রুয়ান্ডার ফুটবল ম্যাচে নারী রেফারির হয়রানি নারী কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে

Salima Mukansanga an international football referee from Rwanda. She became the first woman to referee at the African Cup of Nations & one of three women referees selected to officiate at the FIFA World Cup in 2022. Image Source; YouTube video screengrab

সালিমা মুকানসাঙ্গা রুয়ান্ডার একজন আন্তর্জাতিক ফুটবল রেফারি। তিনি আফ্রিকীয় জাতিগত কাপের প্রথম নারী রেফারি এবং ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালনের জন্যে নির্বাচিত তিনজন নারী রেফারির মধ্যে একজন। একটি ইউটিউব ভিডিওর পর্দাছবি

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সত্ত্বেও একজন নারী রেফারির প্রতি দুর্ব্যবহারের সাম্প্রতিক উদাহরণটি পুরুষ-শাসিত পেশায় এই নারীরা যে অসুবিধার সম্মুখীন হয় তার উপর আলোকপাত করে।

২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি তারিখে আফ্রিকার নারী ফুটবল রেফারিদের একজন সালিমা মুকানসাঙ্গা রুয়ান্ডায় কিয়োভু স্পোর্ট এবং গাসোগি ইউনাইটেডের মধ্যেকার একটি স্থানীয় ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন শারীরিক এবং মৌখিক লাঞ্ছনার শিকার হন৷ রুয়ান্ডায় ফুটবল গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী সমর্থক থাকা অংশগ্রহণকারী দল দু’টি প্রাইমাস জাতীয় লীগে খেলে।

মুকানসাঙ্গা পুরুষদের টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পালনকারী পথিকৃৎ নারী ফুটবল রেফারিদের একজন। আফ্রিকার প্রথম নারী ফুটবল রেফারি হিসেবে তিনি কাতারে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের সময় ইতিহাস তৈরি করেন।

এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত পুরুষদের মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা আফ্রিকা জাতিগত কাপে দায়িত্বপালনকারী প্রথম নারী তিনি। কিয়োভু স্পোর্ট এবং গাসোগি ইউনাইটেড খেলার সময় স্থানীয় জাতীয় লিগ এবং আন্তর্জাতিক খেলাগুলিতে তার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তাকে স্থানীয় ভক্তদের লক্ষ্যে পরিণত করে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে একদল কিয়োভু স্পোর্টস সমর্থক মুকানসাঙ্গা “একজন পতিতা” বলে বারবার স্লোগান দেয়

রুয়ান্ডা ফুটবল ফেডারেশন (এফইআরডাব্লিউএএফএ) এর কর্মকর্তা জুলেস কারাংওয়া-এর মতে খেলার পর সমর্থকদের শারীরিক সংঘর্ষ থেকে তাকে বাঁচাতে নিরাপত্তা কর্মীদের হস্তক্ষেপ করতে হয়। সামাজিক গণমাধ্যম পৃষ্ঠাগুলিতে ভক্তদের কর্মের নিন্দা জানিয়ে ফেডারেশন একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে:

১/৩ এফইআরডাব্লিউএএফএ ২০.০১.২০২৩ তারিখে @প্রাইমাসলিগের ১৬ তম ম্যাচে বুগেসেরা স্টেডিয়ামে গাসোগি ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলা চলাকালীন/পরে @এসসিকিয়োভুস্পোর্টসের সমর্থকদের প্রদর্শিত অপ্রীতিকর আচরণের নিন্দা করছে যেখানে কিছু অনুরাগীকে ম্যাচের রেফারিকে গালাগালি দিতে দেখা গেছে।

এই পদক্ষেপগুলি গত কয়েক বছরে আফ্রিকীয় ফুটবল রেফারিদের অর্জনের উপর একটি দুর্বল আলো ফেলেছে। সাম্প্রতিক অতীতে সর্বোচ্চ স্তরের খেলাগুলি আফ্রিকীয় রেফারি নারী ও পুরুষ উভয়েই পরিচালনা করেছে। নভেম্বরে ফিফা ২০২২ বিশ্বকাপে আফ্রিকীয় বংশোদ্ভুত ছয়জন রেফারি দায়িত্ব পালন করেছে। ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট, জাপানের ইয়ামাশিতা ইয়োশিমি, ব্রাজিলের নিউজা ব্যাক, মেক্সিকোর কারেন দিয়াজ মেদিনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিট এর সাথে মুকানসাঙ্গা মিলে ছয়জন নারী রেফারি খেলা পরিচালনা করেছে।

তুর্কি নারী ফুটবল রেফারি ডিকল ওজ। সিজি’র ছবি, সৃজনী সাধারণ একইরকম ভাগাভাগির অনুমতি ৪.০।

মুকানসাঙ্গার ঘটনাটি এখনো পুরুষদের আধিপত্য এবং পরিচালনায় থাকা ফুটবলে নতুন নয়। লাতিন আমেরিকাতেও একই অবস্থা হয়েছে। মেক্সিকোর নারী রেফারি মেলানি বার্মেজো বলেছেন, ২০১৬ সালে তিনি ফুটবল সমর্থকদের শারীরিক আক্রমণ, মৌখিক অপমান এবং ফ্লার্টেশনসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। সহকারী রেফারি লিক্সি এনরিকেজ বলেছেন, নারী রেফারিদের পুরুষ রেফারিদের তুলনায় দ্বিগুণ কষ্ট করতে হয়। তাকে সহকর্মী নারীদের কাছ থেকেও অপমান সহ্য করতে হয়। তারা তাকে “রান্নাঘরে ফিরে যেতে” বলেছিল।

২০১৬ সাল পর্যন্ত ফিফা ৭২০ জন নারী রেফারিকে নিবন্ধিত করে — লাইন এবং ভিডিও-সহকারী রেফারি (ভিএআর) মিলে যাদের ৩২৪ জন প্রধান এবং ৩৯৬ জন সহকারী রেফারি। কাতার প্রতিযোগিতায় টুর্নামেন্ট মানব ও নারী অধিকার সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়াতে ফিফার আরো বেশি নারীদের বিশ্বকাপসহ ফিফা-পরিচালিত প্রতিযোগিতা এবং আফ্রিকীয় জাতিসমূহের কাপ, এশিয়া কাপ এবং কোপা লিবার্তাদোসসহ মহাদেশীয় শিরোপাগুলি পরিচালনা করার অনুমতি ফিফার পক্ষ থেকে একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে কাজ করেছে

ফুটবলের পথিকৃৎ নারী রেফারি আফ্রিকার সুদানের মুনিরা রমাদান

ফুটবলের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে সুদানের মুনিরা রমাদান সম্ভবত সর্বপ্রথম ফুটবল খেলার নারী রেফারি যিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যেকার সুদানি ফুটবল লীগের খেলাগুলি পরিচালনা করেন। ফিফার নিবন্ধিত আন্তর্জাতিক ব্যাজ না থাকায় তার কৃতিত্বকে কখনোই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

রমাদান মাঠের শারীরিক খেলা ডিসকাস ও সাঁতারে অংশগ্রহণসহ অনেক ক্ষেত্রের প্রথম নারী। তিনি সুদানের জাতীয় বাস্কেটবল দলেও যোগ দিয়েছিলেন এবং একজন রেফারিও ছিলেন। তিনি  সারাবিশ্বে এবং আফ্রিকায় নারী রেফারিদের জন্যে মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। ২০১৯ সালে সুদানের একটি ত্রয়ী সর্বনারী রেফারিদল ২০১৯ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত আলজেরিয়া এবং শাদের মধ্যবর্তী অলিম্পিক গেমস বাছাইপর্বের দায়িত্ব পালন করে।

আফ্রিকীয় জাতিগত কাপের প্রথম সর্বনারী রেফারিদল

২০২২ সালে আফ্রিকীয় ফুটবল কনফেডারেশন ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত আফ্রিকীয় জাতিগিত কাপের জন্যে ক্যামেরুনের ক্যারিন আটেমজাবং এবং মরক্কোর ফাতিহা জেরমাউমির সাথে মুকানসাঙ্গাকে একজন সর্বনারী রেফারি হিসেবে ঘোষণা করে, যেখানে ভিডিও রেফারি ছিলেন মরক্কোর আরেক নারী বুক্রা কারবুবি।

২০২২ সালের নভেম্বরে কাতারে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নারীদের রেফারি হিসেবে বেছে নেওয়া হলে পুরুষদের খেলায় ফিফার নারী রেফারি নিয়োগের চর্চা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। ফিফা রেফারি কমিটির সভাপতি পিয়েরে লুইগি কোলিনা উল্লেখ করেছেন তাদের নারী হওয়ার বিষয়টি জনসাধারণের চোখে পড়লেও তাদের নির্বাচন কঠোরভাবেই ফুটবল কর্মকর্তা হিসেবে ছিল।

নারী রেফারিদের জড়িত করার ক্ষেত্রে ফিফার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ফুটবল লিগগুলি এখনো নারী রেফারিদের জায়গা দেওয়ার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .