কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল ঢাকাকেই এখন উদ্ধার করতে হবে

Illustration via Unbias The News. Used with permission.

আনবায়াজ দা নিউজ (নিরপেক্ষ সংবাদ) এর মাধ্যমে পাওয়া অলঙ্করণ, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

আনবায়াজ দা নিউজ (নিরপেক্ষ সংবাদ) এর “ডুবন্ত শহর” ধারাবাহিকের অংশ হিসেবে নিবন্ধটি মূলত লিখেছেন শামসুদ্দিন ইলিয়াস। একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে গ্লোবাল ভয়েসেস দুটি অংশে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ পুনঃপ্রকাশ করবে, যার প্রথম অংশ এটি। দ্বিতীয় অংশ পাবেন এখানে

বন্যার পানি এবং নদী ভাঙ্গন ঘরবাড়ি গ্রাস করায় সারা বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ হিসেবে ঢাকাচট্টগ্রাম শহরকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু বিকল্প এই ‘নিরাপদ’ আশ্রয়স্থলগুলোও ডুবে যাচ্ছে।

প্রায় ১০০ বর্গফুটের একটি খুপরিতে প্রতিদিন সকালে আব্দুল আজিজ তার স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে ভোরের আগে ঘুম থেকে ওঠেন। ঢাকার রাস্তায় রিকশা চালিয়ে ৫০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ এখন তার পরিবারের জন্যে খাবার জোগাড় করেন।

আজিজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইল বস্তিতে থাকেন। বস্তিটি প্রায় ২ লক্ষ লোকের বাসস্থান, যাদের বেশিরভাগই জলবায়ু অভিবাসী।

পেশায় তিনি ছিলেন একজন কৃষক, থাকতেন বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেটে। সেখানে তিনি এক একর জমিতে ধান চাষ এবং গবাদি পশু পালন করতেন। কিন্তু ২০২২ সালের মে মাসের আকস্মিক বন্যা ও জলাবদ্ধতা আরো ৪৩ লক্ষেরও বেশি লোকের সাথে তাকে গৃহহীন করে ফেলে। বন্যায় তার চারটি গবাদি পশুসহ পুরো সম্পত্তি ভেসে যায়। থাকার জায়গা ও জীবিকা নির্বাহের উপায় না থাকায় শেষ পর্যন্ত তিনি বনানীর কড়াইল বস্তিতে এসে পৌঁছান।

বস্তিটি জনাকীর্ণ এবং দুর্বল স্বাস্থ্যবিধান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে নোংরা। গড় বস্তির ঘরগুলো প্রায় ১০০ বর্গফুট আকারের এবং মাত্র একটি মাত্র কক্ষ নিয়ে গঠিত। বস্তিবাসীদের ঘরগুলি দুর্বল বাঁশের কাঠামো এবং ঢেউটিনের ছাদ দিয়ে তৈরি করা, যা এগুলোতে তাপমাত্রার প্রভাব এবং ঝড়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অবৈধ গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সংযোগ  ঘিঞ্জি এসব বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি ডেকে আনে৷ বস্তিবাসীরা তাদের জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব ও দুর্বল স্বাস্থ্য পরিষেবার কারণে যথেষ্ট স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে পড়ে, যা প্রায়শই তাদের জীবিকার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১,১০,০০০ এবং বন্যার কারণে দশ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এছাড়াও দেশের দুই-তৃতীয়াংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ ফুটেরও কম উচ্চতায় বসবাস করায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারিয়ে বিকল্প সন্ধানে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মানুষ ঢাকায় পাড়ি জমায়, যার ৭০ শতাংশের কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন। শহরটি অভিবাসীদের চাপ সামলাতে লড়াই করছে,” আনবায়াজ দা নিউজ (নিরপেক্ষ_সংবাদে) এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে বড় কড়াইল বস্তি এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন।

এদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে খুলনা জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরকে উচ্চ হারে (আনুমানিক  ১৫ থেকে ৩০ হাজার) অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের অভিজ্ঞতা নিতে হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। ঢাকার ৫,০০ বস্তিতে প্রায় ৪০ লক্ষ, আর চট্টগ্রামের ২০০ বস্তিতে প্রায় ১৪ লক্ষ অভিবাসী বসবাস করে।

ঢাকা কেন ডুবে যাচ্ছে

নিরাপদ মনে করেই আজিজ এবং বেগম এসব জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে ঢাকা এমনিতেই ভূমি দেবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৮,০০০ জন হিসেবে দুই কোটিরও বেশি লোকের বাসস্থান বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল মেগাসিটি ঢাকা নিজেই একটি জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি। তার উপর, অতিরিক্ত উত্তোলন এবং অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোর কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। মিঠা পানির উৎসগুলির অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় শহরটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। ঢাকার নদী অববাহিকা অঞ্চলটি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত (স্থানীয়ভাবে পদ্মা-যমুনা-মেঘনা নদী অববাহিকা ব্যবস্থা নামে পরিচিত)। শিল্প দূষণের কারণে ঢাকার নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। এ ছাড়া কর্মকর্তারা পানি শোধনাগার থেকে পুরনো বিতরণ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা করেছে। দীর্ঘ সময়ে ক্ষয়ে যাওয়া জলের পাইপগুলির কারণে শহরের বাসিন্দারা প্রায়শই ট্যাপগুলি থেকে বেরিয়ে আসা জলে দুর্গন্ধ ও কাদার অভিযোগ করে থাকে।

জলবায়ু বিজ্ঞানী এবং ঢাকাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের (আইসিসিএডি) পরিচালক সলিমুল হক বলেন, ঢাকা তলিয়ে যাচ্ছে প্রধানত দু’টি কারণে – ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্যে অত্যধিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং দ্রুত নগরায়নের জন্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে জলাভূমি হ্রাস। হক বলেন:

যে জলাভূমিগুলি ঢাকা এলাকার অংশ ছিল গত ২০-৩০ বছরে তা যথেষ্ট পরিমাণে সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ জল পূরণ করতে ব্যবহৃত জল এখন আর ভূগর্ভস্থ জল পূরণ করছে না। এতে শহরটির দেবে যাওয়ার হার বেড়ে গেছে।

ঢাকা জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ডিডাব্লিউএসএ) থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় যে ১৯৬৩ সালে যখন ঢাকার জনসংখ্যা ১০ লক্ষেরও কম ছিল, তখন জলের চাহিদা ছিল প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার, যা প্রায় ৬০টি অলিম্পিক সুইমিংপুল পূরণের জন্যে যথেষ্ট। ডিডাব্লিউএসএ ৩০টি গভীর নলকূপ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে দৈনিক ১৩ কোটি লিটার জল সরবরাহ করতো। তখন তাদের কোনো জল শোধনাগার ছিল না।

২০২১ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ২ কোটিতে উন্নীত হওয়ার সাথে সাথে এর পানির চাহিদাও বাড়ে। ঢাকা এখন পাঁচটি জল শোধনাগারসহ ৯০৬টি গভীর নলকূপ দিয়ে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের মাধ্যমে নাগরিকদের প্রতিদিন ২৫৯ কোটি লিটার সরবরাহ করে। কিন্তু এই ব্যবস্থা এখনো দৈনিক প্রায় ২৬০ কোটি লিটার চাহিদার তুলনায় সামান্য কম হওয়ায় তা কিছু বাসিন্দাকে এখনো পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জলের অভাবে রেখেছে।

Source: Dhaka Water Supply and Sewage Authority (WASA)

তথ্যের উৎস – ঢাকা ওয়াসা। অলংকরণঃ গাব্রিয়েলা রামিরেজ।

ঢাকা ওয়াসার ৯০৬টি গভীর নলকূপ ছাড়াও প্রায় ৪,০০০ পরিবার তাদের নিজস্ব গভীর নলকূপ থেকেও জল পায়৷ কিন্তু এই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ঢাকার পানির স্তর কমে যাওয়ায় ভূমিকা রেখেছে। ১৯৬০ সালে সাধারণত ২০-৩০ মিটার (৬৫-১০০ ফুট) গভীরতায় পানি পাওয়া যেতো। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ.খানের মতে, গভীর নলকূপের জল তোলার জন্যে লোকেদের এখন ৪০০-৭৫০ মিটার (১,৩০০-২,৪৬০ ফুট) গভীরতায় পৌঁছাতে হয়। খান ব্যাখ্যা করেন যে ঢাকার জলের ৬৬ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জলাশয় থেকে নেওয়া হয়। বাকিটা আসে ভূপৃষ্ঠের জল যেমন নদী এবং অন্যান্য জলের উপরিভাগ থেকে,, যেমনটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ব্যাখ্যা করেছে। “জল পেতে আমাদের ৭০০ ফুটের উপরে যেতে হবে, [স্তরটি] যা প্রতি বছর বাড়ছে।”

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূগর্ভস্থ জলবিদ্যা অধিদপ্তরের প্রধান আনোয়ার জাহিদ গত কয়েক দশকে ঢাকার জলের স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নেমে গেছে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “ঢাকা শহর এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের স্তর খুব দ্রুত প্রতি বছর ১.৫ মিটার (প্রায় ৫ ফুট)  থেকে ২.১১ মিটার (প্রায় ৭ ফুট) হারে হ্রাস পাচ্ছে”। জল নিরাপত্তা নিয়ে কর্মরত একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ জল অংশীদারিত্বের একটি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে ২০২২ সালের আগস্টে মঙ্গাবে ২০৩০ সালের মধ্যে বৃহত্তর ঢাকা এলাকার ভূগর্ভস্থ জলের স্তর প্রতি বছর ৩ – ৫.১ মিটার (৯.৮ – ১৬.৭ ফুট) নেমে যেতে পারে বলে প্রতিবেদন করেছে।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভূতাত্ত্বিক এবং উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ুন আক্তার বলেছেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন যদি টেকসই হারে না চলে তাহলে ঢাকা ক্রমাগত দেবে যেতে থাকবে এবং ঢাকার কিছু অংশে সেটা হবে বিভিন্ন মাত্রায় ও তীব্রতায়।

বিকল্প অনুসন্ধান

ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমাতে, ঢাকা ওয়াসা ভূপৃষ্ঠের জল পরিশোধনের জন্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করেছে। “আমরা বিকল্প অনুসন্ধানের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ৭০ শতাংশ ভূ-পৃষ্ঠের এবং ৩০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জলের দিকে যেতে হবে। এটা করতে পারলে ঢাকা শহর হবে পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং স্থিতিশীল। তাহলে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করতে পারতাম,” বলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, “আমাদের রাজধানী ঢাকা থেকে ২২-৩২ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদী থেকে জল আনতে হতো।”

এই ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এবং ভূগর্ভস্থ জলের পরিবর্তে ভূপৃষ্ঠের জল শোধনাগার স্থাপনের জন্যে ওয়াসাকে (জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ) এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, জাইকা, চীনা এক্সিম ব্যাংক, কোরীয় এক্সিম ব্যাংক এবং জর্মন উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয়েছে।

“জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন হুমকি মোকাবেলায় প্রাসঙ্গিক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থ ব্যয় করছি এবং বিদেশী ঋণদাতাদের কাছ থেকে অর্থ ঋণ নিচ্ছি,” নিরপেক্ষ সংবাদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেছেন।

এই প্রতিবেদনটি মূলত আনবায়াজ দা নিউজ (নিরপেক্ষ সংবাদ) দ্বারা সিঙ্কিং সিটিস (ডুবন্ত শহর) প্রকল্পের অংশ হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ছয়টি শহরের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে। এই প্রকল্পটি Journalismfund.eu, ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন এবং জার্মান পোস্টকোড লটারির সহায়তায় সম্ভব হয়েছে। এখানে প্রতিবেদনটির দ্বিতীয় অংশ পড়ুন।

1 টি মন্তব্য

  • আমাদের সবসময়ই ভাল ভাল প্লেন হয়। সমস্যাটা হয় বাস্তবায়নে। কারণ যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা অতীকায় ভাল মানুষ। আগে নিজের পেট ভরতে হয় তারপর দেখছি কি করা যায়। ওয়াসার মামুরা কি যে উন্নয়ন করছে তা বলতেই হয় না।

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .