
জেলে ও সারস অভিনীত তথ্য-চলচ্চিত্র “ইয়ারেন” এর একটি দৃশ্যের পর্দাছবি।
“চাচা আদম” নামে পরিচিত এক তুর্কি জেলে আদেম ইলমাজ এবং ইয়ারেন নামের একটি সারসের গল্প শুনে এই সম্পর্কটিকে সরাসরি লা ফন্টেইনের উপকথা – পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপে জনপ্রিয় শিশুদের কল্পকাহিনীর মতো আরো বেশি অবাস্তব মনে হয়। তুরস্কের এস্কিকারাগেক গ্রামে গত বারো বছর ধরে প্রতি বছর দুজনের দেখা হচ্ছে। মার্চের কাছাকাছি সময়ে ইয়ারেন সারসটি প্রতিবছর উত্তরে অভিবাসনের সময় আদেমের মাছ ধরার নৌকায় তার সাথে দেখা করে দুজনে একটি বার্ষিক ছবি অধিবেশনের জন্যে মিলিত হয়। আদেম হ্রদ থেকে সদ্য ধরা মাছ দিয়ে ইয়ারেনকে স্বাগত জানায়। একটি অসাধারণ বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে ওঠা এই জুটি নিজেদের বরেণ্য ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। “ইয়ারেন” নামে একটি তথ্য-চলচ্চিত্র এমনকি ইউটিউবে দেখা যেতে পারে।
12. yılda da Yaren Leylek sözünde durdu. Yağmurlara, fırtınalara göğüs gerdi, ülkeleri, şehirleri, dağları aşıp dün yuvasına bugün de yarenlik ettiği Adem Amca'nın kayığına kondu ve pozunu verdi. Tüyü kadar ömrün olsun hepimize derin bir oh çektirdi sonunda!#YarenLeylek pic.twitter.com/6EQOCCPjho
— Alper Tüydeş (@alpertuydes) March 17, 2023
ইয়ারেন সারসটি ১২তম বছরেও তার কথা রেখেছে। ঝড়-বৃষ্টি সয়ে নানা দেশ-শহর-পর্বত পেরিয়ে গতকাল তার নীড়ে পৌঁছে আজকে চাচা আদমের নৌকায় এসে ছবি তুলেছে। তোমার পালকের সংখ্যার মতো দীর্ঘ জীবন হোক। অবশেষে তার আগমন আমাদের সবার জন্যে স্বস্তির।
এই বছরেও ইয়ারেনের আগমন যেন দেশে গত ৬ ফেব্রুয়ারির একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ৪৫ হাজারেরও বেশি প্রাণহানি ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ অতিক্রম করে আশা ও স্বাভাবিকতার একটি চিহ্ন বয়ে এনেছে। সারসটি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দেরিতে আসায় কিছু সময় ধরে আদেম ও ইয়ারেনকে অনুসরণ করা বন্যপ্রাণী আলোকচিত্র শিল্পী আল্পার তুইদেসের মতো বছরের পর বছর ধরে ইয়ারেন ও আদেমের গল্পের আরো অনুসারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দেরিতে হলেও ইয়ারেনের আগমন দেশ ও জনগণের আত্মাকে উজ্জীবিত করেছে। “প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্র শিল্পী আল্পার তুইদেসের এই ছবিটি আমাদের সামনে আরো ভালো দিনের আশা দিয়েছে। তাদের আনুগত্য ও উষ্ণ বন্ধুত্বের গল্পটি ঔষধি বলে মনে হয়,” প্রায়ই ভ্রমণ, সংস্কৃতি শিল্প, চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত নিয়ে লেখা তুরস্কের একটি ডিজিটাল মঞ্চ দ্য ম্যাগার লিখেছে।
এদিকে ইয়ারেন ও তার নীড়ের অংশীদার নাজলি মিলে “ইউরোপীয় সারস গ্রামে নেটওয়ার্কে“র তুর্কি অবস্থান এস্কিকারাগেক গ্রামে একটি বাসা তৈরি করেছে। নেটওয়ার্কের অংশের গ্রামগুলিকে “সাদা সারস সুরক্ষার অনুকরণীয় উৎসর্গ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।” দক্ষিণে ফিরে যাওয়ার আগে তারা আগামী ছয় মাস এস্কিকারাগেকে থাকবে। বুরসা প্রদেশের এস্কিকারাগাক গ্রামের অবস্থান হাজার হাজার সারসের আফ্রিকা থেকে তুরস্ক হয়ে ইউরোপীয় দেশগুলিতে অভিবাসনের পথে পড়ে। ইয়ারেনের ভক্তদের জন্যে তার বাসা দেখতে পারার মতো একটি সরাসরি ফিডও রয়েছে। গত বছর এই জুটি বাসায় তিনটি ছানা তৈরি করেছিল।
দুই বছর আগে মে মাসে আলোকচিত্র শিল্পী তুইদেস আদেম ও ইয়ারেনকে দেখতে গিয়ে আদেমের ইয়েরেনকে খাওয়ানো এবং ইয়ারেনের বাচ্চা ও সঙ্গী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার বাস্তব মুহূর্তগুলি চিত্রিত করেন।