- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সার্বিয়ায় গণনজরদারির ভবিষ্যৎ কী?

বিষয়বস্তু: পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ, সার্বিয়া, আইন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, ব্যবসা ও অর্থনীতি, মানবাধিকার, সরকার, দ্যা ব্রিজ (সেতুবন্ধন)
[1]

আনা তস্কি্চ ক্লেতিনোভিচ এলএলএমের ছবি, লেখকের সৌজন্যে পাওয়া এবং অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

সুশীল সমাজ সংগঠন ডিজিটাল আলোচনায় ক্রমবর্ধমান নাগরিক সম্পৃক্ততা (আইসিইডিএ) [2] নেটওয়ার্কের সদস্য সার্বিয়ার গণতান্ত্রিক পরিবর্তন [3] এর নির্বাহী পরিচালক আনা তস্কিচ ক্লেতিনোভিচ এই নিবন্ধটি লিখেছেন ৷ গ্লোবাল ভয়েসেস অনুমতি নিয়ে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ পুনরায় প্রকাশ করেছে।

 “আধুনিক কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র শাসনের জন্যে গোপনীয়তার উপর নির্ভর করলেও অন্যান্য সব গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে উচ্চ নজরদারি ও উন্মোচনের উপর নির্ভর করে। গণতান্ত্রিক সমাজ সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রচারের উপর নির্ভর করে এবং গোষ্ঠী ও ব্যক্তি জীবনের রক্ষাকবচ হিসেবে গোপনীয়তার উপর নির্ভর করে।”- অ্যালান ওয়েস্টিন, ১৯৬৭

২০২২ সালের ডিসেম্বরে, সার্বীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র বিষয়ক একটি আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে। বিগত ১৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্যভাবে পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব, পুলিশী কর্মকাণ্ড ও পুলিশের উপর রাজনৈতিক প্রভাব [4] বৃদ্ধি এবং সার্বিয়াতে গণবায়োমেট্রিক নজরদারি [5]র আইনি ভিত্তি চালু করার এই আইনটি প্রস্তাব করেছে।

অবশ্য ১৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার [6] খসড়া আইনটি আইনি প্রক্রিয়া থেকে প্রত্যাহারও করা হয়। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি আলেকসান্দার ভুসিচ এটা করার [7] সময় (সার্বিয়া সেই সময়ে আরেক দফা জাতীয় নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে) এই আইনের জন্যে রাজনৈতিক গতি সঠিক নয় বলে ব্যাখ্যা করলেও এবার প্রধানমন্ত্রী আনা ব্রনাবিচ এর প্রত্যাহার শুরু করেন [8]। তিনি আইনটির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক সকল অংশীজনদের যুক্ত করে একটি বিস্তৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরামর্শ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

স্বরাষ্ট্র বিষয়ক আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা দু’টির পরে সার্বীয় এবং আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ সংস্থার বেশিরভাগ গণবায়োমেট্রিক নজরদারির বিধানের বিষয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও ২০১৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মুখ সনাক্তকরণ সফটওয়্যারের সাথে যুক্ত বায়োমেট্রিক ক্যামেরা [9]র পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় গাড়ির নম্বরপ্লেট সনাক্তকরণ ব্যবস্থা দিয়ে সারা বেলগ্রেড শহর ঢেকে ফেলার ঘোষণা দেওয়ার পর তাদের সংগ্রাম শুরু হয়। সার্বিয়া এই স্বল্প-পরীক্ষিত নজরদারি ব্যবস্থাটি ব্যবহারপূর্ব প্রতিষ্ঠিত কোন আইনি ভিত্তি ছাড়াই ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও আনুপাতিকতা নির্ধারণ, বা এমনকি এই ধরনের হস্তক্ষেপকারী প্রযুক্তির ব্যবহার নাগরিকদের অধিকারের উপর কী প্রভাব ফেলবে তার মূল্যায়ন পরিচালনা না করেই একটি গোপন চুক্তির মাধ্যমে চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে [10]র কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। জনঅনুসন্ধ্যিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিক্রিয়া তখন থেকে একইরকম: ক্যামেরা চালু করা হলেও মুখ সনাক্তকরণ সফ্টওয়্যার সংগ্রহ করা হয়নি, এবং এগুলোতে সাধারণ ভিডিও নজরদারির (সিসিটিভি) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

চার বছর পর স্পষ্ট প্রতীয়মান যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সার্বীয় সরকার এখনো এই জাতীয় আক্রমণাত্মক নাগরিক নজরদারি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের হাল ছাড়েনি। জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ব্রনাবিচ সমালোচিত বিধানগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্যে নাগরিক সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের একত্রিত করে বৈঠকের আয়োজন করেন। আইন প্রণয়নের সঠিক সময়সীমা এখনো নির্ধারণ করা না হলেও এটা নিশ্চিত যে (সম্ভবত রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক সময়ে) একটি নতুন খসড়া আইন হাজির হয়ে আমাদের কর্তৃপক্ষের বহু বছরের চিন্তা বাস্তবায়নের একটি আইনি ভিত্তি প্রদানের চেষ্টা করবে।

কিন্তু এই ব্যবস্থাটির মধ্যে এতো আকর্ষণীয় কী রয়েছে যে প্রাথমিকভাবে এমনকি স্বয়ংক্রিয় মুখ সনাক্তকরণ ক্যামেরা চালু এবং ব্যবহারকে বৈধ করার কোন বিধান তৈরি না করেও তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সার্বীয় কর্তৃপক্ষ এটা কার্যকর করার চেষ্টা করছে?

সত্যিকার অর্থে প্রাথমিকভাবে কিছু অপরাধ প্রতিরোধ এবং তাদের অপরাধীদের বিচার করতে সারাবিশ্বের সরকারগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে বায়োমেট্রিক নজরদারি ব্যবহার করছে। তবে তুলনামূলক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে এই ব্যবস্থাটি ক্ষুদ্র কিছু অপরাধ দমনে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে প্রকাশ্য স্থানে ক্যামেরা কোন প্রতিবন্ধকতা নয়। সার্বিয়ায় অপরাধের অবস্থা, আমাদের সমাজ কতটা (অ)নিরাপদ, এবং কেন বায়োমেট্রিক নজরদারি আমাদের নিরাপত্তায় অবদান রাখতে হবে তা দেখানোর জন্যে কোন বিস্তৃত বিশ্লেষণ দেওয়া হয়নি।

তুলনামূলক অভিজ্ঞতা বায়োমেট্রিক নজরদারির অনেক নেতিবাচক প্রভাব প্রদর্শনের বাস্তবতা বিবেচনায় পরবর্তীটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যবস্থাটি নিজেই নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারের একটি স্থায়ী সীমাবদ্ধতা বোঝালেও সমস্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। ভুল সনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থার ত্রুটি ভুল প্রমাণের দিকে ধাবিত করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালগরিদম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের সন্দেহজনক চিহ্নিত করতে  এবং কিছু দেশের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের মোকাবিলা করার জন্যে এই ব্যবস্থাটি ব্যবহার করেছে। শেষ পর্যন্ত গবেষণায় প্রকাশ্য স্থানে এই প্রযুক্তির প্রয়োগের একটি শীতল প্রভাব দেখা গেছে। ক্রমাগত নজরদারির মধ্যে থাকার কথা জেনে নাগরিকরা যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ,রাজনৈতিক সমাবেশে অংশগ্রহণ বা অন্যান্য জায়গায় তাদের মতামত এবং বিশ্বাস প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে।

এগুলোর সবই বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ এবং বাস্তবায়ন পরিচালনা করার বিধান – কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আইনের খসড়া তৈরিতে ব্যস্ত [11] ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি নিবিড় বিতর্কের বিষয়। আইনটির চূড়ান্ত সংস্করণ কেমন হবে তা এখনো অনিশ্চিত হলেও সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সুরক্ষা গোষ্ঠী এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় সংসদ সদস্যরা বায়োমেট্রিক নজরদারি নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছে [12]

এই সমস্ত কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের তাড়াহুড়ো করে সার্বিয়াতে বায়োমেট্রিক নজরদারি চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া উচিৎ নয়। তড়িঘড়ি, অস্বচ্ছ এবং হঠকারী সমাধানের পরিবর্তে আমাদের এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজন কিনা, আমরা এটা দিয়ে কী অর্জন করতে চাই এবং অবশেষে একটি সম্প্রদায় হিসেবে আমরা স্থায়ীভাবে আমাদের স্বাধীনতার অংশ ছেড়ে দিতে প্রস্তুত কিনা, সে বিষয়ে একটি অর্থপূর্ণ বিতর্কের প্রয়োজন।