- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বর্ণিল রূপ, না দেখলে মিস করবেন!

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, অ্যাক্টিভিজম, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, যুবা, শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি, সাহিত্য
[1]

বর্ণিল সাজে সাজছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন। ছবি তুলেছেন এহসানুল ইসলাম [2]। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশ্বের গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শাটল ট্রেন [3] আছে,যার মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় [4] অন্যতম। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে এটি ২২ কিলিমিটার (১৪ মাইল) দুরে অবস্থিত এবং এর শাটল ট্রেনগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে সাশ্রয়ী ভ্রমণের মাধ্যম এবং এক আবেগ ও ভালোবাসার নাম। জার্মানির একজন তরুণ শিল্পী ট্রেনগুলিকে এক চলন্ত শিল্পকর্মে রূপান্তরিত করেছেন। তার করা শাটল ট্রেনের গ্রাফিতি শুধু ক্যাম্পাস নয়, সারাদেশেও সাড়া ফেলেছে।

১৯৮০ সালে চালু হওয়া [5] সাত জোড়া এই ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০-১২ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। ট্রেনের প্রতিটি বগি, সিট, পাটাতন গল্প-আড্ডা, খুনসুটি আর বন্ধুত্বের মুহূর্তের সাক্ষী যেন!

লুকাস জিলিঞ্জার জার্মানির আরইউএসবি আর্ট গ্রুপের প্রধান শিল্পী [6]। তিনি মূলত গ্রাফিতি আর্টিস্ট। তিনি কিছু মাস আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরতে এলে শাটল ট্রেনে গ্রাফিতি রং করার আগ্রহ জাগে। কিন্তু নানা দাপ্তরিক জটিলতায় অনুমতি পেতে সময় লাগে। অবশেষে গত ২২ জুলাই তিনি শাটল ট্রেনগুলোর নতুন রূপ দেয়ার কাজ শুরু করেন তার পত্নী লিভিয়া জিলিঞ্জার এর সাথে। তিনি নিজেই প্রকল্পটির অর্থায়ন করেছেন, যদিও রঙগুলো দিয়েছেন অন্য একজন। এর আগেও তিনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় উড়োজাহাজ, স্টিমার ও ট্রেনের গ্রাফিতি করেছেন।

নোমান হাসান ইউটিউবে [7] ট্রেনটির নতুন চেহারার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন:

লুকাস জিলিঞ্জারের রংতুলির ছোঁয়ায় শাটল ট্রেনগুলো যেন হয়ে উঠছে যেন এক চলন্ত শিল্পকর্ম [6]। এতে স্থান পেয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকার সংসদ ভবন, সিআরবি, সূর্যাস্তের দৃশ্য, সমুদ্র, পাহাড়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছে তার স্ত্রী লিভিয়া জিলিঞ্জার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

[1]

জার্মান গ্রাফিতি আর্টিস্ট লুকাস জিলিঞ্জার ট্রেনে গ্রাফিতি করছেন। ছবি তুলেছেন এহসানুল ইসলাম [2]। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

লুকাস জিলিঞ্জারের করা শাটল ট্রেনের গ্রাফিতি দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। অনেকে এইসব ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছেন। সাবেক শিক্ষার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী [8] ফিরে গেছেন গান-আড্ডায় মুখরিত শাটল ট্রেনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যাওয়ার দিনগুলোতে। তিনি লিখেছেন:

আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বর্ণিল রুপ, আমার মতো সকলকেই মুগ্ধ করেছে নিশ্চিত। অনেক অনেক স্মৃতি বিজড়িত এই শাটল ট্রেন!! অনেক শিক্ষনীয় ঘটনার সাক্ষী এই শাটল ট্রেন, অনেক হাসি, তারুণ্যের উচ্ছাস, আড্ডা, বা একমনে বইয়ের পাতায় চোখ বোলানো, অথবা ২০ কিমি গতির সর্পিল ট্রেনের এঁকেবেকে চলার সময় দূর আকাশে তাকিয়ে থাকা, কিংবা ছুটে চলা ট্রেনের আশেপাশের জনজীবনের বৈচিত্রতা আমাদের জীবনবোধ সর্ম্পকে অনেক অনেক অমূল্য শিক্ষা দিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে শাটল ট্রেন মানেই সারাদিনে ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বন্ধুর সাথে গানের সুরে গলা মেলানো। কে বড়, কে ছোট সেই সম্পর্কের দূরত্ব ভুলে তুমুল আড্ডায় মেতে ওঠা। তারই উদাহরণ মিলবে ইউটিউবে পাওয়া নাইমুদ্দিন এর এই ভিডিওটিতে [9]:

এইসব গান নিয়ে “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনের গান [10]” শিরোনামে একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে যার আছে ১২০০ এর বেশি সদস্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনগুলো রঙিন করার উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ট্রেনগুলোতে ম্যুরাল আঁকা হয়েছে। আর এতে অংশ নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ছাত্র ও লেখক জয়দীপ দে [11]। তিনি সেগুলোর কথা উল্লেখ করে লিখেছেন:

আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থা দুবার শাটলে ম্যুরাল করা হয়েছিল। প্রত্যেকবারই আমি সে দলে কাজ করেছি। এরপরও অনেকবার ম্যুরাল করা হয়েছে। এ নতুন কিছু নয়। এর জন্য যে খুব বেশি খরচ হয় তা না। কিন্তু তখন কেউ এটা নিয়ে খুব একটা হৈচৈ করেনি। আজ হঠাৎ এই আদিখ্যেতা কেন?
কারণ সাদা সাহেব এসে একেঁ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সাদা সাহেব কী আঁকছেন? তার সঙ্গে আমাদের আবেগ ঐতিহ্য সংস্কৃতির কতটা মিল আছে? আর এই স্পেস তো আমাদের শিল্পীদের ‘হক’। আচ্ছা , আমাদের দেশের কোন শিল্পী জার্মানিতে গিয়ে কি এমন স্পেসে ছবি আঁকতে পারবে? […]

[12]

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনে শাটল ট্রেন। ছবি তুলেছেন মুহীন রিয়াদ। সিসি বিওয়াই-এসএ ৪.০ লাইসেন্সের আওতায় উইকিপিডিয়া [12] থেকে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে প্রিয় এই ট্রেন নিয়ে অভিযোগেরও অন্ত নাই – গ্রীষ্মের দিনে ট্রেনে পাখা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। নতুন গ্রাফিতিগুলো শাটল ট্রেনের চেহারা উন্নত করেছে, তবে প্রযুক্তিগত কিছু উন্নতি এবং মেরামত করে ভ্রমনযোগ্য করে সামগ্রিক শাটলের অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছে [13] অনেক ছাত্রছাত্রী।