- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় ট্রল বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ক্ষুন্ন করছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, ভিয়েতনাম, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, রাজনীতি, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী
Vietnam laptop in an Internet cafe [1]

ভিয়েতনামে আনুমানিক ৭ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। পেশাদার আলোকচিত্রশিল্পী মার্কো ভার্চের ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া ছবি [1], (সৃজনী সাধারণ অনুমতি ২.০ [2])

ভিয়েতনামের মোতায়েন করা অনলাইন ট্রল (পরিকল্পিত উৎপাত) ও সাইবার সৈন্যদের [3] একটি বাহিনী বিভ্রান্তির পাশপাশি মানবাধিকার কর্মী ও রাষ্ট্রের সন্দেহভাজন সমালোচকদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর ঘৃণামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ভিয়েত তান [4] প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে এই ট্রলগুলির কার্যক্রমের মাত্রার বিস্তারিত রয়েছে। “বাহিনী ৪৭ ও সাইবার সেন্সর মোকাবেলা করে #ভিএনট্রলবন্ধকর [5]” শীর্ষক প্রতিবেদনটি “ভিয়েতনামে সমন্বিত সামাজিক ক্ষতি ও জনগণের আলোচনা দমনের জন্যে দায়ী ক্ষতিকারক নেটওয়ার্কগুলিকে উন্মোচন করে।”

ভিয়েতনাম জুড়ে ও বিশ্বের অনেক অঞ্চলে প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কারপন্থী ভিয়েত তানের সদস্য থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ভিয়েতনামের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ।

ভিয়েতনামের সেনাবাহিনীতে বাহিনী ৪৭ নামের একটি সাইবার ইউনিট রয়েছে যার প্রধান কাজ হলো ক্ষমতাসীন দলকে রক্ষা করার জন্যে, সরকার সমর্থিত বিষয়বস্তু দিয়ে ইন্টারনেটে ভরিয়ে তোলা। বেসরকারিভাবে ই৪৭ হিসেবে উল্লিখিত একটি বেসামরিক ব্রিগেডকে সহযোগিতা করে বলে এটির প্রায়.১০,০০০ এরও বেশি সদস্য থাকতে পারে।

কিন্তু বাহিনী ৪৭ সদস্যরা শুধু সরকারের পক্ষে জনমত গঠনের জন্যে বিষয়বস্তু পরিচালনা করার পাশপাশি কর্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী সক্রিয় কর্মী এবং অন্যান্য ব্যবহারকারীদের অনলাইন অ্যাকাউন্ট ডক্স [6] (অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে কাউকে অনলাইনে অনুসন্ধান) করার জন্যেও কুখ্যাত।

বাহিনী ৪৭ ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি হলো ফেসবুক পৃষ্ঠার প্রশাসকদের ডক্স করা। অনলাইনে স্বাধীনভাবে কথা বলতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করার জন্যে তারা অফলাইন জীবনকে প্রভাবিত করার মতো ব্যক্তিগত প্রোফাইলে হয়রানি ও তর্জন-গর্জনকে উস্কে দেয়।

বাহিনী ৪৭ সদস্যরা ফেসবুকের মতো সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের সম্প্রদায়গত মানদণ্ডকে কাজে লাগিয়ে সরকারের অপব্যবহার তুলে ধরা পৃষ্ঠাগুলিকে স্থগিত বা নিষিদ্ধের প্রচারণা চালায়। উদাহরণস্বরূপ ভিয়েত তানকে প্রায়শই গণঅভিযোগের লক্ষ্যবস্তু করার ফলে এর পৃষ্ঠাটি ঘন ঘন স্থগিতাদেশের শিকার হয়।

ভিয়েত তানের প্রচারণা পরিচালক মিশেল ট্রান ডুক এই লেখকের সাথে একটি ইমেল সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ট্রল মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন:

কয়েক হাজার ভাড়াটে ট্রলের মুখোমুখি হওয়া অল্পসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকদের জন্যে গোলিয়াথের বিরুদ্ধে দাউদের মতো নিত্যদিনের একটি সংগ্রাম।

আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বিশ্বাসের জন্যে কাজ করে। শাসকগোষ্ঠীর প্রচারণা ছড়ানোর জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে ট্রল করা হয়। তাই বাস্তব যুক্তির মুখোমুখি হয়ে মাথা যখন আর কাজ করে না তখন তারা অবমাননাকর প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা যতটা বেশি জঘন্য হয় জনগণ তত বেশি তাদের আসল চেহারা দেখতে পায়।

মিশেল ট্রান ডুক আরো বলেছেন বিশেষ করে মানবাধিকার গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা এমনকি অপসারণের দিকে ধাবিত ফেসবুকের সম্প্রদায়গত মানদণ্ড প্রয়োগের প্রক্রিয়া সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা [7] করা উচিত।

গণঅভিযোগের ময়দানে আমরা মেটার রোবটের নেওয়া সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে দিতে ফেসবুকের মানবাধিকার দলের উপর নির্ভর করি। আমরা মেটাকে ট্রলের ফাঁদে না পড়ে ভিয়েত তানের মতো মানবাধিকার এনজিওর পৃষ্ঠাগুলির বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ পদ্ধতিগতভাবে যাচাই করার অনুরোধ করছি।

খোলা চিঠিটি মেটাকে ভিয়েতনামের লক্ষ লক্ষ ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার, সমন্বিত গণঅভিযোগে জড়িত নেটওয়ার্কগুলি বন্ধ করার এবং ভিয়েতনামের কর্মী, সাংবাদিক ও অংশীজনদের বিষয়বস্তু সরিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে আবেদনের একটি উপায় প্রদানের অনুরোধ করেছে

ভিয়েত তানের আবেদনকে সমর্থন করা অন্তত ৬০টি গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ফেসবুককে [10] ভিন্নমত থামিয়ে দেওয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে সমস্ত অংশীজনের সাথে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

আমাদের তথ্য ব্যবহার, তৈরি ও ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে ফেসবুক বিপ্লব ঘটালেও ভিন্নমত কমানো ও বিরোধীদের হয়রানি করতে রাজনৈতিক কর্মীদের মঞ্চটিকে কাজে লাগানোর ফলে এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রচারের পরিবর্তে ক্রমেই দমনের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

ভিয়েতনামের সক্রিয় কর্মী, সাংবাদিক এবং অংশীজনদের বিষয়বস্তু নামিয়ে ফেলার বিরুদ্ধে আবেদন এবং সমন্বিত সামাজিক ক্ষতির প্রচারাভিযানের লক্ষ্যবস্তু হলে ফেসবুক কর্মীদের সাথে সরাসরি কাজ করার একটি উপায় প্রদান করুন।

ফেসবুক এখনো চিঠিটির জবাব না দিলেও মিশেল ট্রান ডুক বিশ্বাস করেন প্রযুক্তি সংস্থাটির জবাবদিহিতা আদায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা মেটা থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাইনি। মেটা একটি কণ্ঠস্বর উপেক্ষা করতে পারলেও এনজিও এবং নির্বাচিত ব্যক্তিদের একটি বড় জোট জবাবদিহিতার জন্যে অনুরোধ করলে মেটা উত্তর দেবে। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আমরা আমাদের প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাবো।