- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

প্রবাসী ইরানিদের প্রতিক্রিয়া: ‘ইরান লবি'র বিরুদ্ধে ক্ষোভ

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, সরকার, দ্যা ব্রিজ (সেতুবন্ধন), "Women, life, freedom" Iran revolts

আরিফ কাজী [1]র শিল্পকর্ম, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

ইরানে কয়েক মাসের প্রতিবাদে [2] দেশের ভেতর ও বাইরের ইরানিদের দুঃখ, সুখ, সংহতি এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষোভসহ বিভিন্ন ধরনের আবেগ প্রকাশিত হয়েছে। রাগ ও ক্ষোভের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু শাসক ধর্মতন্ত্র হলেও অনেকে “ইরান লবি” নামে পরিচিত জাতীয় ইরানি-মার্কিন পর্ষদে [3]র (এনআইএসি) প্রতিও তাদের আবেগ প্রকাশ করেছে।

তথাকথিত “ইরান লবি” নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রথমে শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করা গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের একটি আনুষ্ঠানিক লবি বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করা উচিত নয়, বরং এটা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে স্বাভাবিক রক্ষা বা সমর্থন করে নীতি প্রচারকারীদের বোঝায়। মাঝে মাঝে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উপাদানসহ এই ধরনের সমর্থন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হতে পারে। শব্দটি নিশ্চিতভাবেই সরাসরি তেহরানের শাসকের পক্ষাবলম্বনকারী কোন ব্যক্তিকে না বুঝালেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বর্তমান সরকারকে সমর্থন করতে আগ্রহী কাউকে বুঝাতে পারে।

তবে লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে শব্দটির সঠিক অর্থের বিষয়ে কোন ঐকমত্য নেই এবং “ইরান লবির” অংশ হিসেবে কে যোগ্য তা নিয়ে চলমান বিতর্ক ও মতবিরোধ রয়েছে। শব্দটি অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে [4] এবং এটি বৈধ রাজনৈতিক বিতর্ক ও ভিন্নমতকে দমন করতে ব্যবহৃত হতে পারে বলে কিছু সমালোচক যুক্তি দেন। তবুও, প্রদত্ত সংজ্ঞাটি “ইরান লবির” একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত বৈশিষ্ট্য।

ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা বা আলোচনা

এই প্রেক্ষাপটে ইরান নীতি নিয়ে বিতর্ক মূলত তাদের মধ্যে যারা মনে করে যে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঠিক নীতির মধ্যে নিষেধাজ্ঞা ও বিচ্ছিন্নকরণ থাকা উচিত বনাম যারা মনে করে যে শাসকগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও চুক্তি গণতন্ত্র ও সংস্কারের দিকে নিয়ে যাবে। এই অবস্থানগুলি বিস্তৃতভাবে ইরানীদের ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে সংস্কারযোগ্য বলে বিশ্বাসী এবং একটি বিপ্লব বা শাসন পরিবর্তনই গণতন্ত্রীকরণের একমাত্র কার্যকর পথ বলে যুক্তি প্রদানকারীদের মধ্যে বিভক্ত করেছে।

পারমাণবিক আলোচনা [5] এবং দেশের সাধারণ কূটনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উভয় ক্ষেত্রেই ইরানের প্রতি পশ্চিমাদের আচরণ এই বিতর্কের একটি মূল রণক্ষেত্র।

ইরানের দেশের অভ্যন্তরে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদন্ড [6] ও গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকায় বর্তমানে অনেকে শাসকগোষ্ঠীকে কূটনৈতিক বয়কট, বিপ্লবী গার্ডকে [7] সন্ত্রাসী সত্তা হিসেবে চিহ্নিত করা এবং পারমাণবিক চুক্তি বা কোন ধরনের অর্থনৈতিক ত্রাণ প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছে। এই অবস্থানটি চলমান দমন-পীড়নের মুখে শাসকগোষ্ঠীকে আর সংস্কারযোগ্য বলে বিশ্বাস না করা অনেক ইরানিদের উল্লেখযোগ্য সমর্থন লাভ করেছে। অন্য সবকিছুর সাথে শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্ট মৃত্যু ও সহিংসতা তাদের বিরুদ্ধে সংস্কার সম্ভব এবং যতটা দেখা যায় ইরানের শাসকগোষ্ঠী “অতটা খারাপ” নয় বলে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাসকারীদের ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে।

ইরান লবি সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা

যুক্তির এই ধারাটির অনেক প্রবক্তা [8] ছিল এবং আছে যাদের অধিকাংশই ইরানে ঘটমান সবকিছুর জন্যে পশ্চিমকে [9] দায়ী করে একটি বিশ্লেষণ প্রদানকারী। তাদের প্রিয় যুক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম ইরান সৌদি আরবের মতো খারাপ [10] নয়, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি [11] জনগণের দুর্দশার জন্যে দায়ী এবং বিশ্বে ট্রাম্পের অস্তিত্ব না থাকলে শান্তি স্থাপনের জন্যে প্রস্তুত ইরান একটি ভুল বোঝাবুঝির শিকার [12] বলে দাবি করা।

এই যুক্তিগুলির কিছু বিশেষত শুরু হয় [13] ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরুর পর থেকে। এগুলি মনে করাটাও বেশ হাস্যকর এবং এদের অনেক লেখক এখন তাদের শেষ দশকের কাজকে অস্বীকার করার দুর্দশায় পড়ে বিপ্লবী জনতার কাছে ছুটে যাচ্ছে৷

এই যুক্তিগুলো ইরান সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্যের স্বীকৃত দিতে পারে না। দেশটি ক্ষমতা ও বলপ্রয়োগের উপর লৌহমুষ্ঠি বজায় রাখা একটি নির্মম অভিজাত [14] শাসিত একটি ধর্মতান্ত্রিক স্বৈরাচার [15]। আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে বেঁচে থাকার জন্যে শাসকগোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি ও আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্যে মরিয়া। ইরান লবির একটি ধারাবাহিক দাবি হলো নিষেধাজ্ঞা ও বিচ্ছিন্নতা কোনো না কোনোভাবে ইসলামি বিপ্লবী রক্ষী কোরকে (আইআরজিসি) সমৃদ্ধ [16] বা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামানিকে উপকৃত [17] করে। তবে হাস্যকর এই যুক্তিটি রক্ত এবং লোভে সিক্ত।

ইরানকে দেওয়া যেকোন অর্থনৈতিক ছাড় শাসকগোষ্ঠীকে প্রথম এবং সর্বাগ্রে উপকৃত করবে, তাদের নিপীড়ক যন্ত্রপাতি পরিচালনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে। খামেনির ৯,৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে [18]র ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য নিষেধাজ্ঞার মুক্তির সুবিধার উপর ব্যাপকভাবে [19] দাঁড়িয়ে আছে। কিছু কিছু অনুমান অনুসারে আইআরজিসি শুধু বিক্ষোভ দমন ও সন্ত্রাস ছড়াতে ব্যবহৃত একটি সামরিক বাহিনী নয়, এটি ইরানের অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি [20] নিয়ন্ত্রণও করে।

ইরান লবি ইরানের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের জীবনকেও প্রসারিত করতে চাওয়া একটি এজেন্ডা প্রচারের জন্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে। ইরান লবি [21]র সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশনা [22] ও কর্মকাণ্ড পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তাদের প্রচেষ্টা [23] যেকোন মূল্যে এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের উপর কেন্দ্রীভূত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় ইরান লবির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।