২০২১ অভ্যুত্থানের দুই বছর পর মিয়ানমারের গণমাধ্যম: ‘প্রতিরোধ, সহনশীলতা, পুনরুদ্ধার’

Journalist in Myanmar after the coup

২০২১ সালে মিয়ানমারে অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ কভার করা একজন সাংবাদিকের ফাইল ছবি। কপিরাইট © ১৯৯৮-২০২০, আরএফএ। রেডিও মুক্ত এশিয়া, ২০২৫ এম সড়ক উত্তরপশ্চিম, স্যুট ৩০০, ওয়াসিংটন ডিসি ২০০৩০-এর অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

মিয়ানমারের সাংবাদিকরা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় প্রতিরোধ এবং বেসামরিক শাসন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জনগণের দাবির প্রমাণ রাখতে গিয়ে গত দুই বছরে অসাধারণ চ্যালেঞ্জ এবং অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে।

এটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান আয়োজিত বিশেষ ব্যাখ্যার সারসংক্ষেপ। মিজিমা নিউজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সোয়ে মিন্ট এবংমুক্ত সাংবাদিক থিন লেই উইন আইপিআইয়ের সাথে যুক্ত হয়ে উভয়েই জান্তার মিথ্যার বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে।

থিন জান্তাকে অস্ত্র ও সম্পদবিশিষ্ট জনগণের একটি ছোট দল হিসাবে উল্লেখ করেছেন যাদের কাছ থেকে জনগণের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মুক্ত হতে চায়। সোয়ে আরো বলেন যে জরুরী অবস্থার সম্প্রসারণ সামরিক শক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতার অভাব সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।

গণতন্ত্রপন্থী বাহিনী এবং জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি সারাদেশে নেমে পড়ায়  বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও জান্তা কার্যকরভাবে শাসন করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে অভ্যুত্থান বার্ষিকীর সময় সফল “নীরব ধর্মঘট”  ব্যাপকভাবে জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে একটি উচ্চকিত প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাস্তায় বেরোতে অস্বীকার করে জনগণ প্রতিবাদ করেছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে মিয়ানমারের জনগণ নীরব ধর্মঘট পালন করায় বুধবার প্রধান শহরগুলোতে রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ে। সরকার দুপুরে ইয়াঙ্গুন নগর মিলনায়তনের বাইরে সামরিক সমর্থকদের সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। #মিয়ানমারে_কী_হচ্ছে

নাগরিক সাংবাদিক এবং স্বাধীন গণমাধ্যম নেটওয়া্রর কর্মীরা অনেক ঝুঁকি সহ্য করে রাজনৈতিক সংকট নথিভুক্ত করছে। জান্তা প্রতিরোধের প্রতিবেদন করায় কমপক্ষে ১৩০ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্তত ৭২ জন বন্দি হয়েছে যাদের জান্তা-নিযুক্ত আদালত কঠোর দণ্ড দিতে পারে।

অনলাইন ব্যাক্যা চলার সময় থিন প্রতিরোধের সম্মুখ সারি থেকে প্রতিবেদন করা সাংবাদিকদের কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলেন। গণতন্ত্রপন্থী শক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল বলে সন্দেহভাজনদের রাষ্ট্রীয় প্রতিশোধের হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি তাদের পরিবারগুলোও সামরিক বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

হঠাৎ করে বিজ্ঞাপন, গ্রাহক এবং ভর্তুকি হারিয়ে গণমাধ্যম সংস্থাগুলির ব্যবসায়িক রাজস্ব কমানোর পাশাপাশি সংবাদের কাজকে দুর্বল করেছে। পাঠকদের সামরিক শাসনের সমালোচনামূলক বলে অভিযুক্ত সংবাদ সংস্থাগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করতে দেখা যায়নি।

দেশ থেকে পালাতে বা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ গণমাধ্যম কোম্পানি প্রত্যাহারকৃত অনুমোদন নিয়েই কাজ করছে। এই প্রতিকূলতা ও রাষ্ট্রীয় দমনাভিযানের ক্রমাগত হুমকির মুখে জান্তা ও চলমান আইন অমান্য আন্দোলন সম্পর্কে জনগণকে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সরবরাহ করে চলায় মিয়ানমারের স্বাধীন গণমাধ্যম আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

সোয়ে সমাধান-ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনের জন্যে উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল উপায় গ্রহণ করায় মিজিমার পাঠক বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। থিন শুধু সংঘাত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপর দৃষ্টি দিয়ে সংবাদ কভারেজ টিকিয়ে রাখার অসুবিধা ব্যাখ্যা করে জলবায়ু অবিচার, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং জান্তার সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের মতো বিশ্বব্যাপী দর্শকদের সাথে অনুরণিত থিমের একটি বিস্তৃত দৃশ্যপট গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

অভ্যুত্থানের পর অবিরাম আক্রমণে আত্মসমর্পনের পরিবর্তে সাংবাদিকরা তাদের কাজ অব্যহত রাখে। সোয়ের বর্ণনা মতে তারা মিয়ানমারের নাগরিকদের এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করার নীতি “প্রতিরোধ, সহনশীলতা, পুনরুদ্ধার” এর প্রতীক হয়ে উঠেছে।

স্বাধীন গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকদের নিখোঁজ ও নিহত হওয়া থামা উচিত… কিন্তু দুই বছর পরে আমরা অভ্যুত্থানের আগের চেয়েও বেশি কিছু করতে পেরেছি। সেটা হলো সহনশীলতা।

জান্তা ক্ষমতায় নিজেকে স্থায়ী করার জন্যে আরো মরিয়া হয়ে উঠায় থিন এবং সোয়ে দেশে যা ঘটছে, বিশেষ করে গণমাধ্যমের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ কাজটির উপর আলোকপাত করার জন্যে বৈশ্বিক সংহতির ভূমিকার উপর জোর দেন। আইপিআই আয়োজিত বিশেষ ব্যাখ্যায় এই দিকটি প্রতিধ্বনিত হয়। “বিশ্বব্যাপী চলমান নানা সংকটের মধ্যে মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনাবলী থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে দেশটির সাংবাদিকদের সমর্থন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।”

থিনের হিসেবে এর জন্যে জান্তার সাথে সারা দেশের সম্প্রদায় ও প্রত্যন্ত গ্রামের বিরুদ্ধে সশস্ত্রীকরণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া বিদেশী সরকার ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির একটি সম্পৃক্ততাও প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবাধিকারের মানদণ্ড মেনে চলার দাবি করা দেশগুলিকে এবিষয়ে কিছু করার জন্যে মিয়ানমার সরকারের কাছে তাদের প্রযুক্তিগুলি বিক্রি করা হলেও তা আর কার্যকর হবে না বলে নিশ্চিত করাতে হবে।

সোয়ে জান্তা প্রতিবার ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার পর মিয়ানমার যাতে নীরব বা অদৃশ্য না হয়ে যায় সেজন্যে যোগাযোগ সুবিধার বিকল্প মাধ্যম স্থাপন করার জন্যে বৈশ্বিক অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সোয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং অর্থদাতাদেরকে মিয়ানমারকে তাদের নজরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেক্ষাপটের প্রতি মনোযোগের অভাব শুধু সুশীল সমাজ গোষ্ঠী, রাজনৈতিক কর্মী এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় অর্থায়নের সহায়তাকে উস্কে দিয়েছে। দাতাদের প্রতি সাম্প্রতিক একটি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানে মিজিমা জোর দিয়ে বলেছে, “দাতাদের মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে না পারা দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমকে পূর্ণ প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত করছে… মিয়ানমারের স্বাধীন গণমাধ্যমে বিনিয়োগ অভ্যন্তরীণভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে একেবারেই সামান্য প্রণোদনার অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাক স্বাধীনতাকে সক্ষম করছে।”

জান্তা চায় বিশ্ব মিয়ানমারকে ভুলে যাক বলে থিন এবং সোয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে এই অশুভ লক্ষ্যকে পরাস্ত করার সর্বোত্তম উপায় হলো স্থানীয় কণ্ঠস্বর আরো বাড়ানো। প্রকৃতপক্ষে, সামরিক শাসন নির্মমভাবে ভিন্নমতকে থামিয়ে দিলেও মিয়ানমারের জনগণ সেন্সর এড়াতে কাল্পনিক উপায় খুঁজে পেয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, থিন জান্তার লাগামহীন সহিংসতার মধ্যে অধ্যবসায়ের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে লেখা ইয়াঙ্গুনের একজন সাংবাদিকের একটি অনলাইন ডায়েরি থেকে এই শক্তিশালী উদ্ধৃতিটি ভাগাভাগি করেছেন।

“একটি সাক্ষাৎকারের পরে লোকেরা আমাকে তাদের গল্পগুলি ভাগাভাগি করার সুযোগের জন্যে কৃতজ্ঞতা জানালে আমি একইসাথে দু:খিত এবং খুশি হই। এই কাজের মাধ্যমে আমি অন্তত অন্যায়ভাবে নির্যাতিত মানুষেদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করতে পারি। আমি এই মানসিকতা ও শক্তি দিয়ে আমার যাত্রা চালিয়ে যাবো।”

“তাই দুঃস্বপ্ন আসতে দিন. আমি তাদের জয় করবো।”

“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি অব্যহত রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদন করা সাহসী সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে হবে,” ব্রিফিংয়ের পরে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে আইপিআই  এর উপ-পরিচালক স্কট গ্রিফেন বলেছেন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .