
ভূমিকম্পের পর আলেপ্পোতে উদ্ধারকারী দল। তাসনিম নিউজ এজেন্সির জন্যে সালেম মোহাম্মদীর ছবি। উইকিমিডিয়া সাধারণ, সৃজনী সাধারণ অনুমতি ৪.০। ন্যায্য ব্যবহার
এই লেখাটি ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে বায়নানা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে৷ বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করার একটি চুক্তির অধীনে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ এখানে পুনঃপ্রকাশিত হলো৷
দক্ষিণ তুরস্কের হাতায়ে ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৪.৬ মাত্রার একটি নতুন মৃদু আঘাতের কারণে সিরিয়া ও তুরস্কে এখনো ভূমিকম্পের বিপদ রয়েছে। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারা মধ্যরাত ১:৩০ টায় মৃদু কম্পনটি অনুভব করে।
৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের ভূমিকম্প পরবর্তী তিন সপ্তাহে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার ১০ হাজারেরও বেশি মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে।
সাধারণভাবে সাদা হেলমেট নামে পরিচিত সিরিয়ার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী বিশেষ করে বেহাল ও ধ্বসে পড়া ভবন এবং আশেপাশে ভগ্ন দেওয়াল থাকা এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক ও সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে একটি সতর্কতা জারি করেছে। বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে কোনো কম্পন অনুভব করার সাথে সাথেই খোলা জায়গায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বেসামরিক নিরাপত্তা দলগুলির হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ২,১৬৭ জনেরও বেশি মৃত্যু ও ২,৯৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ১০ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ৫৫,৭০০ টিরও বেশি মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করা হয়।
ধ্বসে পড়া ভবনগুলির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাসহ কঠোর পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইদলিব ও আলেপ্পোর গ্রামাঞ্চলের অনেক এলাকায় মৃতদের মৃতদেহ উদ্ধারের জন্যে অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিরীয়-তুর্কি সীমান্তের বাব আল-হাওয়া পারাপার ১১ ফেব্রুয়ারি তার সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্টে তার পারাপার দিয়ে ১,১০০ টি মৃতদেহ পরিবহন করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে:
وصل إلى معبر #باب_الهوى حتى تاريخ هذا المنشور ما يقارب 1100 جثمان لأهلنا الذين قضوا جراء الزلزال الذي ضرب جنوب #تركيا و شمال #سوريا، وما تزال كوادر المعبر تعمل على مدار الساعة لإيصال بقية جثامين أهلنا التي تصل تباعاً إلى ذويهم.https://t.co/Oz6t1e9GIi pic.twitter.com/8qzGpKiTq9
— معبر باب الهوى (@babalhawabc) February 11, 2023
প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত দক্ষিণ #তুরস্ক ও উত্তর #সিরিয়ার ভূমিকম্পে নিহত আমাদের প্রায় ১,১০০ লোকের মৃতদেহ বাবাল-হাওয়া পারাপার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চৌরাস্তার কর্মীরা এখনো আমাদের লোকদের অবশিষ্ট মৃতদেহ পর্যায়ক্রমে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ২৪/৭ কাজ করে যাচ্ছে।
বাশার আল-আসাদ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা হালাব, লাতাকিয়া এবং আলেপ্পো অঞ্চলে ২,৩৪১ জন আহতসহ মৃত্যুর সংখ্যা ১,৪০৮ এ পৌঁছেছে। ফলে এই প্রকাশনার তারিখ পর্যন্ত সিরিয়া জুড়ে মোট ৪,১৭৫ জন মারা গেছে এবং আহত হয়েছে হাজার হাজার। তবে ১০ মার্চ পর্যন্ত সারা তুরস্কে এই সংখ্যা ৪৮,৪০০ জনের বেশি এবং সিরিয়ায় মারা গেছে ৭,২০০ জনেরও বেশি।
উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় অপর্যাপ্ত সাহায্য
ভূমিকম্পের প্রায় এক সপ্তাহ পরে সিরিয়ায় পৌঁছানো ত্রাণ বিপর্যয়ের মাত্রা মোকাবেলার জন্যে যথেষ্ট ছিল না।
বাব আল-হাওয়া সীমান্ত পারাপার হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে সিরীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরের এলাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রথম জাতিসংঘের সাহায্য কাফেলা পৌঁছে। এই অঞ্চলটি ভূমিকম্পে ব্যাপক এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের একটি। কাফেলায় অঞ্চলেটির মানবিক সংকট দূর করার জন্যে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ ও স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রীর ছয়টি ট্রাক ছিল।
বাব আল-হাওয়া সীমান্ত পারাপারের গণমাধ্যম কর্মকর্তা মাজেন আলুশ এএফপিকে জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রথম ত্রাণবাহী কাফেলা “ভূমিকম্পের চার দিন পর আজ পৌঁছেছে।” তবে সাদা হেলমেট উদ্ধারকারী দল এই সাহায্যে হতাশ হয়ে বলেছে, “এগুলি অবশ্যই অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের জন্যে বিশেষ সাহায্য ও সরঞ্জাম নয়।”
সৌদি আরব থেকে আসা দ্বিতীয় ত্রাণবাহী কাফেলাটি ১১ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পের পর উত্তর আলেপ্পোর জেন্ডারেস শহরে পৌঁছে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল ৫৮০ টিরও বেশি মৃত্যুর এই শহরটিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে মনে করেছে।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে এবং ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে কাতারি রেড ক্রিসেন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইদলিবে পৌঁছে। দলটির মধ্যে যাদেরকে উত্তর সিরিয়ায় পাঠানো দুটি বিশেষ দল ছিল। প্রথম দলটিতে পাঁচজন মিশরীয় চিকিৎসক এবং দ্বিতীয় দলে তিন সদস্যের স্পেনীয় একটি উদ্ধারকারী দল ছিল।
আল-আসাদ সরকার ও তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সহায়তা
বাশার আল-আসাদের সরকারের সাথে বাকি বিশ্বের জটিল রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কিছু দেশ আসাদ সরকারের সাথে সরাসরি জড়িত না হয়ে সহায়তা প্রদানের জন্যে রাজনীতিকে একপাশে সরিয়ে রেখেছে।
বায়নানা ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে শরণার্থী কর্মসূচি পরিচালনাকারী একটি স্পেনীয় মানবিক সংস্থা সিইএসএএল-এর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সমন্বয়কারী ফ্রাঞ্জ গিলেন ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়ায় তারা সিরিয়া ও তুরস্ক দুটি স্থানেই কয়েকটি দল মোতায়েন করার কথা নিশ্চিত করেন।
হাসপাতালের জরুরি দলের অংশ হিসেবে সিইএসএএল-এর স্বেচ্ছাসেবক বাবুর্চিদের একটি দলকে ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে দুর্যোগ এলাকায় পাঠানোর কথা ফ্রাঞ্জ গিলেন নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন সাহায্যের অনুরোধের প্রেক্ষিতে স্পেন সরকার তুরস্কে তাদের সাহায্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন:
স্পেনীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (এইসিআইডি) এর অংশীদার ৭২ ঘন্টার মধ্যে বিশ্বের যেকোন জায়গায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম এসটিএআরটি নামের একটি জরুরি প্রতিক্রিয়া দল। এই ক্ষেত্রে ফিল্ড হাসপাতালটিকে পাঠানো হয় তুরস্কের হাতায় অঞ্চলে।
গিলেন স্পষ্ট করেছেন সিরিয়ায় পাঠানো সিইএসএএল দলটি বাশার আল-আসাদের সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা আলেপ্পো ও লাতাকিয়া শহরে কাজ করবে।
এদিকে ফ্রান্স সংবাদমাধ্যম এজেন্সির (এএফপি) সাথে কথা বলা বাদশাহ সালমান ত্রাণ ও মানবিক সাহায্য কেন্দ্রের একটি সূত্রের মতে সৌদি আরব সিরিয়ার আল আসাদ সরকার নিয়ন্ত্রিতসহ সিরিয়ার সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সূত্রটি সাহায্য সরাসরি আলেপ্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং দামেস্কের সিরীয় রেড ক্রিসেন্টে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করলেও সিরিয়ার সরকারের সাথে সরাসরি যোগাযোগের কোনো চ্যানেল নেই বলে জানিয়েছে।
বেশ কয়েকটি আরব দেশ আলজেরিয়া, জর্দান, ইরাক, লিবিয়া, লেবানন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সিরিয়ায় আসাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলিতে অনুসন্ধান দলত ও সাহায্য বোঝাই বিমান পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে।
পাঠানো সাহায্য ভূমিকম্পের পরে প্রয়োজনীয় কোন জায়গায় যায়নি।
জাতিসংঘের কর্মদক্ষতার সমালোচনা
সক্রিয় কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের সহায়তার অভাবের নিন্দা করে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ধ্বসে পড়া ভবনগুলিতে জাতিসংঘের পতাকা উল্টে রেখেছিল।
In #Aleppo and #Idlib, the UN flag now flies upside down over the rubble in condemnation of its morally indefensible absence of effective humanitarian action. Seven days on and the UN continues to make up false narratives of ‘political complexity’ and ‘logistical barriers’. pic.twitter.com/91HHhQzTeS
— Madonna Kalousian 🦉🍉🥄 (@MKalousian) February 12, 2023
#আলেপ্পো এবং #ইদলিবে কার্যকর মানবিক পদক্ষেপের নৈতিকভাবে অমার্জনীয় অনুপস্থিতির নিন্দায় জাতিসংঘের পতাকা এখন ধ্বংসস্তূপের উপর উল্টোভাবে উড়ছে। সাতদিন ধরে জাতিসংঘ ‘রাজনৈতিক জটিলতা’ এবং ‘পরিকল্পনাগত বাধা'র মিথ্যা অজুহাত তৈরি করে যাচ্ছে।
সিরিয়ার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার পরিচালক রায়েদ আল সালেহ সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিলম্বিত সাহায্য প্রাপ্তির জন্যে জাতিসংঘের সমালোচনা করেছেন। তিনি এই অঞ্চলে জাতিসংঘের সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফলে মানবিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব এবং জরুরী ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস জাতিসংঘের দেশটির উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে সিরীয়দের সাহায্য না করতে পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে এর জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন।