কাতার ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ কর্মীদের বেতন দিতে অস্বীকার করেছে

Image via Nepali Times. Used with permission.

নেপালি টাইমসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২  এর তিন সপ্তাহ আগে কাতারের শ্রম মন্ত্রী মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে জড়িত অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন

মানবাধিকার পর্যবেক্ষক (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ) এবং অন্যান্য সক্রিয় গোষ্ঠী মে মাসে “লজ্জার বিশ্বকাপ” এর উত্তরাধিকার এড়াতে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানিয়ে #পরিশোধ_করো_ফিফা নামে একটি বৈশ্বিক প্রচারাভিযান চালু করে

কিন্তু শ্রমমন্ত্রী আলি বিন সামিক আল মারি কাতারের সমালোচকদের “বর্ণবাদী” হিসেবে অভিযুক্ত করে এটিকে একটি “প্রচারণার কসরৎ” অভিহিত করেছেন। আল-মারি তার দেশের ইতোমধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার বকেয়া মজুরি হস্তান্তর করার দাবি করেছেন।

কাতারি কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের পরে স্টেডিয়ামগুলির বেশিরভাগের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে উল্লেখযোগ্য যেসব সংস্কার করেছে তা খুবই কম এবং বিলম্বিত বলে এইচ আরডাব্লিউ তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা আরো বলেছে যে সংস্কারগুলির পরিধি খুবই সংকীর্ণ এবং এগুলো দুর্বলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, যার মানে হলো বিশ্বকাপের অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তাকারী অনেক কর্মী বিদ্যমান সংস্কার ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা থেকে কখনোই উপকৃত হয়নি

Labour Minister Ali bin Samikh Al-Marri claimed Qatar was already handing out hundreds of millions of dollars in unpaid wages.

শ্রমমন্ত্রী আলি বিন সামিক আল-মারি কাতারের ইতোমধ্যে কোটি কোটি ডলার বকেয়া মজুরি হস্তান্তর করার দাবি করেছেন। নেপালি টাইমসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

গত এক দশকে নেপালিদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলা সবচেয়ে গুরুতর এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হলো শ্রমিকদের মৃত্যু। কাতারি শ্রম আইন অনুসারে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যু হলে তাদের পরিবার অথবা কাজের সময় আঘাতের ফলে আংশিক বা সম্পূর্ণ স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে শ্রমিকরা তাদের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী। তবে মৃত্যু এবং অক্ষমতা কর্ম-সম্পর্কিত বিবেচিত না হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না।

কিন্তু কাতারে নেপালিদের বেশিরভাগের মৃত্যুর জন্যে ব্যাখ্যাহীন নানা কারণকে দায়ী করা হয়— যেমন “ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে” (শুধু শুধু মরে গেছে) বলে একটি প্রচলিত নেপালি কথা হয়ে উঠেছে বলে ইতোপূর্বে নেপালি টাইমস প্রতিবেদন করেছে — এবং মৃত্যুগুলির ক্ষেত্রে ‘প্রাকৃতিক কারণ'কে দায়ী করা হয়েছে। বেশিরভাগ সময় এসব ক্ষেত্রে কিছুই স্বাভাবিক ছিল না; এগুলি ঘটেছিল অতিরিক্ত কাজ করায় তারা অতিরিক্ত গরম এবং দাপ্তরিক উদাসীনতার কারণে।’

কিন্তু কাতারের শ্রমমন্ত্রী আল মারি একই সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করেছেন: “ভুক্তভোগীরা কোথায়, আপনার কাছে কি নিহতদের নাম আছে, আপনি কীভাবে এই সংখ্যা পেয়েছেন?”

আইনি উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে পাওয়া আমমোক্তারনামা বা সম্মতিপত্র, একটি মৃত্যু শংসাপত্র, একটি পুলিশ রিপোর্ট, একটি চিকিৎসা প্রতিবেদন, একটি বিমানবাহী বিল, একটি শেষকৃত্য সনদ এবং একটি অনাপত্তি পত্রসহ নান জটিল নথিপত্রের মাধ্যমে কাতার থেকে নেপালে মৃতদেহ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া প্রদর্শন করে এইচআরডব্লিউ জোর দিয়ে বলেছে যে অভিবাসী কর্মীদের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।

এছাড়াও নেপাল সরকারের কাছে কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে বৈধ পারমিটসহ শ্রমিকদের মৃতদেহ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে অভিবাসী কল্যাণ তহবিল থেকে পরিবারগুলিকে সহায়তা প্রদান করার প্রমাণাদি রয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে ফিফা বা কাতারিরা আন্তরিক হলে তা পাওয়ার জন্যে নেপালের কাছে অভিবাসী কর্মীদের নির্যাতনের রেকর্ডও রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (মানবাধিকার পর্যবেক্ষক) মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার উপ-পরিচালক মাইকেল পেজ টুইট করেছেন:

এটা লজ্জাজনক যে #কাতার (ফুটবল) অনুরাগী, বেসরকারি সংস্থা এবং ফুটবল খেলোয়াড়দের অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ তহবিলের ব্যাপক আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করছে। নির্যাতনের মাধ্যমে কলঙ্কিত এই @ফিফাবিশ্বকাপের এর জন্যে কোনো ইতিবাচক উত্তরাধিকার চাইলে @ফিফা_কম এর নিজস্ব তহবিল প্রতিষ্ঠা করা উচিত। একটি প্রতিক্রিয়া।

সর্বশেষ বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি কাতারের প্রতিক্রিয়া ভ্রুক্ষেপ না করে কাজ করার জন্যে ফিফাকে চাপ দিচ্ছে। কারণ ফিফার এই কাজ করার দায়িত্ব এবং সংস্থান উভয়ই রয়েছে। ২০২২ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের জন্যে সম্ভাব্য শ্রম অধিকার লঙ্ঘন এড়াতে কোনো শর্তারোপ না করে এবং পরবর্তীতে সময়মত এবং কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ ফিফা বিশ্বকাপ-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলিতে অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যাপক বিস্তৃত নির্যাতনে অবদান রাখার ক্ষেত্রে দায়ী।

প্রতিকার তহবিল ফিফার প্রতিক্রিয়া অনিশ্চিত। ১৩ অক্টোবর কাতারে শ্রম অধিকার নিয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলের শুনানিতে, ফিফার উপ-মহাসচিব আলাসদাইর বেল বলেছেন: “ক্ষতিপূরণ অবশ্যই এমন কিছু যা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে আগ্রহী।” কোনো দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ছাড়াই অতীতে একাধিকবার এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

প্রতিযোগিতা ঘনিয়ে আসায় কাতারিদের বিপরীতভাবে সরাসরি ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান না করা ফিফার উপর ক্রমেই অংশীজনদের চাপ বাড়ছে। ফিফা বিভিন্ন ফুটবল সমিতি, পৃষ্ঠপোষক, রাজনীতিবিদ এবং অনুরাগীদের কাছে দায়বদ্ধ।

গত সপ্তাহে অস্ট্রেলীয় জাতীয় ফুটবল দল একটি শক্তিশালী ভিডিওতে প্রতিকারের আহ্বানকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছে, যাকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সাতটি জাতীয় ফুটবল দলও সমর্থন করেছে। চারটি পৃষ্ঠপোষক (এবিইনবেভ/বাডওয়েইজার, এডিডাস, কোকা-কোলা এবং ম্যাকডনাল্ডস) আর্থিক ক্ষতিপূরণ সমর্থন করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি সাম্প্রতিক বৈশ্বিক জনমত জরিপে ১৫টি দেশের ১৭,৪৭৭ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ তাদের জাতীয় ফুটবল সমিতিগুলির অভিবাসী কর্মীদের ক্ষতিপূরণের আহ্বানসহ কাতার বিশ্বকাপ সম্পর্কিত মানবাধিকার বিষয়গুলি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলার পক্ষাবলম্বন করতে দেখা গেছে।

অন্তত ১৫ জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য, ১২০ জন ফরাসি সংসদ সদস্য এবং বিশ্বকাপ সম্প্রচারে তার প্রাপ্ত অর্থ অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবারকে দান করা অস্ট্রেলিয়ার ক্রেইগ ফস্টারের মতো প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড় তহবিলটিকে সমর্থন করেছে। এতোসব চাপ সত্ত্বেও ফিফা ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।

অধিকার সংস্থা মানবাধিকার পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছে যে পরবর্তী ইভেন্টগুলিকে সমর্থন করার জন্যে ফিফা দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বকাপের “উত্তরাধিকার তহবিলে” অবদান রেখে আসছে। অতীতে ফিফা সাবেক স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ( ১০ কোটি ডলার), ব্রাজিল ( ১০ কোটি ডলার)), এবং রাশিয়ার ( ৬ কোটি ডলার) জন্যে বিশ্বকাপের উত্তরাধিকার হিসেবে কমপক্ষে ২৬ কোটি ডলার (প্রায় ২,৬৭৪ কোটি টাকা) বরাদ্দ করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে যে ফিফারও শ্রমিকদের নথিভুক্ত শোষণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের অভাবের জন্যে কাতারের ক্ষেত্রে একই কথা বিবেচনা করা উচিত।

Image via Nepali Times. Used with permission.

নেপালি টাইমসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষকের মিঙ্কি ওয়ার্ডেন বলেছেন, ” নির্যাতন দ্বারা মারাত্মকভাবে কলঙ্কিত আসন্ন বিশ্বকাপের উত্তরাধিকার রক্ষার জন্যে ফিফার একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের খুবই প্রয়োজন।” “কাতারের এর  বিরোধিতা না করে বরং এই ধরনের তহবিলের সাফল্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করা উচিত। ক্ষতিপূরণ তহবিল প্রতিষ্ঠার সমস্যা কখনোই তথ্যের নয়, বরং রাজনৈতিক সদিচ্ছার।”

দোহায় ২০ নভেম্বর তারিখে বিশ্বকাপ শুরু হবে এবং তার আগে ক্ষতিপূরণ তহবিলটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে তহবিলটির প্রতি ফিফার প্রতিশ্রুতি প্রতিযোগিতাটিকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রাণ হারানো নেপালি অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবারগুলির জন্যে সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনতে পারে।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .