ব্যাংক ঋণে জর্জরিত ভারতীয় কৃষকরা হতাশ

Screenshot from YouTube Video by VideoVolunteers.

মহারাষ্ট্রের একজন কৃষকের ঋণের পরিমাণ চার বছরে সুদাসলে ভারতীয় ২ লক্ষ ৮০ হাজার রুপি (বাংলাদেশী প্রায় ৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা) থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ লক্ষ রুপি (বাংলাদেশী প্রায় ১১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা)। স্বেচ্ছাসেবী ভিডিওর ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি।

মায়া খোদভের দুই পোস্টের এই সংকলনটি ভারতভিত্তিক পুরস্কার বিজয়ী একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গত মিডিয়া সংস্থা ভিডিও ভলান্টিয়ার্স এ প্রথমে প্রকাশিত হয়। বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করে নেওয়ার চুক্তির অংশ হিসেবে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ নীচে প্রকাশিত হয়েছে৷

এটা নিতান্ত পরিহাসের বিষয় যে ভারতের কৃষকরা সর্বদাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পিরামিডের তলানিতে থাকে। এই ঘটনার একাধিক কারণের মধ্যে রয়েছে জমির ক্ষুদ্র মালিকানা এবং জনসংখ্যার বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে কৃষি নীতি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন।

কৃষকের দুর্ভোগ এবং দীনতার আরেকটি শোষণমূলক দিক হলো মধ্যস্বত্বভোগী। স্বেচ্ছাসেবী ভিডিওর সম্প্রদায়গত সংবাদদাতা (সিসি) মায়া খোদভে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় শহর নাসিকের একটি বস্তির বাসিন্দা। তিনি তার নিচের ভিডিও প্রতিবেদনে মধ্যস্বত্বভোগীদের আরেকটি দল কৃষকদের ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলির মাত্রাতিরিক্ত সুদের হারের চাপের কথা তুলে ধরেছেন।

মহারাষ্ট্রের নাসিকের দারি এলাকার কয়েকজন কৃষক গত চার বছর ধরে নাসিক জেলার কেন্দ্রীয় সমাবায় ব্যাংক (এনডিসিসি) লিমিটেডকে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এনডিসিসি ব্যাংক তাদের জমি অধিগ্রহণ ও নিলামের নোটিশ পাঠিয়েছে। কৃষকদের জমি নিলাম বা অধিগ্রহণ করা হলে তাদের জন্যে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠবে এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের আর কোন উপায় থাকবে না।

ব্যাংকটি তাদের বারবার নোটিশ পাঠাচ্ছে আর ব্যাংক কর্মকর্তারা তাদের বাড়িতে এসে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে যাচ্ছে। এই পুরো পরিস্থিতি থেকে বয়স্ক কৃষকরা খুব চাপের মধ্যে রয়েছে এবং ভিডিওতে আমরা এমনকি হার্ট অ্যাটাকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত একজন কৃষককেও দেখতে পাচ্ছি।

গত চার বছর ধরে ফলন খারাপ হওয়ায় কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। একজন কৃষকের ভারতীয় ২ লক্ষ ৮০ হাজার রুপি (বাংলাদেশী প্রায় ৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা) ঋণ চার বছরে সুদাসলে হয়েছে ৯ লক্ষ রুপি (বাংলাদেশী প্রায় ১১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা)। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে নিলামের নোটিশ দেখিয়ে অর্ধেক সুদের টাকা দিয়ে নিষ্পত্তি করতে বলে।

কৃষকরা বলছে যে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের পক্ষে ঋণ বা সুদ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। তারা হতাশার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

কিন্তু আশার কথা হলো যে প্রতি বছর মহারাষ্ট্র সরকার অভাবী কৃষকদের ঋণ মওকুফ করে থাকে। মায়া খোদভে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন। তিনি এই গুরুতর সমস্যার সমাধানের জন্যে কৃষকদের সাথে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন।

নাসিক জেলার ধোন্দেগাঁও গ্রামের কৃষকরা গত দুই বছর ধরে তাদের ঋণ হিসেব শেষ করার জন্যে বারবার এনডিসিসিতে গেলেও তারা একটি প্রশাসনিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষকরা ঋণ পরিশোধের জন্যে ব্যাংকে তাদের পরিবারের সদস্যদের হিসেবে থাকা অর্থ ব্যবহার করতে চাইলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা বারবার নগদ অর্থ প্রদান করার উপর জোর দিচ্ছিল। কিন্ত ব্যাংক টেলাররা এটা করতে না দেওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিল।

সমাধানের জন্যে কৃষক এবং মায়া খোদভে এনডিসিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিঃ পিংলের সাথে দেখা করে তাকে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। মিঃ পিংলে তাদের যুক্তি মেনে নেন এবং দেখেন যে একই ব্যাংক থেকে কৃষকরা তাদের পরিবারের হিসেব থেকে ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে ঋণ পরিশোধ আটকে রাখার কোন দরকার নেই। এটি ঋণ সংগ্রহকে দ্রুততর করে কৃষকদের আরোপিত চক্রবৃদ্ধি সুদ থেকে মুক্তি দেবে এবং নতুন ঋণের জন্যে মূলধনকে মুক্ত করবে। মায়া খোদভে হস্তক্ষেপ করে কৃষকদের সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে উৎসাহিত না করলে তারা হয়তো ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দেখা করতেই যেতো না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .