ভারতের একজন সাঁওতালি ভাষার ডিজিটাল কর্মী প্রশান্ত হেমব্রমের সাথে সাক্ষাৎকার

প্রশান্ত হেমব্রমের সৌজন্যে পাওয়া ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

আমাদের চলমান ধারাবাহিকের অংশ হিসেবে ডিজিটাল স্থানে এশীয় ভাষার প্রচারের জন্যে সক্রিয় কর্মীদের কাজকে তুলে ধরতে গিয়ে আমরা ভারতের প্রশান্ত হেমব্রমকে (@প্রশান্তহেমব্রম) উপস্থাপন করতে চাই।

হেমব্রম পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে কথ্য সাঁওতালি ভাষাকে অনলাইনে আরো সহজলভ্য করতে কাজ করেন।

রাইজিং ভয়েসেস সম্প্রতি অনলাইন স্থানগুলিতে তার ভাষার স্থান খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আরো জানতে ইমেলের মাধ্যমে তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

রাইজিং ভয়েস (আরভি): অনুগ্রহ করে আমাদেরকে আপনার নিজের এবং আপনার ভাষা-সম্পর্কিত কাজ সম্পর্কে বলুন।

প্রশান্ত হেমব্রম (পিএইচ):  আমি সম্প্রতি জীববিজ্ঞানে (উদ্ভিদবিদ্যা) স্নাতকোত্তর করেছি। অনলাইনে সাঁওতালি ভাষার বিকাশের উপায় পরিকল্পনা করে আমি আমার অবসর সময় পার করি।

এই ৩ বছরে আমি আমার ভাষা এবং অন্যান্য ভাষার জন্যে অনেক প্রকল্প পেয়েছি। সাঁওতালি আমার মাতৃভাষা এবং আমি ইংরেজি, হিন্দি, ওড়িয়া, সম্বলপুরি এবং হো ভাষাও জানি। আমাকে বাড়িতে সাঁওতালি শেখানো হয়েছে। সাঁওতালি ভাষায় আমি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করলেও আমি সেটা করার পরিকল্পনা করছি। আমি ইউটিউব ভিডিও থেকে শিখে, এএসইসিএ, এআইএসডাব্লিউএ ইত্যাদি আয়োজিত অফলাইন সেমিনারে যোগ দিয়ে ২০১৮ সাল থেকে লিখতে এবং টাইপ করতে শিখেছি। এছাড়াও ২০১৮ সালে আমি উইকিপিডিয়া, কমন ভয়েস, গুগল জনউৎস, তাতোয়েবা, মোজিলা অনুবাদ দল ইত্যাদির মতো বিভিন্ন মুক্তউৎস প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করি যা অদূর ভবিষ্যতে সাঁওতালি সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখবে। সাঁওতালি ভাষার জন্যে উন্মুক্ত প্রকল্প সম্পর্কিত আরো তথ্যের জন্যে অনুগ্রহ করে আমার ব্লগ পোস্ট পড়ুন।

আরভি: অনলাইন ও অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আপনার ভাষার বর্তমান অবস্থা কী?

পিএইচ: মাঠ পর্যায়ে (অফলাইন/অনলাইন ক্লাস, সন্দেহের অধিবেশন ইত্যাদি) অনলাইনে মানসম্পন্ন বিষয়বস্তুর পরিমাণ বাড়ানোর জন্যে আরো কাজ করা হয়েছে। ভারতীয় সরকার সাঁওতালি ভাষায় প্রযুক্তি ও বিষয়বস্তু সমর্থনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা ফন্ট তৈরি করেছে, সাঁওতালি এবং আরো অনেক ভাষায় স্থানীয় সফ্টওয়্যার, তারা একটি অনলাইন বিকাশপিডিয়াও তৈরি করেছে।

মাঠ পর্যায়ে (অফলাইন/অনলাইন ক্লাস, সন্দেহের অধিবেশন ইত্যাদি) অনলাইনে মানসম্পন্ন বিষয়বস্তুর পরিমাণ বাড়ানোর জন্যে আরো কাজ করা হয়েছে। ভারতীয় সরকার সাঁওতালি ভাষায় প্রযুক্তি ও বিষয়বস্তু সমর্থনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা ফন্ট তৈরি করেছে, সাঁওতালি এবং আরো অনেক ভাষায় স্থানীয় সফ্টওয়্যার, তারা একটি অনলাইন বিকাশপিডিয়াও তৈরি করেছে।

উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের স্থান দিয়ে সাঁওতালি ভাষাকে সমর্থন করেছে। আমাদেরকে “সাঁওতালি ভাষা ব্যবহারকারী উইকিমিডিয়ান দল” বলা হয়, আমিও যার একটি অংশ। আমরা সাঁওতালি ভাষার প্রচার করি এবং ইন্টারনেটে এর লিখিত বিষয়বস্তু ছড়িয়ে দিই। আমাদের তিনটি দেশের অবদানকারী রয়েছে: বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপাল।

এছাড়াও বিভিন্ন স্বাধীন গবেষক সাঁওতালি ভাষা নিয়ে কাজ করছে।

অফলাইনে আমাদের ভাষার অবস্থা খুবই ভালো কারণ প্রচুর বই প্রকাশিত এবং প্রশংসিত হয় (যেমন: মন কি বাত: প্রধানমন্ত্রী মোদি সাঁওতালি ভাষায় সংবিধান অনুবাদ করার জন্যে অধ্যাপক টুডু নামে পরিচিত পুরুলিয়ার অধ্যাপকের প্রশংসা করেছেন)। সাহিত্য একাডেমি, এএসইসিএ, এআইএসডাব্লিউএ সংগঠন ভাষার উন্নয়নে কাজ করে।

এর অনলাইন উপস্থিতির বিষয়ে বলতে গেলে শিক্ষাগত উপকরণ পাওয়া যায় না –যদিও বা পাওয়া যায়, সেগুলির উদ্দেশ্যে গবেষণা। কম শিক্ষার হারের কারণে কম লোক অনলাইন এবং অফলাইন বিষয়বস্তু লিখছে। উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্নরা ভাষা প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক কিছু জানে না, তারা অস্তিত্বশীল হলেও তাদের সচেতনতা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা দরকার। শিক্ষা-সম্পর্কিত ভিডিওর চেয়ে বিনোদনের উপকরণ বেশি পাওয়া যায়।

আরভি: ডিজিটাল স্থানে আপনার ভাষার উপস্থিতি দেখার জন্যে আপনার অনুপ্রেরণাগুলো কী কী?

পিএইচ: আমি অনলাইনে আমার ভাষার বিষয়বস্তু খুঁজে পেলে, আরো বেশি লোক তাদের ভাষায় টাইপ করছে এবং লোকেদের জ্ঞান প্রদান করছে দেখতে পেলে আমি খুব অনুপ্রাণিত বোধ করি। এটি আমাকে আমার দিক থেকেও কিছু ভাগাভাগি করতে বা অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত করে। বাস্তবে আমি অনলাইনে সাঁওতালি লেখা শুরু করতে শিখেছি।

আমার ভাষায় প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়বস্তু না পেলে আমিও নিরুৎসাহিত বোধ করি। আমি যখন কিশোর ছিলাম তখন এমন অবস্থা ছিল। এখন আমি পরিণত এবং জানি কিভাবে ফাঁক-ফোকর খুঁজে বের করতে হয় এবং আমি সেগুলো পূরণ করার উপায় আবিষ্কার করছি। সেই দিক থেকে আমি অনেক মুক্তউৎস প্রকল্প আবিষ্কার করেছি। আমি মনে করি আমরা এসবে অবদান রাখতে পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেক উপকৃত হবে।

সমস্যা হলো অনলাইনে সাঁওতালি ভাষায় (এবং ভারতের অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক ভাষায়) খুব কম ডেটা পাওয়া যায়। তাই আমরা ব্যক্তি হিসেবে অন্তত আমাদের অবসর সময়ে যতটা সম্ভব জনউৎস থেকে  ডেটা জড়ো করতে সক্ষম হতে পারি। তারপর গবেষকরা আমাদের ডেটা ব্যবহার করতে এবং আমাদের সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্যে প্রযুক্তি বিকাশ করতে পারবে।

এছাড়াও আমি আমার মাতৃভাষায় ডিজিটাল বিষয়বস্তুর মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছি যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি আমি সরাসরি এ ধরনের গবেষণার কাজে যুক্ত হয়েছি। এখন পর্যন্ত আমি অনলাইনে সাঁওতালি বিষয়বস্তু তৈরি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এমন কাউকে পাইনি।

আরভি: আপনার ভাষাকে অনলাইনে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে বাধা দেয় এমন কিছু চ্যালেঞ্জ বর্ণনা করুন।

পিএইচ: সাহিত্যিকদের মধ্যে ডিজিটাল নিরক্ষরতা এবং সচেতনতার অভাব। মানুষ অনলাইনে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর তৈরির দিকে তেমন মনোযোগ দিচ্ছে না। মোটের উপর ভারতের আদিবাসী জনগণের জ্ঞান বিনিময়ের জন্যে তাদের ভাষা ব্যবহার করে আর্থিক, শাসন, প্রাতিষ্ঠানিক, ভাষাগত এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রবেশাধিকার সর্বনিম্ন।

বেশিরভাগ লোকইদরিদ্র হওয়ায় কেউ কেউ স্মার্টফোন কিনতে পারলেও তারা কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য রাখে না। কিন্তু,স্মার্টফোনে ভারী কাজগুলি সম্ভব নয় বলে তারা আরো ভাল বিষয়বস্তু তৈরি করতে পারে না।

প্রযুক্তিগত সহায়তার অভাব বিভিন্ন বিষয়বস্তু নির্মাতাদের নিরুৎসাহিত করছে।

২০০৮ সালে সাঁওতালি ভাষার লিপির ৫.১ ইউনিকোড সংস্করণ চালু করা হয়। এমনকি ১২ বছর পরেও সাঁওতালি ভাষা গুগল, ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্রধান ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলিতে ভাষা বিকল্প হিসেবে যুক্ত নয় বা সরে যাওয়ার উপায় হিসেবে পাওয়া যায় না। অনুরোধের ভিত্তিতে পোয়েডিটর.কম-এ সাঁওতালি ভাষা একটি বিকল্প হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এর আগে জনগণ সাঁওতালি ভাষায় অবদান রাখতে পারতো না।

অনলাইনে কম বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করা হয় বলে অনেক আদিবাসী ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। মাল্টিমিডিয়ার বেশিরভাগই বিনোদন-সম্পর্কিত বিষয়বস্তু বলে পাঠ্য বিষয়বস্তুর তুলনায় এই ধরনের বিষয়বস্তুর খুঊঁজে পাওয়া এবং আবিষ্কারের সম্ভাবনা কম। অনেক আদিবাসী জনগণের মধ্যে প্রতিবেশী প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের সামাজিক নিপীড়ন থেকে স্বাধীনতার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান।

আদিবাসী ভাষার জন্যে একটি লেখার পদ্ধতির উপর অন্যটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো ভাষাগত বিভিন্ন নিয়ামকের বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ বিষয়বস্তু বৃদ্ধির জন্যে ক্ষতিকারক হয়েছে। অনুরূপ ভাষাগত দ্বন্দ্ব এবং ইন্টারনেটে বিদ্বেষপূর্ণ বিভিন্ন পোস্ট উদীয়মান বিষয়বস্তু নির্মাতাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

দাপ্তরিক ব্যবহারের বাইরে একই ভাষার জন্যে একাধিক লেখার পদ্ধতির ব্যবহা ভাষার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এটা সত্য যে আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। আপনি অনুমান বিভাগ থেকে আরো পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

আরভি: অল্পবয়সীদের তাদের নিজেদের ভাষা শেখা শুরু বা তাদের নিজেদের ভাষা ব্যবহার চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে কোন কোন দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

পিএইচ: আমি ব্যবহার করো নয় হারিয়ে ফেলো নীতিটি মেনে চলি। আমাদের ভাষাকে নথিভুক্ত করার চেয়ে কোথাও ব্যবহার করাটা ভালো। আমার মতে এই ভাষাটিকে সক্রিয় রাখার জন্যে আরো অংশগ্রহণ প্রয়োজন, বিনা দ্বিধায় দৈনন্দিন জীবনে টাইপ করা, লেখা, কথা বলা এবং লজ্জা না করেই ভাষাটি ব্যবহারের মতো কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

সাঁওতালি উইকিপিডিয়া সাঁওতালি ভাষায় আরো নিবন্ধ লেখার জন্যে প্রতি মাসে বিভিন্ন অনলাইন এডিটাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যা অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে।

সম্প্রতি কিছু অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যা আমাদের সাঁওতালি ভাষাকে গুগলে আনতে চেষ্টা করার স্থান – গুগল গণউৎসে আরো অনলাইন অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে।

ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আমি কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ অনুবাদ করেছি যা কিছু লোককে নিজে থেকেই অনুবাদ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। এটি এখনো বাড়ছে এবং এখন প্রায় ২০টি অ্যাপে রয়েছে।

অনলাইন এবং অফলাইন অনুষ্ঠান/ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এখনকার মতো সচেতনতা তৈরি করতে পারি। সামাজিক গণমাধ্যমের মতো দৈনন্দিন অনলাইন কাজে আমাদের ভাষা ব্যবহার করাটাও একটি বড় সাহায্য হতে পারে। শুধু বিনোদনমূলক ভিডিও তৈরি না করে অনলাইনে মানসম্পন্ন শিক্ষার বিষয়বস্তু তৈরিতে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .