জিম্বাবুয়ের সাইবারঘনিষ্ট শহরগুলি চালাচ্ছে চীন

জিম্বাবুয়ের নতুন রাজধানী জিম সাইবার শহরের অলংকৃত চিত্র ব্যবহার করে গ্লোবাল ভয়েসেসের অলংকরণ

এই গল্পটি গ্লোবাল ভয়েসেসের নাগরিক গণমাধ্যম মানমন্দিরের পত্রিকা  আন্ডারটোনসের অংশ। আন্ডারটোনসের গ্রাহক হোন

আপনার বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম আখ্যানগুলির চিন্তাশীল বিশ্লেষণের সূত্র আন্ডারটোনসে আবারো স্বাগতম। এই সংস্করণে আমাদের চলমান প্রকল্প পরাধীনতা পর্যবেক্ষকের অংশ হিসেবে আমরা জিম্বাবুয়ের ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদবাদের জটিল সমস্যার ভেতরে ঢুকেছি।

জিম্বাবুয়ে মামুলি জিনিস থেকে নির্মিত একটি “স্মার্ট” রাজধানী শহরবিশিষ্ট আফ্রিকার প্রথম দেশে পরিণত হতে চলছে। বর্তমান সময়ের রাজধানীর ঠিক বাইরে নতুন হারারে বা জিম সাইবার শহরের আন্তঃসংযুক্ত সরকারি ভবন, বাঁধাহীন যানবাহ চলাচল, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা, উন্নত আবাসন ব্যবস্থা এবং শীর্ষস্থানীয় মলের সমাহার মিলে একটি অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে, অন্তত সরকারের প্রতিশ্রুতি এটাই।

নতুন হারারেতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে যুক্ত সার্বক্ষণিক মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিকল্পনা জিম্বাবুয়েতে সংশ্লিষ্ট অনেক নাগরিকের জন্যে একটি দুর্বিষহ যুগের সূচনা করবে। প্রযুক্তিটি কোন সন্দেহভাজন অপরাধী সনাক্ত হলে যেকোন ব্যক্তির জীবন্ত ছবির সাথে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারগুলির সাথে মিলিয়ে আইন প্রয়োগকারীদের সতর্ক করতে পারবে।

রাষ্ট্রপতি এমারসন ম্নাঙ্গাগওয়ার সরকারের সময় কঠোরভাবে স্বাধীনতা কমে যাওয়া জিম্বাবুয়েতে এই প্রযুক্তির জন্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বৃহৎ কোন উদ্দেশ্যও রয়েছে। বাস্তবে বিরোধীদের আন্দোলন শক্তিশালী জিম্বাবুয়ের এমন শহরগুলিতে ইতোমধ্যে সিসিটিভি (ক্লোজড-সার্কিট টেলিভিশন) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

জিম্বাবুয়ের ডিজিটাল উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যে দরপত্রগুলি মূলত পেয়েছে তাদের সরকারি ঋণ পাওয়া হুয়াওয়ে, হিকভিশন এবং ক্লাউডওয়াকের মতো চীনা নজরদারি দৈত্যগুলি। নতুন হারারের সংসদ ভবনের অর্থায়ন করেছে চীন। এই প্রকল্পগুলি চীনের মহা অবকাঠামো প্রকল্প ডিজিটাল রেশম সড়ক এবং বন্ধনী ও সড়ক উদ্যোগের (বিআরআই) অংশ। এর আগে আমাদের গবেষকরা আমাদের “চীনের বন্ধনী ও সড়ক উদ্যোগ তৈরি” প্রতিবেদনে বিআরআই আখ্যানগুলির তদন্ত সংকলিত করেছেন।

জিম সাইবার শহরে মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তির চুক্তিগুলিও করা হয়েছে দুবাই-ভিত্তিক মুল্ক ইন্টারন্যাশনালের সাথে। এদিকে রাষ্ট্রপতি ম্নাঙ্গাগওয়া ডিজিটাল সুরক্ষার বিষয়গুলিতে বেলারুশীয় নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। জিম্বাবুয়ের সরকার রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের ফোনে পেগাসাস গোয়েন্দা সরঞ্জামের মতো লক্ষিত নজরদারি ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে।

জিম্বাবুয়ের সাধারণ নির্বাচন ২০২৩ সালের জুলাইয়ের প্রত্যাশিত বলে  ম্নাঙ্গগওয়ার সরকার এই কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে ইতিবাচক বিবরণ প্রচার করছে। জিম্বাবুয়ে নাগরিকরা অবশ্য বিশ্বাস করেনি। সুরক্ষার কারণে বেনামে থাকা আমাদের জিম্বাবুয়ের গবেষক বলেছেন, “বিপর্যয়কর অর্থনীতি সত্ত্বেও সরকারের ভুল জায়গায় অগ্রাধিকার সম্পর্কে সামাজিক গণমাধ্যমে উচ্চকিত না হলেও আলোচনা রয়েছে।”

আফ্রিকীয় সংবাদের ইউটিউব থেকে নেওয়া পর্দাছবি

“আধুনিকায়নের জন্যে চীনা অর্থ দরকার”

সরকার সমর্থক কণ্ঠগুলি যুক্তি দিয়েছে চীনা প্রযুক্তি আমদানি জিম্বাবুয়ের সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চালু রাখবে। সংক্ষেপে তারা বলেছে “চীন দেশগুলিকে প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসরে সহায়তার জন্যে প্রযুক্তি রপ্তানি করছে।”

চীনের সদিচ্ছার প্রতি জিম্বাবুয়ের আস্থা কয়েক দশক পুরনো। চীন (এবং রাশিয়া) ১৯৬০ এবং ’৭০ এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন করে। রাষ্ট্রীয় আখ্যান বিশেষত মানবাধিকারের ক্ষেত্রে দ্বৈতমান প্রয়োগকারী “সাম্রাজ্যবাদী” পশ্চিমা শক্তিগুলির বিরুদ্ধে চীনের ‘দানশীল প্রভাব’কে সমর্থন জোগায়।

মানবাধিকারকে বৈশ্বিক দক্ষিণের সরকারগুলিকে ক্ষুন্ন করতে পশ্চিমাদের তৈরি একটি মিথ্যাচার হিসেবে দেখা হয়। এই আখ্যানটি রুয়ান্ডা, চীন, ক্যামেরুন এবং অগণিত অন্যান্য অপশ্চিমা দেশেও পাওয়া যায়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্থানীয় সংবাদপত্র হেরাল্ডের একজন সম্পাদক লিখেছেন, উদাহরণস্বরূপ গত বছর হারারেস্থ মার্কিন দূতাবাসের তৈরি করা মানবাধিকার প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের [জিম্বাবুয়েকে] বক্তৃতা দেওয়ার কোন নৈতিক কর্তৃত্ব নেই।“ তিনি যুক্তি দেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে মানবাধিকারের একটি খারাপ ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে, ২০১৯ সালে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে এবং মধ্য প্রাচ্যে অস্ত্র সরবরাহ করে।

তবে জিম্বাবুয়েতে প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের পরাধীনতা পর্যবেক্ষকের গবেষণায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশসহ অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের শাস্তি পেতে দেখা গেছে।

আমাদের গবেষক বলেছেন, “ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল হিসেবে শাসকগোষ্ঠীর ভিন্ন মতাবলম্বী কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা, বিরোধীদল, সক্রিয় কর্মী, বেসরকারি সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের জন্যে সরকারের নজরদারি প্রযুক্তি গ্রহণ খারাপভাবে কাজ করেছে।” “স্মার্ট শহর প্রকল্পগুলির নজরদারি প্রযুক্তি রাষ্ট্রের সমাবেশ ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতা বিরোধী আইন ব্যবহার করে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর আটকানোকে সহজ করে তুলবে।”

বিরোধী কণ্ঠস্বর হাতে গোনা হলেও স্পষ্ট

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কিছু সমালোচক তাদের সরকারের শহরগুলিকে “চৌকস” করার পরিকল্পনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা গণ এবং লক্ষিত নজরদারি মাধ্যমে ভিন্ন মতাবলম্বী ও সাংবাদিকদের উপর আরো বেশি সেন্সর ও দক্ষ দমনের আশংকা ছাড়াও দু'দেশের মধ্যেকার চুক্তির অংশ হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মুখ সনাক্তকরণে আফ্রিকীয় মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলি সূক্ষ্ণতর করার মাধ্যমে জিম্বাবুয়ের বায়োমেট্রিক ও যোগাযোগের তথ্যে চীনের প্রবেশাধিকার পাওয়ার যুক্তি দেয়। ডেটা ও গোপনীয়তার অধিকারের শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠগুলির অন্যতম হলো দক্ষিণ আফ্রিকার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের জিম্বাবুয়ে শাখার পাশাপাশি নিশে প্রতিরক্ষা প্রকাশনা

জনগণের বাকি অংশ অবশ্য এর বিরোধিতায় কম সোচ্চার এবং প্রতিশোধের ভয়ে সতর্ক। “সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রতিক্রিয়া জানে বলে জনগণের মধ্যে একটা বিশাল মাত্রার ভয় রয়েছে” আমাদের জিম্বাবুয়ের গবেষক বলেছেন। “ভোট প্রদানে অনেক উদাসীনতা থাকলেও তারা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলবে না। হতাশার অনুভূতি আছে।”

চীনের ডিজিটাল রেশম সড়ক

ডিজিটাল রেশম সড়ক হলো রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বন্ধনী ও সড়ক উদ্যোগ (বিআরআই) এর ডিজিটাল শাখা। চীন আন্তর্জাতিকভাবে রপ্তানি করা নমুনা ঘরে বসে নজরদারি-ভিত্তিক প্রশাসনের বৈশ্বিক নেতা হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে চীন সম্মিলিতভাবে সমস্ত বড় গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চেয়েও বেশি অর্থায়ন করে থাকে। আপনি যদি চীনের বিআরআই বিষয়ে আগ্রহী হলে ২০২১ থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের বিশ্লেষণ দেখুন। এখানে কয়েকটি গল্প রয়েছে:

সম্পাদকের দ্রষ্টব্য: এই গল্পের একটি পূর্ববর্তী সংস্করণে নতুন হারারের সংসদ ইতোমধ্যে নির্মিত হয়ে গেলেও একে নির্মাণাধীন উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা এটি সংশোধন করেছি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .