- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সুরিনামের মৎস্য সম্পদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে এখনি কিছু করা দরকার

বিষয়বস্তু: ক্যারিবিয়ান, সুরিনাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, ব্যবসা ও অর্থনীতি, রাজনীতি
[1]

সুরিনামের বিগি পানে তেলাপিয়া মাছ শিকার। ফ্লিকারে জেভিএল এর ছবি [1] (সৃজনী সাধারণ অনুমতি ২.০ [2])।

By প্রিসিলা মিসিয়েকাবা-কিয়া

ক্যারি-বোইস পরিবেশ সংবাদ নেটওয়ার্কে প্রথম প্রকাশিত [3] এই গল্পটি জলবায়ু অনুসরণ [4] এবং ক্রপার ফাউন্ডেশন [5] এর ক্যারিবীয় নাগরিক সাংবাদিকতা ফেলোশিপে [6]র সহায়তায় প্রকাশিত হয়। একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করে নেওয়ার চুক্তির অংশ হিসেবে নিবন্ধটির একটি সংস্করণ নীচে পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে।

উষ্ণ তাপমাত্রা বন্য মাছের স্থিতির প্রাচুর্য, চলাচলের ধরন এবং মৃত্যুর হারের পাশাপাশি নির্দিষ্ট জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতি চাষকে প্রভাবিত করে [7] বলে জলবায়ু পরিবর্তন মাছ এবং এদের আবাসস্থলকে প্রভাবিত করে। মৎস্য ও জলজ চাষের উপর নির্ভরশীলরাও এই জলবায়ু প্রভাবের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত হবে। সুরিনামে অপর্যাপ্ত প্রতিবেদন, অতিরিক্ত শিকার এবং অবৈধতার মতো বিষয়গুলি দেশের মৎস্য শিল্পের জন্যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করাটা কঠিন।

মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপ-পরিচালক জোজিন্দ্র অর্জুন বলেন, এলাকা জুড়ে মাছ পাওয়ার পরিমাণ কমেছে। মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (ভিএমপি) ২০২১-২০২৫ অনুসারে ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মাছ নামার পরিমাণ ৬,৬৭১ টন থেকে বেড়ে ৩৯,৯৯৩ টন হলেও ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে তা তীব্রভাবে কমে প্রায় ২৪,০০০ টনে নেমে এসেছে।

ক্ষুদ্র মৎস্য শিকারীদের বহরের মৎস্য অবতরণের নথিভুক্ত তথ্য না থাকার কারণে এই হ্রাস হতে পারে। সুরিনামের বাইরে মৎস্য অবতরণের কম প্রতিবেদন দেখেও এটি ব্যাখ্যা করা গেলেও কৃষি, পশুপালন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের মৎস্য সম্পদ উপ-বিভাগের পক্ষে এটি জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত কিনা তা নির্ধারণ করা কঠিন। অর্জুন বলেছেন সুরিনামে এটা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।

“গবেষণা ব্যয়বহুল এবং গবেষণা করার জন্যে প্রয়োজনীয় সুবিধাদি থাকা দরকার। উপকূল থেকে দূরবর্তী মাছের প্রজাতির গঠনের তথ্য ১৯৮০’র দশকের, তারপর থেকে কোন জরিপ হয়নি,” তিনি বলেন।

২০২২ সালের ৪ অক্টোবর তারিখে নেটওয়ার্কিং সংস্থা কেনিসক্রিং আয়োজিত মৎস্য এবং মৎস্য শিকারের অনুমতি সম্পর্কে একটি ওয়েব সেমিনার চলাকালে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যমন্ত্রী পরমানন্দ সিউদিয়েন বলেন জলবায়ু পরিবর্তনই সুরিনামের সিবব [8] চিংড়ি ফিশারিতে মাছ পাওয়া কমে যাওয়ার কারণ।

বিগত ১৫ থেকে ২০ বছরে মাছ পাওয়া মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও মাছ ধরার চেষ্টা কমে যাওয়ার কথা বাদ দিলে তা গত দুই বছরে লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে, তাই অর্জুনের দৃষ্টিতে, অতিরিক্ত মাছ ধরার কোন প্রশ্নই আসে না। ” মাছ পাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে,” তিনি বলেন। “তাই জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।”

সুরিনাম সামুদ্রিক খাদ্য সমিতির (এসএসএ) সভাপতি উদো কার্গ বলেছেন সংস্থাটি কিছুদিন ধরে বায়োমাস বা জৈবসমষ্টি সমীক্ষার জন্যে চাপ দিচ্ছে। এই গবেষণায় আড়াই বছর সময় লাগবে এবং খরচ হবে ২অ থেকে ৩০ লক্ষ ডলার (প্রায় ২১ থেকে ৩২ কোটি টাকা)। মাছ ধরার জন্যে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ ডলার (প্রায় ১১ কোটি টাকা) লাইসেন্স ফি দেওয়া সমিতির সদস্যরা বলছে যে এসব সম্পদ মৎস্য সম্পদের উপর সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব গবেষণার জন্যে ব্যবহার করা হবে।

কার্গের মতে, এখন মাছ ধরা কমে যাওয়ার একটা বড় অংশের জন্যে দায়ী [9] গায়ানার অবৈধ মৎস্য শিকার কার্যকলাপ। সুরিনাম সরকার গায়ানার সাথে একটি মৎস্য চুক্তি – যা তিনি সমর্থন করেন না – সম্ভাব্য বাস্তবায়নের কথা বলছে [10] বলে সমস্যাটি নিয়ে আরো বিতর্ক রয়েছে।

সমিতির সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো সবকিছু একসময় শেষ হয়ে যাবে। কার্গ বলেন সুরিনাম মৎস্য সম্পদকে আরো নির্ভরযোগ্য সম্পদে পরিণত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে [11]। তিনি বলেন, সুরিনামের বেশিরভাগ জেলে বিদ্যমান অনেক নিয়ম মেনে চললেও  তারা কিছু কিছু নিয়ম এখনো গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। “আমরা দুর্বলভাবে এসব লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া জানাই বলে এর ধারাবাহিকতা নিয়ে একটি বিশাল উদ্বেগ রয়েছে,” তিনি ব্যাখ্যা করেন।

আকাশ শীতল একজন দ্বিতীয় প্রজন্মের জেলে যিনি তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে ব্যবসার দায়িত্ব নিয়েছেন। সুরিনামের উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ (এসকে) খোলা নৌকা দিয়ে ব্যাং ব্যাং (সাইনোসিয়ন আকুপা [12]), কান্দ্রাটিকি (সাইনোসিয়ন ভাইরেসেন্স [13]), কোপিলা (আরিয়াস প্রুপস [14]), এবং তার্পন [15] মাছ ধরে এবং তিনি সেখানে কাজ করেন। তিনি প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার কথা বলেন।

“সমুদ্র সমতলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ফলে আমরা মাছের প্রজননক্ষেত্রের ক্ষতি দেখেছি। মাছ তাই অন্য প্রজননক্ষেত্র  খুঁজতে গিয়ে দূরে সরে যায়,” শীতল ব্যাখ্যা করেন। একটি তুলনা করে তিনি বলেন ১৯৮০’র দশকে নৌযানগুলি ১২ মিটার (প্রায় ৪০ ফুট) লম্বা এবং ছোট ইঞ্জিনবিশিষ্ট ছিল। এখন আরো উত্তাল জলের সাথে লড়াই এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে বড় নৌযান কিনতে হবে।

শীতল বলেন, ১৯৮০’র দশক থেকে ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে, একটি জাহাজ ১০০-২০০ ব্যাং ব্যাং এর পাশাপাশি কিছু কান্দ্রা, কোপিলা এবং টারপন ধরতে সমুদ্রে প্রায় ছয় থেকে আট দিন কাটাতো। এখন তারা ১৫-২১ দিন সমুদ্রে থকেও মাঝে মাঝে হতাশাজনক ফলাফল পায়: “আমরা ৬০ থেকে ৭০ হাজার সুরিনামী ডলার (প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা) খরচের কথা বলছি যা আপনি পুষিয়ে নিতে পারবেন না৷”

কেনিসক্রিংএর অক্টোবর ২০২২ সংস্করণে মন্ত্রী সেউদিয়ান এসকে ফিশারির মধ্যে অতিরিক্ত মাছ ধরার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শীতলও এ ব্যাপারে সচেতন। “আমার বাবা যখন [এসকে] শুরুর সময় আমাদের জাহাজের যে বহর ছিল তার সংখ্যা এখন অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। আমাদের আয়ের অন্যান্য উৎস চিহ্নিত করতে হয়েছে। মাছ ধরে বেঁচে থাকা কঠিন। আগে সেটা সম্ভব ছিল। এখন এটা অনেকটাই শখ [মৎস্যসম্পদ] সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই।”

শীতল চান সরকার এই খাতে সহায়তা ক্রুক: “আমরা কোনো আমদানি শুল্ক পাই না। আমরা কঠিন খুচরা মূল্য পরিশোধ করি – মাছ ধরার শিল্পের ৯৯.৯ শতাংশ উদ্যোক্তা ঋণগ্রস্ত।”

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ খাত আর্থ-সামাজিকভাবে সুরিনামের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও অর্জুনের দৃষ্টিতে মাছ পাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ার পর মৎস্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হতে পারে। আয় হ্রাসের কারণে জাতীয় পরিবারগুলি চাপের মধ্যে পড়ে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করে তিনি বলেন আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পর্যাপ্ত উপার্জন করতে না পেরে এই খাত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলে: “তারা কী করবে? তারা কোথায় চাকরি পাবে?

ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বিকল্প ভেবে দেখছে এবং প্রশিক্ষণ ও নীতির মাধ্যমে জেলেদের জলজ চাষের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অর্জুন বিশ্বাস করেন এতে সমুদ্রে যেতে অভ্যস্তদের যুক্ত হওয়া এবং এখন মাছের বৃদ্ধি দেখতে পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে: “জলজ চাষের বড় একটি সমস্যা হলো ফিড বা খাওয়ানোর উপাদান। ফিড ব্যয়বহুল। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্যে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় খুব বড় পরিসরে চাষাবাদ করা হচ্ছে। ছোট বলে আমরা এই মাত্রায় খরচ কমাতে পারবো না।”

সমিতি সদস্যদের জন্যে জলজ চাষ অবশ্যই একটি বিকল্প। এর কিছু সদস্য ইতোমধ্যে অ্যাকুয়াকালচারে যুক্ত হলেও রপ্তানির জন্যে এটিকে বৃহৎ পরিসরে চর্চা করতে ব্যয়বহুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, চিংড়ির জলজ চাষের জন্যে ২ থেকে ৩ কোটি ডলার (প্রায় ২১০ থেকে ৩২০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করলে শিক্ষা এবং পুঁজির প্রাপ্যতা মিলে সেটা একটা সফল উত্তরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। “আপনি সুরিনামের কোন ব্যাংকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ধার করতে পারবেন না,” কার্গ বলেন৷ “আর তাই আপনি বাণিজ্যিক স্তরে জলজচাষও করতে পারবেন না।”

শীতল বিশ্বাস করেন (অর্থনৈতিক) নিরাপত্তা দেয় বলে সুরিনামের জেলেদের জন্যে জলজ চাষ একটি বিকল্প হতে পারে: “জাহাজ সমুদ্রে গেলে আপনি জানেন না যে এটা কী নিয়ে আসবে। জলজ চাষ করলে গুণমান উন্নত করতে আপনার কী করতে হবে আপনি তা জানেন। প্রশ্ন হলো সরকার এতে বিনিয়োগ করতে, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে এবং তাদের সেটা করার সুযোগ দিতে কতোটা প্রস্তুত।”