বেনিনের জাতীয় উদ্যান বিদ্রোহীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে

ফ্রান্স২৪ ইউটিউবের পর্দাছবি

উত্তর বেনিনের একটি জাতীয় উদ্যান আন্ত-সীমান্ত একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠায় কোটোনু সরকার তার নিরাপত্তা কৌশল পুনঃপরীক্ষা করছে।

আক্রা উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে বেনিন, বুরকিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট, ঘানা ও টোগোর মতো পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি সাহেল অঞ্চলে জিহাদি হুমকির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াইয়ের জন্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সাথে বাহিনীতে যোগ দেয়। . সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উল্লিখিত দেশগুলির নেতাদের এই জোটের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য সন্ত্রাসবাদকে আরো ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ২০১৯ সালে মালি, নাইজার ও নাইজেরিয়াও এতে পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে যোগদান করে।

দীর্ঘ ২,১২৩ কিলোমিটার স্থল সীমানা ভাগাভাগি করা দেশগুলির বিপরীতে বেনিন দীর্ঘদিন ধরে জিহাদি হুমকি থেকে রক্ষা পেয়ে এলেও বুরকিনা ফাসো (৩৮৬ কিমি), নাইজার (২৭৭ কিমি), নাইজেরিয়া (৮০৯ কিমি), ও টোগো (৬৫১ কিমি) এখন পর্যন্ত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তথাকথিত অপ্রতিসম যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে।

তবে মে ২০১৯ থেকে বেনিনে হিংসাত্মক অনুপ্রবেশ ও ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। অন্তত নয়জন নিহত হওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্মক হামলাটি হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে। এই টুইটার ব্যবহারকারীর উল্লেখ অনুসারে ২০২১ সাল থেকে বেনিনের ভূখণ্ডে ২০টির মতো সন্ত্রাসী হামলা রেকর্ড করা হয়েছে:

সাহেলে জিহাদি সন্ত্রাসবাদ গিনি উপসাগরের উত্তরাঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ১ নভেম্বর, ২০২১ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এর মধ্যে, এসিএলইডি (সশস্ত্র সংঘাতের অবস্থান ও সংঘটনের ডেটা প্রকল্প) উত্তর #বেনিনে ২৬টি সংগঠিত আক্রমণ রেকর্ড করেছে যার জন্যে জামাত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াসল-মুসলিমিন (জেএনআইএম) দায়ী।

সন্ত্রাসবাদ একটি বহু অর্থবিশিষ্ট ধারণা হলেও অবশ্যই স্বীকার করতে হবে “এই পরিস্থিতিকে আর উপেক্ষা করা যায় না,” বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমানুয়েল ওডিলন কুকুবু। ২০২১ সালের মে মাসে উত্তর বেনিনে ফরাসি পর্যটকদের অপহরণে ব্যবহৃত পদ্ধতি “ক্রমেই নির্দিষ্টভাবে কিছু জিহাদি গোষ্ঠীর ব্যবহৃত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়,” যেমন ইসলাম ও মুসলমান সমর্থনকারী দল (জিএসআইএম)। এটি ইসলামি দেশগুলির বিষয়ে পশ্চিমা সরকারগুলিকে জড়িত থাকার সমালোচনাকারী একটি আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী।

সাহেল বিশেষজ্ঞ জেভিয়ার মার্টিনেট এই মতামতটি ভাগাভাগি করেছেন:

সাহেল: “উত্তর বেনিনে ফরাসি পর্যটকদের অপহরণ এই অঞ্চলের বিভিন্ন জিহাদি যুদ্ধ ইউনিটের মধ্যে সহযোগিতাকে উন্মোচন করেছে।” সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকার নিরাপত্তা বিষয়ে @ওয়াইগুইচাউয়া বিশেষজ্ঞ।

পশ্চিম আফ্রিকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি ব্লগ ওয়াম্যাপসের এই টুইটটি এই অঞ্চলের সামগ্রিক অবনতির বিষয়টি নিশ্চিত করে: 

#সাহেল | ২০২২ বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচকে অর্জন, ০ থেকে ১০ পর্যন্ত (খুব বেশি)। #বুর্কিনা 🇧🇫 , #মালি 🇲🇱 , #নাইজেরিয়া 🇳🇬 এবং #নাইজার 🇳🇪 সবকটিই খুব উঁচু অবস্থানে রয়েছে।
⚠️ #টোগো 🇹🇬 (+৪৯ স্থান) এবং #বেনিনে 🇧🇯 (+২৩ স্থান) উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

উৎস @বৈশ্বিকশান্তিসূচক। ১৪ মার্চ প্রকাশিত

সন্ত্রাসবাদের মরূদ্যান

এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আরো একটি ইঙ্গিত হলো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির দেশের উত্তরে “ডব্লিউ জাতীয় উদ্যান” নামে পরিচিত বেনিন, বুর্কিনা ফাসো ও নাইজারের মধ্যবর্তী আন্তঃসীমান্ত সুরক্ষিত এলাকা দখল। প্রায় ৩০,০০০ বর্গকিমি বিস্তৃত এই উদ্যানটি ১৯৯৬ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি তিনটি দেশের মধ্যে প্রকৃতি সংরক্ষণেডাব্লিউ-আর্লি-পেন্ডজারি কমপ্লেক্সেরও অংশ।

#প্যাতিমোয়ানমুণ্ডিয়াল (বিশ্ব ঐতিহ্য) তালিকায় খোদাই করা: ডাব্লিউ-আর্লি-পেন্ডজারি কমপ্লেক্স। [“নাইজারের ডব্লিউ জাতীয় উদ্যান” এর আন্তঃজাতীয় সম্প্রসারণ], বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, নাইজার

প্রাণী প্রজাতির সুরক্ষার জন্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভাবের কারণে এই অভয়ারণ্য পরবর্তীকালে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিভিন্ন বাহিনীর দখল করে নেওয়া একটি দুর্গম এলাকা হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সাল থেকে কাতিবা আনসারুল ইসলাম ও কাতিবা সেরমার মতো জিহাদি দলগুলি এটিকে বেনিন এবং অন্যান্য পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে তাদের থাবা বিস্তারের একটি সমর্থক ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিস্তৃত এই উদ্যানটি খরা, গ্রীষ্মকালীন চারণভূমি, বন্যপ্রাণী চোরাচালান এবং অন্যান্য ঘটনাবলীর সাথে যুক্ত বিভিন্ন দ্বন্দ্বের অভিজ্ঞতাও লাভ করেছে।

বেনিন সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিক্রিয়া

সন্ত্রাসী হুমকির প্রভাব কমাতে বেনিন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেনিন সশস্ত্র বাহিনীর (এফএবি) সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর পরিপূরক হিসেবে ব্যাপক নিয়োগ। বর্তমান সরকারের ২০২১-২০২৬ কর্ম পরিকল্পনায় বেনিনের মোট ১১২,৬২২ বর্গকিমি ভূমিকে আরো ভালভাবে সুরক্ষার জন্যে দুই হাজারেরও বেশি সৈন্য এবং পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও, ফরাসি-বেনিনীয় অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে ফ্রান্স সহিংস সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবেলায় বেনিন সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন করতে ২০টি সব ভূমিরূপে চলার উপযোগী যান (মাসটেক) প্রদান করেছে।

শুধু ২০২২ সালে বেনিন সরকার প্রতিরক্ষা খাতে ৬০.৬১ বিলিয়ন সিএফএ ফ্রাঙ্ক (প্রায় ১,০৫২ কোটি টাকা) বরাদ্দ করেছে। ২০২৩ সালে, জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বাজেটের ২৭.৮২% নিট বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ২৮ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে দেশটির সরকার নাইজার ও বুর্কিনা ফাসোর সাথে সীমান্ত নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে এমআইএনইউএসএমএ-র অংশ হিসেবে মালিতে মোতায়েন করা তার সৈন্যদের প্রত্যাহার করার ইচ্ছার কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানায়।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং ডাচ দূতাবাসের সাথে অংশীদারিত্বে বাস্তবায়িত আরেকটি পদক্ষেপ হলো “হিংসাত্মক চরমপন্থা প্রতিরোধ এবং চারণভূমি-সম্পর্কিত দ্বন্দ্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে সামাজিক সংহতি জোরদার করা।”

দ্বন্দ্ব নিরসনে সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা আরেকটি অপরিহার্য হাতিয়ার, ওয়াথি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সিইও গিলস ইয়াবি বেনিন ইন্টেলিজেন্ট ওয়েবসাইটে যেমন ব্যাখ্যা করেছেন: 

Et comme c'est l'ensemble de la société qui est impacté, c'est une raison suffisante pour que l'ensemble de cette dernière soit légitime pour participer à la recherche des solutions.

সামগ্রিকভাবে এটি সমাজকে প্রভাবিত করে বলে সমগ্র সমাজের জন্যে বৈধভাবে সমাধান খোঁজার জন্যে এটি যথেষ্ট কারণ

ইয়াবি এই সাক্ষাৎকারে সুশীল সমাজের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলিও বর্ণনা করেছেন:

Et donc, la société civile évidemment a un rôle important à jouer parce qu’elle est la première à être affectée des situations d’insécurité. […] Ce sont ces organisations qui sont les plus proches des populations au quotidien et donc leur rôle est vraiment central dans la prévention de l’extrémisme violent ou de l’implantation des groupes armés dans les pays de la région.

নিরাপত্তাহীনতার এই পরিস্থিতিগুলি প্রাথমিকভাবে সুশীল সমাজকে প্রভাবিত করে বলে নিঃসন্দেহে এটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে […]  দৈনন্দিন জীবনে মানুষের সবচেয়ে কাছের বলে এই অঞ্চলে সহিংস চরমপন্থা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির বসতি রোধে এই সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .