- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আজারবাইজানে একটি যাযাবর কুর্দি বসতির চালচিত্র

বিষয়বস্তু: আইন, ইতিহাস, জাতি-বর্ণ, দেশান্তর ও অভিবাসন, নাগরিক মাধ্যম, যুবা, রাজনীতি, শিক্ষা, শ্রম, সরকার

অলংকরণ আমার ময়দান টিভি। অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

এই নিবন্ধটি প্রথমে প্রকাশিত হয় [1] মেদান টিভিতে। একটি বিষয়বস্তু অংশীদারিত্ব চুক্তির অধীনে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ এখানে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে৷

রাজধানী বাকু থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে কুরা নদীর তীরে অবস্থিত আজারবাইজানের ইয়েভলাখ অঞ্চল রেল ও সড়ক পথের একটি কেন্দ্রীয় পরিবহন কেন্দ্র।

কুরা নদীর পুরানো ব্রিজ থেকে ইয়েভলাখ রেলস্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তা ধরে হাঁটলে আপনি স্থানীয়দের থেকে আলাদা ভিন্ন উপভাষা, চেহারা ও জীবনযাত্রার লোকদের দেখা পেতে পারেন।

বেশিরভাগ লোক তাদের যাযাবর” বললেও তারা নিজেদেরকে “আজেম কুর্দি” অভিহিত করে বলে তাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৪০ ও ১৯৫০ এর দশকে ইরান থেকে এখানে এসেছিল। তারা ইয়েভলাখ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি রাস্তায় বসতি স্থাপন করে যাকে স্থানীয়রা “যাযাবর বসতি” বলে চেনে।

নৃতাত্ত্বিক এমিল কেরিমভ মেদান টিভিকে বলেন, ইয়েভলাখে বসবাসকারী লোকেরা বাস্তবে ইউরোপে অভিহিত যাযাবর বা রোমাও হতে পারে। চতুর্দশ শতকে [2] এই জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা (দক্ষিণ) ভারত থেকে সরে এসে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।

সবার পরিচয় পত্র না থাকায় বর্তমানে ঠিক কতজন রোমা আজারবাইজানে বাস করে তা নির্ণয় করা কঠিন হলেও ২০১২-২০১৪ সালের বেসরকারি তথ্য অনুসারে আজারবাইজানে প্রায় ১০,০০০ রোমা বসবাস করতো।

রাষ্ট্রীয় তথ্য অনুসারে ইয়েভলাখে ২,৫০০ জন যাযাবর বাসিন্দা রয়েছে যাদের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যানে “যাযাবর” সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে সম্প্রদায়টির কথ্য ভাষা কুর্দি। মেদান টিভিকে এটি নিশ্চিত করেন ইয়েভলাখে মেদান টিভির চলচ্চিত্র কর্মীদের তৈরি অডিও রেকর্ডিং শুনে রোমা সংস্কৃতি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি শুকরু পিউন্দিক। রোমাদের মধ্যে কেউ কেউ কুর্দি ভাষায় কথা বললেও সাধারণভাবে রোমাদের মধ্যে কুর্দি, আলেভি ও আবাজি শাখা রয়েছে।

ইয়েভলাখের বাসিন্দাদের মতে এই লোকেরা ইরান থেকে এসেছে এবং তারা মুসলমান। তাই নৃতাত্ত্বিক এমিল কেরিমভ পরামর্শ দিয়েছেন ইতোমধ্যে ইরান থেকে তাদের পুনর্বাসনের সময় তাদেরকে যাযাবর/ রোমার পরিবর্তে বরং কুর্দি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাধারণভাবে আজারবাইজান আজেমসহ কুর্দিদের দীর্ঘস্থায়ী আবাসস্থল হিসেবে বিবেচিত।

১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে প্রথম কারাবাখ সংঘাতের [3] পূর্ব পর্যন্ত, কুর্দিরা ঐতিহ্যগতভাবে পূর্ব আজারবাইজান ও নাকচিভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রে [4] বসবাস করতো। বর্তমানে [5] কমপক্ষে ৬০,০০০ আজেম কুর্দি রয়েছে যাদের অধিকাংশই শিয়া মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেয়।

কারাবাখ কুর্দিদের ইতিহাস

আজারবাইজান ও সাধারণভাবে দক্ষিণ ককেশাসে কুর্দিদের আগমন বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হয়েছিল। কারাবাখে কুর্দিদের উপস্থিতির প্রথম উল্লেখটি ১৩ শতকে মঙ্গোল আক্রমণের সাথে জড়িত।

১৫৮৯ সালে সাফাভি-উসমানীয় যুদ্ধের সময় উসমানীয় সেনাবাহিনীর সাথে এখানে আসা কুর্দিরা বর্তমান পূর্ব আজারবাইজান ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করে।

১৯১৮-১৯২০ সালে এই অঞ্চলে সংঘটিত যুদ্ধের ফলে আজারবাইজানে বসবাসকারী মুসলমান কুর্দিদের কিছু গোষ্ঠী আর্মেনিয়ায় চলে যায়।

কারাবাখ দখলের [6] পর কুর্দিরা আজারবাইজানের অন্যান্য অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হয় [7]

২০০৯ সালের আদমশুমারি অনুসারে ৬,১০০ কুর্দি আজারবাইজানে বসবাস করতো। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের মতে কুর্দিরা আজারবাইজানের জনসংখ্যার প্রায় ২.৮ শতাংশ। ধারণা করা হয় বর্তমানে দুই লক্ষেরও বেশি কুর্দি আজারবাইজানে বাস করে।

আগে থেকেই বসতিতে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার পরিস্থিতি ও অভিযোগ এখানে কষ্টকর জীবনের কথাই বলে। কোনো প্রবাহিত পানি, নর্দমা বা রাস্তা নেই। আবর্জনার স্তুপে উপচে পড়ছে ময়লা-আবর্জনা।

মেদান টিভির সাথে কথা বলতে রাজি স্থানীয় বাসিন্দারা সার্বিক পরিষেবার অভাবের অভিযোগ করেছে। জল ও পরিচ্ছন্নতার সমস্যা ছাড়াও, আশেপাশের কিছু অংশে গ্যাস বা বিদ্যুৎ নেই।

স্থানীয় কর্মকর্তারা মেদান টিভির তদন্তের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না পেলেও তারা এখন বিষয়গুলো দেখার কথা বলেছে।

মন্দ জীবনযাত্রা ও কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাবই সম্প্রদায়টির একমাত্র সমস্যা নয়। সেই সম্প্রদায়ে বেড়ে ওঠা অনেক শিশুকে স্কুলে পাঠানো হয় না এবং তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই।

এখানেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে অতীতে তারা অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর জন্যে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা শোনেনি। মেদান টিভির সাথে কথা বলা অভিভাবকরা স্কুলের খরচ বহনে অক্ষমতার কথা বলেছে।

আইনজীবী সামাদ রহিমলির মতে ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও আর্থিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে আজারবাইজানে মাধ্যমিক সাধারণ শিক্ষা বাধ্যতামূলক:

পুলিশের সাহায্যে নির্বাহী বিভাগ এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। প্রথমত শিক্ষামূলক কাজ সম্পাদন করা দরকার। অভিভাবকরা প্রতিরোধ অব্যাহত রাখলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। একটি শিশুর শিক্ষায় বাধা দেওয়া হলে তার জন্যে প্রশাসনিক দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের ১০০ মানাত (প্রায় ৬,২০০ টাকা) জরিমানা করা এবং ভিক্ষা করতে বাধ্য করলে ১৫দিনের হাজতবাস হয়। পিতামাতারা দীর্ঘকাল এরকম আচরণ করলে তাদের অধিকার সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। এব্যাপারে নির্বাহী শাখাকে আদালতে যেতে হয়। কিন্তু এসবের জন্যে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা নির্বাহী কর্তৃপক্ষের নেই।

আজারবাইজানের বিপরীতে ইউরোপে বসবাসকারী রোমাদের একীভূতকরণ ও শিক্ষার অধিকারকে সাধারণত সম্মান করা হয়। আইনজীবী রহিমলি ব্যাখ্যা করেছেন তারা তাদের ঐতিহ্য ও রীতিনীতি পালনে স্বাধীন। এছাড়াও ইউরোপে রাষ্ট্র শিশুরা পড়াশোনার সুযোগের জন্যে পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেয়,  আরো বলেন রহিমলি। ইউরোপের পর্ষদ আজারবাইজানকে তার জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। দেশটি নাগরিক ও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিও গ্রহণ করে ১৯৬৫ সালের বর্ণবৈষম্য বিলুপ্তির সকল প্রকার কনভেনশনে সম্মত হয়েছে।

এবং তবুও স্থানীয় বাসিন্দারা বৈষম্যম্যের শিকার হয়। আশেপাশে পরিদর্শনের সময় ক্যামেরায় একজন বাসিন্দাকে চেঁচিয়ে বলতে দেখা যায়, “তারা [যাযাবরেরা] সারাদেশের কাছে ইয়েভলাখকে অসম্মানিত করে।”

ইয়েভলাখের “যাযাবর এলাকা”র বাসিন্দাদের অনুভূতি ভিন্ন। তারা নিজেদেরকে আজারবাইজান ও আজারবাইজানি জনগণের অংশ মনে করলেও এখনো তারা স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের তুলনায় দরিদ্র, তাদের কাজ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কম এবং এপর্যন্ত কোন একটি একক রাষ্ট্রীয় কাঠামো তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি। নীচে আজেম কুর্দিদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা একটি সম্পূর্ণ ভিডিও [8] পাবেন।