- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সনি রামাদিন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সুপার স্পিন বোলার, ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন।

বিষয়বস্তু: ক্যারিবিয়ান, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ইতিহাস, খেলাধুলা
প্রয়াত ত্রিনিদাদীয় স্পিন বোলার সনি রামাদিনের ছবি। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো টেলিভিশন (টিটিটি) সংবাদ প্রতিবেদনের একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। [1]

প্রয়াত ত্রিনিদাদীয় স্পিন বোলার সনি রামাদিনের ছবি। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো টেলিভিশন (টিটিটি) সংবাদ প্রতিবেদনের একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট।

সালটি ছিল ১৯৫০। তখন ইতিহাস তৈরি করতে চলেছেন পূর্ব ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন অসাধারণ ডান-হাতি স্পিন বোলার সনি রামাদিন [2] – যাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের জন্য তার জাতির প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। মাত্র ২১ বছর বয়সে, এই ত্রিনিদাদীয় কিছুদিন পূর্বেই ৮ জুন তারিখে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড [3] ক্রিকেট মাঠে টেস্ট [4] ক্রিকেটে অভিষিক্ত [5] হয়েছিল। মাত্র ১২ দিন পরে, সে সহকর্মী স্পিন বোলার আলফ ভ্যালেন্টাইনের [6] সাথে তার চিত্তাকর্ষক টিমওয়ার্ক এবং কিংবদন্তি “থ্রি ডব্লিউএস [7]” (ফ্রাঙ্ক ওয়ারেল, এভারটন উইকস এবং ক্লাইড ওয়ালকট) এর শক্তিশালী ব্যাটিং দ্বারা লর্ডসে [8] ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম জয়ের [9] সূচনা করতে সাহায্য করেছিল। দলটি পুরো টেস্ট ক্রিকেট সিরিজ [10] জিততে যাচ্ছিল, ক্যারিবিয়ানের বাইরে যেটি তাদের প্রথম জয়।

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রোববার ৯২ বছর বয়সী রামাদিনের মৃত্যুর [11] খবর ক্রিকেট অনুরাগীদের [12] খুব আঘাত করেছিল, কারণ তিনি সেই দলের শেষ জীবিত সদস্য ছিলেন। তার নাতি, কাইল হগ, একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার, টুইটারে পোস্ট করেছেন:

“দুঃখের দিন – দুর্দান্ত ইনিংস দাদা” — কাইল হগ

তার একটি দুর্দান্ত ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল, তার পরিসংখ্যানও চিত্তাকর্ষক [2] – ৪৩ টেস্ট ম্যাচে ১৫৮ উইকেট – কিন্তু কেউ, বিশেষ করে লন্ডনের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অভিবাসী সম্প্রদায়, [15] রামাদিনের ঝকঝকে অভিষেকটি কখনও ভুলতে পারবে না। ভ্যালেন্টাইনের সাথে তাল মিলিয়ে তার বোলিং পারফরম্যান্স, এমনকি লর্ড বিগিনার “ভিক্টরি ক্যালিপসো” [16]-এর একটি জনপ্রিয় গান তৈরিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, যেটি “আমার সেই দুটি ছোট বন্ধু, রামাদিন এবং ভ্যালেন্টাইন” এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তার মৃত্যুর খবর পেয়ে, ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি রিকি স্কেরিট রামাদিনকে এই অঞ্চলের খেলাধুলার “একজন মহান অগ্রগামী” বলে অভিহিত করে শোক প্রকাশ [17] করেছেন: 

ক্রিকেটের ‘স্পিন টুইনস’ [যখন] ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমবার ঘরের বাইরে ইংল্যান্ডকে জয় করেছিল তার অসাধারণ কীর্তিগুলির [অংশ হিসাবে] অনেক গল্প বলা হয়। এই ঐতিহাসিক সফরটি আমাদের সমৃদ্ধ ক্রিকেট উত্তরাধিকারের অংশ […] ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে তার অসামান্য অবদানের জন্য আমরা সনি রামাদিনকে অভিবাদন জানাই।

রামাদিনের পথপ্রদর্শনের আরেকটি দিক এই যে দলে তার উপস্থিতি তার উত্তরসূরীদের জন্য বর্ণবৈষম্য ভেঙে দিয়েছে। ২০২০ সালে ইউকে গার্ডিয়ানের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে [18], তিনি বলেছিলেন:

আমি খুব গর্বিত বোধ করেছি, কারণ ভারতীয়দের সেই দিনগুলিতে খুব বেশি সুযোগ ছিল না। এটা শুধুমাত্র সাদা বা কালো খেলোয়াড় ছিল, কিন্তু আমি দরজা খুলেছিলাম। আমার পরে অনেক ভালোরা ছিল যারা এটা তৈরি করেছে।

গায়ানা থেকে, বারবিস ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চিত করেছে [19] যে রামাদিন ভারতীয় জাতিসত্তার অন্যান্য খেলোয়াড়দের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের সাথে সফল ক্যারিয়ার গড়ার পথ তৈরি করেছে।

ত্রিনিদাদের রাজনীতিবিদ টিম গোপীসিংহ যোগ করেন [20]:

তার জীবন্ত উদাহরণের মাধ্যমে, তিনি আমাদের সকলকে তখন এবং এখন দেখিয়েছেন, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, অনুপ্রেরণা এবং আপনার নির্বাচিত ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে জাতিগত, ভৌগলিক, ধর্মীয় এবং শ্রেণীগত পার্থক্যগুলি অতিক্রম করা যায়।

ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর ক্রীড়া ও সম্প্রদায় উন্নয়ন মন্ত্রী শামফা কুদজো রামাদিনকে “দুই দিকে বল ঘুরানোর ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রভাবশালী শক্তি” হিসাবে স্মরণ [21] করেছেন:

তিনি গর্বিতভাবে এই দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক ক্রিকেটার এবং ক্রীড়া অনুরাগীদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি সত্যিই একজন মহান ক্রিকেট কিংবদন্তি ছিলেন।

রামাদিনের জন্ম ১লা মে, ১৯২৯, এস্পেরেন্সের একটি দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রামে। তিনি একজন ভারতীয় চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকের ছেলে, তাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে লালন-পালন করার জন্য রেখে যখন তার বাবা-মা মারা যান তখন তিনি মাত্র দুই বছর বয়সী ছিলেন। ১৩ বছর বয়সে, তিনি পালমিস্টে সুগার এস্টেটে কাজ করছিলেন, যেখানে ওভারসিয়ার, গল্পের মতোই [22], প্রায়শই তাকে ক্রিকেট পিচ প্রস্তুত করার কাজ দিতেন। এটি খেলার প্রতি তার ভালবাসাকে লালন করে এবং এখানেই তিনি তার দক্ষতাকে শাণিত [20] করেছিলেন, অবশেষে ১৯৪৮ সালে ট্রায়াল রানের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে চেষ্টা করেছিলেন; তিনি পরের বছর নির্বাচিত [22] হন। পালমিস্ট এলাকার একটি পার্ক, যেখানে রামাদিন তার ক্রিকেট খেলার শিকড় খুঁজে পেয়েছিলেন, সেখানে তার সম্মানে একটি মূর্তি [23] রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯৬০ সালের টেস্টের মাঝখানে ল্যান্স গিবসের [24] হয়ে বাদ [11] পড়ার পরেও বন্ধু [25], সহকর্মী এবং প্রশংসকরা মহান স্পিন বোলারকে “নম্র এবং মনোরম” [26] এবং খেলার প্রতি সর্বদা অনুরাগী হিসেবে মনে রেখেছেন। যদিও রামাদিনের টেস্ট ক্রিকেট চ্যালেঞ্জগুলি সত্যিই শুরু হয়েছিল ১৯৫৭ সালের জুন [27] মাসে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্টের [28] সময়, যখন পিটার মে [29] এবং কলিন কাউড্রের [30] ব্যাটিং জুটি যুগের লেগ বিফোর উইকেট (এলবিডব্লিউ) নিয়মগুলিকে ব্যবহার করে তাদের সুবিধার [11] জন্য যেসব বল ব্যাটিং করতে পারতেন না, তা তাদের লেগ প্যাডিং ব্যবহার করে দূরে সরিয়ে দিতেন। এলবিডব্লিউ নিয়মটি পরে পরিবর্তন করা হয়েছিল, কিন্তু রামাদিনের জন্য এটি শেষের শুরু ছিল, যিনি অস্ট্রেলিয়ার শেষ সফরের পরে আর কখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেননি।

তিনি অবশেষে জুন অস্টারবেরি নামে একজন ব্রিটিশ মহিলাকে বিয়ে করেন, তার দুটি সন্তান ছিলো ছিলো। তারা ইংল্যান্ডে স্থায়ী হন, যেখানে তিনি কাউন্টি ক্রিকেট কাউন্টি ক্রিকেট [28] খেলতে থাকেন। অবসর নেওয়ার পর, তিনি এবং তার স্ত্রী গ্রেটার ম্যানচেস্টারের একটি শহর ডেলফ-এ জনপ্রিয় হোয়াইট লায়ন পাব চালাতেন [31]। যেখানে ক্রিকেট উৎসাহীরা প্রায়শই তাকে খুঁজতেন।

তার পরবর্তী বছরগুলিতে, রামাদিন ফ্রিয়ারমেয়ার ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি হন, যেটি তার মৃত্যুর পরে টুইট করেছিল:

“শান্তিতে বিশ্রাম নিন জনাব রাষ্ট্রপতি — বিশ্ব একজন পরম ভদ্রলোককে হারিয়েছে। আপনি আমাদের ছোট্ট ক্লাবকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন তা কোনও শব্দই বর্ণনা করতে পারে না।” – ফ্রিয়ারমেরে সিসি