- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিশোধিত জল প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলবে জাপান, দূষণের আশঙ্কা

বিষয়বস্তু: ওশেনিয়া, পূর্ব এশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, ফিজি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দুর্যোগ, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, প্রতিবাদ, বিজ্ঞান, ভ্রমণ, রাজনীতি, সরকার, Green Voices
Fukushima Daiichi Nuclear Power Plant. [1]

ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবির কৃতজ্ঞতা: ডিন ক্যালমা/ আইএইএ। সূত্র [1]: ফ্লিকার। (সৃজনী সাধারণ অনুমতি ২.০ [2])

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ বিভিন্ন দেশ, এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ, বিজ্ঞানীরা এবং অন্যান্যরা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাজার হাজার টন দূষিত বর্জ্য জল সমুদ্রে ফেলার পরিকল্পনা অনুমোদনের সমালোচনা করেছে [3]৷ পরবর্তী তিন দশক ধরে চলমান ভিত্তিতে প্রায় ১৩ লক্ষ টন জল নিষ্কাশনের সময়সূচী নির্ধারণের পরিকল্পনা নিকটবর্তী সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং তাদের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব [4] পড়তে পারে বলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায় আতঙ্কিত।

দূষিত জল ফেলার পরিকল্পনার হালনাগাদ পেতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ফুকুশিমা পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের পর আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পারমাণবিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক এবং টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান গুস্তাভো কারুসো পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছেন। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে আইএইএ বলে যে তারা “পারমাণবিক শক্তির সুরক্ষিত, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ ব্যবহার” প্রচার করে, যার মধ্যে পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্পত্তিও অন্তর্ভূক্ত।

“[জাপানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ] আইএইএ নিরাপত্তা মানদণ্ডসহ […] প্রক্রিয়াকরণকৃত জল নিষ্কাশন সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রক পরিকল্পনাগুলি সাজানোর পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রমাণ প্রস্তুত করেছে,” সফর পরবর্তী একটি বিবৃতিতে [5] ক্যারুসো বলেছেন৷ আইএইএ এর বিবৃতি অনুসারে “যেকোন – এই বছরের জন্য নির্ধারিত – জল নিষ্কাশন শুরুর আগে আইএইএ সেই সময়ে পরিচালিত পর্যালোচনার সমস্ত দিক জুড়ে টাস্ক ফোর্সের সংগৃহীত ফলাফল এবং উপসংহার সম্বলিত একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।”

২০১১ সালের মার্চ মাসে সংঘটিত একটি ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে একটি পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে। বিদ্যুৎ বিঘ্নের কারণে জরুরী জেনারেটর ব্যর্থ হলে তিনটি পারমাণবিক চুল্লী অকুস্থলে শীতলীকরণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে একটি কোর গলে যায়।

স্থাপনার নীচের ভূগর্ভস্থ জলসহ চুল্লি ঠাণ্ডা করার জল তেজস্ক্রিয় পদার্থে দূষিত হয়ে ওঠে। অকুস্থলেই এই জল ২০১১ সাল থেকে কয়েক ডজন বিশাল সংরক্ষণ আধারে সংগ্রহ ও শোধন করে রাখার পর এখন পারমাণবিক স্থাপনাটিতে জড়ো করা হয়েছে।

২০২১ সাল থেকে, টোকিও বিদ্যুৎ শক্তি কোম্পানি (টিইপিসিও) অগ্রসর তরল প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা (এএলপিএস) নামের একটি প্রক্রিয়া [6]য় ফুকুশিমার পরিশোধিত জলের “নিরাপদ” নিষ্কাশনের অবকাঠামো প্রস্তুত করছে [7]। ২০২২ সালের আগস্টে টিইপিসিও জাপানি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে পরামর্শ করে জল নিষ্কাশনের সুযোগসম্পন্ন সুবিধা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে [8]। এটি জলের পদ্ধতিগত নিষ্কাশন এবং এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করার জন্যে বিভিন্ন অংশীজনের সাথে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে:

প্রত্যাহার কর্মের অংশ হিসেবে আমরা জাপানের ভেতরের এবং বাইরের পক্ষগুলির কাছে আমাদের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ভিত্তিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার উপর দৃষ্টি রেখে, সহজবোধ্য করে জনসাধারণের উদ্বেগ ও মতামত শোনার এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করার প্রতিটি সুযোগ গ্রহণ করে, এলপিএস পরিশোধিত জল পরিচালনার বিষয়ে ফুকুশিমা এবং সমাজের মানুষের বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ফোরামের (পিআইএফ) মহাসচিব হেনরি পুনা জাপানের ফুকুশিমার পরিশোধিত জল প্রশান্ত মহাসাগরে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনার আঞ্চলিক বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন [9]:

পারমাণবিক দূষণ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে, এই সময়ে মহাসাগরে নিষ্কাশন পরিকল্পনা চালিয়ে যাওয়া এককথায় অকল্পনীয় এবং আমাদের চার দশক ধরে ‘এটা করার’ মতো অফুরন্ত সময় নেই।

মহাসাগরে নিষ্কাশনের যেকোন সিদ্ধান্ত শুধু জাপানের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় এবং হওয়াও উচিত নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষণের প্রয়োজনীয়তাসম্পন্ন একটি বৈশ্বিক এবং বহুজাতিক সমস্যা।

কয়েক দশক আগে আমাদের অঞ্চল এবং মহাসাগরকে পারমাণবিক পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করার সময় আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণের যে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না আজকে আমি তা জিজ্ঞেস করছি।

পিআইএফ “নিরাপদ সংরক্ষণ এবং তেজস্ক্রিয় ক্ষয়, জৈবনিরাময়, এবং বিশেষ ব্যবহারের জন্যে কংক্রিট তৈরিতে পরিশোধিত জলের ব্যবহার” এর মতো বিকল্প ব্যবস্থা বের করেছে।

ফোরাম মহাসচিব হেনরি পুনা: ‘আমরা প্রস্তাবিত মহাসাগর নিষ্কাশনের বিষয়ে গুরুতর তথ্য বিচ্যুতি এবং সাংঘাতিক উদ্বেগ উন্মোচন করেছি। সহজ কথায় কোনো মহাসাগরে নিষ্কাশনের অনুমতি দেওয়ার আগে আরো তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন।’

নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা জাপানের পরিকল্পনাকে “পারমাণবিক ঔপনিবেশিক সহিংসতা [12]“র বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন:

টিইপিসিও এবং জাপানী সরকারের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জল প্রশান্ত মহাসাগরে নিষ্কাশনের পরিকল্পনা মহাসাগরের উপর নির্ভরশীল প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।

আমরা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জল নিষ্কাশন প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণ, সামুদ্রিক জীব এবং স্থানগুলির জন্যে যে ক্ষতির কারণ হবে তার প্রকৃতি ও পরিমাণকে তুচ্ছ প্রতিপন্ন করার জন্যে জাপান সরকার ও টিইপিসিও এর প্রচেষ্টার নিন্দা জানাই।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুশীল সমাজ গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সমতার জন্যে ডিভা এর নোলেন নাবুলিভাউ মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করার জন্যে জাপানি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন [13]:

প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণের জীবিকা এবং আমরা যে পরিবেশের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল তার জন্যে হুমকিস্বরূপ বলে এই নির্মাণের অনুমোদনের জন্যে জাপানের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। আর এর সবই ঘটছে আমাদের তৈরি না করা জলবায়ু জরুরি অবস্থাজনিত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাপানের বিতর্কিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” এবং “স্বার্থপর” বলে অভিহিত করেছে [14]। এদিকে সামুদ্রিক গবেষণাগারের মার্কিন জাতীয় সমিতি “জাপানের নিরাপত্তার দাবিকে সমর্থন করে পর্যাপ্ত এবং সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের অভাব” উল্লেখ করেছে [15]। মানোয়াস্থ হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী রবার্ট রিচমন্ড উল্লেখ করেছেন [15] “বর্জ্য ফেলার জন্যে মহাসাগরের অব্যাহত ব্যবহার একেবারেই টেকসই নয় বলে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ঐকমত্য রয়েছে।”

ফুকুশিমা পারমাণবিক স্থাপনার পার্শ্ববর্তী শহর ইওয়াকির একজন পৌর ​​কাউন্সিলর সাতো কাজুয়োশি [16] দূষিত পানি নিষ্কাশনের স্থানীয় বিরোধিতা [17]কে সমর্থন করেছেন। একটি ফেসবুক পোস্টে সাতো বলেছেন:

ইওয়াকি শহরের প্রবেশদ্বারের নিকটবর্তী ওনাহামা বন্দরে ১৩ জানুয়ারি তারিখে ‘মহাসাগরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষিত জল নিষ্কাশনের বিরুদ্ধে ইওয়াকি নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে আমরা একটি সমাবেশ করেছি। আগের দিন সরকারের মন্ত্রীরা ‘বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত’ (দূষিত জল) নিষ্কাশনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে এই বছরের শুরুর সমাবেশটি হয়েছে।

‘মহাসাগরকে আর দূষিত করবেন না!’ ব্যানারে ২০২১ সালের জুন থেকে আমরা প্রতি মাসের ১৩ তারিখে একটি করে সমাবেশ করে আসছি।

দুপুরবেলা আমি ইওয়াকি থেকে নারায় চলে আসা ভাস্কর আইসাকু আন্দোর একটি অলঙ্কৃত ব্যানার এবং মহাসাগরে দূষিত পানি ঢালবেন না’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম! প্রায় ২০ জন অংশগ্রহণকারী তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের আবেগপ্রবণ বক্তৃতায় বলে যে তারা দূষিত পানি সাগরে ছাড়তে দেবে না। আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্যে কানাডা থেকে ফিরে আসা একজন জাপানি নাগরিক মহাসাগরে দূষিত জল নিষ্কাশনের বিরোধিতার আন্তর্জাতিক বিস্তৃতি প্রদর্শন করেছেন।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কর্মরত টিইপিসিও ফুকুশিমাতে করা নিরাপত্তা পদ্ধতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।প্রায় তিন মাসের মধ্যে পরিশোধিত জলের প্রকৃত নিষ্কাশনের আগে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে আইএইএ জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছে [5]

Fukushima Nuclear Power Plant [8]

ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। জো মোরোসের ছবি। সূত্র [18]: উইকিপিডিয়া, (সৃজনী সাধারণ অনুমতি ৪.০ [19])