নির্বাচনের প্রাক্কালে থাই রাজনৈতিক দলগুলি ডিজিটাল অধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

Forum in Thailand

তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ৪-দফা ডিজিটাল অধিকার আলোচনা উন্মোচনে অংশ নিয়েছে। বাম থেকে ডানে: সারুন (ফেউ থাই পার্টি), ওরাফপ ভিরিয়ারোজ (মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি) এবং থিদারাত ইংচারোয়েন (থাই সাং থাই পার্টি)। এনগেজমিডিয়া থেকে নেওয়া ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

এই নিবন্ধটি মূলত একটি অলাভজনক গণমাধ্যম, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি সংস্থা এনগেজমিডিয়ায় প্রকাশিত হয় এবং গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ এখানে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে৷

থাইল্যান্ডের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২৪ ফেব্রুয়ারি এনগেজমিডিয়া, এশিয়া কেন্দ্র এবং চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জননীতি চিন্তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশের সময় রাজনৈতিক দলগুলি তাদের আলোচ্যসুচিতে ডিজিটাল অধিকার সুরক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়া ও অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলির জন্যে ৪-দফা ডিজিটাল অধিকার আলোচ্য” শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি ডিজিটাল অধিকার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে তুলে ধরে যা  থাইল্যান্ডে ডিজিটাল অধিকার সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলির মনোযোগ এবং পদক্ষেপ দাবি করে। সম্মেলনে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থা নেটওয়ার্কের ২২টি সদস্য এবং চারটি সংবাদ মাধ্যম সংস্থা উপস্থিত ছিল।

থাইল্যান্ডের এনগেজমিডিয়ার ডিজিটাল অধিকার প্রকল্প কর্মকর্তা, প্রপাসিরি সুত্তিসোম মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার প্রচার, গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা এবং অনলাইনে বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়গুলি উপস্থাপন করেছেন।

উপস্থাপনার পর অংশগ্রহণকারীদের প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া এবং আরো সুপারিশ বিনিময়ের সুযোগ দিতে ইন্টারনেট আইন (আই-ল) সংস্কার সংলাপের প্রচারণা কর্মকর্তা রুচাপং চামজিরাচাইকুল একটি গোলটেবিল আলোচনা পরিচালনা করেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর ফেউ থাই পার্টি (পিটিপি) তাদের দলের মানবাধিকার নীতির অংশে সুপারিশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে। পিটিপি ক্ষমতাসীন সরকারের মৌলিক স্বাধীনতা দমনের জন্যে অস্পষ্ট শব্দযুক্ত আইন ব্যবহারের একটি প্যাটার্ন এবং এই নিবর্তনমূলক আইনগুলি সংশোধনের জন্যে প্রগতিশীল দলগুলির মধ্যে একটি ঐকমত্য থাকার কথা স্বীকার করেছে। তথ্যে প্রবেশাধিকারের বিষয়ে মন্তব্য করে দলটির প্রতিনিধি সরুন বলেছেন যে বেশিরভাগ সরকারি সংস্থা ইলেকট্রনিক প্রশাসন বিধি (২০২২) এর সাথে সামঞ্জস্য বিধানের পরিবর্তে সরকারের ডিজিটাল নীতিমালার অংশ হিসেবে ডিজিটাল প্রক্রিয়া গ্রহণে বাধ্য করা তাদের সংস্থার উপ-বিধিগুলিকে আঁকড়ে থাকতে পছন্দ করে।

প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু ও মূল সুপারিশগুলির সাথে একমত হয়ে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি) তার অংশ হিসেবে সবসময় মানবাধিকার সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদানের কথা বলেছে। দলটির প্রতিনিধি ওরাফপ ভিরিয়ারোজের মতে এমএফপি বিশ্বাস করে জবাবদিহিতা এবং বর্ধিতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না গেলে ক্ষমতা জনগণের ও গণতান্ত্রিক শাসন কাজ করবে না। গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে ওরাফপ ভিরিয়ারোজ মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সোচ্চার সরকারের সমালোচকদের লক্ষ্য করে রাষ্ট্রপুষ্ট নজরদারি সরঞ্জামগুলিতে করদাতাদের অর্থ ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করেন।

এদিকে থাই স্যাং থাই পার্টি (টিএসটিপি) বলেছে প্রতিবেদনের সুপারিশগুলি সুনির্দিষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং থাইল্যান্ডের প্রথম সার্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার অংশ হিসেবে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলির প্রস্তাবনাসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। দলের প্রতিনিধি থিদারত ইংচারোয়েন বলেন টিএসটিপি স্থানীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশে রয়েছে এবং ডিজিটাল অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে থিদারত বলেন দেশের দণ্ডবিধির ১১২ এবং ১১৬ ধারার সম্ভাব্য সংশোধনের আহ্বানের বিষয়ে অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা না করলেও টিএসটিপি মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধীকরণের জন্যে আইনটি [রাজকীয় অপমান বিরোধী আইন] ব্যবহার না করার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত।

ডিজিটাল অধিকার রক্ষার জন্যে তিনটি পক্ষ অনলাইন বিষয়বস্তুতে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার পরিবর্তে আরো স্বাধীনতা দিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বৃহৎ প্রযুক্তিগুলির ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

প্রাচাতাইয়ের সাংবাদিক সোরাউথও তথ্যে প্রবেশাধিকারের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সমালোচনামূলক তথ্যকে আরো সর্বজনীনভাবে সুলভ করতে সরকারি ডেটার ডিজিটালকরণ সহজতর করার জন্যে একটি সংসদীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি রাষ্ট্রপুষ্ট বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার বিরুদ্ধে আদালতের মামলাগুলির জন্যে মানবাধিকার রক্ষাকারীদের ট্র্যাফিক ডেটা সরবরাহে অস্বীকৃতি জানানো গুগলের মতো ও বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকেও ডাকেন।

Thai forum on digital rights

ডিজিটাল অধিকার নিয়ে আলোচনা করার জন্যে একটি কক্ষে একত্রিত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যমের সংস্থাগুলির হওয়া একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত ডিজিটাল পটভূমি নিশ্চিত করার জন্যে সম্মিলিত পদক্ষেপের শক্তি প্রদর্শন করে। এনগেজমিডিয়ার ছবি, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

বহু-অংশীজন পন্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ

সম্মেলনের সময় অংশগ্রহণকারীরা যৌথভাবে মানব ও ডিজিটাল অধিকারের সুরক্ষা ও প্রচার নিশ্চিত করতে সহযোগিতা ও অংশীজনদের বিস্তৃত পরিসরের সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। থাই হোস্টিং পরিষেবা প্রদানকারী ক্লাবের সভাপতি পুমজিৎ সিরাওংপ্রাসার্ট ডিজিটাল ও ইন্টারনেট শাসন সহজতর করার জন্যে একটি বহু-অংশীজন মডেল প্রতিষ্ঠা করতে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতার প্রস্তাব করেন। তিনি বিকেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ, আরোহী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রভাবশালী সত্তাগুলির পাশাপাশি সম্প্রদায়ের ইনপুটের উপর বিশেষ জোর দিয়ে অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্দিষ্ট নম্বর ও নামের জন্যে ইন্টারনেট কর্পোরেশন (আইসিএএএন) এর স্বতন্ত্র শাসন মডেলের উদাহরণ তুলে ধরেন।

নাগরিক প্রযুক্তি সংস্থা ওয়েভিসের প্রধান নির্বাহী থানিসারা রুয়াংদেজ দলগুলির প্রতিনিধিদেরকে নীতিগুলি বুঝা ও পরিকল্পনা করার সময় সুশীল সমাজের সাথে কতটা পরামর্শ করা হয়েছে তা পরিষ্কার করার অনুরোধ জানান। নির্বাচনী প্রচারণায় মানবাধিকার নীতিগুলিকে সমন্বিত করার ক্ষেত্রে অসুবিধা থাকলেও নির্বাচনের প্রাক্কালে এসব সমস্যা ও নীতিমালা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা করা উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিশ্রুতি অনুসরণকারী” এর মাধ্যমে নির্বাচনের সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা প্রচারের বিষয়ে ওয়েভিসের আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে সম্মেলনটি শেষ হলে আই-ল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণউৎস থেকে নির্বাচনী ফলাফল সংগ্রহের ভোট৬২ উদ্যোগের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

নাগরিক প্রযুক্তি ও নাগরিক ক্ষমতায়নের মেলবন্ধনের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং অসঙ্কোচ, দায়িত্ব ও সম্পৃক্ত নাগরিকত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার, ডিজিটাল অধিকার প্রবক্তা এবং অন্যান্য অংশীজনদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে সমুন্নত ডিজিটাল অধিকার এবং প্রত্যেককে সম্পূর্ণভাবে নাগরিক জীবনে জড়িত হওয়ার সুযোগ সম্পন্ন আরো ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

থাইল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচন ১৪ মে, ২০২৩ তারিখে নির্ধারিত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .