এই নিবন্ধটি নেপালি টাইমসে প্রথম প্রকাশিত হয়। বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করার একটি চুক্তির অংশ হিসেবে একটি সম্পাদিত সংস্করণ গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনঃপ্রকাশিত হলো৷
১৪ এপ্রিল, ২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার নববর্ষের দিনে ২০৪৫ সালের মধ্যে শক্তির ক্ষেত্রে নেপালের নেট-শূন্য হওয়ার লক্ষ্যের চেয়ে বেশি প্রতীকী আর কিছুই হতে পারে না, কারণ তিনটি নতুন চীনা বৈদ্যুতিক বাস একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভোটে কোসি নদীর একটি সৌর প্যানেল সজ্জার পাশ দিয়ে চলে গেছে।
তিনটি বাসই চীন থেকে সাঝা যাতায়াত সমবায় গণপরিবহন পরিষেবার আদেশ করা ৪০টি ব্যাটারি চালিত বাসের মধ্যে প্রথম চালান। তারা চীনা সীমান্তে মধ্য নেপালের ফুলপিং কাট্টির আর্নিকো মহাসড়ক বরাবর ৪৫ মেগাওয়াট উচ্চ ভোটে কোসি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত নবায়নযোগ্য শক্তিতে চলবে।
কয়েকদিন আগে এই তিনটি বাস নেপাল-চীন সীমান্তে একটি প্রধান কাস্টমস পয়েন্ট তাতোপানি কাস্টমসে পৌঁছেছে এবংকম-ক্লিয়ারেন্সের এই বাসগুলির জন্যে মহসড়কের কিছু কিছু জায়গা অমসৃণ বলে ফ্ল্যাটবেড ট্রাকে এদের কাঠমান্ডুতে আনা হবে। রাজধানী কাঠমুন্ডুতে গ্রেডিয়েন্ট, রাস্তার যোগ্যতা এবং পরিসর পরীক্ষা করার পর বাকি ৩৭টি বাস এই বছরের শেষের দিকে আসবে।
চীনের সিএইচটিসি কোম্পানির সাথে ৩৭ লক্ষ ডলারের (৩২ কোটি টাকার বেশি) চুক্তির মধ্যে রয়েছে চার ঘন্টার মধ্যে একসাথে দুটি বাসে ব্যাটারি চার্জ করতে পারা প্রতিটি ৯০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ২০টি চার্জার সরবরাহ।
“এটাই নেপালে পরিবহন শক্তির ভবিষ্যত,” বলেছেন সাজা যাতায়াত বোর্ডের সদস্য এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানী সক্রিয় কর্মী ভূষণ তুলাধর৷ ” শুধু আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট এবং পেট্রোলিয়াম আমদানি খরচ কমাতে নয়, ডিজেল গাড়ি থেকে বায়ু দূষণ কমাতেও আমাদেরকে বৈদ্যুতিক গণপরিবহনে রূপান্তর করতে হবে।”
তুলাধর কথা বলেছেন কিভাবে বাসগুলো নেপালের ৩ই: শক্তি ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মোকাবেলা করবে । “বৈদ্যুতিক বাস আমাদের জন্যে একটি সুবিধার সাথে আরেকটি সুবিধা,” তিনি আরো বলেন। “মূলধনের খরচ বেশি হলেও, ডিজেলের দাম তো যেমন আছে তেমনই থাকবে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের পরিচালন ব্যয়গুলি কমানো সম্ভবপর হবে।”
এমনকি বর্তমান জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগেও সাঝা যাতায়াতের কর্মকাণ্ড পরিচালনা খরচের ৪০ শতাংশ ছিল জ্বালানি, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মকাণ্ড পরিচালনা খরচ ৫০ শতাংশে বেড়ে যাবে। আর অতিরিক্ত সুবিধা হলো যে ব্যাটারি চালিত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।
৪০টি চীনা বৈদ্যুতিক বাসের পাশাপাশি সাঝা ললিতপুরের মধ্যে চারটি ছোট বাস চালানোর জন্যে একটি ভারতীয় কোম্পানির সাথে আলোচনা করছে। সেখানে পরবর্তীতে আরো বাস যোগ করা হবে।
পরবর্তীতে সাঝা আন্তঃপ্রদেশের দূরপাল্লার সংযোগের জন্যে আরো ১২টি বৈদ্যুতিক বাস যুক্ত করে সম্প্রসারিত হবে। এর আগে বেসরকারি সুন্দর যাতায়াত (ছবিতে) চারটি বৈদ্যুতিক বাসও এনে তাদের রিং রোড রুটে ব্যবহার করে এবং গুনা এয়ারলাইন্স কাঠমুন্ডুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বৈদ্যুতিক র্যাম্প বাসের একটি বহর ব্যবহার করেছে।
নেপাল গত অর্থবছরে প্রায় ২,০০০টি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি করেছে, যার মধ্যে ৮০০টি এই বছরই চীন থেকে রাসুওয়া সীমান্ত দিয়ে আমদানি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত বৈদ্যুতিক যানবাহনে পরিবর্তন হলো পেট্রোলিয়াম খরচ কমানোর জন্যে সরকারের নীতির একটি প্রত্যক্ষ ফলাফল। কিন্তু কর ও খুচরা বিক্রেতার লাভ এখনো বেশি হওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক বাসের দাম এখনো বেশি।
নেপাল ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ২০ শতাংশ বাসকে বিদ্যুতায়িত করার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত বৈদ্যুতিক এসইউভিগুলি কর ছাড় পায় এবং ডিজেল বাসগুলি ভর্তুকি দেওয়া হলেও, উচ্চ শুল্ক এবং অন্যান্য করের কারণে বৈদ্যুতিক বাসগুলির দাম পাঁচগুণ বেশি৷
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নেপালের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা গত বছরে ৭০০ মেগাওয়াটের বেশি বেড়েছে যা মোট উৎপাদনকে ২,১৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই নদী থেকে হয় বলে উৎপাদন শুষ্ক মাসে পড়ে যায় এবং বর্ষাকালে উদ্বৃত্ত থাকে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ঘাটতির কারণে নেপাল ভারত থেকে ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত আমদানি করলেও বর্ষাকালে ভারতে রপ্তানি করতে পারে।
গত বছর গ্লাসগোতে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা প্রতিশ্রুতি দেন যে ২০২২ সাল থেকে নেপাল “ক্রমসঞ্চয়িতভাবে নেট-শূন্য কার্বন” এর পথে থাকবে এবং এর পরে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাস করে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বনের আয়তন ৪৫ শতাংশে উন্নীত করে কার্বন নেতিবাচকের পথে থাকবে।
গত বছর গ্লাসগোতে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা প্রতিশ্রুতি দেন যে ২০২২ সাল থেকে নেপাল “ক্রমসঞ্চয়িতভাবে নেট-শূন্য কার্বন” এর পথে থাকবে এবং এর পরে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাস করে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বনের আয়তন ৪৫ শতাংশে উন্নীত করে কার্বন নেতিবাচকের পথে থাকবে।
ফিলিং স্টেশনগুলিতে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম গত ছয় মাসে চারবার বাড়ানো হয়েছে, এবং পেট্রোলের দাম এখন প্রতি লিটার ১৬০ নেপালি রুপি (প্রায় ১১২.৫৩ টাকা) – গত বছরের তুলনায় এটি প্রায় দ্বিগুণ। সরকার পেট্রোলিয়াম ব্যবহার ২০ শতাংশ কমাতে পাঁচ দিনের কর্ম সপ্তাহ ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নেপাল অয়েল কর্পোরেশন (এনওসি) বলেছে যে তারা প্রতি লিটার পেট্রোলের জন্যে ১৬ নেপালি রুপি (প্রায় ১১.২৫ টাকা) এবং ডিজেলের জন্যে ১২ নেপালি রুপি (প্রায় ৮.৬৬ টাকা) হারায়। প্রতি মাসে ৫০০ কোটি নেপালি রুপি (প্রায় ৩৫৩ কোটি টাকা) ক্ষতি করে, যার অর্থ আরো একবার দাম বেড়ে যাওয়া নিশ্চিত। এনওসি বলেছে যে ভারত থেকে ভবিষ্যতে জ্বালানি আমদানির জন্যে তার কাছে নগদ অর্থের অভাব রয়েছে৷
চীনা সীমান্ত থেকে কাঠমুন্ডু যাওয়ার পথে জলবিদ্যুৎ এবং সৌর স্থাপনার পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক বাস চালানোর দৃশ্যটি একটি স্বাগত দৃশ্য হলেও আর্নিকো মহাসড়কের বেহাল দশা নেপালের পরিবহন অবকাঠামোর জরাজীর্ণ অবস্থারও ইঙ্গিত বহণ করে। বাসগুলি নিজে নিজেই উঁচুনিচু রাস্তায় চলতে পারে না বলে এদের কাঠমুন্ডু নিয়ে যেতে ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের উপরে উঠাতে হবে।
নেপাল ও চীনের মধ্যেকার কোদারি চেকপয়েন্টসহ মহাসড়কটি ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতির পর থেকে বন্ধ রয়েছে। ১৯৯৬ সালে নির্মিত, উচ্চ ভোটে কোসি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১৫ সালের ভূমিকম্প এবং একটি হিমবাহের হ্রদ বিস্ফোরণজনিত বন্যা এই দু'টি বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মাত্র তিন বছর আগে মেরামত করে আবার চালু করা হয়েছে।