- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

তাইওয়ানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মা ইং-জিউয়ের চীন সফরকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনা

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, চীন, তাইওয়ান (ROC), যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, রাজনীতি
[1]

মা ইং-জিউয়ের ফেসবুক [1] থেকে নেওয়া ছবি।

তাইওয়ানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মা ইং-জিউ ২৭ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল, ২০২৩ এর মধ্যে চীন সফরে যাচ্ছেন [2]৷ এই সফরটি ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কাছে পরাজিত চীন প্রজাতন্ত্র (আরওসি) তাইওয়ানে রাজনৈতিক দল কুওমিনটাং [3] (কেএমটি) নির্বাসনের পর দ্বীপের কোনো প্রাক্তন বা বর্তমান শীর্ষ নেতার প্রণালীর অপর পারে প্রথম সফর।

কমিউনিস্ট পার্টির গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ১৯৭১ সালে চীনের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘে আরওসি-কে প্রতিস্থাপিত [4] করার পর ১৯৪৯ সাল থেকে তাইওয়ান কার্যত একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজনৈতিক সত্তা, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সাথে যার আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাইওয়ান ক্রমাগত চীনের হুমকির মুখে রয়েছে। ২০১৬ সালে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল [5] (ডিপিপি) এর সাই ইং-ওয়েন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক মহড়া দিয়ে দ্বীপটিকে হুমকি দিচ্ছে [6]

পর্যবেক্ষকরা অনুমান করছে আগামী ২০২৪ সালের ১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রণালীর এপার-ওপার সম্পর্ক প্রভাবিত হতে পারে। গত বছরের স্থানীয় নির্বাচনে “এক চীন” নীতিতে অটল কেএমটি বড় জয় [7] পেলেও কেএমটি দ্বীপটির স্বায়ত্তশাসন বিপন্ন না করে প্রণালীর এপার-ওপার উত্তেজনা [8] সমাধান করতে পারে কিনা তার উপর আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে।

এখনো কেএমটি-এর একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় মা-এর মূল ভূখণ্ড সফর রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। তবে মা এই সফরের লক্ষ্য হিসেবে ৬ এপ্রিল কিংমিং উৎসবে পূর্বপুরুষদের উপাসনা ও তার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রণালীর এপার-ওপার বিনিময়ের উপর জোর দিলেও সূত্র জানিয়েছে যে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে চীনা কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করবেন। তাইওয়ান-ভিত্তিক সাংবাদিক ক্রিস হর্টন টুইট করেছেন:

ইদানীং প্রচুর কেএমটি-সিসিপি সভা হচ্ছে। মা ইং-জিউ তার চীন সফরে সাংহাইয়ে ওয়াং হুনিংয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। ওয়াং কমিউনিস্ট পার্টির সংযুক্ত ফ্রন্টের কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব প্রদান এবং তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংসে বেইজিংয়ের দার্শনিক যুক্তি তৈরি করছেন বলে কথিত আছে।

এছাড়াও মা-এর সফর বর্তমান রাষ্ট্রপতি সাই ইং-ওয়েনের মধ্য আমেরিকা সফরের সমান্তরালে ঘটছে যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিরতিও রয়েছে।

তাইওয়ান মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি সাই ইং-ওয়েন মাসের শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে মধ্য আমেরিকা যাবেন বলে নিশ্চিত করলেও মার্কিন সংসদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সাথে বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকটি হবে কিনা সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা নেই।

চীন সাই ইং-ওয়েনের কূটনৈতিক সফর ও যাত্রা বিরতির তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করে [13] এই সফরগুলির “এক চীন নীতি” লঙ্ঘন ও “তাইওয়ানের স্বাধীনতা” প্রচারের প্রচেষ্টা হিসেবে কাজ করেছে বলে দাবি করেছে। কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে মা-য়ের সফরকে স্বাগত জানিয়েছে [14]

মা-এর পরিকল্পনার জবাবে ডিডিপি মা ও কেএমটিকে চীনকে আলিঙ্গন করার এবং সিসিপির সংযুক্ত ফ্রন্ট [15] কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করার জন্যে অভিযুক্ত করেছে [16]। অন্যদিকে কেএমটি ভ্রমণের রাজনৈতিক প্রকৃতিকে কম গুরুত্ব দিয়ে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত বিনিময়ের উপর জোর দিয়েছে:

তাইওয়ানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মা ইং-জিউ আগামী সপ্তাহে চীনে যাবেন, সাত দশকের মধ্যে এটি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির প্রথম সফর।
সফরটি ব্যাখ্যা করার জন্যে কেএমটি এই গ্রাফিকটি প্রকাশ করেছে।
এতে কী সমস্যা ও শিক্ষাগত বিনিময় হয় তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে।

কেএমটি রাজনীতিবিদ কেএমটি আইন প্রণেতা লাই শ্যাহ-বাও উল্লেখ করেছেন [19] ডিপিপি-র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক হিসিয়েহ চ্যাং-টিং [20]ও ২০১২ সালে কোনো অভিযোগের মুখোমুখি না হয়েই পূর্বপুরুষদের উপাসনার জন্যে মূল ভূখণ্ড চীন সফর করেছিলেন। আরেক কেএমটি আইনপ্রণেতা চেং লি-উন জোর দিয়ে বলেছেন মা'র সফর “মার্কিন-পন্থা, জাপানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মূল ভূখণ্ড চীনের সাথে শান্তি”র মতো কেএমটি-এর রাজনৈতিক অবস্থানের প্রমাণ দেয়।

তবে অনেকে মনে করে কেএমটি যেমনটি চাইছে তেমন রাজনৈতিক দড়াবাজি করতে পারবে না। তাইওয়ান ভিত্তিক জাপানি সাংবাদিক ইয়াইতা আকিও তার ফেসবুক পৃষ্ঠার মাধ্যমে মা ইং-জিউয়ের মূল ভূখণ্ড সফরের রাজনৈতিক প্রভাবের কথা আলোচনা করেছেন [21]

好像是在向全世界大聲宣布,台灣不僅有「親美派」,也有「親中派」。[…] 人大剛剛結束,新政府就迎來了台灣的前總統,說明習主席的對台灣政策”是正確的、是受到了台灣大多數人民支持的”,因為國民黨在不久前剛剛贏了九合一地方選舉。…當然也有輸家。最大的輸家應該是國民黨吧?據各種民調,台灣民眾對中國不喜歡、或者不信任的人已經越來越多,遠遠超過半數。這個時候馬英九去中國,又不敢把台灣民眾的真實聲音傳遞給中國。這使得國民黨現在正在競爭總統大位的幾個人灰頭土臉,受到影響頗大。

এটা অনেকটে বিশ্বকে বলার মতো যে তাইওয়ানের একটা “মার্কিন-পন্থী শিবির” এবং একটা “চীনপন্থী শিবির” রয়েছে […] চীনের জাতীয় গণ-কংগ্রেস সবেমাত্র শেষ হওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকারি মন্ত্রিসভাকে প্রাক্তন তাইওয়ানি রাষ্ট্রপতির স্বাগত জানানো প্রমাণ করে যে তাইওয়ানের প্রতি রাষ্ট্রপতি শির নীতি “সঠিক এবং তাইওয়ানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সেটা সমর্থন করে” কারণ খুব সম্প্রতি কেএমটি নয়টি স্থানীয় নির্বাচনের একটিতে জিতেছে। […] অবশ্য সেখানে হেরে যাওয়ারাও রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম কেএমটিও রয়েছে? বিভিন্ন জরিপ অনুসারে তাইওয়ানের বেশি সংখ্যক – অর্ধেকেরও বেশি – মানুষ চীনকে অপছন্দ বা অবিশ্বাস করে। মা ইং-জিউ বেইজিংকে তার সফরে তাইওয়ানের জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার কথা বলার সাহস করবেন না বলে তিনি আসলে কেএমটি’র বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রতিদ্বন্দ্বীদের কালিমালিপ্ত করবেন যা [কেএমটি’র নির্বাচনী প্রচারণায়] বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

মূল ভূখণ্ডের নির্বাসিত চীনা কর্মী ওয়াং ড্যাং একইরকম মত পোষণ করেন:

মা ইং-জিউকে চীন সফরের আহ্বান জানানো হয়েছে। কেএমটি’র সহ সভাপতি থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত শি'র মন্ত্রিসভার সাথে দেখা করার জন্যে সফরটি নতুন স্তরে পৌঁছেছে। এটা শি জিনপিংয়ের সিংহাসনের জন্যে একটি সাংঘাতিক উপহার এবং কেএমটি সত্যিই একটি বড় ধরনের শ্রদ্ধা নিবেদন করছে…

গত মাসে কেএমটি’র সহ-সভাপতি অ্যান্ড্রু হসিয়া চীন সফর করে [24] চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দপ্তরের নতুন প্রধান সং তাওয়ের সাথে দেখা করেন।

তাইওয়ানের স্বায়ত্তশাসনকে বিপর্যস্ত না করে চীনের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কুওমিনটাংয়ের আগ্রহ বেশ স্পষ্ট হলেও মা’র সফর রাজনৈতিকভাবে কঠিন হবে। তাইওয়ানের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে কেএমটি’র দোদুল্যমান অবস্থানের কারণে মূল ভূখণ্ডের চীনা অনলাইন জাতীয়তাবাদীদের তাকে উষ্ণ স্বাগত জানানোর সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন ওয়েইবো বিতর্কে এটাই ঘটেছে। যেমন ২০ লক্ষেরও বেশি অনুসারী সম্পন্ন একজন ওয়েইবো প্রভাবশালী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন [25] মাকে জিজ্ঞাসা করা হবে তিনি চীনের সাথে তাইওয়ানের পুনর্মিলন সমর্থন করেন কিনা:

看来马英九访问大陆的行程安排,应该是确定了。两岸关系发展到现在,我觉得双方的民意腾挪空间,已经非常有限。马英九到大陆后,最终将面临一个终极问题,即“马先生你支持统一吗?”

如果这个问题他不愿回答,或者左右闪烁不愿直面,他的这趟大陆之行,对我们来讲没有意义。

মা ইং-জিউ-এর মূল ভূখণ্ড ভ্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। প্রণালী জুড়ে জনমত পরিবর্তনের জন্যে খুব কম জায়গা রয়েছে। মা তার সফরে একটি চূড়ান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন: জনাব মা, আপনি কি চীনের সাথে পুনর্মিলন সমর্থন করেন?”
তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না চাইলে অথবা একটি সোজাসাপ্টা উত্তর এড়িয়ে গেলে তার মূল ভূখণ্ড ভ্রমণ সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে যাবে…

এই পোস্ট পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্তব্যটি এমনকি তাইওয়ান-স্বাধীনতাপন্থী ডিপিপি’র উত্থানের পথ প্রশস্ত করার জন্যে মাকে দায়ী করেছে: 

老马是独台,在其任内毒教材愈加横行,批量产生天然毒,武器照买,只是嘴上承认九二共识,实质动作一点都没少,一个劲的狠撸大陆羊毛。也是历史罪人之一…

মা তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী। তার রাষ্ট্রপতিত্বের সময় স্কুলের পাঠ্যগুলি স্বাধীন-পন্থী উপকরণে ভরে গিয়ে একটি স্বাধীনতাপন্থী প্রজন্মকে তৈরি করেছিল। তিনি অস্ত্রও কিনেছেন [যুক্তরাষ্ট্র থেকে]। চীন থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্যে তিনি শুধু ১৯৯২ এর ঐকমত্যে [এক চীন বিষয়ে ১৯৯২ সালে সিসিপি ও কেএমটি'র মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐকমত্যে] মৌখিক পরিষেবা প্রদান করেন। তিনি ঐতিহাসিক পাপীদের একজন…

মা ইং-জিউ [26] ৫৮ শতাংশ ভোট নিয়ে অক্টোবর ২০০8 থেকে ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি দপ্তরে ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি বিরতিসহ তার প্রথম সফর ছিল লাতিন আমেরিকা। প্রণালীর এপার-ওপার সম্পর্কের ক্ষেত্রে, তার অবস্থান ছিল, “কোন পুনঃএকত্রীকরণ, কোন স্বাধীনতা এবং কোন যুদ্ধ নয়।” রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন মা চীনের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ শিথিল করেন। তার রাষ্ট্রপতিত্বের মেয়াদ শেষ করার এক বছর আগে তিনি সিঙ্গাপুরে চীনের মূল ভূখন্ডের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করেছিলেন।