অমৃত সুফি বিপন্ন অঙ্গিকা ভাষাকে ডিজিটাল মঞ্চে আনতে সাহায্য করছেন

Photo provided by Amrit Sufi and used with permission.

অমৃত সুফি প্রদত্ত ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

সম্পাদকের কথা: ১২ থেকে ১৮ এপ্রিল, ২০২২ পর্যন্ত অমৃত সুফি এশীয় ভাষাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে তা অনুসন্ধানকারী ঘূর্ণায়মান @এশীয়অনলাইনভাষা টুইটার অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করবেন। প্রচারণাটি সম্পর্কে এখানে আরো পড়ুন।

অমৃত সুফি বর্তমানে বিপন্ন মৌখিক ভাষা ও সংস্কৃতির ডিজিটালকরণ নিয়ে কাজ কর্মরত একজন গবেষক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি ভারতের বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিস্তৃত  অঙ্গ অঞ্চলের একটি ইন্দো-আর্য ভাষা অঙ্গিকা নামের একটি বিপন্ন ভাষারও একজন বক্তা। সুফি ভারতের উত্তরাখণ্ডের হেমবতী নন্দন বহুগুণা গাড়ওয়াল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং দেরাদুনের দুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন। রাইজিং ভয়েসেস সুফির সাথে মৌখিক সংস্কৃতির ডিজিটালকরণের প্রতি তার আবেগ সম্পর্কে কথা বলেছে।

অঙ্গিকাকে বাঙালি পরিবারের প্রাচীনতম ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয় যার সাথে মৈথিলির খুব মিল রয়েছে। হিন্দি ভাষার প্রাধান্যের কারণে ভারতে অঙ্গিকার মতো ভাষা হুমকির মুখে পড়েছে। সুফি মনে করেন যে অডিও এবং ভিডিও হিসেবে মৌখিক ভাষা ও সংস্কৃতিকে নথিভুক্ত করা হলে তা অনেক স্বল্প-সম্পদ সম্পন্ন ভাষার দৃশ্যমানতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পরীক্ষা করার জন্যে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে কিছু অঙ্গিকা লোকগীতি নথিভুক্ত করেন।

২০২১ সালে সুফি উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন অর্থায়িত একটি মৌখিক সংস্কৃতি লিখন টুলকিট প্রকল্পের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। প্রকল্পটি স্থানীয় মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়ে জনগণকে অঙ্গিকাসহ বিপন্ন ভাষায় মিডিয়া আপলোড করতে সক্ষম করার মতো একটি অনলাইন টুলকিট তৈরি করতে কাজ করেছে। টুলকিটটি ভিডিও ট্রান্সক্রিপশন এবং সাবটাইটেল তৈরিসহ ভাষা ও সংস্কৃতির আরো নথিভুক্তকরণে সাহায্য করবে।

রাইজিং ভয়েসেস ই-মেইলে অমৃত সুফির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। স্পষ্টতার জন্যে সাক্ষাৎকারটির সম্পাদনা করা হয়েছে।

রাইজিং ভয়েস (আরভি): অনুগ্রহ করে আমাদেরকে আপনার নিজের এবং আপনার ভাষা-সম্পর্কিত কাজ সম্পর্কে বলুন।

অমৃত সুফি (এএস): আমি একজন গবেষক। বর্তমানে ভারতের নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) থেকে ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছি। ইংরেজি সাহিত্যে একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়াও আমি রাইজিং ভয়েসেস এর “নিরাপদ প্রযুক্তির জন্যে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু ভাষা সম্প্রদায়ের চাহিদা: একটি অংশগ্রহণমূলক গবেষণা প্রকল্প”টির ভারতের কেস স্টাডি গবেষক হিসেবে কাজ করছি।

উইকিমিডিয়া বন্ধু নিতেশ গিলের সাথে আমি উইকিমিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন মঞ্চে মৌখিক সংস্কৃতি ডিজিটালকরণের জন্যে একটি টুলকিট তৈরি করেছি। টুলকিটটি কীভাবে মৌখিক সংস্কৃতি রেকর্ড, উইকিমিডিয়া সাধারণে আপলোড, এর প্রতিলিপি তৈরি এবং উইকিসংকলনে আপলোড করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়।

এগুলি ছাড়াও আমি নিয়মিত অঙ্গিকা উইকিপিডিয়া ইনকিউবেটর প্রকল্পের জন্যে সম্পাদনা করি।

Classification of Angika Language. SCreenshot via Glottolog. BY 4.0.

অঙ্গিকা ভাষার শ্রেণীকরণ। গ্লটোলগের মাধ্যমে পাওয়া পর্দাছবি, বাই ৪.০।

আরভি: অনলাইন ও অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আপনার ভাষার বর্তমান অবস্থা কী?

এএস: ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষাসমূহের মানচিত্র অনুসারে অঙ্গিকা একটি দুর্বল ভাষা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষায় এটিকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। অঙ্গিকাভাষীদের সাধারণত শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে একটি দ্বিতীয় ভাষা শিখতে হয়। তবে অঙ্গিকা কর্মীরা এটিকে উইকিপিডিয়া এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প, ইউটিউব এবং অঙ্গিকা সাহিত্য প্রকাশের জন্যে নিবেদিত ওয়েবসাইটগুলির মতো ডিজিটাল মঞ্চে আনার চেষ্টা করছে। তবুও ডিজিটাল মঞ্চে অঙ্গিকার বৃদ্ধি ধীর বলে মনে হচ্ছে।

আরভি: ডিজিটাল জগতে আপনার ভাষার উপস্থিতি দেখার জন্যে আপনার অনুপ্রেরণাগুলো কী?

এএস: প্রধানত ভারতের বিহারে অঙ্গিকা ভাষায় কথা বলা হয়। অপরাধের  বৃদ্ধি বা শিক্ষার অভাবের মতো রাষ্ট্রের বিভিন্ন নেতিবাচক ছকেবাঁধা নিয়ম রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই ছকেবাঁধা নিয়মগুলির গোড়ায় শিকড় রয়েছে এর অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং গণমাধ্যমে এর ভুল উপস্থাপনা। আমি আশা করি ডিজিটাল স্থানগুলিতে অঙ্গিকার ব্যবহার স্বাভাবিককরণ বাস্তবে এবং অনলাইনে এই ভাষা ব্যবহারকারীদের নিজেদের পরিচয়ে আরো আত্মবিশ্বাসী হওয়া নিশ্চিত করবে। তাই মূল লক্ষ্য হলো কারো পরিচয় প্রদান এবং এতে গর্ব প্রকাশ করা।

“রিমি ঝিমি পানিয়া” অঙ্গিকা ভাষায় যৌতুক দিতে না পারার অপমান নিয়ে একটি বিয়ের গান। অমৃত সুফি উইকিপিডিয়ায় ভিডিওটি আপলোড করেছেন। সিসি বাই-এসএ ৪.০

আরভি: আপনার ভাষাকে অনলাইনে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে বাধা দেয় এমন কিছু চ্যালেঞ্জ বর্ণনা করুন।

এএস: ডিজিটাল জায়গায় অঙ্গিকার ব্যবহার সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা আমি দেখেছি সেটা হলো ভাষাকর্মীরা এর একটা লিপির অভাব নিয়ে সোচ্চার। অঙ্গিকা লিখতে ঐতিহাসিকভাবে কাইথি লিপি ব্যবহার করা হলেও এটা এখন জনপ্রিয় দেবনাগরী লিপি (হিন্দির মতো একই লিপি) ব্যবহার করে লেখা হয়। এই লিপি ব্যবহার করে অঙ্গিকায় নির্দিষ্ট স্বরবর্ণ ধ্বনি উপস্থাপনের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না; বরং এটা একটা ‘হিন্দি বেল্টের ভাষা’ ক্লাবভুক্ত হয়ে পড়ে। আরেকটি স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ হলো এই ভাষায় অ্যাপের মতো ডিজিটাল উপাদান এবং সংস্থানের অভাব। এর ফলে অঙ্গিকা থেকে হিন্দি/ ইংরেজিতে একটি স্বয়ংক্রিয় স্থানান্তর ঘটে।

আরভি: তরুণদের তাদের নিজেদের ভাষা শেখা শুরু বা তাদের নিজেদের ভাষার ব্যবহার চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে কোন দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

এএস: কাজের সন্ধানে জনগণের প্রচুর স্থানান্তর হয় বলে অঙ্গিকা ভাষাভাষীদের জন্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার সরকারি নীতিমালা থাকা উচিত। ভাষার মধ্যে ডিজিটাল সংস্থান প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং ভাষার উচ্চারণ ও চিহ্নগুলিকে জায়গা দেওয়ার জন্যে ইউনিকোডের বিকাশ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভাল হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা ব্যবহারকারীদের জন্যে আরো উৎসাহজনক হবে।

২০২১ সালের নভেম্বরে অমৃত সুফি রাইজিং ভয়েসেস আয়োজিত ভারতে ভাষার ডিজিটাল সক্রিয়তা কর্মশালার একটি ধারাবাহিকের সহ-আয়োজক ছিলেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুফি আইজিএফ-২০২১ এর স্বল্প-সংস্থান সম্পন্ন ভাষাগুলোর জন্যে উইকি-পথ নির্মাণ অধিবেশনে একটি রাইজিং ভয়েসেস প্যানেলে যুক্ত ছিলেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .