অস্ট্রেলিয়া কার্বন নিঃসরণের যথেচ্ছ সবুজ ধোলাই মোকাবেলা করার উপায় খুঁজছে

Greenwashing detected

ব্যবসায় নকশা কেন্দ্রের সবুজ ধোলাই গেরিলা, লন্ডন ২০০৮ – ছবিটির সৌজন্যে ফ্লিকার ব্যবহারকারী ফোটডিমাইক (অবাণিজ্যিক অপরিবর্তনযোগ্য সৃজনী সাধারণ লাইসেন্স ২.০)

অবশ্যই ২০২১ সালের সুইস আর্থিক শব্দ ‘সবুজ ধোলাই’ ২০২২ সাল জুড়ে জলবায়ু সংকটের শিরোনামে প্রাধান্য পেয়েছে। এটি ২০২২ সালের নভেম্বরের কপ২৭ জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের আগে, চলাকালীন এবং পরে অস্ট্রেলিয়ায় যথেষ্ট পরিমাণ আলোচনাকে আকর্ষণ করে এবং ২০২২ সালের নির্বাচনে অস্ট্রেলীয় ভোটারদের পরিবেশগত সমস্যার বিষয়ে অবিচল থাকার কারণে সম্ভবত আগামী বছরগুলিতেও তা অব্যাহত থাকবে। নতুন অস্ট্রেলীয় সরকার এটিকে মাথায় রেখে নিয়ে যথেচ্ছ সবুজ ধোলাই নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এসব ব্যবসাকে জবাবদিহিতায় নিয়ে আসছে।

সবুজ ধোলাই‘ শব্দটি (‘ধবল ধোলাই’ এর মতো করে বলা একটি শব্দ) পণ্য বিক্রি বা ব্র্যান্ডের প্রচারের জন্যে পরিবেশ বান্ধব চেহারার কর্পোরেট বিপণন কৌশলকে বোঝায়। একটি চিরায়ত সবুজ ধোলাই অভিযোগটি হলো সত্যিকার অর্থে কার্বন নিঃসরণ অথবা বর্জ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করার পরিবর্তে অনেক ব্র্যান্ড নিজেদেরকে সবুজ দেখাতে বেশি সময়, শক্তি ও সংস্থান ব্যয় করে থাকে

অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিন্তাবিদ ২০২২ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলীয় সরকারের সমালোচনা করে তার রাষ্ট্রপোষিত সবুজ ধোলাই  প্রতিবেদন প্রকাশ করে এমন একটি পরিবেশের বর্ণনা দিয়েছে যেখানে রাষ্ট্র সবুজ ধোলাইয়ের প্রচারণায় অবিচল থেকে একে উৎসাহিত করে: নেতিবাচক বিশ্লেষণটি পূর্ববর্তী সরকার এবং ২০২২ সালের মে মাসে নির্বাচিত নতুন শ্রমিক সরকার উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে কার্বন নিঃসরণ ভারসাম্য ব্যবহারের জন্যে সমালোচনামূলক।

জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প এবং প্রধান নিঃসরণকারীরা জলবায়ু বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার নীতিমালার আলোচ্য নির্ধারণ করেছে। এর ফলে এই বিস্তৃত নীতি কাঠামোটি শুধু জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের বিভ্রান্তিকর জলবায়ু দাবিগুলিকেই গ্রহণ করে না বরং সেগুলোকে কেন্দ্রীয় সরকারও সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে থাকে।

‘সবুজ ধোলাইসহ টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর আচরণের বিরুদ্ধে’ দমনাভিযান চালিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে অস্ট্রেলীয় লেনদেনযোগ্য আর্থিক সম্পদ ও বিনিয়োগ কমিশন (এএসআইসি) সবুজ ধোলাইকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এটি কীভাবে আর্থিক সবুজ ধোলাই এড়াতে হবে তার পরামর্শ প্রদান করে:

সবুজ ধোলাই একজন বর্তমান বা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর জেনে-বুঝে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক তথ্যকে বিকৃত করে। এটি টেকসই-সম্পর্কিত পণ্যগুলির ক্ষেত্রে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট এবং একটি ন্যায্য ও দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থার জন্যে হুমকি তৈরি করতে পারে।

কিন্তু কর্পোরেট সবুজ ধোলাই জ্বালানী কোম্পানিগুলির বাইরেও বিস্তৃত। অস্ট্রেলিয়ার ভোক্তা পর্যবেক্ষক অস্ট্রেলীয় প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা কমিশন (এসিসিসি) একটি বিবৃতিতে “জ্বালানী, যানবাহন, গৃহস্থালী পণ্য এবং যন্ত্রপাতি, খাদ্য ও পানীয় প্যাকেজিং, প্রসাধনী, পোশাক এবং পাদুকার মতো বিভিন্ন লক্ষিত খাতে বিভ্রান্তিকর পরিবেশগত দাবির জন্যে অন্তত ২০০টি কোম্পানির ওয়েবসাইটকে পর্যালোচনা করা হবে” উল্লেখ করে ব্যবসার বিস্তৃত পরিসরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে” আরো বলেছেন এসিসিসির সহকারী প্রধান ডেলিয়া রিকার্ড:

ভোক্তারা টেকসই পণ্য ক্রয়ে আরো বেশি করে আগ্রহী হয়ে ওঠায় কিছু কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোগ তাদের পরিবেশগত বা সবুজ শংসাপত্রগুলিকে মিথ্যাভাবে প্রচার করায় উদ্বেগ বাড়ছে। পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর দাবি বাজারে ভোক্তাদের আস্থা এবং বিশ্বাসকে ক্ষুন্ন করে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী চাকুরি উত্তর তহবিল সিবাস তার দায়িত্বশীল বিনিয়োগ কৌশলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির সবুজ ধোলাইকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।

এমনকি ফ্যাশন শিল্পও সমালোচনার মুখে পড়েছে। অস্ট্রেলীয় সম্প্রচার কর্পোরেশন (এবিসি) এর অনুসন্ধান অনুসারে ভোক্তারা দ্রুতগামী ফ্যাশন থেকে দূরে সরে যাওয়া দেখে কিছু কিছু পোশাক ব্র্যান্ড সামান্য উপাদান ব্যবহার করে টেকসই-থিমযুক্ত বিপণনের দিকে ঝুঁকছে:

ভোক্তারা দ্রুতগামী ফ্যাশনের পরিবেশগত মূল্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠায় ব্র্যান্ডগুলি তাদের পোশাককে টেকসই হিসেবে বাজারজাত করার নতুন উপায় খুঁজতে শুরু করে।

তারা বাঁশের দ্রুত বর্ধনশীল প্রকৃতি বা জৈব তুলার নিম্ন কার্বন পদচিহ্নকে প্রচার করতে অথবা পুনর্ব্যবহারযোগ্য পলিয়েস্টারের সুবিধার কথা শুরু করে…

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলো সবসময় দাবিকৃত উপাদানে তৈরি করা হয় না।

এটি নেদারল্যান্ডসের অলাভজনক পরিবর্তনশীল বাজার ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে যুক্তি দেখায় যে সনদ পদ্ধতি এবং স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগগুলি উল্টো ফল প্রদানকারী:

…পরিবেশের উপর ফ্যাশনের প্রভাব আরো খারাপ হয়ে ওঠায় এসব পরিকল্পনা ছড়িয়ে গিয়ে পরিবর্তন সৃষ্টির কোনো প্রমাণ দেখাতে অক্ষম না পেরে খাতটিতে টেকসইয়ের বিভ্রম তৈরি করে সমস্যাটির অংশ হয়ে উঠছে।

ব্র্যান্ডগুলিও অবাধে এই জাতীয় সবুজ ধোলাই উদ্যোগের সদস্যপদ ব্যবহার করে এমনকি সরকারি তদন্ত এড়িয়ে যাচ্ছে।

আপনার যতটা সম্ভব সহজে টেকসই পণ্য খুঁজে পাওয়ার জন্যে কঠোর পরিশ্রম করেছে’ দাবি করা সিইসিই_প্রকল্পের সাম্প্রতিক একটি নির্দেশিকা এরকম কিছু সনদ প্রক্রিয়ার প্রচার করে:

একটি টেকসই ফ্যাশন সনদ পদ্ধতিতে একটি স্বাধীন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে একটি ব্র্যান্ড যে পরিবেশ বান্ধব বা নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি নির্দিষ্ট মান পূরণ করে সেটা নিশ্চিত করা হয়।

তবে পরিবর্তনশীল_বাজারের প্রতিবেদনটি বর্তমান চর্চার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কঠোর ছিল:

এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষিত বেশিরভাগ উদ্যোগ সত্যিকারভাবে উচ্চ স্তরের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বজায় রাখতে না পেরে টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার ভান করা সংস্থাগুলির জন্যে শুধু একটি ধোঁয়াশা তৈরি করছে। বেশিরভাগ তাদের সদস্যদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে কঠোর প্রয়োজনীয়তা এবং সময়সীমা নির্ধারণ না করে বরং ভিন্ন প্রয়োজনীয়তা সম্বলিত বিভিন্ন মডিউল প্রদান করে অল্প উচ্চাকাঙ্ক্ষাসম্পন্ন কোম্পানিগুলিকে যোগদান করতে দেয়।

মাস্তোদন ব্যবহারকারীরা #সবুজধোলাই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে এই কথোপকথনে যোগ দিয়েছে। সাম্প্রতিক এই পোস্টটি জলবায়ু অপপ্রচার সম্পর্কিত পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির (এসইআই) একটি পটভূমির অংশ বিশেষ করে ‘জীবাশ্ম জ্বালানী শিল্পের জন্যে চালানো প্রচারাভিযান’ এর জনসংযোগের সাথে সংযুক্ত।:

নভেম্বরে ইনসাইড_ফুটবলের অ্যান্ড্রু ওয়ারশ উদ্বেগটির বিষয়ে জানিয়েছেন যে কাতার এবং ফিফা বিশ্বকাপকে সবুজ ধোলাই করেছে:

বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রকদের কাছে পরিবেশ কর্মীদের কথিত “সবুজ ধোলাই” এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাতার বিশ্বকাপ কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার ফিফার দাবি নেতৃস্থানীয় জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বিপজ্জনক এবং বিভ্রান্তিকর বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

তবে ভেতর থেকে জিনিসগুলি আরো ইতিবাচক মোড় নিচ্ছে বলে মনে হওয়ায় এর পুরোটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়। গার্ডিয়ান পত্রিকা নয় বছরের রক্ষণশীল শাসনের পরে ২০২২ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসা অস্ট্রেলীয় লেবার পার্টির একটি আপাত উল্টো যাত্রার রিপোর্ট করেছে:

আলবেনীয় সরকার পরিকল্পনা অনুসারে নিঃসরণ কমাতে ব্যাংক এবং অন্যান্য সব বড় ব্যবসাগুলো কী করছে সে সম্পর্কে জনগণের সাথে পরিষ্কার হতে বাধ্য করা হবে।

সরকারও “সবুজ ধোলাই” – অথবা বেশি বেশি করে পরিবেশগত চর্চার কথা বলে ভোক্তাদের মন জয় করার চেষ্টাকারী ব্যবসাগুলিকে দমন করার উপায় খুঁজছে৷

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .