ড. গ্যাব্রিয়েল হোসেইন
এই নিবন্ধটি মূলত ত্রিনিদাদ ও টোবাগো নিউজডেতে প্রকাশিত। অনুমতিসহ নীচে পুনরায় প্রকাশ করা হলো।
এখন একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে সামাজিক অগ্রগতিতে নারী ও নারীবাদীদের অবদানকে উদযাপন করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আইডাব্লিউডি) স্মরণ করা হচ্ছে। এটি এখনো নারী ও বালিকাদের জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা লিঙ্গ ও যৌনতা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগ্রামের বিষয়গুলিকে স্বীকার করে। এটি নারীর অধিকারের অগ্রগতিসহ অব্যাহত সংহতি নিশ্চিত করে।
যুদ্ধের সহিংসতা ও পৃথিবীর বিরুদ্ধে সহিংসতাসহ অন্যান্য শ্রেণিবিভেদ, অসাম্য, বর্জন ও সংগঠিত সহিংসতার ধরনগুলিকে ছেদ করে বলে এটি পিতৃতান্ত্রিক বিশ্বাস ও ব্যবস্থার অবসানের সম্মিলিত আন্দোলনের ক্রোধ, আনন্দ ও আশাকে শক্তিশালী করার আহ্বান।
সংক্ষেপে নারীদিবসে স্মরণ, উদযাপন, পুনরুজ্জীবন, স্বীকৃতি এবং সংহতি তা ইরানে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত আমাদের বোনদের সাথে, বা আমাজনীয় বাস্তুতন্ত্র এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারার জন্যে সংগ্রামী আদিবাসী নারীদের সাথে, অথবা পরিবারের বেঁচে থাকার তাগিদে সিরিয়া থেকে ইউরোপ বা ভেনিজুয়েলা থেকে ত্রিনিদাদ পর্যন্ত সমুদ্র পারাপারে বিপজ্জনক পরিস্থিতে থাকা মায়েদের সাথেই হোক না কেন, অন্তর্ভুক্ত।
এটি ট্রান্সনারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করার একটি দিন। ট্রান্সনারী জন্মগতভাবে নারী না হলেও তাদের জীবনের কোনো এক সময় নারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তারা বিশ্বের বালিকা ও নারীদের মধ্যে সংখ্যালঘু এবং নির্দিষ্ট কতগুলি সমস্যার মুখে পড়ে। এর মধ্যে তাদের মেনে না নিয়ে ছকেবাঁধা ধ্যান-ধারণাকে প্রশ্রয় দেওয়া, বিকৃতি, হুমকি ও ভয়ের পরিবেশে ট্রান্সনারীকে উপস্থাপন, এবং জৈবিক, প্রজনন, জীবনচক্র বা ট্রান্সনারী ও জন্মগত নারীদের মধ্যে সামাজিক পার্থক্যকে বড় করে দেখা রয়েছে।
কেন আজকের দিনের উপর জোর দেওয়া? উপনিবেশ শুরুর পর থেকে শতাব্দী ধরে ক্যারিবীয় নারীদের মধ্যে চলে আসা বর্জন, গৎবাঁধা ধারণা পোষণ এবং এমনকি খারাপ বানানোর অর্থ একটি গোষ্ঠী বুঝতে পেরেছে বলে অন্যরা যাতে এধরনের ক্ষতি ছাড়াই বাঁচতে পারে সহানুভূতির সাথে তা নিশ্চিত করা আরো বেশি দায়িত্বের।
দ্বিতীয়ত, নারীবাদী সংগ্রাম মৌলিকভাবে লিঙ্গ, লিঙ্গভেদ এবং যৌনতার একটি দ্বিভিত্তিক বিভাজন যাকে টিকিয়ে রাখে পিতৃতন্ত্র ও সমকামভীতি, যৌনতাবাদ, সহিংসতা এবং শ্রমের যৌন বিভাজনের দোসরেরা। এই দ্বিভিত্তিক গঠন আমাদের সবাইকে দুটি লিঙ্গ – পুরুষ ও নারী, দুটি লিঙ্গভেদ – স্ত্রীলিঙ্গ ও পুংলিঙ্গ এবং দুটি যৌনতা – বিষমকামী ও অবিষমকামীতে বিভক্ত করে রেখেছে।
পশ্চিমা সমাজে এই দ্বিভিত্তি সবসময় নারীরা কীভাবে উপস্থিত হবে, আচরণ করবে এবং ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, তারা কী শ্রম দেবে, তারা কাকে ভালবাসবে এবং তারা কতটা সহিংসতা (এবং এর হুমকি) সহ্য করবে তা নির্ধারণ করে নারীর অধীনতাকে পুনরুৎপাদন করেছে। ঐতিহাসিক নারীবাদী সংগ্রামের নারীদের মতোই ট্রান্সনারীরাও সেই দ্বিভিত্তিকে প্রতিরোধ করছে। তাদের পাশাপাশি আমাদেরকেও লড়াই করতে হবে।
নারী হয়ে জন্ম নিলেই নারীরা ট্রান্সনারীকে “নারী” শ্রেণি থেকে বাদ দেওয়ার অধিকার পায় না। বিভিন্ন জৈবিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতার অনেক ধরনের নারী রয়েছে। সেইসাথে শেষ পর্যন্ত সমস্ত নারীই তৈরি হয়, জন্ম নেয় না – কারণ আমাদের সকলকে একটা মূল্য চুকিয়েই আমাদের লিঙ্গের গ্রহণযোগ্য উপস্থাপন করতে হয়।
জৈবিকভাবে নারী হিসেবে জন্ম নেওয়া কেউ কেউ হয়তো নারীর পরিবর্তে অদ্বিভিত্তিক মানুষ বা পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতে চায়। জন্মগত এবং নারীসুলভ নারীরা তাদের লিঙ্গ ও লিঙ্গভেদের কারণে নির্দিষ্ট ধরনের বৈষম্য ও ঝুঁকির শিকার। জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে নারী হয়ে ওঠা নারীদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থাকবে। সবাই অস্তিত্বশীল এবং বৈধ। তারা কেউ পরস্পরের প্রতি হুমকি নয়।
ট্রান্সনারী হলো সমস্ত দ্বন্দ্ব, চ্যালেঞ্জ ও জটিলতাসহ নারীত্বের আরেকটি প্রকাশ। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনেক ধরনের: প্রতিবন্ধী, নিঃসন্তান, অভিবাসী, দরিদ্র, কালো, আদিবাসী, নারীকামী, জ্যামেট, পুরুষালি-দর্শন, “পুরুষ”দের চাকরিরত, বড় বা মোটা বলে মনে করা, শরীর বা মুখে বেশি লোমসহ, মানসিক অসুস্থতাসহ, মাসিক না-হওয়া, বা যৌনকর্মী হিসেবে কর্মরত – নারীরা প্রকৃত নারী বিবেচিত হতো না বা হয় না।
একজন নারী হওয়ার অর্থ কী তা শুধু ব্যাখ্যা করার জন্যে বিশ্বজুড়ে ঘটমান এই ইতিহাস, এই প্রেক্ষাপট এবং সাময়িক কঠিন কথোপকথন একটা ১২-সপ্তাহের ইউডাব্লিউআই কোর্স হতে পারে। আর তাই অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার নির্ভর এই বিতর্ক ও সক্রিয়তা সম্পর্কে আপনার আরো কিছু জানার থাকলে তাড়াহুড়ো করে মন্তব্য করবেন না।
এমনকি আপনি অনুচিত মনে করা সত্ত্বেও কেউ নিজেকে নারী হিসাবে পরিচয় দিলে শুধু তাকে সম্মান করুন। এটা আপনার বিষয় নয়। এমনকি আপনি উচিত মনে করা সত্ত্বেও কেউ নিজেকে নারী হিসাবে পরিচয় না দিলে শুধু তাকে সম্মান করুন। এটা আপনার ভাবনা নয়। কেউ আমরা যেরকম আশা করি সেরকম নারী না হলেও সেটিও আপনার যাত্রা নয়।
আপনার যাত্রা হলো একটি উন্নত বিশ্ব তৈরি করা যেখানে নারীরা (এবং সমস্ত মানুষ) নিরাপদ, সমান, মুক্ত এবং প্রিয়, যেখানে নারী বা নারীসুলভ হওয়া ঝুঁকি, বর্জন বা বৈষম্যের উৎস নয় এবং যেখানে আমরা অন্যদের লিঙ্গ, লিঙ্গভেদ বা যৌনতার সঙ্গতি বিধানের ঊর্ধ্বে থাকি।
প্রতিটি নারী যা তা হয়ে ওঠার যাত্রা জয়লাভ করুক। এই ধরনের প্রেমময় আলিঙ্গন আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে স্মরণ করার একটি উপায়।