জাদুবিদ্যার অভিযোগ-সম্পর্কিত সহিংসতায় আক্রান্ত পাপুয়া নিউ গিনি

পাপুয়া নিউ গিনিস্থ জাতিসংঘের নারী কান্ট্রি অফিসের কর্মীরা ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর তারিখে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলের জন্যে আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করে। জাতিসংঘের নারী ফ্লিকার পাতা থেকে নেওয়া ছবি এবং ক্যাপশন। (সিসি বাই-এনসি-এনডি ২.০)

ইতোমধ্যে পাপুয়া নিউ গিনির কিছু ভোটাধিকার বঞ্চিত নারীকে জাদুবিদ্যার অভিযোগ-সম্পর্কিত সহিংসতার (এসএআরভি) অতিরিক্ত বোঝার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে জাতিসংঘের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ সম্প্রতি এই সহিংসতা বন্ধে গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়ের নেতাদের সমর্থন লাভের জন্যে মানবাধিকার সুরক্ষাকারীদের সুরক্ষার একটি খসড়া আইনের প্রস্তাবের উপর একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করেছে

অপরাধ নির্মূল করার উদ্দেশ্যে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও পাপুয়ার পার্বত্য প্রদেশগুলিতে এসএআরভি ঘটনার সংখ্যা বেশি৷ এসএআরভি’র বেশিরভাগ শিকার হলো দরিদ্র সম্প্রদায়ের বয়স্ক নারীরা যাদেরকে পরিবারের কোন সদস্যের রহস্যজনক অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণ হিসেবে যাদুবিদ্যা অনুশীলনের জন্যে দায়ী করা হয়ে থাকে। মহামারী চলাকালে এসএআরভি ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্যের অভাবকে প্রতিফলিত করে।

২০২১ সালের আগস্টে একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটির সময় পাপুয়ার সাংসদরা এসএআরভি মোকাবেলা করেছিল৷ কমিটির প্রতিবেদনটিতে প্রকাশ্যে এসএআরভি’র নিন্দা করা হয়:

এই ধরনের সহিংসতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য: পাপুয়ার সংস্কৃতির অংশ হিসেবে এটি ক্ষমার যোগ্য তো নয়ই, বরং নিরপরাধ মানুষদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ক্ষতি করার জন্যে ঐতিহ্য এবং ধর্মের (এবং কখনো কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে) ভুল বোঝাবুঝি থেকে এটা উদ্ভূত।

নারীদের বিরুদ্ধে এসএআরভি প্রায়ই বিশেষভাবে নৃশংস ও যৌন হয় এবং বিশেষভাবে শিকারের নারীত্বকে লক্ষ্য করেই সহিংস কাজগুলি করা হয়।

অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক বলে ঘটনার সংখ্যা বেশি হতে পারে উল্লেখ করা স্বত্ত্বেও কমিটি এসএআরভি মামলার সংখ্যা নির্ণয় করার চেষ্টা করেছে:

সম্মিলিতভাবে চারটি প্রদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩৮৮ জনের বিরুদ্ধে যাদুবিদ্যার অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শারীরিক সহিংসতা বা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন। অভিযুক্তদের মধ্যে ৬৫ জন নিহত হয়, ৮৬ জন স্থায়ী আঘাত পায় এবং ১৪১ জন পুড়িয়ে ফেলা, কাটা, বেঁধে রাখা বা পানিতে চুবানোর মতো অন্যান্য গুরুতর আক্রমণ এবং ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়। সামগ্রিকভাবে, ৯৩টি ক্ষেত্রে নির্যাতন জড়িত: ২০টি ঘটনা বেশ কয়েক দিন এবং ১০টি এক সপ্তাহ বা আরো বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল৷ ব্যবহৃত উপাত্ত থেকে অনুমান করা যায় ২০০০ থেকে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি হিংসাত্মক এসএআরভি ঘটনাগুলিতে জাতীয়ভাবে আনুমানিক ৩ হাজার জন মারা যায়।

উন্নয়ন_নীতি ব্লগের জন্যে লিখতে গিয়ে অ্যান্টন লুটজ এবং মিরান্ডা ফোরসিথ এসএআরভি থেকে বেঁচে থাকা, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব তুলে ধরেছেন:

আমাদের ৪-বছরের সমীক্ষায় আমরা যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতবিক্ষত, আঘাতপ্রাপ্ত, সমর্থনহীন, আদালতে প্রতিকার চাইতে ভয় পাওয়া লোকজনের মধ্যে শুধু ১৫% ভুক্তভোগীকে মারা যেতে দেখেছি। কিন্তু তারা আদালতের দ্বারস্থ হয় না। তারা সরে যায়। আত্মগোপনে চলে যায়। তারা একটা সেফ হাউস থেকে আরেকটা সেফ হাউসে ঘুরে বেড়ায়। তারা অপেক্ষা করে আর আশা করে যে তারা আর হামলার শিকার হবে না।

অপরাধটির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রচারণার পরেও এসএআরভি ঘটনাবলী রেকর্ড করা হচ্ছে। জানুয়ারিতে পোস্ট-কুরিয়ারে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে জরুরি পদক্ষেপের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে:

হত্যা ও সন্ত্রাস কি সমাজকে পঙ্গু করে দিচ্ছে বলেই কি আমরা সহজ উপায় হিসেবে জাদুবিদ্যাকে দায়ী করে এটিকে উপেক্ষা করি?

এই বিষয়টি বারবার উঠে আসছে।

জীবন হারিয়ে যাচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে এবং কেউ পাত্তা দিচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে বলে কেউই বদলাচ্ছে না।

অবশ্যই নারীর প্রতি গভীর ঘৃণা পোষণকারী লোকেরাই বিশেষভাবে নারীদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে।

তারা হয়তো বিকৃত মস্তিষ্ক।

তথাকথিত জাদুকরী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে উপজাতীয় শত্রুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং এটা এক ধরনের প্রতিশোধ বলে মনে হচ্ছে।

পাপুয়াতে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড হরহামেশাই ঘটছে, তবুও এটা সম্পর্কে আমরা কেন নিষ্পৃহ?

ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্সের এফআর জর্জিও লিসিনি এই জটিল সামাজিক সমস্যাটির প্রতি আরো ভালো সরকারি প্রতিক্রিয়ার আহ্বানের প্রতিধ্বনি তুলেছেন: “প্রাচীন ইউরোপ এবং বর্তমান পাপুয়াতে সন্দেহ ও ভয়, প্রতিশোধ ও অর্থপ্রদান, সুবিধাবাদ, মিথ্যাচার এবং ব্যবসা ভিত্তিক জাদুবিদ্যার প্রতি প্রথাগত প্রতিক্রিয়া মূলত অযৌক্তিক বলে মনে হয়। আইনটি দুর্বল, অপর্যাপ্ত, একটি জটিল বিষয়ের জন্যে কার্যত অস্তিত্বহীন। এতে সাধারণ অপরাধমূলক আচরণের চেয়েও মারাত্মক হত্যাকাণ্ড জড়িত।”

এসএআরভি থেকে বেঁচে যাওয়া ডমিনিক কানিয়া এসএআরভি সংঘটনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন:

আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের সাংসদদের জাদুবিদ্যার অভিযোগ-সম্পর্কিত সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

যারা নিরপরাধ মানুষকে শিকার করে কোটি কোটি কিনা [পাপুয়ার মুদ্রা] মূল্যের সম্পত্তি ধ্বংস করে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে তাদের জন্যে কঠোর শাস্তির প্রবর্তন করা হোক।

নারী অধিকার সমর্থক ডেম ক্যারল কিডু জোর দিয়ে বলেছেন যে এসএআরভি একটি সাম্প্রতিক ঘটনাবলী যাকে পাপুয়ার ঐতিহ্য বা ইতিহাসের সাথে যুক্ত করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন:

কোন নৃতাত্ত্বিক লেখায় আমি এর মতো বর্বর কিছুর উল্লেখ দেখিনি। আমাদের সমাজ যথেষ্ট পরিমাণে যত্নশীল, তাই এটা পাপুয়ার উত্তরাধিকারের কোন অংশ নয়। আমি জানি না কেন এটি এমনভাবে আবির্ভূত হয়েছে, কারণ আমরা জানি যে জাদুবিদ্যা পাপুয়ার সমাজের অংশ হলেও এসএআরভি সমাজের অংশ নয়। এসএআরভি হত্যাকাণ্ড হলো বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের উস্কে দেওয়া পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

যেভাবে চলমান মহামারী ভয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এসএআরভি'র ঘটনা বাড়ছে তা নিয়ে পাপুয়ার জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ফিওনা হুকুলা সতর্ক করেছেন:

…কোভিড-১৯ সৃষ্ট স্বাস্থ্য সঙ্কট অর্থনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট তৈরির সম্ভাবনার একটি ঝুঁকি রয়েছে। অনিশ্চিত সময়ে জনগণ অন্যদের বলির পাঁঠা বানিয়ে দোষারোপ করে সুরক্ষা খুঁজে পেতে চায় বলে এতে সহিংসতাও জড়িত হতে পারে।

সহিংসতা এবং সামাজিক অস্থিরতার অনুঘটক ভয়ের বিস্তার রোধে সার্বিকভাবে সরকার এবং সমাজকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রস্তাবিত মানবাধিকার রক্ষাকারী সুরক্ষার খসড়া আইনটি যেভাবে পাপুয়াতে এসএআরভি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নারী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের কাজকে বাড়াতে পারে সে সম্পর্কে এই ভিডিওটি দেখুন:

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .