- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

পেট্রা মোলনারের সাথে সাক্ষাৎকার: কেন পশ্চিমা সরকারগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বেশি করে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ অর্পণ করছে?

বিষয়বস্তু: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জাতি-বর্ণ, দেশান্তর ও অভিবাসন, নাগরিক মাধ্যম, মানবতামূলক কার্যক্রম, মানবাধিকার, শরণার্থী, সরকার, সেন্সরশিপ

কেনিয়া-জেড পিন্টো [1]র তোলা পেট্রা মোলনারের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

সক্রিয় কর্মীদের অনুমান অনুসারে ২০২২ সালে ৩ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে দেশ ছেড়েছে যাদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সুরক্ষা ও বসতি খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলিতে প্রবেশ করার সময় তারা প্রায়শই নিজেদের সুরক্ষার পরিবর্তে অনেক বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অপরীক্ষিত প্রযুক্তি নির্ভর শ্রেণীকরণের একটি অমানবিক প্রক্রিয়া অনুভব করে।

গ্লোবাল ভয়েসেস প্রযুক্তি, অভিবাসন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী এবং নৃবিজ্ঞানী পেট্রা মোলনারে [2]র একটি ইমেল সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। মোলনার সীমান্ত পেরুনো লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি জোট অভিবাসন ও প্রযুক্তি পর্যবেক্ষকে [3]র সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শরণার্থী আইন গবেষণাগারে [4]র সহযোগী পরিচালক ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেটের বার্কম্যান ক্লেইন কেন্দ্রে [5]র ফেলো। তিনি বর্তমানে তার প্রথম বই “কৃত্রিম সীমান্ত” (নিউ প্রেস, ২০২৪) লিখছেন।

ফিলিপ নুবেল (এফএন): আপনার গবেষণা দেখায় প্রায়শই আইনহীনতার স্থান শরণার্থী ও আটক শিবিরগুলি নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষার স্থান হয়। আপনি কিছু উদাহরণ দিতে পারেন কি?

পেট্রা মোলনার (পিএম): সীমান্ত ও শরণার্থী শিবিরের মতো মানবিক জরুরী স্থানগুলিতে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্যে ক্রমবর্ধমান হারে নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ২০১৮ সাল থেকে আমি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের তীক্ষ্ণ প্রান্তে থাকা লোকদের সাথে সময় কাটাচ্ছি। আমরা মার্কিন/ মেক্সিকো সীমান্তের অ্যারিজোনা মরুভূমি [6] থেকে কেনিয়া-সোমালিয়া সীমান্ত, ইইউ’র বিভিন্ন শরণার্থী শিবির [7] পর্যন্ত মানুষের জীবনের উপর সীমান্ত নজরদারি ও স্বয়ংক্রিয়তার প্রভাব সরাসরি দেখেছি।

কোন সীমান্ত অতিক্রম করার আগেই আপনি হয়তো মানবিক সেটিংস বা বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহে [8] ব্যবহৃত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের অধীন হতে পারেন। সীমান্তে আপনি ড্রোন নজরদারি, শব্দ-কামান ও তাপমান ক্যামেরা [9] দেখতে পাবেন। ইউরোপীয় শরণার্থী শিবিরে থাকলে আপনাকে অ্যালগরিদম-ভিত্তিক গতি সনাক্তকরণ সফ্টওয়্যারে [10]র সাথে ক্রিয়া করতে হবে। আপনি কণ্ঠস্বর ছাপা প্রযুক্তি [11] ও আপনার সামাজিক গণমাধ্যম রেকর্ড স্ক্র্যাপ করার মতো প্রকল্পের বিষয়বস্তু হতে পারেন। নজরদারি ইউরোপীয় সীমান্তের বাস্তব সীমানার বাইরে আমাদের বোধগম্যতাকে প্রসারিত করে উত্তর ও উপ-সাহারা আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত একটি নজরদারি ড্র্যাগনেট [12] তৈরি করছে বলে সীমান্তগুলো নিজেরাই পরিবর্তিত হচ্ছে।

বিভিন্ন জটিল সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধান হিসেবে উপস্থাপিত প্রযুক্তিগত সমাধানের ক্ষেত্রে এধরনের পরীক্ষামূলক উচ্চ-ঝুঁকির প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটে এবং একটি লাভজনক বাস্তুতন্ত্রের নিখুঁত বাস্তুতন্ত্র তৈরির জন্যে হাজার হাজার কোটি টাকার সীমান্ত শিল্প সম্ভাবনার জন্ম দেয়।

আমার মাঠপর্যায়ের কাজে আমি লোকজনকে ক্রমাগত নজরদারি বা ডেটা পয়েন্ট ও আঙ্গুলের ছাপে [13] আটকে যাওয়ার অনুভূতি ভাগাভাগি করতে দেখেছি। অনেকে তাদের আইনজীবীদের প্রবেশাধিকার বা মনোসামাজিক সমর্থন বন্ধ করার জন্যে এরকম উচ্চ-ঝুঁকির প্রযুক্তিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালাকে খুবই অদ্ভুত বলে মনে করে। যেভাবেই হোক না কেন আরো প্রযুক্তি মানুষকে আসা থেকে বিরত করবে –  অনেক সীমান্ত প্রযুক্তি প্রকল্পের কেন্দ্রে এমন একটি কেন্দ্রীয় ভুল ধারণাও রয়েছে। বাস্তব কিন্তু তা নয়। তখন মানুষ আরো বিপজ্জনক পথ নিতে বাধ্য হলে [14] বিশ্বের সীমান্তগুলিতে আরো বেশি প্রাণহানি ঘটবে।

এফএন: অধিকাংশ সময় উদ্ভাবন একটি ইতিবাচক শব্দ হিসেবে উপস্থাপিত হলেও কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি শরণার্থীদের উপর নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাথে জড়িত। কেন কিছু সরকার এই অনুমতি দেয়?

পিএম: অভিবাসন ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তিতে আইনি শূন্যস্থান তৈরি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অস্বচ্ছ অঞ্চল তৈরির সুযোগ দেয় যা অন্য কোথাও ঘটানো অসম্ভব। আজকের বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ক্রমেই বেশিরভাগ সময় বিতর্কিত সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গঠনে আগ্রহী রাষ্ট্রগুলিতে বেসরকারি খাত কেন আমাদের উদ্ভাবনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে? এখন মানবাধিকার লঙ্ঘনে মদদ দেওয়ার সাথে যুক্ত প্যালান্টির প্রযুক্তি, এয়ারবাস, থ্যালিস এবং আরো অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন সরকারের কাছে পছন্দের বিক্রেতা হয়ে উঠেছে এবং এমনকি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথেও কাজ করছে [15]

এফএন: লঙ্ঘন নথিভুক্ত করা নিজেই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন কেন?

পিএম: প্রযুক্তিগত নিপীড়নের এই ব্যবস্থাগুলিকে নথিভুক্ত করার চেষ্টা নিজেই একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ – একটি অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত, গোপনীয় বেসরকারি খাতের খেলোয়াড়দের এবং সীমান্তে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা আমাদের সাধারণ মানবতাকে চ্যালেঞ্জ করে। বিস্তৃত প্রশ্ন করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। মানবাধিকারের কাঠামো কি যথেষ্ট বা তারা কি এই ক্ষতির পদ্ধতিগত ও যৌথ প্রকৃতিকে থামিয়ে দেয়? আর সীমান্তে প্রযুক্তি ব্যবহার বন্ধের আলচনার জায়গা তৈরি করতে আমরা কি যথেষ্ট কাজ করছি?

ক্ষমতা, সহিংসতা, উদ্ভাবন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই বৈশ্বিক গল্প বলার জন্যে, আমি কখনো কখনো আইন ও নৃবিজ্ঞানের অস্বস্তিকর সংমিশ্রণের উপর নির্ভর করি। এটি এমন একটি ধীরগতির ও ট্রমা-অবহিত নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি যেখানে মানুষের জীবনকে উদ্ভাসিত করার স্থানগুলিতে সৃষ্ট ক্ষমতা ও সুবিধা, গল্প ও স্মৃতির সূত্রগুলি উন্মোচন শুরু করার জন্যে বছরের পর বছর উপস্থিত থাকতে হয়।

প্রযুক্তি সমাজে ক্ষমতার কাঠামোগুলির প্রতিলিপি করে। দুর্ভাগ্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়মিতভাবেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আবার আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার কখনোই নিরপেক্ষ নয় এটাও স্বীকার করতে হবে। এই রাজনৈতিক চর্চাটি প্রান্তিক মানুষের প্রথমে স্থানান্তরের বাধ্যবাধকতার পদ্ধতিগত ও ঐতিহাসিক কারণগুলির সমাধান না করে দ্রুত সংশোধনের আকর্ষণ ও উদ্ভাবনের অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিকে তুলে ধরে।

এফএন: আমরা কিভাবে এটা থামাতে পারি? 

পিএম: আমরা শরণার্থী আইন গবেষণাগারে [4] সীমান্তে প্রযুক্তির ব্যবহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি এই জটিল সমস্যার [16] প্রযুক্তিগত সমাধানের বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।

অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত প্রযুক্তির উন্নয়ন পরিচালনা করার কোন বিধি-বিধান নেই বললেই চলে। এই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছু ভুল হয়ে গেলে দায়-দায়িত্ব প্রযুক্তি নকশাবিদ, এর সংকেতক প্রস্তুতকারী, অভিবাসন কর্মকর্তা বা অ্যালগরিদমের নির্দিষ্ট করা নেই। আইনি আদালতে কর্পোরেশনের মতো অ্যালগরিদমেরও আইনি অস্তিত্ব থাকা কি উচিত নয় কি? অভিবাসন ও শরণার্থী সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের সাথে সম্পর্কিত বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেই ইতোমধ্যে একটি অস্বস্তিকর আইনি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে: ব্যক্তি অধিকারের উপর প্রভাব জীবন-পরিবর্তনের মতো মারাত্মক, এবং সেখানে পদ্ধতিগত সুরক্ষাও দুর্বল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের প্রথম আঞ্চলিক প্রচেষ্টা হিসেবে ইইউ প্রস্তাবিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইনটি একটি প্রতিশ্রুতিশীল পদক্ষেপ হলেও ভ্রাম্যমাণ মানুষকে পর্যাপ্তভাবে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে বর্তমানে এই আইনটি যথেষ্ট সুদূরপ্রসারী নয় [17]রোবো-কুকুর [6], কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগত মিথ্যা যাচাই এবং সীমান্তে বাধা প্রদানে ব্যবহৃত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত প্রযুক্তির উপর একটি স্থগিতাদেশ বা নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক আলাপ-আলোচনার একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ [18]। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষামূলক প্রযুক্তিকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদেরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সীমান্তে প্রযুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন এবং অভিবাসনের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যেকোনো আলোচনায় [19] অবশ্যই অগ্রণী হতে হবে।

কারণ শেষ পর্যন্ত এটি আসলে প্রযুক্তির বিষয় নয়। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি তা হলো ক্ষমতা – এবং পরীক্ষামূলক প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী  রাষ্ট্র ও বেসরকারি খাতের বিভিন্ন অভিনেতা এবং উচ্চ-ঝুঁকির পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার সম্প্রদায়গুলির ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য [20]। উদাহরণস্বরূপ, বর্ণবাদী সীমান্ত রক্ষীদের সনাক্ত করার জন্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের পরিবর্তে সীমান্তে হিংসাত্মক শব্দ কামান [9] বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত মিথ্যা যাচাইকারক [21] তৈরি করার ক্ষেত্রে কার অগ্রাধিকার সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ [13]?

এখানে বিঘ্ন নেটওয়ার্ক পরীক্ষাগার [22] সংগঠিত প্যানেলের একটি ভিডিও রয়েছে যেখানে মোলনার প্রযুক্তি ও শরণার্থী অধিকার বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন: