রিল: এককালের ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বৃহত্তম চিনি কারখানা’ ত্রিনিদাদের ব্রিকেন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ

ব্রিকেন দুর্গের পর্দাছবি লিন্ডন ব্যাপটিস্টের ইউটিউব ভিডিও ‘আকাশ থেকে দেখা ব্রিকেন দুর্গ চিনিকল’ থেকে নেওয়া।

কৌভা শহরটির অবস্থান মধ্য ত্রিনিদাদের পশ্চিম দিকে, শুরুতে যার চারপাশে আখ দিয়ে ঘেরা একটি গ্রাম ছিল। ত্রিনিদাদীয় লেখক মাইকেল অ্যান্টনি তার “শহর ও গ্রাম” বইয়ে এটিকে “আখ চাষের এলাকার সবচেয়ে গতিশীল একটি কেন্দ্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন যার “সমৃদ্ধি আখের কাছে ঋণী।”

মূলত ১৮৮০ সালে ত্রিনিদাদের রেল নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে ওঠার পরই এর সমৃদ্ধি ঘটলেও সেই সময়ে এটি “বাস্তবে একটি পরিষ্কার করা আখের জমির চেয়ে বেশি কিছু ছিল না,” লিখেছেন অ্যান্থনি:

জনগণ আফ্রিকীয়দের ছোট একটি অংশসহ প্রধানত চুক্তিবদ্ধ পূর্ব ভারতীয় ইক্ষু শ্রমিকের সংখ্যা কয়েকশর বেশি না হলেও […] এটি ছিল কোলাহলপূর্ণ, প্রাণবন্ত একটি গ্রাম।

সেভিলা হাউসের (চিনি ভূসম্পত্তির বিলুপ্তি-পরবর্তী কেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে অর্জিত) অন্তর্ভুক্ত হয়ে ওঠা ব্রিকেন দূর্গ ১৮৮৬ সালের মধ্যে টার্নবুল স্টুয়ার্ট অ্যান্ড কোম্পানির মালিকানাধীন হয়ে যায়। এর পাশাপাশি রেল ও জাহাজ মালিকানা কোম্পানিটিকে কারখানা থেকে ডক পর্যন্ত পণ্য পরিবহন ও তারপর বিদেশে চিনি রপ্তানি করার সময় উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে।

বছরের পর বছর ধরে এলাকাটি নানা কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি জরুরী বিমাবন্দর হিসেবে ব্যবহারের জন্যে সময় ক্যামডেন (মাঠ পর্যায়ের) সাহায্যকারী বিমান ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো প্রধানত জ্বালানি-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হয় বলে এই এলাকার ভিতরে ও বাইরে থেকে আরো বেশি লোকজন কয়েক দশক চালু থাকার পর ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বরে বন্ধ হয়ে যাওয়া নিকটস্থ পয়েন্টে-অ-পিয়েরে তেল শোধনাগারে কাজ করতে আসে।

তবে ভেতর থেকে কৌভা চিনি শিল্পকে ঘিরে আবর্তিত একটি সম্প্রদায় হিসেবেই রয়ে গেছে, যার গর্বিত প্রতীক ছিল ব্রিকেন দূর্গ এলাকার উসাইন স্টে ম্যাডেলিন ভূসম্পত্তি ও চিনির কারখানা এবং এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন চিনিকল। সেই সময়ে এটা কতোটাই না উদ্ভাবনী ও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, উল্লেখ করেছে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর জাতীয় ট্রাস্ট:

কোম্পানি বায়ুশূন্য প্যান প্রক্রিয়া চালু করেছিল যেটা সেই সময়ে শুধু ব্রিকেন দূর্গ ভূসম্পত্তিকই ব্যবহার করতো। […] এটি ছিল ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রথম কেন্দ্রীয় চিনির কারখানা, যার অর্থ আশেপাশের ভূসম্পত্তি থেকে আখ প্রক্রিয়াকরণের জন্যে সেখানে পাঠানো হতো। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় চিনির কারখানা।

তবে চিনির পতন অব্যহত থাকায় ২০০৩ সালের ১ আগস্টে ক্যারোনি (১৯৭৫) লিমিটেড বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কার্যত দেশে বৃহদাকারের চিনি উৎপাদনের সমাপ্তি ঘটে। সরকার ২০০৯ সালে অকার্যকর পড়ে থাকা উসাইন স্টে ম্যাডেলিন ও ব্রিকেন দূর্গ উভয় কারখানা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশের রাজনৈতিক বিভাজন ছাড়াও স্বেচ্ছায় কর্মসংস্থান বিচ্ছিন্নতার (ভিএসইপি) প্যাকেজে স্বাক্ষরকারী কোম্পানির কিছু প্রাক্তন কর্মচারীকে চলে যাওয়ার শর্ত হিসেবে তাদের কৃষি ও আবাসিকের জমির দখল বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে কয়েক দশকে সমস্যাটি একটি রাজনৈতিক ফুটবল হয়ে উঠেছে। তবে ২০২১ সালে তৎকালীন কৃষি, ভূমি ও মৎস্য মন্ত্রী ক্লারেন্স রামভারত জমি বন্টন প্রক্রিয়া “অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে” (তার মন্ত্রণালয়ের সনাক্ত করতে না পারা ১,১৩০ জন ছাড়া) জানিয়ে “চাষ না করলে জমি হারাতে হবে” বলে সতর্ক করেছেন

প্রায় দুই বছরের পুরনো ত্রিনিদাদ ও টোবাগো নিউজডে সম্পাদকীয় জানিয়েছে:

এর ৭৮,৭৮০ একর আবাদযোগ্য জমির সম্ভাবনা নিয়ে ২০০৩ ইউডাব্লিউআই গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়নের জন্যে প্রায় কিছুই করা হয়নি। প্রাক্তন কর্মীদের প্রোফাইল করার জন্যে কোন দক্ষতা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ভাল ফলাফল লাভের কোন কৌশল ছাড়াই ছাড়া ছাড়াভাবে সেচ ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছে। […]

মি, রামভারত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে একটি ইজারা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রাক্তন কর্মীদেরকে দেওয়া ভিএসইপি প্যাকেজের মূল্য ১,০০০ কোটি ডলার (প্রায় ১,০৫,৩৪২ কোটি টাকা) মূল্যের জমি-জমাসহ ১,৮০০ কোটি ডলার (প্রায় ১,৯০,০০০ কোটি টাকা) বলে উল্লেখ করেছেন।

অবশ্যই এই সম্পদ নষ্ট হতে দেওয়া উচিত নয়।

এই লড়াই চলতে থাকায় ব্রিকেন দূর্গ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এলাকাটিকে একটি সৌর খামারে পরিণত করার প্রস্তাব এগুচ্ছেই না বলে মনে হচ্ছে। চিনির জাদুঘর হিসেবে সরকারের ব্রিকেন দূর্গকে নয় সেভিলা হাউসকে ধরে রাখার পরিকল্পনার কথা স্পষ্ট করে তৎকালীন মন্ত্রী রামভারত আরো বলেন “চিনির কারখানা এবং চিনির ইতিহাস সংরক্ষণ দুটি পৃথক বিষয়।” মন্ত্রীর এমন অবস্থানের সাথে কিছু সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারী একমত নন

২০১৫ সালের ৫ আগস্ট তারিখে চিনি সংরক্ষণাগার কেন্দ্র ও সেভিলা চিনি যাদুঘর আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। তবে মেরামতের অযোগ্য ব্রিকেন দূর্গ এখন শুধুই তার অতীতের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে:

@lemniscate_tt Have you ever seen it in operation? #trinidad #abandonedplaces #drone #trinidadandtobago #islandlife #mysterious #trini_tiktoks #trinidad🇹🇹 #fyp #dji ♬ Fly – Ludovico Einaudi
@গোলকধাঁধাঁ_টিটি আপনি কি কখনো একে সক্রিয় দেখেছেন? #ত্রিনিদাদ #পরিত্যাক্তস্থান #ড্রোন #ত্রিনিদাদওটোবাগো #দ্বীপজীবন #রহস্যময় #ত্রিনি_টিকটক #ত্রিনিদাদটিটি #এফওয়াইপি #ডিজেআই ♬ ফ্লাই – লুডোভিকো ইনাউডি

অসুখী অনুভূতিসম্পন্ন হলেও এলাকাটির এই ধরনের একটি আকর্ষণীয় ড্রোন চিত্রায়ন ভবনগুলির তাৎপর্য এবং এমনকি কৌভা’র জন্মলগ্ন থেকে এর প্রতিনিধিত্বকারী জীবন সম্পর্কে গভীরভাবে যা বলে তা “আখের জমি পরিষ্কারের চেয়ে বেশি কিছু নয়।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .