- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মালয়েশিয়ায় ‘বিচারিক স্বাধীনতার জন্যে পদযাত্রা’য় হাঁটা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া, আইন, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাজনীতি, সরকার
[1]

‘বিচারিক স্বাধীনতার জন্যে পদযাত্রা’ চলাকালে আইনজীবীরা। মালয়েশীয় বারের টুইটার পোস্ট থেকে নেওয়া ছবি [1]

পুলিশ মালয়েশিয়ার বার কাউন্সিলের নেতাদের “বিচারিক স্বাধীনতার জন্যে পদযাত্রা” [2] আয়োজনে তাদের ভূমিকার জন্যে তলব করেছে।

প্রায় ৫০০ আইনজীবী ১৭ জুন তারিখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেওয়ার জন্যে সংসদের কাছে জড়ো হয় [3]। চিঠিতে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের (এমএসিসি) পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণকে জানায় যে এটি আপিল আদালতের বিচারক নাজলান মোহাম্মদ গাজালির ব্যাংক হিসাবে “অজ্ঞাত” পরিমাণ অর্থ – দশ লক্ষ রিঙ্গিত (প্রায় ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা) – থাকার জন্যে তদন্ত করছে [4]

চিঠিটিতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে বিচারকদের তদন্ত করা ভুল না হলেও বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করা উচিত নয় [5]

…আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে কোন তদন্ত… একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের অধীনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং জনসাধারণের আস্থা নষ্ট না করে পরিচালিত হওয়া উচিত, যা ন্যায়বিচার পরিচালনার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখবে।

এটি এমএসিসি যেভাবে তদন্ত ঘোষণা করেছে তার নিন্দা করেছে।

…যে অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে এমএসিসি অনির্দিষ্টকালের জন্যে এবং কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত বা বন্ধ ছাড়াই প্রকাশ্যে উচ্চতর আদালতের বিচারকের ফৌজদারি তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে এবং বিচারকের নাম জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করেছে, সেটা একটা অপরাধের সমতুল্য বিচার বিভাগকে ভয় দেখানোর কাজ।

উচ্চতর আদালতের এই বিচারক সাবেক প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি নাজিব রাজাক [6]কে তহবিল আত্মসাতের জন্যে দোষী সাব্যস্ত করা বিচারকদের একজন।

অনেকে মনে করেন এমএসিসি হাই-প্রোফাইল মামলা পরিচালনাকারী অন্যান্য বিচারকদের “ভীতি প্রদর্শন” [7] করার চেষ্টা করছে।

মালাক্কা বার থেকে আজ আমরা #ডাব্লিউ৪জেআই [8] -তে এসেছি। যদিও আমাদের সংসদে যেতে বাধা দেওয়া হলেও স্মারকলিপিটি সফলভাবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গ্রহণকারী ওয়াইবি মাস এরমিয়াতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পার্লিস, পেনাং, ইপোহ, সেলাঙ্গর, কুয়ালা লামপুর,  এন৯ এবং জোহরের সদস্যদের সাথেও দেখা হয়েছিল!

বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ অবরোধ তৈরি করে [11] আইনজীবীদের সংসদ ভবনের দিকে যেতে বাধা দেয়।

পদযাত্রায় বাধা দিচ্ছে পুলিশ। দরকষাকষি চলছে।

চিঠিটি হস্তান্তরের জন্যে পুলিশ সংসদের কাছে মাত্র ২০ জন আইনজীবীকে যেতে দিবে বলার পরে আলোচনা ভেঙ্গে যায়। আইন প্রতিমন্ত্রী মাস এরমিয়াতি সামসুদিন [14] চিঠিটি গ্রহণ করার জন্যে সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব [15] এবং আইনমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি তুয়াংকু জাফরে [16]র কাছে তা পৌঁছে দিতে রাজি হওয়ার পর বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।

বিক্ষোভের একদিন পর পুলিশ বলেছে যে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আইন ২০১২ এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (সংক্রমিত স্থানীয় এলাকার মধ্যে ব্যবস্থা) (জাতীয় পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা) (এন্ডেমিক সংক্রমণ পর্যায়) প্রবিধান ২০২২ এর সম্ভাব্য লঙ্ঘনের জন্যে বিক্ষোভের আয়োজকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে [17]

২৪ জুন তারিখে মালয়েশীয় বার কাউন্সিলের নেতাদের পুলিশ ডেকে পাঠালে [18] কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদন জারি করা পর্যন্ত তারা কোনো বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেছে [19]। এছাড়াও দলটি পুলিশি তদন্তের নিন্দা জানিয়েছে [20]:

বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার জন্যে এবং ক্ষমতা পৃথকীকরণের মতবাদকে সমুন্নত রাখার জন্যে উদ্দেশ্যে করা কাজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অযৌক্তিক ও অবর্ণনীয় প্রদর্শনী এবং (পুলিশ) এর মাধ্যমে ভয় দেখানোতে পর্যবসিত হয়েছে।

পুলিশি পদক্ষেপ নাগরিকদের জন্যে একটি খারাপ উদাহরণ স্থাপন করেছে। কারণ এটি আইন মেনে চলার পরেও নাগরিকরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগে স্বাধীন নয় এবং শুধু ক্ষমতায় থাকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দায়মুক্তভাবে বেআইনিভাবে কাজ করতে পারে এবং করবে।

বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকব কোনো সংস্থা বা কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করেই তার প্রতিক্রিয়া জানান [21]:

তদন্তের ব্যাপারে তাদের (আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার) মিডিয়াকে বলার কোন প্রয়োজন নেই যে কে কে জড়িত…।

আমি বিচারকদের অপরাধমূলক ভুলে জড়িত সন্দেহে তদন্তের ক্ষেত্রে ভুল কিছু দেখি না। আমরা বলছি না যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, কারণ এটি শুধু তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।

নাগরিক সমাজ গোষ্ঠী সিভিকস ঘটনাটিকে মালয়েশিয়ায় নাগরিক স্থানের সঙ্কোচনে [22]র উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে:

মানবাধিকার পর্ষদের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সরকার নিজ দেশে মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মীদের এবং সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরের উপর সরকারের ক্রমাগত দমন মানবাধিকার পর্ষদে নির্বাচন করার সময় মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।

“বিচারিক স্বাধীনতার জন্যে পদযাত্রা” সম্পর্কে আরো জানতে এই ভিডিওটি দেখুন [23]