- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ব্রাজিলীয় চেহারা সনাক্তকরণ রায়টি সারাদেশের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হতে পারে

বিষয়বস্তু: ব্রাজিল, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, জিভি এডভোকেসী, Unfreedom Monitor

ছবির সৌজন্যে লাস মার্টিনস

প্রতিদিন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ সাও পাওলোর মেট্রো ব্যবস্থা ব্যবহার করে। তাদের প্রত্যেকের মুখ একটি চেহারা সনাক্তকরণ ব্যবস্থায় রেকর্ড করা থাকতে পারে যা ২০২০ সালের শুরু থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২৩ মার্চের একটি রায়ে মেট্রো কোম্পানিকে প্রযুক্তি ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সাও পাওলো রাজ্যের একটি আদালত [1]

মেট্রো তার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা “ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত সাধারণ আইন কঠোরভাবে মেনে চলে” দাবি করে [2] সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করলেও একই আদালত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে।

রায়টিকে অসাংবিধানিক এবং ডিজিটাল নাগরিক অধিকারের বিষয়ে ব্রাজিলীয় আইনি কাঠামোর বাইরে বিবেচিত বলে মনে করা এই ডেটা সংগ্রহ বন্ধ করার জন্যে জনস্বার্থে নাগরিক মামলা [3] দায়ের করা সুশীল সমাজের একটি দলের বিজয় বলে মনে করা হয়।

এই গোষ্ঠীটি ২০২২ সালের মার্চের শুরুতে এই ডেটা সংগ্রহে বাধা দিয়ে সমষ্টিগত নৈতিক ক্ষতির জন্যে কমপক্ষে ৪ কোটি ২০ লক্ষ ব্রাজিলীয় রিয়াল (প্রায় ৭৯ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ প্রদান করে সাও পাওলো রাজ্য মেট্রোর বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি জন-মামলা দায়ের করে।

কিন্তু গোষ্ঠীটি সাও পাওলো সাবওয়ে ব্যবস্থার লাইনগুলির বাইরে আরো বড় প্রভাব ফেলতে চায়। তারা আইনি কাঠামোতে মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রায় কিছুই না বলা দেশটিতে এই ধরনের ব্যবস্থা সম্পর্কে আইনি ব্যবস্থা গঠনে একটি ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।

“আমরা বর্তমানে এখনো নতুন এবং আইনশাস্ত্র প্রণয়ন ও বিচার ব্যবস্থায় বোঝাপড়ার প্রক্রিয়ায় থাকা একটি সুরক্ষামূলক আইনি কাঠামো – ডেটা সুরক্ষা সম্পর্কিত সাধারণ আইন কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে তা নিয়ে যে বিতর্ক করছি তার উপর এই রায়টি একটি জাতীয় প্রভাব ফেলতে পারে,” ব্রাজিল ও দক্ষিণ আমেরিকার আর্টিকেল ১৯ [4] এর আইনি রেফারেন্স কেন্দ্রের সমন্বয়কারী শেইলা ডি কারভাইয়ো ব্যাখ্যা করেছেন।

সাও পাওলো রাজ্য জনসুরক্ষা দপ্তর; কেন্দ্রীয় জনসুরক্ষা দপ্তর; ব্রাজিলীয় ক্রেতা সুরক্ষা প্রতিষ্ঠান (আইডিইসি); একটি সামাজিক যোগাযোগ জোট ইন্টারভ’জেস (আন্তঃস্বর) [5]; এবং মানবাধিকার প্রচারণা জোট – সিএডিএইচইউসহ মামলাটিতে স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলির একটি হলো আর্টিকেল ১৯।

কারভাইয়ো ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে ব্যক্তিগত ডেটা পরিচালনা করতে হয়, সম্মতির প্রয়োজনীয়তা এবং এই ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতিগুলির বৈষম্যমূলক প্রভাব এবং সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হলো এই মামলাটির মূল লক্ষ্য।

একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে আইনজীবী গ্লোবাল ভয়েসেসকে বলেন, “এই মামলাটি [এর যুক্তি প্রদর্শনসহ] ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আরো সুরক্ষামূলক মাপকাঠি স্থাপনের পথ খুলে দেয়৷”

গত কয়েক বছর ধরে কংগ্রেস সদস্যরা বিশেষ করে জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের পদ্ধতিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন খসড়া আইন [6] প্রস্তাব করেছে। তবে সিনেট এই বিষয়ে আরো অন্যান্য বিদ্যমান প্রস্তাবকে অন্তর্ভূক্ত করে একটি নতুন এবং আরো গোপনীয়তা-সচেতন খসড়া আইনের আশায় বিশেষজ্ঞদের সাথে বিতর্ক বিশেষজ্ঞদের সাথে বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে [7]

সাও পাওলো মেট্রো ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি মেট্রো লাইনের মধ্যে তিনটিতে একটি “ছবিসম্বলিত ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা” চালু করার কথা ঘোষণা করে [8]। আগে থেকেই ৫ কোটি ৮৬ লক্ষ ব্রাজিলীয় রিয়াল (প্রায় ১০৭ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে রাখা আইরিশ এবং ফরাসি সংস্থা মিলে গঠিত কনসোর্টিয়াম ইঞ্জি ইনিও জনসনকে প্রকল্পটি দেওয়া হয়।

সেই সময়ে জনস্বার্থে মামলা দায়েরকারী সুশীল সমাজের সংগঠনগুলির একটি জোটকে ব্যবস্থাটি সম্পর্কে আরো তথ্য পেতে আদালতে যেতে হয়। কীভাবে উদ্যোগটি ২০১৮ সালে অনুমোদিত এবং ২০২০ সালের আগস্টে কার্যকর হতে যাওয়া ব্রাজিলের ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত সাধারণ আইন (এলজিডিপি) [9] এর প্রতিষ্ঠিত নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে সেটা তারা জানতে চেয়েছিল।

দুই বছর পর সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। মামলার পিছনে থাকা সংস্থাগুলির মতে, ব্যবস্থাটি বারবার এলজিডিপি লঙ্ঘন করে এবং কেন্দ্রীয় সংবিধান, শিশু ও কিশোরদের জন্যে সংবিধি এবং ভোক্তা অধিকারের জন্যে নিয়মের মতো  অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক।

মামলাটিতে দাবি করা হয়েছে যে সাও পাওলো মেট্রো কোম্পানি সম্মতি ছাড়াই যাত্রীদের উপর চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তি এবং যথাযথ স্বচ্ছতা ছাড়াই তাদের ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবহার করছে এবং ব্যবহারকারীদের কাছে পাওয়া ডেটা কীসের জন্যে এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে বা এটা দিয়ে কী করা হবে সে সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না।

তারা আরো দেখিয়ে দেয় যে কোম্পানিটি প্রোগ্রামটির ঝুঁকি মূল্যায়ন করেনি বা আইনিভাবে দরকারী মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তির ভেতরকার সমস্যাগুলি হ্রাস করেনি। এছাড়াও এর মুখ সনাক্তকরণ চর্চা মৌলিক মানব ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন করে, যা বিশেষ করে ভেতরকার জাতিগত পক্ষপাতে ঝুঁকিপূর্ণ প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীসহ সকল সরকারি পরিবহন ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করে।

স্রোতের বিপরীতে চলা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু জায়গা রাজ্য এবং পৌরস্তরে চেহারা সনাক্তকরণ নিষিদ্ধ করার দিকে গেলেও অন্যরা এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারকে ক্রমবর্ধমানভাবে স্বাভাবিক করছে, জানিয়েছে ওয়্যার্ড [10]। এই পরস্পর বিরোধিতা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব তুলে ধরে।

ইউরোপীয় সংসদ প্রকাশ্য স্থানে বেসরকারি মুখ সনাক্তকরণ ডাটাবেসে এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পুলিশিংয়ে [11] পুলিশের চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধের আহ্বান [12] জানিয়েছে।

তবে ব্রাজিল মনে হচ্ছে স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটছে। সাও পাওলো মেট্রো মুখ সনাক্তকরণের স্বীকৃতির আশ্রয় একমাত্র সরকারি সত্তা নয়। সারাদেশের রাজ্য সরকারগুলি বিভিন্ন খাতে এটি প্রয়োগ করছে। একটি স্বাধীন ব্রাজিলীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্সতুতো ইয়ারাপে [13]র হিসেবে, ২০১৯ সাল নাগাদ ১৫টি রাজ্যে ৪৭টি ক্ষেত্রে মুখ সনাক্তকরণ ব্যবহৃত হয়েছে।

জনসংখ্যার ৫৬.১ শতাংশ নিজেদের কৃষ্ণাঙ্গ বলে ঘোষণা করা এমন একটি দেশে এটা বিশেষভাবে সমস্যাযুক্ত। ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতিবিদ রুই কস্তার বামপন্থী সরকার বাহিয়া রাজ্যটিকে স্পষ্টতই একটি “চেহারা সনাক্তকরণ পরীক্ষাগারে” রূপান্তরিত করছে, ইন্তারসেপ্ত ব্রাজিউ [14] জানিয়েছে৷

জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যবস্থার সফলতার সামান্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালের জুলাইয়ে বাহিয়ার সরকার রাজ্যের রাজধানী সালভাদরে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে কর্মসূচিটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়।

নতুন ব্যবস্থাটি এক কোটি ৮০ লক্ষ ব্রাজিলীয় রিয়াল (প্রায় ৩৩ কোটি টাকা) মূল্যে হুয়াওয়ের সাথে অংশীদারিত্বে স্পেনীয় প্রতিষ্ঠান লেসিজা সরবরাহ করেছে। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্যামেরাগুলি মুখের পরিচয় সংগ্রহ করে সেগুলিকে একটি ব্যবস্থায় সংরক্ষণের মাধ্যমে একই ব্যক্তির ছবিগুলিকে একত্রিত করবে। ইন্তারসেপ্ত অনুসারে, ব্যবস্থাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সংগৃহীত ছবিগুলিকে জননিরাপত্তা সচিবের ডাটাবেইজে থাকা ব্যক্তিদের মুখের সাথে মিলিয়ে দেখবে।

নাগরিক সমাজের সংগঠকদের মতে, ব্রাজিলে এখনো মুখ সনাক্তকরণের প্রযুক্তি ব্যবহার সীমাবদ্ধ এবং এর মাপকাঠি স্থাপন করার মতো একটি আইনি কাঠামোর অভাব রয়েছে।

“আজকে সাধারণ সুযোগ নিয়ন্ত্রণ বা নির্দেশনার অনুপস্থিতির ফলে চেহারা সনাক্তকরণ ব্যবস্থা ব্যবহারের জন্যে নিরঙ্কুশ অনুমোদন পেয়ে যায়,” ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনে [15] ইগারাপে লিখেছেন।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিষয়ে আরো সমন্বিত যে বোঝাপড়াটি হয়েছে সেটাই এই মামলার যুক্তি হিসেবে কাজ করেছে। উদাহরণস্বরূপ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন স্বীকার করেছে [16] যে চেহারা সনাক্তকরণের সরঞ্জামগুলি বিশেষত নারী এবং বর্ণের মানুষের বিরুদ্ধে “বৈষম্যকে চিরস্থায়ী ও সম্প্রসারিত করতে” ব্যবহার করা হতে পারে।

ব্রাজিলের একটি সুসংহত আইনি কাঠামো না থাকার মানে সেটা অপব্যবহার ও লঙ্ঘনের ঢালাও অনুমোদন নয়। পাতাল রেল স্টেশন এবং ট্রেনগুলিতে সংগ্রহ করা ডেটা অবৈধভাবে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে বলে সাও পাওলো মেট্রোর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলি যুক্তি দিয়েছে।

অনুমানটির ভিত্তি রয়েছে: যেমন ২০২১ সালে সাও পাওলোর একটি বেসরকারি মেট্রো লাইন পরিচালনাকারী বেসরকারি কোম্পানি ভিয়াকোয়াত্রো (চারপথ)-কে অনুমোদন ছাড়া চেহারা সনাক্তকরণ ব্যবহারের জন্যে নিন্দা করেছে সাও পাওলো রাজ্যের আদালত [17]

সেই সময়ে বিচারক লিখেছিলেন কোম্পানি এবং অন্যান্য তৃতীয় পক্ষের সংস্থার ব্যবহারের জন্যে যে যাত্রীদের ছবি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তাদের সম্মতি ছাড়াই ধারণ করা হচ্ছে সে ব্যাপারেব তার কোন সন্দেহ নেই।

“আমরা খুব সচেতনভাবে প্রযুক্তি আমদানি করছি, যা প্রয়োগ করা হচ্ছে তা কেবল আবার করছি। দেশগুলির বেশিরভাগ যখন এই প্রযুক্তিগুলি পরিত্যাগ করছে তখনো এমনকি এর ত্রুটিপূর্ণ পুনর্ব্যবহার করছি। কিন্তু উচ্চ বৈষম্যের হারবিশিষ্ট দেশগুলি ব্যবহারের জন্যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই প্রযুক্তি বিক্রয় করা হচ্ছে,” কারভাইও ব্যাখ্যা করেন।

তিনি আরো বলেন ফৌজদারি আইনকে সত্যিকারভাবে দ্বন্দ্বের মতো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে না পেরে ব্রাজিল গণবন্দিত্ব ও অপরাধীকরণের যুক্তির উপর চলছে।

“আমরা এটিকে শেষ নয়, প্রথম আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছি। তাই এই ধরনের অধিকার লঙ্ঘনকারী প্রক্রিয়াগুলি আমাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রস্ফুটিত হওয়ার আরো বেশি করে জায়গা পাচ্ছে।”