আমাদের চলমান ধারাবাহিকের অংশ হিসেবে ডিজিটাল স্থানে আফ্রিকীয় ভাষার প্রচারের জন্যে সক্রিয় কর্মীদের কাজকে তুলে ধরতে গিয়ে আমরা নাইজেরিয়ার লুসি চিনিয়েকা ইওয়ালাকে (@লুসিইওয়ালা) উপস্থাপন করতে চাই।
লুসি একজন ইগ্বো-ভাষী। নাইজেরিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য অংশে এই ভাষাটি প্রায় ৩ কোটি স্থানীয় ভাষাভাষী তাদের প্রথম বা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। ইগ্বো উইকিমিডিয়া ব্যবহারকারী দলের সদস্য হিসেবে তার বেশিরভাগ কাজই উইকিমিডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে জ্ঞান ভাগাভাগি করার ওপর জোর দিয়েছে।
রাইজিং ভয়েস (আরভি): অনুগ্রহ করে আমাদেরকে আপনার সম্পর্কে বলুন।
লুসি চিনিয়েকা ইওয়ালা (এলসিআই): আমার নাম লুসি চিনিয়েকা ইওয়ালা। আমি একটি ভাষা শিক্ষা ডিগ্রী (প্রত্যাশী) একজন ডিজিটাল ভাষা কর্মী / অনুবাদক/ সম্পাদক/ স্বেচ্ছাসেবক।
একজন ভাষা কর্মী হিসেবে আমি বিভিন্ন আদিবাসী ভাষার ডিজিটালকরণে আমার কোটায় (যতই ছোট হোক না কেন) অবদান রাখতে ভালোবাসি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমি রেইডএইড_নাইজেরিয়া আয়োজিত হ্যাকাথন অডিওপিডিয়া প্রকল্পের জন্যে স্থানীয় ভাষায় স্বাস্থ্য বিষয়ক নিবন্ধের এক-থন-অনুবাদ এবং এক-থন-সম্পাদনায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি।
আমি উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের একটি উদ্যোগ ইগ্বো উইকিমিডিয়া ব্যবহারকারী দলের এক-থন-অনুবাদ এবং এক-থন-সম্পাদনা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী এবং আয়োজক হিসেবেও জড়িত ছিলাম।
আমি ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে ন্সুক্কা নাইজেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি এক-থন-সম্পাদনা অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ এবং ৫ মার্চ, ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ইগ্বো উইকি সমর্থক ক্লাব, আলভান চালুতে সাহায্য করেছি।
আরভি: অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আপনার ভাষার বর্তমান অবস্থা কী?
এলসিআই: আমি বলবো না যে ইগ্বো ভাষা তার শীর্ষে বা বিলুপ্তির পথে। এর বদলে আমি বলবো এটি পুনর্জন্মের পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন আদিবাসী ভাষার ডিজিটালকরণ প্রচেষ্টার জন্যে ধন্যবাদ। আমি মনে করি ভাষা কর্মীদের করা সাম্প্রতিক এই উন্নয়নের কারণে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আমার ভাষাটির এখনো আশা আছে।
আরভি: ডিজিটাল স্থানে আপনার ভাষার উপস্থিতি দেখার জন্যে আপনার অনুপ্রেরণাগুলো কী কী?
এলসিআই: অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে (বিনোদন এবং স্বাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই) যে হারে আমি অনেক আদিবাসী ভাষাকে তরঙ্গ সৃষ্টি করতে দেখছি, তাতে আমি আবার ভেবে নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করি তাহলে আমার ভাষা কেন এমন সুযোগ পাবে না? আপনি চীনা, কোরীয়, ভারতীয় সিনেমা দেখেন, সাবটাইটেল ছাড়াই সিনেমার ভাষা হিসেবে তাদের ভাষা ব্যবহার করে তাদের ভাষার প্রচার করতে দেখেন। বছরের পর বছর ধরে দেখি বন্ধুরা কোরীয় ভাষায় কথা বলতে হিমশিম খাচ্ছে, কিন্তু কেন? কারণ তারা সিনেমায় তাদের এমনভাবে কথা বলতে দেখেছে। এমন অনেক ঘটনা আমাকে প্রতিদিন উদ্বুদ্ধ করে।
আরভি: আপনার ভাষাকে অনলাইনে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে বাধা দেয় এমন কিছু চ্যালেঞ্জ বর্ণনা করুন।
এলসিআই: এটি একটি ভাষার প্রতি অন্য ভাষার হীনম্মন্যতার অনুভূতি। ইংরেজি ভাষার উপলব্ধি প্রভাবশালী এবং আমার দেশীয় ভাষার উপলব্ধি অধস্তন। কিন্তু ভেবে দেখুন, এই একতরফা বাঁধাধরা চিন্তাটি কে এনেছে? এবং এটিকে তাদের বাচ্চাদের জন্যে বুদ্ধিমান ও চৌকস হওয়ার পথ ভেবে নিয়ে কিছু পিতামাতা তাদের সন্তানদের পূর্বটির পরিবর্তে পরেরটি গলাধঃকরণ করতে বাধ্য করার ফলে এমন তরুণদের জন্ম হয়েছে যারা তাদের আদিবাসী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞ। আর যারা তাদের আদিবাসী ভাষায় কথা বলতেও বা পারে তারা আধুনিক নয় বা বোকা প্রমাণিত হওয়ার ভয়ে সেটা না জানার ভান করে থাকে।
আরভি: অল্পবয়সীদের তাদের নিজেদের ভাষা শেখা শুরু অথবা তাদের নিজেদের ভাষা ব্যবহার চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে কোন কোন দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
এলসিআই: প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন আদিবাসী ভাষা শেখানো এবং শেখা বাধ্যতামূলক করা নিশ্চিত করুন। অল্পবয়সীদের জন্যে আদিবাসী ভাষার প্রতিযোগিতা, কর্মশালা, সংবেদনশীলতার সাথে বিভিন্ন পুরষ্কার যুক্ত করুন। এছাড়াও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ভাষাগুলির জ্ঞানসহ আমন্ত্রিত বিচারকদের মাধ্যমে আন্তঃআদিবাসী ভাষার বিভিন্ন প্রতিযোগিতা/ কর্মকাণ্ড চালাতে হবে।