পাকিস্তান ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে কথিত ধর্মবিদ্বেষী বিষয়বস্তু অপসারণে ব্যর্থতার কারণে উইকিপিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে [4]। উইকিপিডিয়ায় প্রবেশাধিকার ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে পুনরুদ্ধার [5] করা হলেও দেশে সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চগুলি নিষিদ্ধ করা [6] এবারই প্রথম নয় বলে এবং সরকারের বিস্তৃত সেন্সর ক্ষমতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানায়।
অতীতে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (পিটিএ) সাময়িকভাবে ফেসবুক [7], টিকটক [8] ও ইউটিউবে [9]র মতো প্রধান সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চগুলিকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনসংখ্যার কাছে বিতর্কিত বিষয় ধর্মবিদ্বেষী বিবেচিত বিষয়বস্তু পৃষ্ঠপোষণের জন্যে নিষিদ্ধ করেছে। পাকিস্তানের সংবিধান [10] বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন বিধি, নীতি ও কর্ম দিয়ে বাস্তবে এই অধিকারটি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ [11] ঘটনাটি তদন্তের জন্যে একটি কমিটি [12] ঘোষণা করে উইকিপিডিয়ার মতো সাইটে পোস্ট করা আপত্তিকর বিষয়বস্তু অপসারণ বা প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার জন্যে বিকল্প প্রযুক্তিগত পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন। পাকিস্তানের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিবেচনায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ইসলামাবাদ-ভিত্তিক প্রবীণ সাংবাদিক রউফ ক্লাসরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে টুইট করেছেন:
Sir @CMShehbaz [13] its mind boggling as how can any country leave alone Pakistan ban #Wikipedia [14]?Pls ask #PTA [15] to remove ban.We visit it read for knowledge&information not to read objectionable stuff.Such laughable tricks in this age are mere a joke.Don’t reverse age of information pls pic.twitter.com/b82Ht40Uuv [16]
— Rauf Klasra (@KlasraRauf) February 4, 2023 [17]
জনাব @প্রম_শাহবাজ কিভাবে অন্য কোন দেশ ছাড়া শুধু পাকিস্তান #উইকিপিডিয়া নিষিদ্ধ করতে পারে জানার জন্যে মনটা ছটফট করছে? অনুগ্রহ করে #পিটিএ’কে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে বলুন। আপত্তিকর জিনিস নয় জ্ঞান ও তথ্যের জন্যে আমরা এটি পড়ি। এই যুগে এই ধরনের হাস্যকর কৌশল নিছক তামাশা। তথ্যের যুগকে উল্টোপথে চালিত করবেন না দয়া করে
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়া উইকিপিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে [18]:
PAKISTAN: We are alarmed about the blanket #Wikipediablock [19] implemented by the Pakistan Telecommunication Authority (PTA) on 4 Feb. This amounts to an unjustifiable restriction on the right to freedom of expression and must be reversed immediately and unconditionally. (1/3)
— Amnesty International South Asia (@amnestysasia) February 6, 2023 [20]
পাকিস্তান: আমরা ৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের ঢালাও #উইকিপিডিয়াঅবরোধ বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কিত। এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের উপর একটি অযৌক্তিক বিধিনিষেধ যা অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করা উচিত। (১/৩)
সেন্সরকে সুবিধা দেওয়া আইন
পাকিস্তানে ইন্টারনেট সেন্সর [21] বহু বছর ধরে বিতর্কিত তর্কের বিষয়। পাকিস্তান সরকার প্রায়শই জাতীয় নিরাপত্তা, ব্লাসফেমি/ ধর্মবিদ্বেষী আইন ও নৈতিকতার মতো কারণ উল্লেখ করে কিছু ওয়েবসাইট ও অনলাইন বিষয়বস্তুতে প্রবেশাধিকারের উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ প্রয়োগ করে আসছে।
আইনজীবী ও ডিজিটাল অধিকার কর্মী নিঘাত দাদ টুইট করেছেন:
Do you know #Pakistan [22] has 55 million views of #Wikipedia [14] per month. How few people can decide on behalf of millions to blanket ban an entire platform? #wikipediaBlocked [23] https://t.co/FuzuUHZnrv [24]
— Nighat Dad (@nighatdad) February 4, 2023 [25]
আপনি কি জানেন #পাকিস্তানে প্রতি মাসে সাড়ে পাঁচ কোটিবার #উইকিপিডিয়া দেখা হয়। কীভাবে লক্ষ লক্ষ লোকের পক্ষে একটি সম্পূর্ণ মঞ্চ নিষিদ্ধ করার জন্যে এতো কম লোক সিদ্ধান্ত নিতে পারে? #উইকিপিডিয়াঅবরুদ্ধ
[26]পাকিস্তানে ইন্টারনেট সেন্সর বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান চালক হলো পিটিএ [26]। এর ভূমিকার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি দর্শকদের জন্যে অনুপযুক্ত বিবেচিত ওয়েবসাইটগুলি যাচাই ও নিষিদ্ধ করা। পিটিএ’র কাছে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের (আইএসপি) নির্দিষ্ট সাইটগুলিতে প্রবেশাধিকার অবরোধে [27]র নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি অনুপযুক্ত বিবেচিত সাইটগুলির একটি কালো তালিকা করে রাখে।
পাকিস্তানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করার পাকিস্তান ইলেক্ট্রনিক অপরাধ বিধি [28] (পিইসিএ) ২০১৬ এবং ধর্মদ্রোহী আইন [29]সহ বেশ কয়েকটি আইন রয়েছে। এই আইন/ নিয়মগুলি অনলাইন বিষয়বস্তুকে দমন এবং সাংবাদিক ও সক্রিয় কর্মীদের মতো ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্যে ব্যবহার করা হয়। অধিকন্তু গণমাধ্যম সংস্থাগুলি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও প্রভাবশালী সংস্থার চাপের মুখে [30] নিজে থেকেই সেন্সর ও প্রতিবেদনে বিধিনিষেধ আরোপ করে।
পাকিস্তান ২০২১ সালে বেআইনি বিষয়বস্তু অপসারণ ও অবরোধের [31] (প্রক্রিয়া, তদারকি, ও সুরক্ষা) নিয়ম চালু করেছে, যার জন্যে অনুরোধ পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরকার কর্তৃক বেআইনি বিবেচিত যেকোনো বিষয়বস্তু সরাতে সামাজিক গণমাধ্যম কোম্পানিগুলিকে বাধ্য করতে পারে।
পাকিস্তানে ব্লাসফেমি/ ধর্মদ্রোহী আইন
মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে ব্লাসফেমি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় এবং পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইনটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে উদ্ভূত এবং ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে এটি চালু ছিল [32]। এই আইনের অধীনে নির্ধারিত শাস্তিগুলি জরিমানাসহ বা ছাড়াই এক থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের মধ্যে ছিল। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে জেনারেল জিয়া-উল হকের সামরিক শাসনের সময় আইনটিকে আরো কঠোর করে তোলা বেশ কয়েকটি ধারা চালু করা হয়। তারপর থেকে আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারির সর্বশেষ সংশোধনে [33] এটি আরো শাস্তিমূলক হয়েছে। বর্তমানে কেউ ইসলাম, মহানবী মোহাম্মদ বা এমনকি তার সঙ্গীদের [34] অসম্মান করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারে। এছাড়াও এই আইনের অধীনে করা অভিযোগগুলি [35]র জামিন অযোগ্যতা আইনটি অপব্যবহারের প্রবণতা তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘু [36] বিশেষ করে খ্রিস্টান, আহমদিয়া ও হিন্দুরা [37] ব্লাসফেমি আইনের অপব্যবহারের শিকার হয়েছে। এই সম্প্রদায়গুলির বিরুদ্ধে প্রায়শই ভিত্তিহীন অভিযোগে বা প্রমাণ ছাড়াই ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়। পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইনগুলি শুধু সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলিকে শিকার করার জন্যেই ব্যবহার করা না হলেও তারা প্রায়শই মুসলমানদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। গবেষণা কেন্দ্র ও নিরাপত্তা পাঠ (সিআরএসএস) এর একটি প্রতিবেদন [38] অনুসারে ১৯৪৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ব্লাসফেমিতে অভিযুক্ত হওয়ার পরে ৯৫ জন লোক গণপিটুনি অথবা অন্যান্য বিচার বহির্ভূতভাবে নিহত হয়েছে। গত তিন দশকে ১,৫০০ জনেরও বেশি লোকের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়েছে।
পাকিস্তান পিপলস পার্টি [39]র সিনেটর মুস্তাফা নওয়াজ খোখার তার হতাশা প্রকাশ করেছেন এই বলে [40] যে ব্লাসফেমিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা পাকিস্তানের রাজনীতির একটি নতুন নিম্নমানের বিপজ্জনক প্রবণতা হয়ে উঠেছে।
এএফপি’র সাথে কথা বলা [41]র সময় সুশীল সমাজ সংস্থা বোলো ভি [42] এর পরিচালক উসামা খিলজি বলেছেন উইকিপিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা “অসমানুপাতিক, অসাংবিধানিক ও বেশ হাস্যকর” এবং এটি বিশেষ করে শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, স্বাস্থ্যসেবা খাত ও গবেষকদের প্রভাবিত করবে৷