর প্রতিশ্রুতি এবং অপমানজনক লেয়াস মাইয়েস্তা (রাজতন্ত্রের অবমাননা) আইন [12], কম্পিউটার অপরাধ আইন [13], এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইন [14] বাতিল বা স্থগিত করাসহ বাকস্বাধীনতার অনুমতি দেওয়া উচিত।

“বর্তমান সরকার থাইল্যান্ডের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মৌলিক ত্রুটিগুলি সমাধান না করা পর্যন্ত সারা বিশ্বের সরকারগুলি আগামী থাই সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বিবেচনা করবে না,” সিফটন বলেছেন। “বেসামরিক নিয়ম পুনরুদ্ধারের মানেই হলো থাই জনগণের মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করা।”