- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

দেশের গণমাধ্যম সংস্কারের দিকে যাচ্ছে তানজানিয়ার সরকার

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, তান্জানিয়া, আইন, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, রাজনীতি, জিভি এডভোকেসী
Journalists in Tanzania covering an event. Image source; ILRI. Attribution-NonCommercial-NoDerivs 2.0 Generic (CC BY-NC-ND 2.0)

তানজানিয়ার সাংবাদিকরা একটি অনুষ্ঠান কভার করছে। ছবির উৎস; আইএলআরআই [1]। সৃজনী সাধারণ অবাণিজ্যিক অপরিবর্তনযোগ্য অনুমোদন ২.০

রাজনৈতিক সমাবেশের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া [2]র একমাস পর তানজানিয়া সরকার গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে আরেকটি মাইলফলক ঘোষণা করেছে।

দেশটির রাজধানী দোদোমায় ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে [3] তথ্য, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী নেপে ন্নাউয়ে বলেছেন যে সরকার গণমাধ্যম পরিষেবা আইন, ২০১৬ [4] সংশোধন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রথমবার পাঠের জন্যে সংশোধনী খসড়া আইনটি ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে সংসদে পেশ করা হবে।

সরকার ও রাষ্ট্রপতির সমালোচনাকারী সাংবাদিক, বিরোধী দল এবং মানবাধিকার কর্মীদের সেন্সর করার প্রয়াসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জন মাগুফুলির প্রশাসন ২০১৬ সালে গণমাধ্যম পরিষেবা আইন [4]টি প্রণয়ন করে। এই আইনটি তানজানিয়ার অনুস্বাক্ষরিত পূর্ব আফ্রিকীয় সম্প্রদায়ের (ইএসি) চুক্তিভিত্তিক বিচারিক সংস্থা পূর্ব আফ্রিকীয় ন্যায়ালয়ে (ইএসিজে) অধিকার কর্মীদের একটি যৌথ মামলা [5] দায়ের করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে  চারটি সংবাদপত্র [6] ও বেশ কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম মঞ্চ [7]কে স্থগিত করে। পূর্ব আফ্রিকীয় বিচার আদালত আবেদনকারীদের পক্ষে একটি যুগান্তকারী রায় [8] প্রদান করে। আদালত নির্ধারণ করেছে আইনের ১৩ ও ১৪ ধারা না করলেও বাকি ধারাগুলি ইএসিজে চুক্তি লঙ্ঘন করে বলে গণমাধ্যম পরিষেবা আইনটি যেন চুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় সেটা তানজানিয়া সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রকে নিশ্চিত করার নির্দেশ প্রদান করে।

রায়টির পরে গণমাধ্যম ভ্রাতৃত্বের অংশীজনদের দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্নকারী অসংখ্য ধারা সম্বলিত নিবর্তনমূলক আইনটির বড় ধরনের সংশোধনের জন্যে সরকারের উপর নিরলসভাবে সৃষ্ট চাপে [9]র ফল হিসেবে পর্যুদস্ত সরকার খসড়া আইনটি পর্যালোচনার [10] পথকে প্রশস্ত করেছে।

দেশের সংবাদ সংস্থাগুলির প্রধানদের স্থানীয় চাপ প্রদানকারী গোষ্ঠী তানজানিয়া সম্পাদক ফোরামের (টিইএফ) অভিযোগের পর ন্নাউয়ের ঘোষণায় সরকারের সুরের পরিবর্তন [11] দেখা যাচ্ছে। পূর্ববর্তী একটি গণমাধ্যম হালনাগাদে বর্তমান সংসদের “আঁটসাঁট বর্ষসুচি”র কারণে সংশোধনী খসড়া আইনটিকে পিছিয়ে দিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের পরবর্তী সংসদীয় অধিবেশনে পেশ করা হবে বলে সরকারের মুখপাত্র গেরসন সিগওয়া ইঙ্গিত [12] দেন।

সিগওয়ার মন্তব্য সরকারের মুখপাত্রের প্রকাশের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে টিইএফকে একটি বিবৃতি [13] দিতে প্ররোচিত করে, যাতে তারা চলতি সংসদ অধিবেশনে সরকারের খসড়া আইনটি উপস্থাপন করতে দেরী করার কারণটি যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করে। টিইএফ মনে করে এই পদক্ষেপটি সরকারের খসড়া আইনটি বাতিলের একটি অসাধু প্রচেষ্টাকে প্রকাশ করেছে।

মন্ত্রী ন্নাউয়ে স্পষ্ট করেছেন যে সংসদে উত্থাপনের জন্যে নির্ধারিত সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা খসড়া আইনটি শেষ মুহূর্তে বাতিলের ফলে সংসদে প্রথমবার পড়ার সময়সূচীতে খসড়া আইনটির জায়গা প্রশস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে গণমাধ্যম পরিষেবা খসড়া আইন উত্থাপনের বিষয়ে সরকারের এই উল্টো পথে হাঁটা।

মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সামিয়া সুলুহুর শপথ গ্রহণের [14] পর থেকে তানজানিয়া আইনি সংস্কারের পথে হাঁটছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রথম নীতি বক্তৃতায় সুলুহু তথ্য মন্ত্রণালয়কে গণমাধ্যম সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া [15]র নির্দেশ দেন। দার-এস-সালামের রাষ্ট্রীয় ভবনে নবনিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় তিনি বলেন, “আমি অনলাইন টিভি মঞ্চসহ কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল করার কথা শুনেছি। তাদের আবার খুলে দিন, আমাদের তাদের বলার সুযোগ দেওয়া উচিত নয় যে আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রোধ করছি। কিন্তু একবার খুলে গেলে তাদের সরকারি নিয়ম মেনে চলতে দিন।”

সুলুহুর সরকার ভিন্নমত দমনের কিছু আইন প্রত্যাহার করে প্রগতিশীলতা বাস্তবায়ন করে ধারাবাহিকভাবে পঞ্চম প্রশাসনের পশ্চাদপসরণের পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ইচ্ছা [16]র ইঙ্গিত দিয়েছে।

২০২২ সালে তানজানিয়ার সংসদ একটি ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা আইন [17] পাস করে দেশটিকে ডেটা সুরক্ষা আইন [18] থাকা তার পূর্ব আফ্রিকা সম্প্রদায়ের (ইএসি) সঙ্গী – কেনিয়া, উগান্ডা এবং রুয়ান্ডার পথ ধরেছে। আইনটি ১৯৭৭ সালের সংবিধানে [19] উল্লিখিত ব্যক্তির গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি সুলুহু একটি নতুন সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়া [20] শুরু এবং থেমে থাকা ২০১৪ সালের খসড়া সংবিধান [21]কে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে যথাসময়ে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ সংস্থা এবং সর্বস্তরের তানজানীয়দের নিয়ে গঠিত একটি কর্মদল প্রতিষ্ঠার কথা বলেন [20]বিশদ বিবরণ [22] দিয়ে চামা চা মাপিন্দুজির মতাদর্শ ও প্রচার সম্পাদক শাকা হামদু শাকা বলেন ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিন্দুজি দলের নতুন সাংবিধানিক সংস্কারের ধাক্কাটি দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ এবং রাজনৈতিক পুনর্মিলনকে বিজয়ী করার জন্যে রাষ্ট্রপতি সুলুহুর এজেন্ডার অংশ।

উপরন্তু তিনি দেশের বিচার বিভাগে দ্রুত বিচার পরিচালনার ক্ষমতার প্রতিবন্ধক হিসেবে প্রদর্শিত সমস্ত আইন পর্যালোচনা করার জন্যে সংশ্লিষ্ট সরকারের মন্ত্রণালয়গুলিকে নির্দেশ দেন [23]। এছাড়াও সুলুহুর সরকার তানজানিয়ার নির্বাচনী সংস্থা জাতীয় নির্বাচনী কমিশন (এনইসি) সংস্কার এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার আইন্গুলি সংশোধনের পথে যাত্রা শুরু করেছে৷

২০২১ সালে সামিয়া সুলুহু ২০২৫ সালের পঞ্চবার্ষিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার [24] ইচ্ছে প্রকাশের ঘোষণা স্পষ্টতই তার দলের সদস্যদের বিচলিত করে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাজধানী দোদোমায় অনুষ্ঠিত বিপ্লবী পার্টির (সিসিএম) ১০ম সাধারণ সভা [25]য় অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জাকায়া কিকওয়েতে সুলুহুর ইচ্ছেকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন। কিকওয়েতে বলেন অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় বলে কোন সিসিএম সদস্য ২০২৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের চেয়ারপারসন এবং রাষ্ট্রপতি সুলুহুকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। আর জিতলে সামিয়া হবেন দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী রাষ্ট্রপতি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনুমান [26] করেছে এখন পর্যন্ত শুধু রাজনৈতিক খেলা হিসেবে পরিকল্পিত সামিয়ার প্রস্তাবগুলো বিরোধীদলকে শক্তিশালী করলেও এগুলো আসন্ন নির্বাচনের জন্যে তার সমর্থক সংগ্রহ করছে।