- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

জ্যামাইকাতে আন্তর্জাতিক আলোচনার পর মহাসাগরগুলির গভীর সমুদ্র খনিজ আহরণের হুমকিতে

বিষয়বস্তু: ক্যারিবিয়ান, জামাইকা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, ব্যবসা ও অর্থনীতি, সরকার
[1]

‘গভীর সমুদ্র’, ফ্লিকারে সাইমন জি ব্র্যাডলি রবার্টসের ছবি [1]; সিসি বাই-এনসি-এনডি ২.০ [2]

গভীর সমুদ্রের তলদেশে খনির সম্ভাব্যতা এবং সম্ভাব্য কুপ্রভাব [3] সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের ১ তারিখ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গ্রিনপিসে [4]র প্রতিনিধিরা জ্যামাইকার কিংস্টোনে সমবেত হন। গভীর সমুদ্র  সংরক্ষণ জোট [5]কে সাথে নিয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের ২৭তম অধিবেশন [6] (আইএসএ) পর্যবেক্ষণকারী ৩২টি বেসরকারি সংস্থার একটি হিসেবে আসন্ন শিল্পটিকে “আমাদের গ্রহের জন্যে সবচেয়ে বেপরোয়া ধ্বংসাত্মক জিনিস” অভিহিত করে গ্রিনপিস এই ধরনের কার্যকলাপের উপর একটি স্থগিতাদেশ আহ্বান করেছে।

২০২৩ সালের জুন মাসে গভীর সমুদ্রের তলদেশে খনন শুরু করার অনুমতি পাওয়ার জন্যে একটি খনন নীতিমালা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এই বছরের শেষের দিকে অতিরিক্ত কিছু সভা ডাকা হয়েছে। এই তারিখের মধ্যে এই নীতিমালা অনুমোদিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ধরে নিয়ে গ্রহের অর্ধেক জুড়ে থাকা প্রায় সমস্ত গভীর সমুদ্র খনিজ আহরণের জন্যে উন্মুক্ত করা হবে।

পরিবেশ সুরক্ষাকারীরা এটিকে একটি বিরক্তিকর বাস্তবতার ভাবনা বলে মনে করে। গ্রিনপিসের মতো এই জাতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলি আইএসএ পর্ষদে কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও তারা অধিবেশনে উপস্থাপনা করতে পারে এবং তারা করেছেও যে আইএসএ -এর মধ্যে বিষয়টির অগ্রগতি সম্পর্কে তারা “অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।” ১৯৯৪ সালে “গভীর সমুদ্রতলের কার্যকলাপ থেকে উদ্ভূত ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে সামুদ্রিক পরিবেশের কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করার” অনুমোদনপ্রাপ্ত জাতিসংঘের সাগর আইন সম্পর্কিত কনভেনশনে [7]র আওতায় জ্যামাইকার রাজধানীতে আইএসএ-এর সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০১৪  সালের ২০ জুলাই তারিখে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ (আইএসএ) এর ২০ তম বার্ষিকীর একটি বিশেষ অধিবেশন। এমা লুইসের ছবি, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

পরিবেশ সুরক্ষা থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্রে খনিজ আহরণ খনন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ে আলোচনা করার জন্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ এর ১৬৭টি জাতির শক্তিশালী সদস্যপদ বছরে একবার জ্যামাইকা সম্মেলন কেন্দ্রে [8] আহ্বান করে থাকে। তবে চ্যালেঞ্জটি হলো অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান এই সামুদ্রিক খনিজগুলি আহরণের জন্যে প্রযুক্তি বিদ্যমান থাকলেও ন্যায়সঙ্গত ভাগাভাগি [9]র কথা বাদ দিলেও সেই প্রচেষ্টাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের নিয়মগুলি একেবারেই অস্পষ্ট। ২১ মার্চ তারিখে গ্রিনপিস বলেছে [10]:

গত জুনে নাউরুর দুই বছরের শাসন শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রথমত এবং সর্বাগ্রে মানবজাতির সাধারণ ঐতিহ্য সমুদ্রতলসহ সামুদ্রিক পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যে আইনী বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও আইএসএ -এর মধ্যে সমুদ্রতলে খনিজ আহরণের জন্যে গতি দ্রুততর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

জ্যামাইকায় থাকাকালীন পেটচারির ব্লগের সাথে সমুদ্রতলে খনিজ আহরণের প্রশ্ন, এর নীতিমালা, নিয়ন্ত্রণের আইন এবং সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা বিষয়ে কথা বলা [11] গ্রিনপিসের সক্রিয় কর্মী আরলো হেমফিলের মতে, আর্থিক কারণে বর্তমানে খনিজ আহরণের সর্বাধিক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কানাডীয় প্রতিষ্ঠান দি মেটাল কোম্পানি [12]র সাথে অংশীদারিত্বে থাকা আট বর্গমাইলের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ নাউরুকে দ্রুত ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। গত গ্রীষ্মে নাউরু জাতিসংঘের সাগর আইন সংক্রান্ত সনদে [13] থাকা একটি অস্পষ্ট “দুই বছরের নিয়ম” চালু করে আইএসএ-কে গভীর সমুদ্রে খনিজ আহরণ শুরু করার ইচ্ছে ব্যক্ত করে।

এটিকে “ছোট ছোট রাষ্ট্র এবং দ্বীপপুঞ্জের সুবিধা নেওয়া […] খুবই শিকারীসুলভ সম্পর্ক” অভিহিত করে হেমফিল আরো উল্লেখ [11] করেন যে দি মেটাল কোম্পানি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ টোঙ্গা এবং কিরিবাতির জন্যে সম্ভাব্য লাইসেন্স ধারণ করে। তিনি আরো বলেন, “আইএসএ কখনো [প্রত্যাশিত লাইসেন্স বিষয়ে] একবারের জন্যেও ‘না’ বলেনি।”

সমদ্রতলে খনিজ আহরণের বিষয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ধারণাটিকে “বাকি বিশ্বের সাথে সঙ্গতিহীন” অভিহিত করে গ্রিনপিস পর্ষদটিকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির সতর্কবার্তায় স্বাক্ষর প্রদানকারী শত শত বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে খনিজ আহরণ স্থগিত করার আহ্বান জা্নানো আইইউসিএন বৈশ্বিক সংরক্ষণ কংগ্রেস [14] এবং ইউরোপীয় সংসদসহ আরো অন্যান্যদের কথা শোনার আহ্বান জানিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছেন যে ” মানুষের জীবদ্দশায় ক্ষতিগ্রস্ত গভীর সমুদ্রতলের প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার করা  সম্ভব নয়।” ২২ মার্চ তারিখে গ্রিনপিস জোর দিয়ে বলে:

গভীর সমুদ্রতলে জীবন — যাদের বেশিরভাগ প্রজাতির সম্পর্কে আমরা এখন জানি না — ধ্বংসের মানে হলো প্রতিবেশ বা বাস্তুতন্ত্রকে হারানো এবং সম্ভবত এই সমস্ত জীবনগুলি আমরা আর কখনোই দেখতে পাবো না, এবং এটাই এখানে আলোচনার অংশ হওয়া দরকার।

গভীর সমুদ্র সংরক্ষণের জোটটি আইএসএ-কে তার “খনিজ আহরণের কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সামুদ্রিক পরিবেশকে কার্যকরভাবে রক্ষা করার” ম্যান্ডেটের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে [10]। প্রহসনের মতো করে এটি আরো বলেছে:

[এ]বং পরিবেশ এবং পরিবেশগত ক্ষতি একদিকে সরিয়ে রেখে এখনো পর্যন্ত পরিবেশগত বাহ্যিক প্রভাবগুলি এই চর্চায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

পরিবেশকে একদিকে সরিয়ে রাখা যাবে না।

এটি আলাদা আলাদা বিষয় হিসেবে কৃত “অপরিবর্তনীয় ক্ষতি,” “সমুদ্রতলের ক্ষতি, খনিজ আহরণের বর্জ্যদ্রব্যজনিত ক্ষতি, উপকূলীয় সম্প্রদায়ের ক্ষতি এবং মৎস্য সম্পদের ক্ষতি,” অন্তর্ভুক্ত   এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ানো এবং গ্রিনপিসের সাথে “বাহ্যিক প্রভাব এবং পরিবেশের গুরুত্ব” স্বীকার করা অন্তত একটি ক্যারিবীয় দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রশংসা করতে গিয়ে [10] ব্যাখ্যা করে:

প্রাকৃতিক মূলধন এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবাগুলির ক্ষতিসহ বাহ্যিক প্রভাবগুলি হিসেব করতে না পারা এবং গভীর সমুদ্রের খনিজ আহরণের ফলে জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে না প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত অর্থপ্রদানের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা যাবে না।

আইএসএ পৃথিবীর দরকষাকষি বুলেটিন [15] (ইএনবি) এর সাথে চুক্তি নবায়ন না করার কারণে যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে। স্বাধীন সংস্থা ইএনবি প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা আনার প্রয়াসে দরকষাকষি বিষয়ে প্রতিবেদন করছে। ঞ্চুক্তি বাতিলের ফলে আইএসএ-এর বিরুদ্ধে একতরফাভাবে গভীর সমুদ্রতলের খনিজ আহরণ শিল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে [16]। উপসংহারে জারি করা পর্ষদটির মিডিয়া বিজ্ঞপ্তিটি এই ধারণাটিকেই জোরদার করে মাত্র, কারণ আইএসএ-এর মনোযোগের কেন্দ্র [17] ছিল “এলাকাটিতে খনিজ সম্পদের শোষণের খসড়া প্রবিধান” এর উপর।

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে গিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে যেতে সমুদ্রতলে পাওয়া বিভিন্ন প্রকার খনিজের দরকার – এই বর্ণনাটি সমস্যাটিকে আরো জটিল করে তুলেছে। অন্যান্য অনেক পরিবেশগত বেসরকারি সংস্থা, বিজ্ঞানী এবং এমনকি নির্মাতাদের সাথে ভাগাভাগি করা গ্রিনপিসের অবস্থান [11] হলো এই উপকরণগুলির উৎসের জন্যে আপনাকে সমুদ্রতলে যেতে হবে না। এই বিষয়ে গবেষণা এখনো চলছে; শুধু আরেকটু সময় প্রয়োজন।

হেমফিল ব্যাখ্যা করেন, “সমস্যাটা হলো প্রযুক্তিটি বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক এগিয়ে এবং আমরা এখনো গভীর সমুদ্রের সমস্ত বিজ্ঞান বুঝতে পারি না।” সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসে [18]র সাথে সমুদ্রের তলদেশে একটি “বিশাল ঘাস কাটার যন্ত্র অথবা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার” এর আলোড়ন সৃষ্টি করার মতো গভীর সমুদ্রতলে খনিজ আহরণের তুলনা করে তিনি আরো বলেন যে এই ধরনের কার্যকলাপ “প্রবাল প্রাচীরগুলিকে শ্বাসরোধ করার মতো বিশাল বর্জ্যজনিত ধ্বংসাবশেষ তৈরি করবে যার প্রভাব সমুদ্রে বসবাসকারী সমস্ত কিছুর উপর পড়বে।”

এদিকে জ্যামাইকাতে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীনপিসের জ্যেষ্ঠ্য কৌশলগত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ তানিয়া ব্রুকস উল্লেখ করেছেন যে ক্যারিবীয় অঞ্চলের মতো উন্নয়নশীল ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে (এসআইডিএস) আমাদের সমুদ্রের বিষয়ে কঠোরভাবে সচেতন এবং সুরক্ষামূলক হতে হবে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং সম্প্রদায়গত জীবন থেকে শুরু করে পর্যটন পর্যন্ত সবকিছুর একটি মূল ভিত্তি [19] ভিত্তি। ব্রুকস এবং গ্রিনপিস উচ্চাকাঙ্ক্ষার জোটে [20]র ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৩০ শতাংশ ভূমি ও মহাসাগর রক্ষা করার জন্যে একটি বৈশ্বিক চুক্তি সুরক্ষিত করা লক্ষ্যে বৈশ্বিক “৩০ এর মধ্যে ৩০” উদ্যোগকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে।

আইএসএ অধিবেশনে চূড়ান্ত বিবৃতিতে [21] গ্রিনপিস উল্লেখ করেছে যে প্রতিনিধিরা বাণিজ্যিক খনিজ আহরণের লাইসেন্সের অনুমোদনসহ “কর্তৃপক্ষটির আইন ও প্রযুক্তিগত কমিশনের অভ্যন্তরে স্বচ্ছতার অভাবসহ আইএসএ-এর মৌলিক ত্রুটিগুলিকে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছে”:

খনিজ আহরণের জন্যে আবেদন অনুমোদিত বলে আইন ও প্রযুক্তিগত কমিশন সুপারিশ করলে পর্ষদকে (আইএসএ -এর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী শাখা) সেই সুপারিশ বাতিল করতে ৪টি ‘চেম্বারে'র সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হবে। এটি স্পষ্টভাবে সমুদ্র সুরক্ষার পরিবর্তে খনিজ আহরণের প্রতি কর্তৃপক্ষের চালাকি প্রদর্শন করে।

আর্থওয়ার্কসে [22]র ম্যাথিউ জিয়ান্নি আরো বলেছেন:

আইএসএ পর্ষদকে প্রকৃতি এবং জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারগুলি জরুরি পদক্ষেপে পরিণত করতে হবে। এই শিল্পের উপর একটি স্থগিতাদেশের চেয়ে কম কিছু করা হলে সেটি একটি ব্যর্থতা হবে।

পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রথম সারিতে থাকবে বলে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির জন্যে এটা অত্যন্ত জরুরি।